ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ৬
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৮ মে, ২০১৫, ১০:৫৩:৫৫ রাত
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আমার পূণরায় স্কুলে ভর্তি হওয়ার সোনালী দিনটির দেখা পেলাম ১৯৭৪ এর জানুয়ারীর এক শীতের সকালে। বিগত দু’টি বছর হারিয়ে যাওয়ার বেদনার চেয়ে প্রেমস্পদকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ ছিল অনেক অনেক বেশী। তাই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলোর দিকে না তাকিয়ে পরমানন্দে আত্মনিয়োগ করলাম লেখাপড়ায়।
এবারের স্কুলটির নাম ‘সরকারী আই ,আই, (ইসলামিক ইন্টার মিডিয়েট) কলেজ, স্কুল শাখা। বর্তমান সরকারী হাজী মুহাম্মদ মুহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম । আম,জাম, কাঁঠাল, লিচু, শাল, সেগুন, গামারী আর চেনা-অচেনা হাজারো গাছগাছালি বেষ্টিত পাহাড়ের চুড়ায় মনোরম পরিবেশে স্কুলটির অবস্থান। এখানে দাঁড়িয়ে সমগ্র চট্টগ্রাম শহরের একাংশের উপর চোখ বোলানো যায়।
উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় স্কুলটির অবস্থানের কারণে সরকারী স্কুল হওয়া সত্বেও ওখানে ভর্তির তেমন বাড়তি চাপ ছিল না। প্রতি শ্রেণীতে ২৫-৩০ জনের বেশী ছাত্র ছিল না। তাছাড়া বিভাগ ছিল শুধু বানিজ্য আর মানবিক। সব মিলিয়ে ছাত্র সংখ্যা ছিল অনধিক দু’শ। ফলে ছাত্র-ছাত্র এবং ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে ছিল একটা আন্তরিক মধুর সম্পর্ক।
লেখাপড়ার প্রতি ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং প্রায় দু’বছর পর একই শ্রেণীতে ভর্তি হওয়ার কারণে ক্লাসে আন্যান্য সকলের চেয়ে আমি ছিলাম এগিয়ে। এজন্য প্রতিটি স্যার আমাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতেন। বাংলার শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব নাসিরাবাদী স্যার আমাকে পন্ডিত ডাকতেন। স্যার ক্লাসে প্রবেশ করে ‘আমার পন্ডিত কোথায়’ বলে যখন আমাকে খুঁজতেন তখন একধরণের আমেজ অনুভব করতাম। এর কারণ ছিল, যেখানে অন্যান্য ছাত্ররা নোট বই থেকে প্রশ্নোত্তর লিখতো সে যায়গায় আমি প্রবন্ধ বা কবিতাটি ভালো করে বুঝে নিজেই ব্যাখ্যা এবং উত্তর তৈরী করতাম। এটি স্যারের খুবই পছন্দ ছিল।
মেথ টিচার মিল্লাত স্যারের নির্দেশ ছিল, অংক বুঝতে সমস্যা হলেই যেন তাঁর নিকট চলে যাই। স্যারের নিকট থেকে অনেক সাহায্য নিয়েছি, বিনিময়ে কোনদিন একটি টাকাও নেননি।
মাওলান আব্দুল গফুর স্যার ও শামসুদ্দিন স্যারের যাদুকরী উপদেশ বাণী সমূহ যেন এখনো শুনতে পাই।
আমি ক্লাস সেভেনেই ভর্তি হয়েছিলাম। সিক্স থেকে স্থান দখল করে আসা যথাক্রমে এরশাদুল আলম কাদেরী, মিজানুর রহমান, ওসমান এবং এনামুল হকের সাথে লেখাপড়ার প্রতিযোগীতা চললেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল অত্যন্ত জোড়ালো।
আমার পরে ভর্তি হয়েছিল মিনহাজ নামের এক ছাত্র। আমার চেয়ে বয়সে বড় এবং মোটামোটি ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী। তার নিকট থেকে পাওয়া একটি ভুল তথ্য সেই তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমাকে যথেষ্ট উপকৃত করে চলেছে। জানাবো আগামী পর্বে, ইন-শা-আল্লাহ্।
চলবে.....
বিষয়: বিবিধ
১১৯৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ।
এই সুযোগে স্কুলে ভর্তি হয়ে কলেজের ছাত্র হতে পারলেন আপনারা!!
নিউ স্কিক ওল্ড স্কিম এর সূত্র ধরে অনেকেই মজা করে এই বিদ্যালয়কে বলতো ‘বুড়া মাদ্রাসা’।
আপনার স্কুলে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা পড়ে খুবি ভালো লাগলো! কি ছিলো সেই ভুল তথ্য যার কারনে এতো উপকৃত হয়েছিলেন?
পরের পর্বে জানার অপেক্ষায় !
পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন