ইতেকাফ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা- ৩
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৩ জুলাই, ২০১৫, ০৭:৩২:০৭ সকাল
আমরা ছিলাম তিন জন। দ্বিতীয় জন ছিলেন কর্মজীবন থেকে অবসর প্রাপ্ত সত্তরোর্ধ বয়সের পূর্ব পরিচিতদের একজন। তাঁর ইসলামী জ্ঞান এবং আকীদা-আমল ছিল তথাকথিত সুন্নী মতাদর্শ তথা মাজার-মিলাদ-কেয়াম ভিত্তিক। তৃতীয় জন ছিলেন আশি পার হওয়া দরিদ্র শ্রেণীর একজন। লেখা পড়া মোটেই জানেন না কিন্তু তার মধ্যে ইসলামের ব্যাপারে কিছুটা পরিচ্ছন্ন ধারণা লক্ষ্য করলাম। তিনি জানিয়েছেন, অনেক আগে সিলেটের একটি মাহফিলে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ওয়াজ শোনার পর থেকে তাঁর ভক্ত হয়ে যান এবং সেই থেকে কেসেটে এবং সুযোগ হলে সরাসরি তাঁর আলোচনা শুনে শুনে নিজেকে এতটুকু তৈরী করেছেন। কুরআন অধ্যয়নের সময় আমার কাছে বসে যেতেন এবং তাঁর শোনার সুবিধার জন্য আমি একটু আওয়াজ দিয়ে পড়তাম। এই বয়সেও একজন বকলম মানুষের জ্ঞানার্জনের আগ্রহ সত্যিই শিক্ষনীয়।
একাধিক বনি আদম একত্রে থাকলে একটু আড্ডাবাজি হওয়া স্বাভাবিক। আমরাও এর উর্ধে ছিলামনা। আমাদের মধ্যে সংঘটিত আড্ডাকেও সু-কৌশলে শিক্ষনীয় এবং ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত করার চেষ্টা করেছি। একদিন কথা প্রসঙ্গে দ্বিতীয় ব্যক্তি বললেন, তিনি আজমীর শরীফ থেকে খাজা বাবার মাজার জেয়ারত করে আসার পর থেকে তার ছেলের ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি শুরু হয়েছিল, সে ধারাবাহিকতায় এখন বেশ ভালই চলছে তার ব্যবসায়। মূলত ‘কেউ ফিরেনা খালি হাতে, খাজা বাবার দরবার হতে’ জাতীয় শিরকি মতবাদ থেকেই এমন বিশ্বাস ভদ্রলোকের। এসব আকীদা পোষণকারীরা মনে করেন খাজার নামে ওরশ করলে এবং মাজারে গিয়ে ওনার কাছে কিছু প্রার্থনা করলে তা পাওয়া যায়। আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমন লোকদের বৈশয়িক উন্নতি হতেও দেখেছি। আল্লাহ দয়া করে কুরআনের জ্ঞান দান না করলে এসব দেখে আমি নিজেও হয়ত গোমরাহ হয়ে যেতাম। কুরআন বলছে- আল্লাহ এসব লোককে ঢিল দিয়ে রেখেছেন, যারা গোমরাহির দিকে স্বেচ্ছায় ধাবমান।
তার কথা শুনে কান গরম হওয়া শুরু করলেও খুবই ধৈর্যে্যর সাথে কথাগুলো শুনে নিয়ে বললাম, এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের আলোকে আমার কিছু কথা আছে, যদি আপনি শুনতে চান তাহলে বলতে পারি। তার শুনার আগ্রহ তৈরী করার পর বললাম, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং বায়তুল মুকাদ্দাস এই তিনটি বরকতময় মসজিদেই কেবল জিয়ারতের উদ্যেশ্যে ভ্রমনের অনুমতি দিয়েছেন। তাছাড়া আল্লাহ ব্যতিত কোন মাজারের নিকট কিছু চাওয়া মোটেই জায়েয নেই।
তিনি বললেন, আমি সরাসরি খাজা সাহেবের নিকট কিছু চাইনি, ‘আমি বলেছি খাজার উসিলায় যেন আল্লাহ আমাদের আশা পূর্ণ করেন। দুনিয়াতে যেমন বড় বিচারকের নিকট যেতে হলে উকিল ধরতে হয় তেমনি আল্লাহর কাছে চাইতে হলেও পীর বুজুর্গের সাহায্য নিতে হয়।’
তার কথায় হাসি সংবরণ করে বললাম, আল্লাহ বলেছেন, “উদউনী আসতাজিবলাকুম” অর্থাৎ আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।” তিনিতো কোন উসিলা ধরে তাঁর নিকট কিছু চাইতে বলেন নি। আল্লাহকে বাদ দিয়ে এভাবে কোন মাজার আর বুজুর্গের কাছে কিছু চাইলে বা তাদের উসিলায় কিছু চাইলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন।
এভাবে সুযোগ পেলেই যু্ক্তি সহকারে তাদের ভুলগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমল করুন আর না করুন অনেক বিষয়ে তিনি আমার সাথে একমত হতে বাধ্য হয়েছেন এবং স্বীকার করেছেন তাদের আলেম মৌলভিরা সঠিক বিষয়টি তাদের সামনে তুলে না ধরার কারণে অধিকন্তু তাদের প্ররোচনাতেই সাধারণ মুসলমানেরা নানা রকম ভুল ও গোমরাহিতে নিমজ্জিত। আল্লাহ আমার এ বন্ধু এবং সকল মানুষকে গোমরাহি থেকে ফিরে আসার তাওফিক দন করুন।
চলবে.......
বিষয়: বিবিধ
১৪০৫ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বদ্দা মসজিদে মসজিদে গিয়ে চিল্লা দিয়ে মানুষের আক্বীদা ঠিক করার ক র্ম সূচী হাতে নেয়ার সময় কিন্তু হয়ে গেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন