ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ১২
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৬ জুন, ২০১৫, ১০:৫৩:১৪ সকাল
প্রিয় বন্ধু এরশাদুল আলম কাদেরীর প্রস্থান :
নিকটতম বন্ধুরা ছিল যথাক্রমে এরশাদ (এরশাদুল আলম কাদেরী), ওসমান, এনাম, আযীয এবং মান্নান(হাবিবুল মান্নান কুতুবী)। স্কুল এবং বন্ধুদের ভালবাসায় এতটাই মজেছিলাম, স্কুলের সপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য ছুটির নোটিশ আমার নিকট ছিল যেন বিরহের বার্তা। মনে হতো বন্ধুরাই আমার সবচেয়ে আপনজন, তাদেরকে না দেখে একটি দিন পাড় করাও ছিল আমার জন্য বড় কষ্টের। এই বয়সটাই মনে হয় এমন।
উক্ত ১৫ই আগষ্টের ঘটনার প্রায় ২০/২৫ দিন পর পবিত্র রমজান শুরু হবে। রমজানের দীর্ঘ ছুটি- অনেক দিন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ হবেনা, তখনতো আর সেল ফোন ছিলনা যে, যখন তখন যোগাযোগ করা হবে। তাছাড়া ল্যান্ড ফোনের ব্যবহারও ছিল খুবই সীমিত। স্কুল ছুটির আগেই বন্ধুদের সাথে আসন্ন ঈদে কে কার সাথে কিভাবে কোথায় যোগাযোগ করবো, কার কার বাড়ীতে বেড়াতে যাবো ইত্যাদি কর্মসূচী ঠিক করে ভালোবাসার আলিঙ্গন বিনিময় করে অশ্রুসজল নয়নে বিদায় নিলাম।
পরিচ্ছন্ন, নিরহংকার, সদা হাস্যোজ্জল গোলগাল চেহারার অধিকারী এরশাদুল আলম কাদেরী ছিল সকলের প্রিয়, আমারতো বটেই। তার ছিল রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হওয়ার বাসনা। সেই ক্লাস সেভেন থেকেই দেখতাম একটি ডায়রীতে বিভিন্ন দেশের নাম, শাসকের নাম, ভৌগলিক অবস্থান, শাসন পদ্ধতি ইত্যাদি নোট করতো। সে আবার আমাকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিত। ধনী পরিবারের ছেলে, বাসা থেকে প্রায় সময় এটা ওটা টিফিন নিয়ে আসতো। আমি লক্ষ্য করেছি- একদিনও সে আমাকে ছাড়া খায়নি।
সিদ্ধান্ত ছিল ঈদে আমরা প্রথমে এরশাদের শহরের বাসায় যাবো, সেখান থেকে কালুর ঘাটের সন্নিকটে মোহড়ায় তাদের গ্রামের বাড়ী যাব এবং সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।
ঈদের পরে অবশ্য তাদের গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম, শুধু আমরা কয়জন নই, স্কুলের সমস্ত ছাত্র-শিক্ষক গিয়েছিলাম আমার প্রিয় বন্ধুর কবর জিয়ারত করতে!
এরশাদের মৃত্যুর কয়েকদিন পর বন্ধু ওসমান আমার বাসায় এসে এরশাদের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছিল। ওসমান আব্দুল গফুর স্যারের ছেলে। স্যার ছিলেন এরশাদ পরিবারের গৃহ শিক্ষক। ওসমান এবং ওর বড় ভাই নোমানও স্যারের সাথে এরশাদদের বাসায় থেকে লেখা পড়া করতো। ওসমানের মুখেই শুনেছিলাম এরশাদের মৃত্যুর ঘটনা।
সেদিন তার মেঝ ভাই শাহেদুল আলম কাদেরী'র উচ্ছ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বের হয়েছিল। মেঝ ভাই তাকে পাঠিয়েছিল একটি সংবাদপত্র কিনে আনতে, রেজাল্ট দেখার জন্য। চন্দন পুরা আলীয়া মাদ্রাসার সম্মুখস্থ বাসা থেকে বের হয়ে সিরাজউদদৌলা রোড বরাবর পৌঁছতেই ফজলুল কাদের চৌধূরীর পাহাড়ের দিক থেকে একটি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে এরশাদ এবং আরো কয়েকজনকে চাপাদিয়ে সামনের দেয়ালের ভিতর ঢুকে পড়ে। এভাবে আমার সহজ সরল, সদা হাস্যজ্যেল, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বন্ধুটি মার্মান্তিকভাবে চির দিনের জন্য হারিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে। এরশাদের অকাল বিদায় আমাদেরকে কাঁদিয়েছিল অনেক দিন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার সেই মেঝভাই শাহেদুল আলম কাদেরী, বিশিষ্ট শিল্পপতি, কাতাল গঞ্জ আবাসিক সমিতির সেক্রেটারী এবং বৃহত্তম চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির প্রক্তন মহাসচিব শাহেদুল আলম কাদেরী (সম্ভবত ২০০৭ সালে)ঢাকা ট্রাংক রোডে গাড়ী এক্সিডেন্টে নিহত হয়েছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন) মহান শ্রষ্টার দরবারে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ আপনার বন্ধুকে জান্নাত নসিব করুন।
বেশ কিছু পর্ব পড়িনি। বরাবরের মতই সাবলীল লিখা। ধন্যবাদ।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন! আল্লাহ উনাদের জান্নাতের অধিবাসী হিসেব কবুল করুন!
এ পর্বটি বিষাদে বিবর্ন........
াআপনার দোয়া আল্লাহ কবুল করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন