ছাত্রজীবনের টুকিটাকি- ২
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৯ মে, ২০১৫, ১২:৪৫:২২ দুপুর
৭১ এর শুরুতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম চট্টগ্রাম বাকলিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার মাত্র দুই আড়াই মাসের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো মুক্তিযুদ্ধ। বাবার আওয়ামী পন্থী ভূমিকার কারণে শহরে যথাস্থানে অবস্থান করা নিরাপদ মনে করেননি। তাই আমাদেরকে নিয়ে শহর থেকে প্রায় ২০/২২ মাইল দূরে এক আত্মীয়ের বাড়ীতে গিয়ে উঠলেন এবং যুদ্ধের পুরা নয় মাস ওখানেই অবস্থান করেছিলাম। লেখা পড়া বন্ধ, খেলাধুলা আর হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে কাটিয়েছিলাম নয়টি মাস।
যুদ্ধ শেষে যথারীতি শহরে ফিরে আসি। স্কুলের জন্য নতুন করে জামা কাপড় কেনার মতো অবস্থা ছিলনা বাবার। পাক সেনাদের গুলিতে নিহত আবু মামার একটি পুরানো কালো সার্ট, পেন্ট এবং কমলা রংয়ের কাপড়ের জুতা সাইজে একটু বড় হলেও কোন রকম করে পরিধান করে স্কুলে যাওয়া শুরু করি। উল্লেখ্য, তখন কালো জামা, কমলা রংয়ের কাপড়ের জুতা এবং লম্বা চুল ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অঘোষিত পরিচিতি। তবে হাতিয়ার ছিল সবচেয়ে বড় পরিচিতি।
৭২ এর শুরুতে পরীক্ষা ছাড়া সপ্তম শ্রেণীতে প্রমোশন পেলাম। ক্লাস টিচার আবুল কালাম স্যার। কঠোর শাসন এবং নীতি-নৈতিকতার কারণে ঐ স্কুলের সর্বাধিক আলোচিত শিক্ষক ছিলেন তিনি। স্যারের চোখ দু’টো থাকতো বড় বড় এবং লালছে টাইপের। আমরা যমের মতো ভয় করতাম ওনাকে। যাঁর চোখের দিকে তাকালে ভয় লাগতো এবং পড়া ছাড়া অন্য কোন কথাই সাধরণত তিনি বলতেন না, তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন এবং আদর ও ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আমি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম কি না। আমার পোষাক আর দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে তিনি হয়ত এমনটি ভেবেছিলেন। স্যারকে বিনয়ের সাথে বললাম, ‘আমি মুক্তিযুদ্ধে যাইনি, তবে আমরা যেখানে ছিলাম সেখান থেকে সর্বাধিক সহযোগীতা করেছি মুক্তি যোদ্ধাদেরকে।
চলবে.......
বিষয়: বিবিধ
১১১১ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
চলুক সাথেই থাকব । ইনশা আল্লাহ ।
এসব বিষয় জানতে আমার ভাল লাগে ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
সামান্য কাজ করেও অনেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে। আবার অনেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেও সার্টিফিকেট অর্জন করেছে টাকার বিনিময়ে। কেনা সার্টিফিকেটধারীরাই বর্তমানে বেশী মাতামাতি করছে।
এটি মূলত আমার ছাত্রজীবন নিয়েই লিখা। মুক্তিযুদ্ধের উপর আমার আরেকটি লেখা ছিল সামু এবং এসবিতে। দুর্ভাগ্রজনক ভাবে সামুতে ব্যান হলাম এবং এসবি বন্ধ হয়ে গেলো। আশা করছি এখানে আবার লিখব ইনশা আল্লাহ।
আপানাকেও অনেক ধন্যবাদ।
চলুক সাথেই থাকব । ইনশা আল্লাহ ।
এসব বিষয় জানতে আমার ভাল লাগে ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া ।
্সাথে থেকে উৎসাহ প্রদানের জন্য অনেক ধন্যবাদ, আবু জান্নাত ভাই।
থাকলে আপনাকে দাদা নানা যেটাই সম্ভব বানিয়ে চাকরির চেষ্টা করতাম!
আপনার নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা টাইটেল লাগাবেন এখন থেকে ।
শেখের পোলা ভাইয়া র কাছ থেকে না বলা কথা সিরিজ থেকে মুক্তি যুদ্ধের কথা জেনেছিলাম! আশাকরি এবার আপনার কাছ থেকে জানবো! চমৎকার বিষয়টি বাছাই করার জন্য শুকরিয়া!
এটি অবশ্য শুধুমাত্র আমার ছাত্রজীবনের টুকটাক উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা মাত্র।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ‘১৯৭১-আমার দেখা দিনগুলি’ শিরোনামে লিখেছিলাম সামু এবং পরে এসবিতে। দুর্ভাগ্য; সামুতে ব্যান খেলাম সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর উপর একটি আর্টিক্যল লিখার কারণে আর এসবিতো বন্ধই করে দেয়া হলো। সময়ে পেলে এখানে আবারও লিখার ইচ্ছা আছে।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কমেন্ট করে উৎসাহ প্রদানের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন