ইতেকাফ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা- ৪
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৪ জুলাই, ২০১৫, ০৯:৫৯:৪৫ সকাল
ইতেকাফের টাকা!
ইতেকাফের তৃতীয় জন অর্থাৎ আমার দ্বিতীয় বন্ধু, জনাব আব্দুর রহমান জানতে চাইলেন আমি টাকা নেব কি না। ব্যপারটা বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ চুপ থাকলাম এবং মনে মনে ভাবতে লাগলাম, যিনি নিজেই হত দরিদ্রদের একজন তিনি আমাকে টাকা দেবেন! জিজ্ঞেস করলাম, কিসের টাকা- কেন দিতে চান? আমার প্রশ্ন শুনে তিনি আমতা আমতা করতে লাগলেন।
এই সুযোগে প্রথম বন্ধু আব্দুসছালাম বিষয়টি লুফে নিয়ে ‘টাকা নেব কি না’র যে ব্যাখ্যা দিলেন তাহলো- মসজিদ কৃতপক্ষ মুসল্লিদের নিকট থেকে ইতেকাফের নামে চাঁদা সংগ্রহ করেন এবং সেই টাকা আগ্রহী ইতেকাফে বসা ব্যক্তিদের মধ্যে বন্টন করে দেন। গতবছর ছয়জন ইতেকাফে অংশ নিয়েছিলেন, যা টাকা সংগৃহীত হয়েছিল তা একজন নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বাকী ৫ জনের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়েছিল। আমার টাকা নেয়া না নেয়ার উপর বাকী দু’জনের পরিমাণ নির্ভর করছে। তাই দরিদ্র আব্দুর রহমান নিশ্চিত হতে চান টাকাটা দু’ভাগ হবে নাকি তিন ভাগ হবে নাকি সবটাই তার হবে। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম এই বলে যে, আমি টাকার জন্য ইতেকাফ করতে আসিনি। যাই হোক তিনি আপাতত নিশ্চিত হলেন টাকাটা তিন ভাগ হচ্ছে না।
জানতে পেরেছি বিগত কয়েক বছর যাবত আব্দুর রহমান এই মসজিদে নিয়মিত ইতেকাফ করে আসছেন। সমাজকে দায়মুক্ত করার জন্য মসজিদ কতৃপক্ষ তাকে ম্যানেজ করে আসছেন এভাবে। বিষয়টি জানতে পেরে মসজিদ কতৃপক্ষ এবং খতিবের উপর বেশ বিরক্তি আসলো এজন্য যে, প্রতিবছর ঈদের জামাতে রুমাল নিয়ে ইতেকাফের টাকা তোলার এই বিরক্তিকর অবস্থা দেখলে কোন হতদরিদ্র ব্যক্তি টাকার লোভে ইতেকাফে আগ্রহী হলেও সমাজের সম্মনজনক অবস্থানে থাকা ব্যক্তিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা তৈরী হবে। আমি প্রতিবছর পেরেড ময়দানে ঈদের নামায আদায় করলেও এবার বৃষ্টির কারণে এ মসজিদেই পড়েছি। দু’জন লোক যখন রুমাল নিয়ে ‘ইতেকাফের টাকা ইতেকাফের টাকা’ বলে হাঁক দিচ্ছিল তখন বেশ লজ্জা বোধ হয়েছিল এজন্য যে, আমিওতো ইতেকাফকারীদের একজন, লোকেরা ভাববে কি?
মসজিদের খতিব সাহেব প্রতি জুময়ার বয়ানে যদি ইতেকাফের ফজিলত এবং গুরুত্ব তুলে ধরতেন তাহলে সমাজের অন্তত কয়েকজন লোক পেয়ে যেতেন যারা টাকার জন্য নয়, সওয়াব এবং লাইলাতুল কদর পাওয়ার লোভে ইতেকাফে আগ্রহী হতেন। রামযান আশার আগেই তিনি সমাজের স্বচ্ছল লোকজনদের নিকট থেকে এভাবে কয়েকজন বাছাই করে নিতে পারতেন।
ঈদের পর আমার উক্ত ধারণা এবং অভিযোগ মসজিদ কতৃপক্ষের সাথে শেয়ার করেছি। তাদের সাথে আলোচনায় বুঝতে পারলাম, খতিব সাহেব ইতেকাফের চাঁদা তোলার সিস্টেম চালু করতে পারার জন্য নিজেকে বড় আবিস্কারক ভাবতে লাগলেন। ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ মসজিদ প্রতিষ্ঠাতার প্রতিনিধির নিকটও সংস্কারের কোন আগ্রহ দেখলাম না।
চলবে......
বিষয়: বিবিধ
২৭২৭ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইতেকাপের মর্যাদা নিয়ে আমাদের গ্রামের মসজিদে আলোচনা হত, এসব শুনে আমি প্রভাবিত হয়েছিলাম, যার কারনে বন্ধু বান্ধব সহ স্কুল জীবনে বহুবার ইতেকাফ করেছি। আপনার পরামর্শ সঠিক যে ঈদের আগের ঈমামদের এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখা দরকার, কেননা পচারনায় বিরাট সুফল দেয়। অনেক ধন্যবাদ।
ব্যাপারটা এরকম না , কারণ যে ক্বুরআন পড়ে এবং অন্যকে তা শেখায় তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশী ।
কিন্তু আমাদের সমাজ এই মহান কাজটাকে সেরকম মনে করে না । এবং উক্ত মহান ব্যক্তিও ইনফিরিয়রিটি কমপ্লেক্সে ভোগে ।
দান যদি গোপনে করা হয় সেটা উত্তম এবং এর সাথে যদি দাতা ও গ্রহীতার নাম না প্রকাশ করা হয় তাও ভাল।
এরকম বেদআতী কাজ আসহাবুল হাদীছদের মাঝে পাওয়া যায়না এটা তাদের একটা সৈন্দয্য। আসহাবুল হাদীষ শির্ক ও বেদআতকে ঠিক সেভাবে ভয় পায় যেভাবে একজন ব্যাক্তি আগুনে লাফ দিতে ভয় পায়।
রমযানে এক নতুন মসজিদে সালাত আদায় করেছি, ইমাম সাহেব কওমি তিনি মসজিদের টাকা তোলার জন্য ওয়াজ করতে করতে বললেন, আল্লাহ কাল কেয়ামতে বলবে, (মসজিদের নাম)ধরে কে আমার এই মসজিদে দান করেছে?
চিন্তা করুন গায়েবের খবর তিনি মিম্বারে বসেই বলেদিচ্ছেন!!! আশ্চর্য হই! যখন দেখি এই সকল নামধারী মাওলানা সমাজে ইমামের দায়িত্ব পালন করে!! আর মানুষগুলোও প্রতিবাদহীন যেন নিরেট কাঠখন্ড মাটিতে পুতে রাখা।
জাজাকাল্লাহু খায়র।
কতৃপক্ষ বা কেউ কো গিফ্ট দিলে সেটা ভিন্ন কথা। মেহেদিবাগ মসজিদে খাবার সরবরাহ করা হয়। অনেকে নগদ টাকা দিয়ে যান খাবারের জন্য। এটাও সমস্যা নয়, কিন্তু ইতেকাফের জন্য টাকা তোলার চেয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করাই উত্তম। এটাতো কোন চাকুরী নয় যে টাকা দিতে হবে।
এদেশেও শিরক -বিদআতের বিষবৃক্ষ অনেক শক্ত...
মূর্খতার পচন ধরেছে একেবারে মাথায়।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন