ইতেকাফ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা- ২
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২১ জুলাই, ২০১৫, ১২:০২:৪৩ দুপুর
আল্লাহর নির্দেশ, “ওয়ারাত্তিলিল কুরআনা তারতিলা”; অর্থাৎ এবং কুরআন আবৃত্তি কর সুবিন্যস্ত-ভাবে ধীরে সুস্থে।” এর পরিবর্তে বেশীর ভাগ মুসল্লির ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে ঝড়ের গতিতে যিনি নামাযে কুরআন তেলাওয়াত করছেন, তাকে বুঝানোর সাধ্য কার আছে? ইমাম কাম খতিবকে বলেও কোন লাভ নেই। কারণ তিনিইতো একবার শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন তেলাওয়াত করার কারণে একজন মুয়ায্যিনকে ওয়াহাবী খেতাব দিয়ে বিদায় করেছিলেন চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে (বাস্তবে উনি কাওমি মাদ্রাসা থেকে কুরআন শিখেছিলেন)। তাকে বলে যে কোনই লাভ হতোনা তা আরো একবার পরিস্কার হলো পরের দিন ফজরের নামাযের সময়। তিনি সূরা ইনফিতর তেলাওয়াত করতে গিয়ে ভুলে দু’টি আয়াত ফেলে যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে মুয়ায্যিন সাহেব লোকমা দিয়ে তা স্মরণ করে দিলেন, এটাই নিয়ম। নামায শেষে মুসল্লিরা চলে যাওয়ার পর ইমাম সাহেবের কী যে ভয়ংকর মুর্তি, তা না দেখলে ভাষা দিয়ে বোঝানো কঠিন হবে। লোকমা দিয়ে তাকে বেইজ্জত(!) করার কারণে মোয়ায্যিনকে তুই তুকারী এবং গালাগাল করে মারতে উদ্যত হলেন। বললেন, বেটা বেয়াদব আমাকে লোকমা দিলি কেন? আমি কি তারাবিহ পড়াচ্ছি নাকি? নামায তো হয়ে গেছে... ইত্যাদি ইত্যাদি। জীবনে কত বড় বড় আলেমের পেছনে নামায পড়েছি, ভুল হলে সংশোধন করতেও দেখেছি কিন্তু আজকে যা দেখলাম তা এক বিচিত্র অভিজ্ঞতাই বটে।
উক্ত ইমাম নাকি একটি কামিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল এবং হাদীসের শিক্ষকও। প্রকৃত পক্ষে এ লোকগুলো সংশোধন প্রয়াসী নয় বলেই হয়ত আল্লাহ সুবহানাহুয়াতায়ালা তাদেরকে ঢিল দিয়ে রেখেছেন। এই সুযোগে তারা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে ভেজাল মিশিয়ে দ্বীনকে কঠিন করে নিজেদেরকে সবচেয়ে বেশী দ্বীনদার এবং নবীর (সাঃ) সবচেয়ে পেয়ারা উম্মত প্রমাণের অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন।
মাগরিবের সময় দেখতাম, মোয়ায্যিন পানি পান করে নিজে ইফতার করে নিলেন এবং তারপর আযানের আগে তাদের চালু করা সেই দরূদ উচ্চারণ করলেন আযানের ধ্বনির মতো করে। তারপর কিঞ্চিত বিরতি দিয়ে আযান ফুকারলেন। ওদিকে আযানের আল্লাহু আকবার শব্দ শোনে ইফতার করার জন্য রোযাদারগণ উদগ্রীব হয়ে বসে আছেন নিজ নিজ ঘরে। আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন ইফতার দ্রুত করার জন্য কিন্তু তারা আযানের আগে দুরূদ যোগ করে নিজেরা বেশী আবেদ সাজতে গিয়ে এটাকে করলেন বিলম্বিত।
ইমামতির জন্য দাঁড়িয়ে ইমাম সাহেব সরাসরি আল্লাহু আকবার বলে শুরু করে দিলেন ঠিকই, ওদিকে মুসল্লিদেরকে ‘নাওয়াই তুয়ান’ এর যুদ্ধে লিপ্ত রাখলেন। সুযোগ পেলেই তারা নাওয়াইতুয়ান বলে নিয়্যত করার নসিহত করে থাকেন মুসল্লিদেরকে, এটাই নাকি উত্তম পদ্ধতি। অথচ নিয়্যত হচ্ছে মনের সাথে সম্পর্কিত একটি ব্যাপার। মুখে নাওয়াই তুআন বলে নিয়্যাত করার কোন নিয়ম সুন্নাতে রাসূল বা আছারে সাহাবা থেকে পাওয়া যায়নি। তারা যেন দ্বীনদারীর ক্ষেত্রে আল্লাহর রসূল এবং সাহাবায়ে কেরামের চেয়েও এগিয়ে!
যদি সময় বাঁচানোর জন্য তারাবিহ সালাতে অতি দ্রুত তেলাওয়াতের প্রশ্ন আসে তাহলে আমি হিসেব করে দেখেছি ২০ রাকায়াত তারাবিহর ৪ রাকায়াত পর পর তাদের বানানো দোয়া-মোনাজাত এবং নামায শেষে মিলাদ-কেয়ামে যে সময় ব্যয় করে, তাতে সূরা তারাবিহ সালাতের চেয়ে বেশী সময় ব্যয় হয়ে থাকে। এসব বাদ দিয়ে হলেও কুরআন তারতীলের সাথে উচ্চারণ করা উচিৎ ছিল।
তাদের ৪ রাকায়াত পর পর দোয়া এবং মোনাজাতের কথাগুলো সত্যিই আকর্ষণীয়, শিরক মুক্ত এবং অর্থবোধকও বটে। তবে কথা হলো- দুনিয়াতে সুন্দর সুন্দর আকর্ষণীয় কথার তো শেষ নেই। তাই বলে কি তা আমাদের ইবাদাতে যোগ করে তা দীর্ঘায়িত করতে হবে? আল্লাহর রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামগণ কি কম বুঝেছিলেন? তবে মিলাদ কেয়ামের কোরাশের সময় জঘন্য জঘন্য বাক্য উচ্চারণ করে মজা পেয়ে থাকেন ওনারা। মিলাদ কেয়ামের কোরাশের মধ্যে মিস্কিনশাহ-মাকড়সা(!) থেকে শুরু করে খাজা এবং আব্দুল কাদের জিলানির প্রশংসায় থাকেন পঞ্চমুখ। কোরাশের মধ্যে বলতে শুনেছি- আমাদের যেমন কাবা আছে তেমনি কাবারও নাকি কাবা আছে। আমাদের কাবা মক্কায় আর কাবার কাবা নাকি মদীনা।(নাউযুবিল্লাহ্)
অন্য সময় নামায শেষে তাদের এসব বকোয়ায পেছনে ফেলে বেশীরভাগ মুসল্লির সাথে বাসায় ফিরে আসা হতো। এখন মসজিদ থেকে বের হবার সুযোগ না থাকার কারণে তাদের সাথে যোগ দিয়ে সর্বক্ষণ দুরুদে ইবরাহীম পড়তে থাকতাম।
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হাঁসব না কাঁদব বুঝলাম না, তবে আকিদার বিষয়ে এই অঞ্চলের মানুষকে খুনোখুনি করতে দেখেছি, আর এগুলো উসকিয়ে দেন এক প্রকার ধর্ম বিক্রিকারী নামধারী আলেম।
কাজিনের বিয়েতে গেছি, আত্বীয়সজন সবাই এসেছে, বরযাত্রীও এসেছে ঠিক সময়ে। মহল্লার ঈমাম সাহেবও উপস্থিত, মুস্কিল হয়েছে কাজী সাহেবের দেখা নাই। মোবাইলও বন্ধ। জটিল এক অবস্থা। একসময় কনের পিতা বললেন, "থাকেতো সারাক্ষণ মালের উপর, আজকেও আছে।" এলাকাবাসী কিছু তথ্য দিলেন তাতে মনে হলো ঘটনা সত্য।
আমাদের পরিচিত এক মসজিদের ঈমাম নিয়মিত গাঁজা টানতেন। তাকে জিজ্ঞাসা করলে বলতেন, "গাঁজা নিষেধ এ কথা কোরান-হাদীসে কোথাও বলা হয় নাই।"
রাসূল (সাঃ) এর মাজার জিয়ারত করা হজের অংশ না হলেও বেশীর ভাগ ঈমাম এটাকে এমনভাবে বয়ান করেন যে মদীনাতে না গেলে হজই নাকি হবেন না ! (নাউজুবিল্লাহ)
- এ কথা বলে তারা সরল মনা মুসল্লিদেরকে বিভ্রান্ত করেন ।
অথচ রাসূল (সাঃ) তার কবরকে মূর্তির মত ব্যবহার করতে না করেছিলেন ।
আযান এর আগে এই বিরক্তিকর দরুদ এর মাধ্যমে এরা যে কি সওয়াব কামাতে চায় সেটাই বুঝিনা। দুর্ভাগ্য সরকার এর প্রশ্রয়ে এখন চট্টগ্রামে এই ধরনের ইমাম এর সংখ্যা বেশ বেড়ে গেছে। এরা ফতোয়া দিয়ে পরলে সব মুসলিমকেই কাফির বানিয়ে দেবেন।
আশির দশকে পাকিস্তানী তথাকথিত এক পীরের প্ররোচনায় বাংলাদেশে আযানের আগে এমন তামাশা শুরু হয়। এটাকে আমি ‘অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ’ বলে থাকি।
কিয়মত আসন্ন তাই এরা দ্বীনকে বিক্রি করবেই।
আপনি আকিদা নিয়ে যা বললেন, তাতে তো মনেহয়না যিনি আপনাকে বলেছেন তিনি আকিদা সম্মন্ধ্যে কিছু জানেন??
কেননা আকিদা ঠিক হলে সে কিভাবে আবার বোতল টানে? আশ্চর্য!!!
সে তো বোতল টানার জন্য ইসলামের আইনে দোড়ড়া খাওয়ার উপযুক্ত যদি ইসলামি সরকার হয়।
যে আপনাকে বলেছে, সে হয়তো আপনাকে বুঝাতে পারেন নি। অবশ্যই আকিদা বা বিশ্বাসের গুরুত্ব সালাফেসলেহীন থেকে চলে আসছে।
ধন্যবাদ বদ্দা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন