ইতেকাফ এবং বিচিত্র অভিজ্ঞতা- ১

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২০ জুলাই, ২০১৫, ০১:০০:৪০ দুপুর

সদ্য বিদায়ী মাহে রমাদান শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগেই ভাবনায় এলো, জীবনের অনেকগুলো বছর ফেলে আসলাম, কিন্তু যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও ইতেকাফের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতটির আমল এখনো করা হলোনা আমার। আমাদের সমাজে অতি বৃদ্ধ বয়সের জন্য এটি রেখে দেয়া হলেও আমি বয়সে সেই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো, তার তো কোন নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং সাথে সাথেই নিয়্যাত পাকা করে ফেললাম, শরীয়াহ সম্মত কোন সমস্যা সামনে না আসলে এবার ইতেকাফ করবো- ইনশাআল্লাহ। দোকানের ম্যানেজারকে এই শর্তে তিন মাসের ছুটি দিলাম, যেন কোন অযুহাতেই তিনমাসের বেশী তথা ১০ রমাদানের বেশী সময় দেশে অবস্থান না করেন। তিনি যথা সময়ে ফিরে আসলে আমি ২০ রমাদানের আগেই দেশে এসে ইতেকাফের প্রস্তুতি নিতে থাকি।

আমার চতুর্দিকে অনেকগুলো মসজিদ থাকার পরও মসজিদ নির্বাচনে বেশ সমস্যায় পড়তে হলো। একেতো প্রায় বেশীরভাগ মসজিদে নানা রকমের বিদয়াত প্রচলিত, তার উপর রয়েছে তারাবিহ নামাযে সাংঘাতিক রকমের দ্রুত তেলাওয়াত, যা আমার মোটেই পছন্দ নয়। জানতে পারলাম আমাদের মহল্লা মসজিদে ১৫ রমাদানেই খতম তারাবিহ শেষ হয়েছে, ‍সুতরাং ছোট ছোট সূরা বা আয়াত দিয়ে তারাবিহ পড়ালে খুব দ্রুত পড়ার কথা না। কিন্তু বাচ্চারা বললো প্রতি রাকায়াতে ৩/৪ আয়াত করে পড়া হচ্ছে, তারপরও খুব হুলস্তুল করে তেলাওয়াত করা হয়।

সিদ্ধান্ত নিলাম আমি নিজে সেখানে তারাবিহ পড়ে দেখে নেবো, যদি মোটা মুটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের তেলাওয়াত হয় তাহলে আমাদের এই মহল্লা মসজিদেই ইতেকাফ নেবো, আর না হলে বাসা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামের অন্যতম অভিজাত আবাসিক এলাকা, মেহেদিবাগ মসজিদে নেবো। শুনেছি ঐ মসজিদে সুন্দর তেলাওয়াত হয় এবং বিদআ’ত তুলনামূলক কম।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগের দিন মহল্লা মসজিদে তারাবিহ পড়ে দেখলাম, মোটামুটি ভালোই তেলাওয়াত হলো। সুতরাং সিদ্ধান্ত পাকা করে পরের দিন যথারীতি বাদ আসর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করলাম। মাগরিব এবং এশা নামাযে ভালোই তেলাওয়াত হলো, কিন্তু তারাবিহ’তে শুরু হলো সেই ঘন্টায় ২৬০ মাইল বেগে ঝড়ের গতিতে তেলাওয়াত, অথচ সূরা ফিল থেকে নাস দিয়েই পড়ানো হচ্ছিল নামাযটা। লক্ষ্য করে দেখলাম, গতকাল যে মৌলভি তারাবিহ পড়িয়েছেন তিনি আজ নেই পড়াচ্ছেন অন্যজন।

নামায শেষে খোঁজ খবর নিয়ে জানলাম, গতকাল যিনি তারাবিহ পড়িয়েছেন তিনি আজকেরটার বদলে পড়িয়েছেন, আজকেরটাই প্রতিদিন পড়াবেন। মনটা একেবারে খারাপ হয়ে গেলো। ইতেকাফতো আর ভঙ্গ করতে পারি না, তাই বাধ্য হয়েই এখানে থাকতে হলো। তবে মনে মনে চিন্তা ফিকির করতে থাকলাম তারাবিহ’র ইমাম কাম-প্রথম মোয়াজ্জিন সাহেবকে আরেকটু ধীর গতিতে তেলাওয়াতের পরামর্শ কি ভাবে দেয়া যায়। একেতো আমি প্রবাসী, তার উপর উক্ত ইমাম নতুন, যে কারণে তাঁর সাথে আমার ভাব জমে ওঠেনি তখনো। তাছাড়া লক্ষ্য করে দেখলাম জনাবের গলায় ইয়া বড়া কয়েকটি তাবিজ ঝুলানো রয়েছে। তাবিজ ওয়ালা অশিক্ষিতরা যেমন তেমন, যেসব শিক্ষিত লোক তাবিজ-কব্জ ব্যবহার করেন তাদেরকে আমার অ-বিবেচক মনে হয়। তাই ভয় হচ্ছিলো তাকে তেলাওয়াতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উল্টা পাল্টা কোন জবাব দিয়ে আমার মানটা আরো খারাপ করে দেন কি না। অনেক ভেবে চিন্তে পরের দিন এশা নামাযের আগেই তার সাথে একটু আলাপ পরিচয় করে নিয়ে খুবই বিনয়ের সাথে আনুরোধ করলাম, তারাবিহ পড়ানোর সময় এরেকটু ধীর গতিতে পড়ানো যায় কিনা। জবাবে তিনি বললেন এখানে বেশীর ভাগ লোক দ্রুত তেলাওয়াতে তারাবিহ পড়তে চায়। ইতেকাফে বসে ঐ মোল্লা সাহেবের সাথে এ নিয়ে আর কথা বড়ানো সঙ্গত মনে করলাম না।

চলবে.....

বিষয়: বিবিধ

১২৩৯ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330785
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:৪৭
হতভাগা লিখেছেন : ইতিকাফ এ এখনও বসা হয় নি । নিয়ত আছে - ইন শা আল্লাহ ।

তারাবীহ এর সময় এক খতম ক্বুরআন তেলাওয়াতের টার্গেট না করে যদি সূরা তারাবীহ পড়ানো হয় ছোট ছোট অধিক পঠিত সূরা গুলো (সূরা ফিল - সূরা নাস) - তাহলে সাধারণ মুসল্লীদের মধ্যে তারাবীহ খতম না করে উঠে যাবার প্রবনতা কমে যেত ।

খতমে তারাবীহ তে ক্বুরআন তেলাওয়াৎ তাড়াহুড়ো করে পড়া হয় । ফলে মুসল্লীরা সেটা ফলো করতে পারে না এবং মনও সরে যায় পুনঃ পুনঃ নামাজ থেকে ।

মানুষকে যদি নিজ বাসায় নিজে নিজে এই রমজানে ক্বুরআন খতমের জন্য উৎসাহিত করা যায় এবং এর জন্য তাগাদা অনুভব করে - সেটা ভাল বলে মনে করি ।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০২
273217
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ আপনার নিয়্যত বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন।

আমাদের দেশে সাধারণ মুসল্লিদেরকে সওয়াবের লোভ দেখিয়ে যেনতেন ভাবে কুরআন খতমের মাধ্যমে মোল্লা-মৌলভিদের বার্ষিক একটি আয়ের ব্যবস্থা করা হয় মাত্র। এসব মোল্লাদের ধেকাবাজির কারণে সাধারণ মানুষেরা বুঝে নিয়েছে তারাবিহ মানেই তাড়াতাড়ি পড়ার বিষয়।
330791
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:১৪
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : মহান আল্লাহ আপনার ইতিকাফ কবুল করুন। ইতিকাফে কোরআনকে নিয়ে গবেষণা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
নামাজ দোয়ার পাশাপাশি টার্গেট কররে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরও স্টাডি করা যায়।
আমারও ইচ্ছা আছে যদি আল্লাহ তৌফিক দেন।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৬
273218
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে তাওফিক এবং সুযোগ দান করুন।
জ্বি, ঠিক বলেছেন,ওসময় সম্পূর্ণ একাগ্রতার সাথে স্ট্যাডি করা যায়।
330792
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:২১
ইকবাল মোর্শেদ লিখেছেন : আলহামদুলিল্লাহ। চমৎকার কাজ করেছেন। আমিও আগামি রমাদানে ইতিকাফ করার নিয়ত করেছি। আপনি যে সমস্যাগুলো এবার ফেইস করেছেন, আমার ভয় হচ্ছে -- আগামিবার হয়তো আমাকেও সমস্যাগুলো ফেইস করতে হতে পারে। আমিও চট্টগ্রামে থাকি। আমার বাসার কাছের মসজিদে ইতিকাফের ভাল সুযোগ নেই। আবার একটু দুরের মসজিদ -- আগ্রাবাদের বেপারিপাড়া মসজিদ -- পুরোই বিদআতিদের আড্ডাখানা। তাই, আমিও ভয়ে আছি। আদৌ কি পারবো মনমতো কোথাও ইতিকাফ করতে? :(

ভাইয়া, একটা ব্যাপারে সাহায্য করলে খুব কৃতজ্ঞ হব। আমার খুব ইচ্ছা ছিল অন্তত: রমাদানের একটা জুমুআর নামায ও ইদের নামায আম্মুকে মসজিদে নিয়ে পড়ানো। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম -- চট্টগ্রামে মহিলাদের নামায পড়ার মসজিদ বলতে গেলে নাইই, অন্ততঃ আমি যেখানে থাকি অর্থাত আগ্রাবাদে। তাই,মহিলাদের নামায পড়ার সুযোগ আছে এমন মসজিদের সন্ধান আপানার জানা আছে কি? আগ্রাবাদ, হালিশহর, চৌমুহনীর কাছাকাছি হলে অনেক ভাল হয়।
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:০৩
273076
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চট্টগ্রামে শুধু মেহদিবাগ সিডিএ জামে মসজিদে এই ব্যবস্থা আছে খুবই সুন্দর করে। মার্কেট ভিত্তিক কয়েকটি মসজিদে মহিলাদের নামাজের জায়গা থাকলেও জুমা পড়ার ব্যবস্থা নাই। সরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাত গুলিতেও এই ব্যবস্থা নাই।
২১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৬:০৮
273108
ইকবাল মোর্শেদ লিখেছেন : জাযাকাল্লাহু খাইরান কাছিরান সবুজ ভাই।

তথ্যের জন্য অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, কেউ বলতে পারেনি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আপনার মাধ্যমে উত্তরটা জানিয়ে দিলেন।

আর এটা খুবই দুঃখজনক যে চট্টগ্রামের মত বেশ বড় শহরে মাত্র একটা জামে মসজিদ আছে যেখানে মহিলারা নামায পড়তে পারে, যেখানে ঢাকায় সে তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে আছে। ইনশাল্লাহ, চট্টগ্রামেও এ সংখ্যাটা একদিন বাড়বে।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১২
273220
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ আপনার আশা পূর্ণ করুন।
আমার হয়ে তথ্য দেয়ার জন্য সবুজ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ।
330794
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:৪১
নজরুল ইসলাম টিপু লিখেছেন : আপনার সুন্দর পোষ্টটি পড়ে দারুন লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে। এই বৎসর তারাবী পড়তে গিয়ে আমিও ব্যতিক্রম ধর্মী বিভ্রাটে পড়েছিলাম।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৩
273221
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ টিপু ভাই। আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করাবেন আশা করি।
330805
২০ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০৩:২৯
আবু জারীর লিখেছেন : ইমাম শক্ত হলে মুসুল্লি ফ্যাক্ট না। ইমামরাই মসজিদ কমিটি আর মুসুল্লিদের গোলাম হয়ে গেছে আর মূর্খতা তো আছেই।
ধন্যবাদ।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৪
273222
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনার সাথে শতভাগ একমত।
330836
২০ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৮
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : এই রকমের ঈমাম গুলোই ইসলামে অনেগ গুলো ফেরকা তৈরি করেছে, যেটা সাধারণ মুসলিম রা বুঝতেই পারেনা, তাই তারাও না বুঝে ঐ পালতু ঈমাম কে সহযোগিতা করে যায়। আপনার আশা পুরণ না হওয়াতে খারাফ লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৫
273223
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই।
330837
২০ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৮
শেখের পোলা লিখেছেন : ইবাদতের জায়গায় এসেছে দায়সারা দায়৷ তাই এ অবস্থা৷ ধন্যবাদ৷
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৬
273224
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন শেখের পোলা ভাই। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
330838
২০ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৯
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ভাল উদ্যোগ লোকমান ভাই। ইচ্ছে ছিল, পারিনি। দেখি আগামী বছর থেকে ইনশাল্লাহ।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৬
273225
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহু তায়ালা।
330865
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৯:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমরা ইবাদত এর ক্ষেত্রেই তাড়াতাড়ি আর বিনোদন এ দেরি করি!
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৭
273226
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিক বলেছেন সবুজ ভাই।
১০
330909
২১ জুলাই ২০১৫ রাত ০২:৩০
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহামাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু। বরাবরের মত সুন্দর লেখা উপহার দিয়েছেন! ধন্যবাদ।
২১ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৮
273227
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ, আব্দুর রহিম ভাই।
১১
331678
২৬ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:২২
আহমদ মুসা লিখেছেন : আপনি যে দিন এতেকাফের নিয়তে ফেইসবুক এবং ব্লগকে বিদায় দিয়ে মসজিদমুখী হয়েছেন সেদিন থেকে আমিও নেট ব্যবহার করার সুযোগ পাইনি। গতকালই মাত্র অফিস খুলেছে। নেটে লগিং করলাম গতকাল থেকেই। অবশ্য ফেবুতে আপনার সর্বশেষ ৫ম কিস্তি পড়েছিলাম গতকাল। আজ ব্লগে এসে বাকীগুলো পড়ার সুযোগ গ্রহণ করলাম। ধন্যবাদ এতেকাফের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File