কুলখানী/মেজবানী

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ০২ আগস্ট, ২০১৫, ০৯:৫৯:৫৯ সকাল

গত সপ্তাহে হয়ে গেলো আমার খুবই নিকটের এক বন্ধুর মরহুম বাবার কুলখানি। চট্টগ্রামের কিং অব চিটাগং এ দশ বারো হাজার মানুষের খাওয়ার আয়োজন। আমরা প্রায় শংকিত ছিলাম, উপর্যুপরি বৃষ্টি আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জলাবদ্ধার কারণে যদি লোকজন আসতে অপারগ হয় তাহলে এসব খাবারের কি দশা হবে! আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে শেষের দিকে আরো একটি গরু জবেহ করতে হয়েছিল। যদি একটানা মুষলধারে বৃষ্টি না হতো তাহলে অবস্থা কি হতো তা সহজেই অনুমেয়।

বন্ধুর দীর্ঘদিন আরব দেশে অবস্থান, সহিহ আকীদার আলেম ওলামাদের সাথে সম্পর্ক, তার ছেলে মেয়েরাও মোটামুটি ইসলামী জ্ঞানার্জন করার ফলে কুলখানীর আয়োজন ইসলাম সম্মত নয় জেনেও বাবার অসিয়ত এবং সামাজিকতা পালন করতে গিয়ে এমন একটি আয়োজন করতে হয়েছে- জানালেন, বন্ধু।

জাকজমকপূর্ণ আয়োজন, মেহমানদের খোশ গল্প, মহিলাদের সাজুগুজু ইত্যাদির কারণে বুঝার উপায় ছিলনা এটি বিয়ের অনুষ্ঠাণ নাকি অন্য কিছু। আমার ছোট ছেলেটি যখন আরো ছোট ছিল তখন এরকম একটি অনুষ্ঠাণ থেকে বউ না দেখিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। অর্থাৎ এখানে বিয়ে অনুষ্ঠাণের সব উপকরণ বিদ্যমান, শুধু বর-কণে অনুপস্থিত।

আমাদের চট্টগ্রামে বিষয়টি এমন এক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে, টাকা না থাকলে চাঁদা, ধারদেনা এমন কি মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত সম্পদ বিক্রয় করে হলেও এটি করতে হবে। না হলে ওয়ারিশদেরকে জর্জরিত হতে হবে নানা বিদ্রুপাত্মক বাক্যবাণে।

বিষয়: বিবিধ

১৬১৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

333110
০২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:৪১
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আমার ছোটকালে 'কুলখানি' শব্দটির সাথে পরিচয় ছিল না। আমরা এই অনুষ্ঠান গুলোকে 'মেজবান' হিসেবেই জানতাম। কলেজ জীবনে এসে একদা কুলখানি শব্দটা শুনলাম! নতুন শব্দ এবং তার মহাত্ব্য কি কয়েকজনকে প্রশ্ন করলাম। তারাও জানালেন, এভাবে শুনে আসতেছি অত ভিতরে যাই নাই।

পাবলিক এডমিনিষ্ট্রেশনে পড়ে এমন এক গুরু গাম্ভীর সতীর্থকে প্রশ্ন করার পর তিনি জানালনে, এটা অর্থ বুঝার জন্য কি ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর কাছে যেতে হবে। সে জানাল,

কুল মানে: ইজ্জত, সম্মান, বংশ মর্যাদা ইত্যাদি
খানি মানে: খাওয়া, খাওয়ানো, মর্যাদ রক্ষার্থে খাওয়ানো

সুতরাং কুলখানি মানে: সেই খানা যা নিজের ষ্টাটার্স তথা মর্যাদা রক্ষার্থে খাওয়ানো হয়।

যাক, বিজ্ঞ বন্ধুর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলাম, তাছাড়া কুলখানি শব্দের একটা অর্থ তো পেয়ে গেলাম। সেই অর্থে আপনার কুলখানির ঘটনাটা সঠিক হয়েছে। অনেক ধন্যবাদ
333111
০২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১০:৪১
মু নূরনবী লিখেছেন : লোকমান ভাই আমার এক ভগ্নিপতি থাকে লোহাগড়া...তার বাসায় বেড়াতে গেলে কাজের বুয়া বলে তার মেয়ের বিয়েতে চার লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে!!!!

কি বলব বলেন!
333119
০২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:০২
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : বদ রসমের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত..কি করার আছে?..ধন্যবাদ..
333124
০২ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:১৯
সিটিজি৪বিডি লিখেছেন : ঠিক বলেছেন। টাকা না থাকলেও কর্জ করে হলে করতে হয়।
333137
০২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:২২
আহমদ মুসা লিখেছেন : কেউ মারা গেলে চট্টগ্রামের আঞ্জলিক রেওয়াজ অনুযায়ী মেজবান নাম দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য ইছালে সাওয়াবের নিয়তে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের দাওয়াত খাওয়ানোর প্রথা চালু আছে। চট্টগ্রামের বাইরে এটাকে সম্ভবত কুলখানী হিসেবে অবহিত করা হয়। বেদআতপন্থী অর্ধশিক্ষিত “খোনকার” টাইপের মানুষের অর্থ উপার্জনের একটি সহজ উপায় হিসেবে এটিকে উপলক্ষ বানাতে গিয়ে সমাজে আজ এই রেওয়াজটাকে কোন কোন গরীব ও দরিদ্র পরিবারে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশদের উপর এক বদ রচম চালু হয়েছে যা অনেকের ক্ষেত্রে এই সামাজিক রীতি ও স্ট্যাটাস রক্ষা করতে গিয়ে অযৌক্তিক আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। গ্রামীন ব্যাংক থেকে পাওয়া লোনের টাকা দিয়ে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা মেজবানের আয়োজন করে পরবর্তীতে সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গৃহপালিত দুধের গাবি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধের ঘটনা ঘটেছে।
333171
০২ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৭
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
সমাজের বাঁকে বাঁকে কুসংস্কার জেঁকে বসেছে।
তাড়ানো অনেক কঠিন। ফেনী ও নোয়াখালির এলাকায় বলে মৃত ব্যক্তির জন্য জিয়াফাত বলে, আঞ্চলিক ভাষায় "জেয়াবত" বলে।
বাবা মায়ের মৃত্যুতে খাবার না দিয়ে মানুষ কি বলবে, এ লজ্জা থেকে এসব অনুষ্ঠান করা হয়। গরীবের নামে অনুষ্ঠান হলেও ধনী অতিথিরাই প্রধান্য পায়।
সুন্দর ও সচেতনতামূলক পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
333206
০২ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এইভাবে উৎসব করে শোক কিভাবে প্রকাশ করা হয় বুঝিনা!!
তবে এই খাওয়াটা ভাল লাগে। তাই এমন অনুষ্ঠান বন্ধ না হলে আমার মত কয়েকজনের লাভ ই!!!
333220
০২ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : সামাজিকতার নামে এই সব বেদাতী কাজ থেকে আমরা কি কখনো বেরিয়ে আসতে পারবোনা ?? এই কুলখানীতে মরহুমের কি উপকার হবে? আমার তো মনে হয় উপকারের চেয়ে উনি আরোও বেশি গুনাগার হবেন। ধন্যবাদ আপনাকে
333267
০২ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:৪০
আবু জারীর লিখেছেন : বিষয়টা কতটুকু ইসলামিক তা যারা অনুষ্ঠান করে তাদের ভেবে দেখা উচিৎ।
১০
333280
০৩ আগস্ট ২০১৫ রাত ১২:৪৮
আফরা লিখেছেন : সামাজিকতা রক্ষার জন্য আমার ইসলাম বর্হিভূত কাজ করি কিন্তু সমাজ থেকে এগুলো দুর করার চেষ্টা করি না কেন !!

এই কুলখানীতে মরহুমের কোন উপকার হবে বলে মনে হয় না তবে সবুজ ভাইয়াদের মত কিছু লোকের মজা করে খাওয়া হবে ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File