কিছু প্রতারণা হাতে-নাতে ধরা পড়ার পর নিশ্চিত না হয়ে কাউকে সাহায্য করতেও মন সায় দেয় না।

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১১ আগস্ট, ২০১৫, ০৮:২৮:৫৫ রাত

সারজাহ’তে একটি দোকানে সওদা করছি, এমন সময় এক পাকিস্তানী এসে খুবই বিনয়ের সাথে বললো, সে পরিবার পরিজন নিয়ে ওমান থেকে এখানে বেড়াতে এসেছে, দুর্ভাগ্যবশতঃ তার টাকার ব্যাগ চুরি যাওয়াতে সে এখন খুবই আসহায়। ওমান যাওয়ার মতো পেট্রোল খরছ আর কিছু খাবারের টাকা হলে তার হয়ে যায়। রাস্তার পাশে গাড়ীতে তার বউ-বাচ্চা দেখে এক আরব ভদ্র লোক ৫০০ দিরহাম বের করে দিল, আমিও দিলাম সাধ্যমতো। ওমান যাওয়ার জন্য এ অর্থ তার জন্য যথেষ্ট।

দু’দিন পর সেই একই ব্যক্তি আবুধাবিতে আমার দোকানের সামনে এসে সেই পুরানো ডায়ালগ শুরু করলো। আমাকে সে চিনতে পারেনি, মনে মনে বললাম ‘পড়বিতো পড় মালির ঘাড়ে!’ তাকে দু’দিন আগের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর গাড়ী নিয়ে ভোঁ-ছুট।

ঐ ঘটনার পর থেকে সাহায্য প্রার্থীদের সাথে যা ঘটেছিল-

১. চোখ দু’টো কেমন যেন উল্টানো, হাঁটেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, দুএকবার সাহায্যও করেছি। কৌতুহল বশতঃ আন্দাজের উপর চ্যালেঞ্জ করে বললাম, ‍তুমি তো হাঁটতে পারো, নাটক করছ কেন? পুলিশ ডাকব? পুলিশের নাম শুনে পায়ের সেন্ডেল ফেলে এমন দৌড় দিল, প্রতিযোগীতা হলে নিশ্চিত প্রথম হতো।

২. তাগড়া যুবক। হাতের কব্জি থেকে কুনুই পর্যন্ত এমন বিশ্রী ধরণের ঘা, গোস্ত খসে পড়ার উপক্রম। দেখা মাত্র যে কোন কৃপণ আর পাষাণ হৃদয় ব্যক্তিও পাঁচ-দশ দিরহাম সাহায্য না করে যাবে না। ইতোপূর্বে যতবার এসেছে সাহায্য করেছি। এবার দোকানের ভিতর বসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার সত্যিকার রহস্য বলো, এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত এটা না শুকিয়ে থাকতে পারে না। প্রথমে বেশ মোছড়া মুছড়ি করলো। তারপর পুলিশ ডাকার কথা বলাতে পুলিশ না ডাকার শর্তে সব সত্য বলতে রাজী হলো। সে জানালো, হাতের উপর একটা পাতলা আবরণ পেঁচিয়ে তার উপর কৃত্রিম ঘা বানিয়ে এভাবে সে ভিক্ষা করে বেড়ায়।

৩. দেশে কেউ আসতো মেয়ের-বোনের বিয়ের সাহ্যয্যের জন্য, কেউ আসতো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিকটজনের জরুরী চিকিৎসার সাহায্যের জন্য। ঐ ঘটনার পর থেকে যারা বিয়ের সাহায্যের জন্য আসে তাদেরকে বলি, বিয়ের তারিখ-সময়-স্থান জানাও, আমি ওখানে গিয়ে যা করার করবো। তা জানাবে বলে যে যায়, আর কখনো আসে না। কোন হাসপাতাল আর ক্লিনিকে রোগী ভর্তি আছে, তা জিজ্ঞেস করার পর ‘নাম জানে না, জেনে আবার আসবে’ বলে যে যায়, আর আসে না। এক্ষেত্রে অবশ্য দু’য়েকজন বাস্তব সমস্যাগ্রস্ত পাওয়া যায়।

গত দু’দিন আগে একজন ইনবক্সে জানালেন; তার বোনের বিয়ে, যদি সম্ভব হয় কিছু সাহায্য যেন করি। নিশ্চিত হতে না পারার কারণে তার আবদনে কিঞ্চিত হলেও সাড়া দিতে না পেরে নিজেরও বেশা খারাপ লাগছে। হয়ত ঘটনাটি বাস্তব, প্রতারকদের কারণে অনেক সময় প্রকৃত অভাবগ্রস্তরাও সন্দেহেরর মধ্যে পড়ে যায়।

বিষয়: বিবিধ

১২৭৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335224
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৮:৪১
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : চমৎকার পোস্ট, প্রতারণা থেকে সাবধান হওয়ার জন্য। সৌদি আরবেও এধরনের আছে, বিশেষ করে হজ্জের সময়। পাকিস্তানি এবং আফ্রিকানরা এরকমর প্রতারণা ফাঁদ পাতে। আমার চোখে দেখা, নিজেও বিভ্রান্ত হয়েছি।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৫৬
277453
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভিক্ষা এবং দান করতে গিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়।
335239
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ০৯:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এমন চলছে সব খানেই। সংঘঠিত সহায়তার ব্যবস্থা থাকলে এই ধরনের বিষয়গুলি তদন্ত করে সাহাজ্য করা যেতে পারে।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৫৭
277454
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন,সবুজ ভাই।
335261
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:২৭
আফরা লিখেছেন : একেবারে ঠিক কথা প্রতারকদের কারনে আসল প্রকৃত অভাবগ্রস্তরাও সন্দেহেরর মধ্যে পড়ে যায়।

ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৫৭
277455
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
335263
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৩৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : তাগড়া যুবক। হাতের কব্জি থেকে কুনুই পর্যন্ত এমন বিশ্রী ধরণের ঘা, গোস্ত খসে পড়ার উপক্রম। দেখা মাত্র যে কোন কৃপণ আর পাষাণ হৃদয় ব্যক্তিও পাঁচ-দশ দিরহাম সাহায্য না করে যাবে না। ইতোপূর্বে যতবার এসেছে সাহায্য করেছি।
এই পাকিস্তানী বেটা আমাদের দোকানেও এসেছে, আমার আরবাব মিশরী, কখনো কাউকে ভিক্ষা দেয় না, কিন্তু আমি দয়ার বশবর্তী হয়ে গোপনে সামান্য কিছু দিলাম, এতে আরবাব জানতে পেরে আমার উপর চটে গেলেন, বললেন এরা সবাই ব্যবসায়ী, আর কখনো যাতে না দেই।
আপনার কথায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হল। জাযাকাল্লাহ খাইর
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০০
277457
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এদেরকে পরিচালনা করার সিন্ডিকেট আছে।
335264
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৩৩
সালসাবীল_২৫০০ লিখেছেন : রিয়াদে এ ধরনের বাটপারের অভাব নাই, এপর্যন্ত অনেক দেখেছি!
তবে খুশির বিষয় হলো এই ধরনের বাটপারিতে এখনো কোন বাংলাদেশীকে দেখি নাই,যা দেখেছি পাকিস্তানী, ইন্ডিয়ান আর ইয়ামেনি।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০০
277459
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন, ভাই।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:২৫
277494
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আপনার সাথে একমত
বাংলাদেশীরা এই জাতীয় কাজ করতে দেখি নাই
335291
১২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:২৯
নাবিক লিখেছেন : হুম
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০১
277462
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ, নাবিক।
335324
১২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৮
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : যথার্থ বলেছেন। প্রতারকগোষ্ঠী অনলাইনেও বেশ সক্রিয়। একবার এক মেয়ে ফেসবুকে দাবী করলো তার মা বারডেম হাসপাতালে (সেগুনবাগিচা শাখায়) মারা গিয়েছে। মেয়েটির বাবা নেই। হাসপাতালের বিল এবং দাফন করার মত প্রয়োজনীয় অর্থও নেই তার কাছে। বিল দেয়া ছাড়া হাসপাতাল লাশ দিচ্ছে না। আমি জিজ্ঞেস করলাম রোগীর নাম কি, বারডেম এর কোন কেবিন বা ওয়ার্ড, বেড এ ছিল। একটু বিরতি দিয়ে মেয়ে আন্দাজে একটি ওয়ার্ড নাম্বার ও বেড নাম্বার দিল। বারডেম এ ফোন দিলাম। বারডেম হতে জানালো এই নামে উক্ত ওয়ার্ডে কোন রোগী নেই। এমনকি গত ১৫ দিনে তাদের হাসপাতােলে কোন মহিলা রোগী মারা যায় নি, একজন পুরুষ মারা গিয়েছে শুধু। মেয়েটিকে জানানোর পর পরই আমাকে ব্লক মারলো।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০৩
277463
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : অনলাইনে সাহায্য সহযোগীতার ব্যপারে খুব বেশী সতর্ক হওয়া উচিৎ।
335325
১২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০০
আহমদ মুসা লিখেছেন : বিদেশের কথা বলতে পারবো না। চট্টগ্রামে কর্মস্থল হওয়ার কারণে প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরে বিভিন্ন জাতের বিক্ষুকের কথা জানি। চকবাজারে একজন বয়স্ক বিক্ষুক দেখা যেত, তার বাড়ী উত্তর বঙ্গের কোন জেলায় হবে। প্রায় সময় তাকে ভিক্ষা করত দেখে তার সাথে একবার সখ্যতা জমিয়ে যা জানতে পারলাম তা হলো- তার দুই ছেলে মধ্যেপ্রাচ্যে থাকে। গ্রামের বাড়ীতে বেশ সহায় সম্পদ আছে। ভিক্ষার কারণ হিসেবে সে জানালো দীর্ঘদিনের পুরনো অভ্যাস ত্যাগ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। একই ভাবে আরেকজন বয়স্ক ভিক্ষুকের কথা জানি- অফিস থেকে বাড়ীতে ফেরার পথে রাহাত্তারপুল এলাকাতে এক ভিক্ষুক ভিক্ষা চাওয়ার কারণে আমি রসিকতা করে জানতে চাইলাম- চাচা এই বয়সে আর কত ধান্ধা করবেন। আপনার তো ভিক্ষা করার দরকার নেই। তখন লোকটি আমার দিকে তেড়ে আসলো আমার উপর আক্রমন করার জন্য। তখন সে রাগান্বিত হয়ে যৌবন অবস্থায় কি কি অসামাজিক অপরাধের সাথে জড়িত ছিল সেসব ফিরিস্তির বর্ণনা দিতে দিতে আত্মতৃপ্তির ডেকুর শুরু করলেন। তার আজাইরা খিস্তি খেউড়ের ফলে লোকজন জমা হতে শুরু করলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে নিজের ইজ্জত সম্মান রক্ষার জন্য তাড়াতাড়ি সঠকে পড়লাম।
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০৬
277464
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : অনেক ভিক্ষুক আছে যারা বাড়ি-গাড়ি এবং অনেক সম্পত্তির মালিক।
335434
১২ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৪০
শুভ কবি লিখেছেন : ভালো লাগলো
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:০৬
277465
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ, কবি।
১০
335578
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:২৫
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৬ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:২৯
278069
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ, ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File