ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ১৪

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২২ জুন, ২০১৫, ০২:০১:০৯ দুপুর

১৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর এসেম্বিলির শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত চালু হয়। একদিন কুরআন তেলাওয়াতের দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। আমি দুরু দুরু বুকে এবং কম্পিত কণ্ঠে সূরা ফাতিহা তেলাওয়াত করলাম। সেদিন ২য় পিরিয়ড ছিল আব্দুল গফুর স্যার এর ক্লাস। তিনি একদিকে ছিলেন মাদ্রাসা পাশ আলেম আবার অন্যদিকে বাংলা শিক্ষিত। ছাত্ররা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ওনার কথা শুনতো এবং মানতো। তিনি ক্লাসে এসেই এসেম্বিলিতে আমার সূরা তেলাওয়াতের প্রসঙ্গটি উত্তাপন করে তেলওয়াতে যে বেশ ভুল ছিল তা তুলে ধরেন।

আসলে আমি জানতামই না যে, আমার তেলাওয়াত অশুদ্ধ। মহল্লা মসজিদের মুয়াযযিনের নিকট যেভাবে শিখেছি সেটাই শুদ্ধ জ্ঞানে তেলাওয়াত করেছিলাম। পরে বুঝেছি মুয়াযযিন সাহেব এক ঘন্টা সময়ের মধ্যে ৪০/৫০ জন এক সাথে পড়াতেন। শুদ্ধ করে কুরআন শিখানো নয়, কোন রকেমে চাকুরী করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য।

স্যার জানতে চাইলেন, নামায পড়ি কি না। বললাম মাঝে মধ্যে পড়ি। আসলে আমি নামায পড়তে জানতামই না তখন পর্যন্ত। শামসুদ্দীন স্যারের ভয়ে যোহরের নামাযে শামিল হয়ে ইমামকে ফলো করে রুকু - সিজদা ইত্যাদি করতাম মাত্র। শুক্রবারে জুময়ার নামাযে গিয়ে ইমামকে ফলো করতাম। সত্যি বলতে কি তখন পর্যন্ত, এমন কি এস এস সি পরীক্ষা যখন দিচ্ছি তখন পর্যন্তও আমি ছিলাম দ্বীন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং গোমরাহ।

আমার দ্বীনদারী ছিল মাজার জিয়ারত, কথিত শরিয়তি মারেফতি এবং কাওয়ালী গানে হাজির হওয়া। মহল্লায় ওয়াজ মাহফিলের নামে আজে বাজে কেচ্ছার আসরে যোগদান ইত্যাদি। আমার গোমরাহীর এক ন্যাক্কার জনক ঘটনা ছিল- এস,এস,সি'র রোল নাম্বার লিখে দিয়ে আসছিলাম আমাদের স্কুলের নিচে আবস্থিত মিসকিন শা’র মাজারের মশারীর ভিতর। এমন হাস্যকর অপকর্মটির কথা স্মরণ হলে আল্লাহর নিকট লজ্জিত হই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করি। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রামের এই শিক্ষা যোনে অবস্থিত মাজারটির খাদেমের পক্ষ থেকে রটানো হয়েছে এখানে টাকাটুকা দিয়ে রোল নাম্বার লিখে দিয়ে গেলে ঐ বেটা পাশ করিয়ে দেয়। ফলে বর্তমানেও চলছে এই ব্যবসা।

সম্মানীত স্যার সেদিন ক্লাসে নামায এবং শুদ্ধ করে কুরআন তেলাওয়াতের উপর আমাদের উপযোগী করে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী আলোচনা পেশ করেছিলেন। তিনি বললেন, ‍মুসলিম আর কাফেরের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো নামায। আল্লাহর ইবাদাত না করে শুধুমাত্র নামের কারণে কেউ মুসলমান হতে পারে না। স্যারের কথাগুলি শুনে বেশ চমৎকৃত হলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, নামায শিখে নিয়মিত তা আদায় করবো। সেদিনই আন্দরকিল্লা গিয়ে আট কি ছয় আনা দিয়ে একটা নামাজ শিক্ষার ছোট পুস্তিকা কিনে নিলাম এবং যথা সম্ভব নামাযের নিয়ম শিক্ষা করে তা আদায় করা শুরু করলাম। পরে কুরাআন শুদ্ধ করে শিখার চেষ্টা করেছি।

সঠিক দ্বীনের সন্ধান লাভ করার জন্য আমি যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট ঋনী তারা হলেন; যথাক্রমে- আমার সম্মানীত শিক্ষক মাওলান আব্দুল গফুর স্যার, ১৯৭৮ সালে এস এস সি পরীক্ষা চলা কালে দাওয়াত পেয়েছিলাম যে প্রিয় ছাত্র সংগঠনের; ইসলামী ছাত্র শিবির, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং আবুধাবী ইসলামিক কালচারল সেন্টার।

মহান আল্লাহর দরবারে এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য দোয় করছি, আল্লাহ যেন তাদেরকে উপযুক্ত উত্তম পুরস্কার দান করেন- আমীন।

চলবে.....

বিষয়: বিবিধ

৯৮০ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327089
২২ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:২১
আবু নাইম লিখেছেন : আসসালামু আলইকুম ....আপনার লেখাগুলো পড়তেছি এবঙ ভাল লাগতেছে .. আশা করি অপেক্ষায় রাখবেন না.......
২৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:১৬
269484
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ আবু নাইম ভাই।
327090
২২ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এসেম্ব্লি তে কুরআন তিলাওয়াত ও হইতনা সে সময়!!! এটা জানতাম না।
মিসকিন শাহ এর ব্যবসা এখনও সমানে চলিতেছে। এটাকে প্রতিরোধ করা উচিত।
২৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:২২
269485
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : মিসকিন শা’দের প্রতিরোধ করবে কে? সারা বাংলাদেশে একটি কণ্ঠ ছিল, যাঁর প্রচেষ্টায় অনেকটা কমেছিল এদের দৌরাত্ম্য। সেই মাওলানা সাঈদীকে চিরতরে আন্তরীন করে রাখা হয়েছে।
327093
২২ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:২৩
চাটিগাঁ থেকে বাহার লিখেছেন : বরাবরের মতই সুন্দর ও সাবলিল হয়েছে বর্ণনা।
তৎকালিন সামাজিক চিত্র নিখুতভাবে ফুটে উঠেছে।
মাজার সংক্রান্ত বিষয়গুলোও অতি বাস্তব।
২৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:২৩
269486
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ,বাহার ভাই।
327108
২২ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:৫৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : পীর ফকির আর মাজার/ইসলামের কি কালচার?/দেদারসে বসে সেথায় মদ,জুয়া,গাঁজার..
একেকটা শয়তান তথাকথিত এই মাজারের খাদেম। মাজার এই শব্দটি কুরআন-হাদীসের কোথাও আছে? ধন্যবাদ।মাজারের বিরুদ্ধে, শিরকের বিরুদ্ধে, বিদআতের বিরুদ্ধে কলম আরো শাণিত করতে হবে.. ধন্যবাদ।
২৪ জুন ২০১৫ রাত ০১:৫৯
269487
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : শিরকের এসব আড্ডাখানার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।
327113
২২ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:১০
আবু জারীর লিখেছেন : এস এস সি পরীক্ষার পরে ঘটনা চক্রে এক গণকের কাছে গিয়েছিলাম। যে কাজের জন্য গিয়েছিলা তা হয়নি তাই ভাবলাম পরীক্ষার রেজাল্ট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি।

রেজাল্ট জানতে চাইলা বলল গণিত আর ইংরেজীতে ফেল না করলে সেকন্ড ডিভিশান পাব!

মেজাজটা চড়মে উঠে গেল। ব্যাটা বলে কি? গণিতে ৮০% আর ইংরেজীতে ৬০% নম্বর পাব তা প্রায় নিশ্চিত আর পুরা সেন্টারে একটা ফার্স্ট ডিবিশান পেলে সেটা যে আমি পাব সে ব্যাপারে আমার সন্দেহ ছিলনা কিন্তু ব্যাটা কি বলল?

আসলে ওরা যে সব ঠগ সেদিন নিজের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ্‌ পুরা সেন্টারে ১৪টা ফার্স্ট ডিভিশান এসেছিল যার ভিতরে আল্লাহর ইচ্ছায় আমার রোল ও ছিল।
২৪ জুন ২০১৫ রাত ০২:০২
269488
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আল্লাহ রক্ষা করেছেন। আল্লাহ না করুন, যদি আপনি ওদের নিকট থেকে কোন সাহায্য নিতেন তখন আপনারও মনে হতো এদের বদৌলতে মনে হয় ফার্ষ্ট ডিভিশন পেয়েছি। অনেক লোক এভাবেই গোমরাহ হয়।
327126
২২ জুন ২০১৫ রাত ০৮:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : মহল্লার মুয়াজ্জিন,মক্তবের হুজুর বা পাড়ার চাচী খালেদের দৌড় ঐ পর্যন্তই ছিল৷ তবুও তাদের ধন্যবাদ দিই যে তারা অন্তত এতটুকু করতেন৷ আপনাকেও ধন্যবাদ৷
২৪ জুন ২০১৫ রাত ০২:১৬
269489
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনি ঠিক বলেছেন,তবে মুসলিম সমাজ ইচ্ছে করলে আরো ভালো কিছু করতে পারতো।
327253
২৩ জুন ২০১৫ রাত ১১:১৯
আফরা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File