ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ১০

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১১ জুন, ২০১৫, ০৯:৩৬:৩৭ রাত

আমাদের ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন জনাব ফজলুল হক স্যার। বরিশালের লোক, একটু গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন তিনি। সহকারী ক্রীড়া শিক্ষক ছিলেন জনাব আব্দুল বারী স্যার। চট্রগ্রামের ফঠিক ছড়ি'র লোক। খুবই মিশুক প্রকৃতির এ স্যার মাঝে মধ্যে স্টপ গ্যাপ এ ক্লাস নিতেন। ক্লাসে এসেই উনি পর্বত আরোহনের ফজিলত বর্ণনা করতেন। অথছ নিজেই পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত স্কুলটিতে এসে হাফিয়ে উঠতেন। অনেক সময় হা করে মুখ দিয়ে শ্বাস প্রশ্বাস নিতেন।

মিল্লাত স্যার ছিলেন এক সময়কার জেলা পর্যায়ের তুখোড় ফুটবল খোলোয়াড়। স্কুল বনাম কলেজ শাখার এক ফুটবল ম্যাচ দেখতে গিয়ে তিনি ঘটিয়ে বসলেন এক অনাকাঙ্খিত কান্ড। মিল্লাত স্যার সহ আমরা পাহাড়ের ঢালু অংশে বসে খেলা দেখতেছিলাম। ওনার ঠিক সামনে বসা কলেজের একজন সম্মানীত লেকচারার। খেলার এক পর্যায়ে স্কুলের এক খেলোয়াড় বল নিয়ে প্রতিপক্ষের গোল বারের দিকে এগুচ্ছিল। সে গোল করার জন্য সট্ করার সাথে সাথে মিল্লাত স্যার কষে এক লাথি মারলেন সামনে বসা লেকচারার সাহেবের পিঠে। মুহুর্তের মধ্যে দারুন হৈ-চৈ শুরু হলো। অবশেষে স্যার তাঁর মনের ভুলে নিজেকে খেলোয়াড় ভেবে বল গোল বারে ঢুকানোর জন্য এমনটি করছিলেন বলে ব্যাখ্যা দেওয়াতে এবং এ ভুলের জন্য দূঃখ প্রকাশ করাতে পরিস্থিতি আয়ত্বে আসলো।

স্কুলের পাঠ্য সূচী বহির্ভূত কার্য্যক্রমের মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগীতায়ও আমার বেশ আগ্রহ ছিল। আমি মনে করতাম খুবই সাধারণ ব্যাপর এটি। প্রথম বিতর্ক প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে যে হাস্যকর করুন দশায় পড়েছিলম সে স্মৃতি এখনো হাসায়। শামসুদ্দীন স্যারের সঞ্চালনায় আমার আন্তঃ ক্লাশ প্রথম বিতর্ক বিষয় ছিল ' শহরের চেয়ে গ্রাম্য জীবনই শ্রেয়'। আমাদের দলপতি ছিলেন সিনিয়র ভাই কামরুল ইসলাম। তখন তিনি ‘ঝিঙে ফুলের আসর’ নামক শিশু সংগঠনের স্কুল বিভাগের দায়িত্বশীল ছিলেন। বর্তমানে 'দৈনিক খবর' পত্রিকায় কাজ করছেন। আমরা ছিলাম প্রস্তাবনার বিপক্ষে, অর্থাৎ শহরের পক্ষে। আমাদের দলের তৃতীয় বক্তা ছিলাম আমি। আমার নাম ঘোষণা করার সাথে সাথে সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগলো সাথে ঠোঁট ও। ডায়াসের দিকে এগুছিল্লাম আস্তে আস্তে। মনে হচ্ছিল যেন আমার একেক পায়ের ওজন বেড়ে ৮/১০ গুন বেশী হয়ে গিয়েছে। অনেক কষ্ট করে কম্পিত কণ্ঠে নোট করা বক্তব্য অনেকটা দেখে দেখে পড়লাম। বিপক্ষের ২/১ টা যুক্তি খন্ডন করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেললাম। সমস্ত শরীর ঘামে একাকার হয়েগিয়েছিল। আমাদের বিপক্ষ দলের এক বক্তা নার্ভাস এবং বেহুসের মতো হয়ে স্ট্যজে পড়েগিয়েছিল।

পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সাহস বাড়তে লাগলো এবং একসময় নির্ভয়ে কথা বলা আয়ত্বে আনতে পরেছিলাম। দলপতিও হয়েছিলাম অনেকবার। নার্ভাস হয়ে যাওয়া সেই ছেলেটিও এক সময় ভাল বক্তা হয়েছিল। বিতর্ক প্রতিযোগীতার মাধ্যমে নিজেকে একজন ছোট খাট বক্তা হিসাবে প্রতিষ্টি করতে পেরেছিলাম। মহল্লা কমিটির মিটিং, কমিশনার অফিসের বিভিন্ন শালিস বিচার, ক্লাব, সভা-সমিতির দাওয়াতে গিয়ে সাবলিল ভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করতে পেরেছি, যেখানে আমার চেয়ে বড় এবং নামি দামী অনেকেই বক্তব্য রাখতে সাহস পেতেন না।

চলবে....

বিষয়: বিবিধ

১১৩৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

325236
১১ জুন ২০১৫ রাত ১০:২১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাগ্য ভাল স্যার শুটিং খেলোয়াড় ছিলেন না!!
গুলি করলে তো....
১২ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৯
267425
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : হ্যাঁ ভাই, ভাগ্য ভালো।
325237
১১ জুন ২০১৫ রাত ১০:২৩
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগলো।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৬
267728
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ।

325240
১১ জুন ২০১৫ রাত ১০:৫২
প্রবাসী আশরাফ লিখেছেন : ভালো লাগলো..
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৬
267729
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ, আশরাফ ভাই।
325244
১১ জুন ২০১৫ রাত ১১:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : প্রথম যেদিন মঞ্ছে কেরাত পড়তে উঠেছিলাম সেদিন আমার অবস্থাও অমন হয়েছিল, অবশ্য তখন বয়ষ ছিল ৯ কি দশ৷ অথচ আজকাল কোত ছোট্ট বাচ্চারা প্রতিযোগিতায় নামছে৷ কোন ভয় বা জড়তা নেই৷ অবাক হতে হয়৷
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৮
267730
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : বর্তমানে যেভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে আমাদের সময় সেরকম প্রশিক্ষণ আমরা পাইনি। সে কারণে এমন পার্থক্য, আমার মনে হয়।
১৩ জুন ২০১৫ রাত ০৮:৩৭
267749
শেখের পোলা লিখেছেন : লোকমান ভাই, আর একটা বিষয় আছে৷জন্মের একটা নির্দিষ্ট সময় আগে গর্ভস্থিত শিশুর কান সচল হয়, সেতার মায়ের আচার আচরণ কথা অনুভব করে৷ আর তাই তার স্বভাবে ছাপ ফেলে৷ ফলে মায়ের নামাজ, তেলাওয়াত শুনে তাই শেখে৷ অপর দিকে মায়ের ঘোরা ফেরা,গালি গালাজ, গান বাজনা, অভিনয় করা অনুভব করে তাই শেখে৷ বিজ্ঞানও এ বিষয়টি সমর্থন করে৷ আমাদের মা আর এদের মায়েদের মাঝের তফাৎটাও দেখতে হবে৷
325251
১২ জুন ২০১৫ রাত ১২:০২
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : তর্কযুদ্ধে বিজয়ী বীর,জীবনযুদ্ধে পরাজিত হবে না,ইনশাল্লাহ.. ধন্যবাদ।
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩১
267731
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ মাছুম ভাই।
325255
১২ জুন ২০১৫ রাত ১২:৩৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : সে গোল করার জন্য সট্ করার সাথে সাথে মিল্লাত স্যার কষে এক লাথি মারলেন সামনে বসা লেকচারার সাহেবের পিঠে। Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
অনেক ভালো লেগেছে, চালিয়ে যান।
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
267732
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, আবু জান্নাত ভাই। ধন্যবাদ এত কষ্টের(ব্লগের সমস্যা) মধ্যেও সাথে থাকার জন্য।
325266
১২ জুন ২০১৫ রাত ০১:১০
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সে গোল করার জন্য সট্ করার সাথে সাথে মিল্লাত স্যার কষে এক লাথি মারলেন সামনে বসা লেকচারার সাহেবের পিঠে। ...হাহাহাহাহাহা...

অনেক ভালো লাগলো ভাই...। আমারও নার্ভাসনেস ছিল। এখন অনেকটা কেটে গেছে অনেকের মাঝে কথা বলতে বলতে
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৮
267733
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : চেষ্টার মাধ্যমে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব।
325277
১২ জুন ২০১৫ রাত ০১:৩৯
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনি তো নিজের ইতিহাস লিখতেছেন..সরকার দেখলে খবর আছে। এদেশে আর কারো ইতিহাস লেখা যাবে না একজন ছাড়া..কিছু বুঝলেন.. ধন্যবাদ..
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
267734
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ঠিকাছে তাহলে আগামী পর্বে সরকারের ইতিহাসও লিখবো।
325291
১২ জুন ২০১৫ রাত ০২:০৩
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম!

আমাদের ক্লাসেও বিতর্ক প্রতিযোগীতা হতো! গ্রাম নাকি শহর এই প্রতিযোগীতায় আমি গ্রাম গ্রুপে ছিলাম এবং আমাদের দল বিজয়ী হয়ে ছিলো!

ভালো লাগছে ! লিখতে থাকুন!
১৩ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪২
267735
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : প্রাথমিক অবস্থায় সব যায়গায়ই মনে হয় বিতর্কের জন্য 'গ্রাম/শহর' নির্ধারণ করা হয়। আমি আরো বেশ কয়েক যায়াগায় এভাবে দেখেছি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File