ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ৮

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ০৪ জুন, ২০১৫, ০১:৫২:২০ দুপুর

চক থেকে ধোঁয়া বের হয় : একদিন মিল্লাত স্যার ক্লাসে বললেন, 'গতকাল ছুটির পর চট্রগ্রাম কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় লোকমানের হাতে চক দেখেছি'। আমিতো একেবারে 'থ'। দফতরী আব্দুররহমানের অনুপস্থিতে মাঝে মধ্যে স্যারদের জন্য অফিস থেকে চক আনতাম ঠিকই, কিন্তু কোনদিন ভুলেও স্কুলের চক বাসায় নিয়ে যাইনি। এমন একটি অভিযোগ, তাও আবার আমার প্রিয় শিক্ষকের পক্ষথেকে। আমাকে খুবই বিবর্ণ এবং কাঁদো কাঁদো অবস্থায় দেখে তিনি মুচকি হেঁসে বললেন, চকের মাথা থেকে ধোঁয়াও বের হচ্ছিল। অতপর ঘটনা বুঝতে আমার আর সময় লাগেনি। আমি দাঁড়ানো অবস্থায় মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম। আমাকে বসতে বললেন এবং এ নিয়ে আর কোন কথা বললেন না।

এবার বলি ধোঁয়া ওয়ালা চকের অভ্যাস কিভাবে হলো। তৈয়ব নামে আমার এক বন্ধু ছিল। সে পড়তো মাদ্রাসায়। তার বাবা ছিল একজন আলেম ও চকবাজার মোহাম্মদ আলী শাহ এর মাজারের বেতন ভূক্ত খাদেম। মাজারে রক্ষিত যেয়ারতের দান বাক্সে বেশ পয়সা কড়ি পড়তো। তৈয়ব মাঝে মধ্যে সে বক্স থেকে কিছু হাতিয়ে নিত। ওর ছিল সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস। ওর সাথে চলতে গিয়ে আমিও কিভাবে যেন জড়িয়ে পড়লাম সিগারেটের নেশায়। শুরু হলো লুকিয়ে লুকিয়ে ধুমপান। আমরা প্রায় প্রতিদিন বিকালে কিছু খাবার,সিগারেট ও দিয়াশলাই নিয়ে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের দক্ষিন পাশের পাহাড়ের উপর গিয়ে বসতাম। সূর্য্য অস্তমিত হওয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত একটার পর একটা সিগারেট সাবার করতাম। সন্ধ্যা হলে বালি দিয়ে দাঁত পরিস্কার করে ঘরে ফিরতাম, যাতে সিগারেটের কোন গন্ধ না পাওয়া যায়।

এর কিছুদিন পর শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। শহর থেকে পালিয়ে গিয়ে যে গ্রামে অবস্থান করেছিলাম সেখানে আমরা কয়েকজন থাকতাম এক নানার সাথে কাচারী ঘরে। নানা বৃদ্ধ মানুষ, তাঁকে তামাক সাজিয়ে দিয়ে সাহায্য করতাম। নানা বলতেন একটু জ্বালিয়ে দাও, মানে টেনেটুনে এমন পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া, যাতে নানা টান দেয়ার সাথে সাথে যথেষ্ট ধোঁয়া পেয়েযান। আর যায় কোথায়, একেতো নাচুনে বুড়ি তার উপর ঢোলের বারী। চলতে থাকলো ধুমপান-বিষপান। গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা নির্বিশেষে প্রায় সবাইকে দেখতাম তামাক অথবা বিড়ির সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। বর্তমান অবস্থা অবশ্য জানা নেই।

বড়দের সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সকালে অফিসে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আমিও মনে মনে ভাবতাম কখন বড় হবো আর এভাবে প্রকাশ্যে ধুমপান করতে করতে অফিসে যাব! শেষ পর্যন্ত আমি এমন সিগারেট আশক্ত হলাম যে, ধুমপানকে পৌরুষত্বের প্রতীক মনে করতে লাগলাম। ভাবতাম, সিগারেট না খেলে আবার পুরুষ হয় কেমনে।

ধুমপানের প্রভাবে আমি যথেষ্ট আক্রান্ত হতাম। সর্দি-কাশি প্রায় লেগে থাকতো। কাশির সাথে সাথে বুকের মধ্যে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট অনুভব করতাম। এসএসসি পাশ করার পর কিছু ভালে বন্ধুর সংস্পর্শে এসে ধুমান ছেড়েছি কিন্তু আবার কিছু দিন পর কিভাবে যেন শুরু করতাম। ধুমপান ছাড়ার ‘ওয়াদা আবার ওয়াদা ভঙ্গ’ এভাবে চলছিল।

১৯৮৯ সালে আবুধাবী আসার পর সম্পূর্ণরূপে ধূমপান ত্যাগ করেছি- আলহামদু লিল্লাহ্। ধুমপান ছাড়ার একটি ছোট্র ঘটনা - একদিন মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম। বাসা থেকে মসজিদ প্রায় ২০০ মিটার দূর। সিগারেট জ্বালানো ছিল, টানতে টানতে যাচ্ছিলাম। নামাজ শুরু হতে আরো ১৫/১৬ মিনিট বাকী। এক কাঁচা-পাকা আরবী ভদ্রলোক সালাম করে হ্যান্ডশ্যক করলেন। তিনি বললেন, 'আমি তোমার সাথে কথা বলার জন্য কয়েক দিন পর্যন্ত চেষ্টা করছি। আজকে আমার চেষ্টা সফল হলো। আলাহামদু লিল্লাহ।' আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন দেখ তুমি নাক এবং মুখ দিয়ে যে ধোঁয়া বাহিরে ছাড়ছো সেই ধোঁয়াগুলি আমার এবং অন্যদের পেটে যাচ্ছে। যাকগে, এজন্য আমি মাইন্ড করছিনা। সবচেয়ে বড় কথা হলো সিগারেটের বিষ তোমার ক্বলব নষ্ট করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া তুমি যাচ্ছ আল্লাহর ঘরে নামাজ পড়তে। দুর্গন্ধ যুক্ত মুখে আল্লাহর ঘরে যাওয়া কি মানায়? ভদ্র লোক আবারো সালাম বিনময় করে sorry, don't mind বলে চলে গেলেন। আবুধাবীতে নতুন হলেও ইতি পূর্বে ২বছর কুয়েত সিটিতে ছিলাম তাই ভদ্র লোকের সাথে কথোপকথনে অসুবিধা হয়নি।

‘আমার মুখের ধোঁয়া অন্যদের নাক দিয়ে পেটে যাচ্ছে এবং আমি আল্লাহর ঘরে যাচ্ছি দুর্গন্ধযুক্ত মুখ নিয়ে’। এ কথাগুলি আমাকে খুব ভাবিয় তুলল। অতপর আল্লাহর সাহায্য চেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিলাম সিগারেট ছাড়ার। সেই যে ছেড়েছি আর কখনো সিগারেট মুখে নিইনি। আলহামদুলিল্লাহ্।

এর পর থেকে আমি ধূমপান বিরোধী দাওয়াত অভ্যাহত রেখেছি। নামাজি ধূমপানকারীদেরকে খুব সহযে প্রভাবিত করা যায় এই কথার মাধ্যমে যে, ‘নামাজ মু’মিনের মি’রাজ স্বরূপ’ মি’রাজ হচ্ছে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত বা কথা বলা। দুর্গন্ধযুক্ত মুখে আল্লাহর সাথে কথা বলা কি মানায়?

চলবে....

বিষয়: বিবিধ

১১৪০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324567
০৪ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:০৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০৮:০৯
266447
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ, ‘দুষ্টু পোলা’ ভাই।
324568
০৪ জুন ২০১৫ দুপুর ০২:২০
আবু জারীর লিখেছেন : But you never be invite me to leave.
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০৮:০৯
266448
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : কবির(বড়) ভাইয়ের সাক্ষাত পেলেই তো!
324578
০৪ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৫
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : সেই যে ছেড়েছি আর কখনো সিগারেট মুখে নিইনি। আলহামদুলিল্লাহ্

প্রথম খুব খারাপ লাগছিল যখন পড়লাম আপনি ধূমপান করেন। তবে পরে ছেড়ে দিয়েছেন এটা পড়ে ভাল লাগলো।

আলহামদুল্লিলাহ। ভাল লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:১৯
266806
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ভার্চুয়্যাল জগতেও মানুষের প্রতি মানুষের এত মমত্ব!
জাযাকাল্লাহ খাইর।
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:৪১
266809
এ,এস,ওসমান লিখেছেন : এই ভার্চুয়্যাল জগতেই আমাকে অনেক কিছু বুঝতে শিখিয়েছে।
324580
০৪ জুন ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মা শা আল্লাহ ধুমপান ছাড়ার ঘটনাটি সত্যিই ভাবনার বিষয়।
চকের মাথায় ধোয়া তারপর কি হল! মানে স্যার কিভাবে দেখলো? একটু বিস্তারীত বলবেন।
আলেম মানুষ মাজারের খাদেম হয় কিভাবে? নিশ্চয় আলেম নামের পেটুক। আপনার মতামত জানতে চাই। ধন্যবাদ
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:৫৯
266812
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আমিতো সাধারণত লুকিয়ে লুকিয়ে ধুমপান করতাম। সেদিন আরেক সিগারেট খোর বন্ধু আমাকে একটি সিগারেট দিয়েছিল তার সাথে হাঁটতে হাঁটতে.... আমা অজান্তেই স্যার দেখে ফেলেছিলেন।

বাহ্যিক পোষাক-আশাকের আলোকে প্রচলিত অর্থে আলেম বলা হয়েছে। সত্যিকার অলেম অবশ্যই মাজারে চাকুরী করতে পারেননা।
324604
০৪ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধোঁয়া উঠা চক!!!
এমন সুন্দর উপমা আর শুনি নাই। কিন্তু এমন জায়গায় আপনি হাতে ওটা নিয়ে হাটছিলেন কেন??
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪১
266821
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : স্কুল ছুটির পর বন্ধুদের সাথে বাসায় ফিরছিলাম। আরেক সিগারেট খোর বন্ধুর আপ্যায়ন(!) গ্রহণ করেছিলাম। স্যারকে লক্ষ্য করিনি, তিনি আমাকে দেখেছিলেন।
324632
০৪ জুন ২০১৫ রাত ০৮:১০
শেখের পোলা লিখেছেন : চিরতরে ধূমপান ছাড়ার জন্য আপনাকে বড়সড় একটা ধন্যবাদ৷ চালিয়ে যান৷৷
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৪
266822
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেখের পোলা ভাই।
324681
০৪ জুন ২০১৫ রাত ১১:৩৯
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : মানুষের জন্য যা কিছু কল্যানকর, তার সব কিছুই আল্লাহর রাসূল গ্রহন করেছেন, যা অকল্যাণকর তা বর্জন করেছেন। আমরা যদি আল্লাহর রাসূলের প্রদর্শিত পথে চলি তাহলে নানান রকমের রোগের হাত থেকেও বাঁচতে পারবো। সুন্দর একটা লিখা পোষ্ট করার জন্য ধন্যবাদ
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫০
266823
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : সুন্দর এবং গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই।
324698
০৫ জুন ২০১৫ রাত ১২:৫০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : দারুণ!একদম ফাটাফাটি!!
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৮
266828
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ‘ফাটাফাটি!!!’ ব্লগিয় পরিভাষা বেশ রপ্ত করেছেন, মাছুম ভাই। Happy
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০৮:১৪
266855
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন :
324699
০৫ জুন ২০১৫ রাত ১২:৫২
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধুম্যপান ত্যাগ করার জন্য ধন্যবাদ। দাওয়াতও অব্যাহত রাখুন।
০৫ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১০
266831
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ্! অভ্যাহত থাকবে।
১০
324721
০৫ জুন ২০১৫ রাত ০২:০৫
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : ভালো লাগল। ধন্যবাদ
১১
324843
০৫ জুন ২০১৫ বিকাল ০৫:৩২
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়া। ছাত্র শিক্ষকের উপভোগ্য কাব্যিক কথোপকথন। ভাবার্থ উদ্ধার এবং পরিশেষে মূল্যবান উপদেশমূলক কথাটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রেখে ধূমপান বর্জনের শিক্ষণীয় হৃদয়গ্রাহী লিখাটি পড়ে অনেকেই এর মর্মার্থ উদ্ধারে আগ্রহী হবেন আশাকরি।
ধূমপান বর্জনের চমৎকার অভিজ্ঞতাপূর্ণ লিখাটির জন্যজাজাকাল্লাহূ খাইর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File