প্রবাস কাহিনী- ৩

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:২২:৪৫ সকাল

চেকইন এর পর ইমিগ্রেসন করতে গিয়ে খেলাম একটি ধাক্কা। অফিসার সাহেব বললেন, ‘আপনি ওনার সাথে (আরেকজনকে দেখিয়ে দিয়ে) দেখা করেন। ওনার কাছে যেতেই বললেন, ‘আপনার সমস্যা আছে, বড় স্যার আসলে তার সাথে দেখা করেন’। বড় স্যার চেয়ারে নেই তাই তার জন্য অপেক্ষা করছি আর মনে মনে ভাবছি, সমস্যা কি হতে পারে। এসবি ইন্সফেক্টর আব্দুররহমান ভূইয়ার কোন চাল-চক্র নয় তো?

আব্দুর রহমান ভূইয়া নামের এক এসবি পুলিশের পরিদর্শক পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে এসে ঘুষ না দেয়ার কারণে রিপোর্ট করেছিল 'Not Traceable' , যার সহজ বাংলা হচ্ছে- ‘চিহ্নিত করা যায়নি’। এর মানে হচ্ছে পাসপোর্টের প্রার্থী যে ঠিকানা দিয়েছে তা ভুল, তাই তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খুঁজে পাওয়া না যাওয়া মানে পাসপোর্টও ইস্যু না হওয়া।

নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট ইস্যু না হওয়ার কারণে আমাদের বাড়ীর মিউনিসপ্যাল হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের রসিদ এবং ভূমিকর প্রদানের রসিদ তার বসের নিকট সাবমিট করে তাকে খুবই ‍সুযোগ মত জব্দ করেছিলাম। তার ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে ক্ষমা করেছিলাম, না হলে চাকুরী যাবার যোগাড় হয়েছিল। এতদিন পর সুযোগ পেয়ে সে আমার নিকট থেকে প্রতিশোধ নেয়ার কোন ব্যবস্থা করলো কি না, কারণ আমার পাসপোর্ট নাম্বার এবং ঠিকানা ইত্যাদি তার জানা।

এসব ভাবতে ভাবেত বড় স্যার কেবিনে আসলেন। ভিসা, পাসপোর্ট এবং টিকেট সহ দ্বিতীয় ব্যক্তি আমাকে বড় স্যারের নিকট নিয়ে গেলে তিনি সুধালেন, ‘আপনি বিদেশ যেতে পারবেন না, কারণ আপনার নিকট ম্যান পাওয়ারের ছাড়পত্র নেই’। বোকা ‘বড় স্যার!’ মনে মনে বললাম এবং নিশ্চিত হলাম আব্দুর রহমান ভূইয়ার কোন চাল চক্র নয়, নতুন ভিসা নিয়ে প্রবাসে যাচ্ছি, তাই কিছু টাকা বের করার উদ্দেশ্যে নাটক করছেন ওনারা।

বড় স্যারকে বললাম, দয়া করে আমার ভিসাটা একবার পড়ে দেখেন, স্যার। তিনি বললেন, পড়ে দেখার কি আছে, বিদেশ যাচ্ছেন চাকুরী করার জন্য, দেশের ম্যান পাওয়ারের অনুমতি নেবেন না? সেজন্যেই তো বলছি ভিসাটা একটু পড়ে দেখেন- আমি বললাম। আসলে আমার ভিসাটা ছিল ‘ভিজিট ভিসা’। এবার তিনি নড়ে চড়ে বসলেন, জানতে চাইলেন কেন ভিসিটে যাচ্ছি, গিয়ে আবার ফেরৎ আসবো কি না? আমি বললাম কেন ভিজিটে যাচ্ছি এবং ফেরৎ আসব কি না তা আপনাদের জানার বিষয় নয়, তারপরও সৌজন্যের খাতিরে বলছি- আমার আব্বা আছেন ওখানে, তাঁকে দেখতে যাচ্ছি। সে কথা আগে বলবেন না? যান যান দেরী হয়ে যাচ্ছে বলে দ্বীতিয় ব্যক্তিকে ঈঙ্গিত করলেন আমাকে বিমানে তুলে দেয়ার জন্য, ততক্ষণে বিমান কর্মীদের একজন লাউড স্পিকার নিয়ে আমাকে নাম ধরে খুঁজছেন।

একেতো আপনজনদের ছেড়ে এসে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত, দীর্ঘ রেল ভ্রমন এবং তার উপর ইমিগ্রেসনের ফালতু হয়রানীর মোকাবেলা করে বিমানের নির্দিষ্ট আসনে গিয়ে বসলাম।

বিষয়: বিবিধ

১১৯৬ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341399
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:০৪
আফরা লিখেছেন : ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫০
283459
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
341413
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:১২
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : যে দেশে অনীয়মই হচ্ছে নীয়ম সে দেশের এই ঘটনা সুনলাম বুঝলাম আশ্চর্য হলাম না এমনই হয় যারা বোয়াল তাদের করে তুশামদ যারা নীয়ম মানা সাধারন পুটি তাদেরই চেপে ধরা হয় টুটি...ধন্যবাদ লোকমান ভাই।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫১
283461
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : সুন্দর বলেছেন ভাই। অনেক ধন্যবাদ।
341421
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : আমি প্রথমবার ম্যান পাওয়ার ছাড়াই এসেছি, আর্জেন্ট আসতে হয়েছে বিধায় ম্যান পাওয়ার বানানোর সময় ছিল না। ৩০,০০০ টাকা নিয়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়া। আসলে ভাই দেশটা জালিমে ভরা।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫২
283463
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আমার নিকট থেকেও হয়ত ত্রিশ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্ট করেছিল।
341512
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পাসপোর্ট এর তদন্ত এর নামে এই পুলিশি জুলুম এখন আরো বেড়েছে। মানুষের পৈতৃক বাড়ি তে এসেও তারা টাকা চায়। এখন তো পাসপোর্ট থাকলেও হজ্জের সময় আবার ভেরিফিকেশন এর নামে ঘুষ চায়!!!
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৩
283464
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : বড়ই দুর্ভাগ্য আমাদের।
344187
০৩ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:০৬
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশকে ফোন করে এটাই স্বাভাবিক, তবে মনে হয় শুধু বাংলাদেশেই তার বিপরীত!
ভাইয়া, আমার কাছ থেকে তো জোর করেই নিয়ে নিল! ইমিগ্রেশনে প্রবেশের সাথে সাথে একটা ফরম পূরন করতে দেওয়া হলো, আমি ফরম টা একবার দেখেই পূরন করা প্রায় শেষ করে পেললাম। কিন্তু পুলিশ এসে আমার কাছ থেকে ফরমটা নিয়ে নিল, আমি নাকি সঠিকভাবে পূরন করতে পারবোনা! পুলিশ আমার উপকার করেই ছাড়বে! আহ, পুলিশের কি দেশপ্রেম! কি দরদ!! আমার পূরন করা ফরমটার শেষে একটা লাইন লিখলো মাত্র! আর হাতের লিখা নার্সারির বাচ্ছাদের আরোও সুন্দর হয়! পুলিশ মহোদয় একটু চেক করলো মাত্র ! সাথে সাথে ফিস দাবি করলো ৩০০ টাকা! আমি হঠাৎ বেকুপ বনে গেলাম, টাকা বের করতে একটু দেরি হচ্ছে এই জন্য যে কথাগুলো শুনলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। পকেটে ২৩৭ টাকা ছিল তা পুরাই দিয়ে দিলাম, কারন হাতে সময় খুব কম, ব্যাগেজ জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাড়াতে হবে, তার উপর আমি সম্পুর্ণ নতুন। কিন্তু ভদ্র পুলিশ পুরা ৩০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত আমাকে ছাড়তে নারাজ, এবার সে আমার মোবাইল নিয়ে নিতে চায়!! শেষে একান্ত বাধ্য হয়েই এক আংকেলের নাম বললাম, নাম শুনার সাথে সাথেই ছেডে দিল(আমি কারো পরিচয় দিয়ে চলতে পছন্দ করিনা তাই প্রথমে বলিনি)।
কথাগুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
০৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:২৮
285632
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার সব নতুন যাত্রী। পুরানো হয়ে গেলে অবশ্য তা অনেকটা কমে যায়। আমাদের দেশের এসব দুর্নীতি কখনো বন্ধ হবে কি না আল্লাহই ভালো জানেন।
344447
০৫ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:২৭
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
১৯ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:০৪
287410
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ, মিয়াজী ভাই।
349209
১০ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৭
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আপনার রোমাঞ্চিত ও শিহরিত,প্রবাস কাহিনী পড়া অব্যাহত আছে।..
এয়ারপোর্ট যন্ত্রণা সবসময় লেগেই আছে। ধন্যবাদ..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File