ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ১৫

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৫ জুন, ২০১৫, ০৪:১৮:৪৮ বিকাল

আব্দুল কাইউম খান সাহেব ছিলেন আমাদের হেড স্যার। এস এস সি'র কোচিং এ তিনি আমাদের পাটিগণিত ক্লাস নিতেন, যদিও তিনি অংকের শিক্ষক ছিলেন না। অংকের মধ্যে সরল অংক আমার নিকট খুবই প্রিয় ছিল এবং ঝট পট করে ফেলতে পারতাম। একদিন একটা সরল অংক বুঝাতে গিয়ে স্যার ভুল করতেছিলেন। আমি একটু গৌরবের সাথেই সমাধান করে দিলাম। আমার অতি উৎসাহী হামবড়া ভাব দেখানোর কারণে মনে হলো স্যার যেন একটু মনোক্ষুন্ন হয়েছেন। তিনি কিছু বলতে চেয়েও বলেননি। স্যারের মনোক্ষুণ্ণ হওয়ার বিষয়টি বন্ধুদের দৃষ্টিও এড়ায়নি। এ নিয়ে অবশ্য আমাদের মধ্যে আর কোন কথা হয়নি, তবে আমার এ অনাকাঙ্খিত আচরণের ফল পেয়েছিলাম পরীক্ষার হলে।

এস এস সি পরীক্ষায় একটি সাধারণ সরল অংকে আমার ২০ মিনিট চলে যাওয়ার পর ও মিলাতে পারিনি। যেখানে অংকে লেটার মার্ক পাওয়ার কথা সেখানে আমি পেয়েছি ৬৫ নাম্বার। শুধু তা’ই নয়, মাত্র ১২ নাম্বারের অভাবে ফার্ষ্ট ডিভিশন থেকে বঞ্চিত হয়েছি। অথচ আমি ছিলাম ক্লাসে ফার্ষ্ট বয়, টেস্ট পরীক্ষায়ও হয়েছিলাম প্রথম।

আমার কাঙ্খিত ফল না পাওয়ার পেছনে স্যারের মনোকষ্ট প্রধান কারণ কি না জানিনা, তবে আমি যে আচরণে ভুল করেছিলাম তা আমার নিকট স্পষ্ট ছিল। সে থেকে শিক্ষকদের সম্মানের প্রতি যথেস্ট নজর রেখেছি। শুধু শিক্ষক নয়, কারো নিকট থেকে একটি ক্ষুদ্র বিষয়ের ভালো জ্ঞান অর্জন করলে তাকেও মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে থাকি।

আমার উক্ত ঘটনার সাথে বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উশৃঙ্খল ছাত্র কতৃক শিক্ষক লাঞ্চনার যে ঘটনা অহরহ আমরা দেখতে ও শুনতে পাই তার তুলনা করার চেষ্টা করি। আমার উক্ত হামবড়া ভাব দেখানোর ফল যদি এমন হয়, এসব ‍উশৃঙ্খল ছাত্রের কি দশা হওয়া উচিৎ এবং হচ্ছে?

এর উপর চিন্তা ভাবনা করে যা বুঝেছি ; আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেসব লোকদেরকে ছোট-খাটো ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দিয়ে থাকেন, যাদের মনে আল্লাহর ভয় বিদ্যমান। যারা জালেম চরিত্রের তাদের লাগাম ছেড়ে দেন কিছু সময়ের জন্য, তারপর তাদেরকে পাকরাও করেন মজবুতভাবে। এমন জালেম চরিত্রের লোকদের জন্য দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় স্থানেই শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

আমরা অবশ্যই আমাদের সন্তান সন্তুতিদেরকে এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টা করবো, যাতে করে তারা শিক্ষকের মান-মর্যাদার প্রতি যথেষ্ট সতর্ক হয়। পক্ষান্তরে শিক্ষক নামের যেসব কলঙ্ক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নাস্তিকতা এবং আল্লাহদ্রোহিতার প্রতি উৎসাহিত করার চেষ্টা করে তাদের ব্যাপারেও সতর্ক করার চেষ্টা করবো। তাদেরকে লাঞ্চিত নয়, তাদের কুশিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান করার মানসিকতা তৈরী করবো। ইনশাআল্লাহ।

চলবে.......

বিষয়: বিবিধ

৯২২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327466
২৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১২
শেখের পোলা লিখেছেন : আমিন৷ ঠিক কথাই কারণ মানুষ বড়ই প্রতিশোধ পরায়ণ৷ ধন্যবাদ৷
২৭ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:০৭
269920
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ, ‘শেখের পোলা’ ভাই।
327495
২৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:৪০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাই আমার মনে হয় এই দুইটি বিষয়কে একসাথে করা ঠিক নয়। শিক্ষক এর সাথে আপনি হয়তো অহংকার প্রদর্শন করে থাকতে পারেন কিন্তু তাতেই আপনার একটি বড় ক্ষতি হবে সেটা বোধহয় আল্লাহতায়লার অবিচারি হওয়া মনে হবে কারো কাছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের দেশে শিক্ষক কে শ্রদ্ধা করার নামে অন্ধ অনুসরন করার শিক্ষা দেওয়া হয়। আমার জিবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি কিছু শিক্ষক "শিক্ষকদের ভুল ধরাও ভুল" এই বাক্যটি প্রায়ই বলতেন এবং এটাকে হাদিস হিসেবে চালাতেও চেষ্টা করতেন অনেকে!! শিক্ষক রাও মানুষ এবং তাদের ভুল হতে পারে। বিনয়ের সাথেও যদি কোন ছাত্র তা ধরিয়ে দেয় আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষক ই তাতে মনক্ষুন্ন হন। যার ফলে ছাত্ররাও ভুল শিখে আর সেই শিক্ষক নিজেও নিজের ভুল এর মধ্যে রয়ে যান।
২৭ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:১৭
269922
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন :
ধন্যবাদ সবুজ ভাই। আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে বিভিন্ন ভাবে পরিক্ষা করতে পারেন।
“শিক্ষকদের ভুল ধরা ও ভুল” বিষয়টি আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত। শিক্ষক ভুল করবে আমি ভুলটা শুদ্ধজ্ঞানে শিখবো, তা হতেই পারে ন। তবে প্রত্যক ’না’ বলার মধ্যেও শিষ্টাচার ও ভদ্রতা থাকা উচিৎ- এদিকটাই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি।
327498
২৫ জুন ২০১৫ রাত ১১:৪৩
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : প্রিয় গনিতবিদ, এখন পারবেন সরল অংক? এখনকার শিক্ষাব্যবস্থায় সরল অংক নেই, সব ডিজিটাল হয়ে গেছে। আপনি যে গণিতজ্ঞ, তা আপনার স্মৃতিশক্তিই বলে দিচ্ছে। ধন্যবাদ..
২৭ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:১৮
269923
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : এখন পারতে হলে নতুন করে শিখতে হবে!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File