সতমা’রা সৎ হতে বাধা কিসে?
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৪২:৩৫ সকাল
হাতে গোনা দু’য়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া ‘সতমা’ শব্দটি সতছেলে-মেয়ের জন্য একটি আতঙ্কের নাম। অকালে মাতৃবিয়োগ অথবা বাবার সাথে মায়ের ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যাওয়ার কারণে কিছু ছেলে মেয়ে সতমায়ের খপ্পরে পড়তে বাধ্য হয়। সন্তানের মাতৃবিয়োগের পর বাবা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর রেখে যাওয়া স্মৃতি, প্রিয় সন্তানটির দেখভাল এবং নিজের প্রয়োজন পূরণকে সামনে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রী ঘরে তোলেন।
(অকালে স্বামী হারানো মেয়েদের বেশীর ভাগই তাদের সন্তানের দিকে চেয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে না করে থেকে যান, যদি নুন্যতম থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণে পুরুষরা খুবই পিছিয়ে।)
সতমা ঘরে আসার অল্প সময়ের মধ্যে তিনি অত্যন্ত সুকৌশলে বাবার সাথে সন্তানের দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন। ফলে বাবার ভালবাসার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা মাতৃহারা সন্তানটি বাবার চক্ষুশুলে পরিনত হয়। একসময় বাবা আর সতমায়ের যৌথ অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকে। তবে আমার পর্যবেক্ষণে দেখেছি, সতমায়ের অত্যাচারে অত্যাচারিত ছেলেমেয়েদের বেশীরভাগই সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হয়। বৈরী পরিবেশ তাদেরকে আত্মনির্ভর হতে সাহায্য করে। এমন মজার ঘটনাও দেখেছি- অনেক সতমা বৃদ্ধ বয়সে নিজের ঔরসজাত সন্তানের নিকট লাঞ্চিত হয়ে সেই সতসন্তানের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন, যাকে এক সময় নিজে অত্যাচার-নির্যাতন করেছিলেন।
অনেকসময় এর বিপরীত চিত্রও দেখতে পাওয়া যায়। কিছু কিছু মানবীয় গুনসম্পন্না সতমা অনেক চেষ্টা করেও তাদের সতসন্তানদেরকে বশে আনতে পারেন না। এর প্রধান কারণ হলো- পূর্ব থেকে সতমায়ের ব্যপারে বিরূপ ধারণা অর্জন করা। গত কয়েকদিন আগে আমার এক প্রতিবেশী ভদ্রমহিলা দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যুবরণ করলেন। মায়ের মৃত্যুতে তার নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েটির কান্নার বিলাপের মধ্যে তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতেছিল, ‘তুমিতো আরেকটি বিয়ে করবে, এখন আমাদের কি হবে?’ পরে আমার স্ত্রীর নিকট থেকে জানতে পেরেছি সেই মৃত্যু পথযাত্রী ভদ্রমহিলা তার ছেলে মেয়েদের নিকট তার মৃত্যু পরবর্তী হবু সতমায়ের নির্যাতনের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে হা-হুতাশ করতেন। হয়ত এ থেকেই মেয়ের মনে সতমা ভীতি দানা বেঁধেছে এবং বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলে এই ছেলে-মেয়েরা হয়ত সতমাকে সহযোগীতা করবে না। ফলে সতমা সৎ হলেও তারা বঞ্চিত হবে। ভদ্রমহিলা যদি তার রেখে যাওয়া সন্তানদেরকে তার মৃত্যু পরবর্তী ঘরে সতমা আসলেও তার সাথে সহযোগীতার মাধ্যমে নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়ে যেতেন তাহলে হয়ত এই উপদেশটি তার সন্তানদের জন্য কল্যাণকর হতো।
আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি ও পুরস্কার দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়স্থানে দিয়ে থাকেন। অতএব প্রতিটি সতমায়ের উচিৎ মাতৃহারা শিশুদেরকে মায়ের স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন পালন করা। এ কাজটি করলে তারা অবশ্যই দুনিয়া এবং আখিরত উভয়স্থানে কল্যাণ লাভ করবেন।
বিষয়: বিবিধ
১৫১৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার এই কথাটা মনে ধরেছে। আমিও এর শাক্ষি।
ভাল একটা প্রসঙ্গ এনেছেন।
এটা মনে হয় অত্যাচারী সতমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ার শাস্তি।
সুতরাং, আমি বিশ্বাস করি উভয়পক্ষ উদ্যোগ নিলে এই সম্পর্ক্টি উভয়পক্ষের জন্য সুখকর হতে পারে।একমত
মন্তব্য করতে লগইন করুন