স্মার্ট ফোনে নেট সংযোগ : আপনার প্রিয় সন্তানকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, একটু দেখার চেষ্টা করুন
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৭ নভেম্বর, ২০১৪, ০৬:১৪:৫৯ সন্ধ্যা
স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে নেটে প্রবেশ সহজতর হওয়ার কারণে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়টি খুবই বিপজ্জনক, বিশেষ করে উঠতি যুবক যুবতীদের জন্য। অসচেতন পিতা-মাতা তাঁদের আদরের সন্তানের হাতে স্মার্ট ফোনটি তুলে দিয়ে মনে মনে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন এই ভেবে যে, তাঁদের সন্তান বুঝি কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। নিজেদের অজ্ঞতা এবং অসতর্কতার সুযোগে তাদের আদরের সন্তানটি যে নির্লজ্জতার আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে, এই খবরটি অনেক পিতা-মাতা জানেনই না।
বিষয়টি জন্য খুব বেশী দূর না গিয়ে গত দু’দিন আগে আমার সাথে একজন ফেসবুক ফ্রেন্ড এর আলাপচারিতা থেকে বুঝার চেষ্টা করি -
আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড ও দূর-সম্পর্কের ভাগিনা, পড়ে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে। গত দু’দিন আগে তার ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল- একটা মেয়ের সাথে সেলফি এবং মেয়েটিকে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড উল্লেখ করে বিভিন্ন মান অভিমানের কাহিনী, যা রীতিমতো নির্লজ্জতার আওতায় পড়ে।
ঐ পোস্টে 'Raihan Rabby' নামে তার আরেক বন্ধুর কমেন্ট ছিল এরকম : Rastai gia pagolar mto paglami kr dakbi shob tik hoia gasa......shala bom baj akta
ঐ ছেলে জবাব দিয়েছে : (হুবহু) dost ami2 tao korta pari. r 2i tho shatao korta parosna. 2r mo2 ami r hijra na. তরজুমা - দোস্ত আমিতো তাও করতে পারি। আর তুই থো সাথেও করতে পারসনা। তোর মতো আমি আর হিজড়া না।
ভাগীনার পোস্টে আমার কমেন্ট : আজকাল বোকা মা-বাবা ছেলে মেয়েকে আই/এনড্রয়েড ফোন কিনে দিয়ে মনে মনে ভাবে বিরাট কিছু করে ফেলেছেন। ছেলে মেয়েরা যে নির্লজ্জতায় হাবু ডুবু খাচ্ছে সেদিকে কোন খবরই নাই।
ভাগীনা আমাকে জবাব দিয়েছে : Uncle O amar best frnd so ai kana nirlojjer ke daklan. r ami2 ok lover hishaba deke(ভুলnaলিখেনি) kokono ... lokman uncle
আমি ভাগীনাকে লিখলাম :
প্রিয় Z..., তুমি আমার সন্তান তুল্য। তোমার মা-বাবা এবং নিকটাত্মীয়রাও বিষয়টি গভীরভাবে বুঝতে না পারার কারণে তোমার সুরে সুর মিলালেও আমি কিন্তু তোমাকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না, যতক্ষণ না তুমি আমাকে আনফ্রেন্ড করছো অথবা আত্মীয়তা অস্বীকার করছো। আশা করছি আনফ্রেন্ড করার আগে আমার লেখাটি অন্তত একবার মন দিয়ে পড়ে নেবে।
১. 'Raihan Rabby' এর কমেন্টের জবাবে লিখেছ, তুমি ওর মতো ‘হিজড়া’ নও। তার মানে তুমি নিজের অজান্তেই স্বীকার করে নিলে, এখানে হিজড়ার বিপরীত কিছু ব্যাপার আছে।
২. তুমি আমাকে লিখেছ : সে তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড, ওকে লাভার হিসেবে দেখনা। সমস্যাটি এখানেই। ওকে যদি তুমি ভালবাসতে(!) তাহলে আমরা না হয় আগামীতে তোমার জন্য ওকে চিন্তা করে কোন ডিসিশন নিতাম। যাকগে, আমার নিচের কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর থেকে যাকে তুমি আগামীতে বিয়ে করার কোন আশা বা ইচ্ছে নেই তার সাথে এমনতরো ঘনিষ্টতার কুফল কি হতে পারে তা বুঝতে পারবে হয়ত-
১. তুমি যখন বিয়ে করতে যাবে তখন এমন কোন মেয়েকে নিশ্চিয়ই বিয়ে করতে রাজী হবে না, যে মেয়েটি ছাত্র জীবনে তোমার মতো অন্য কোন ছেলের বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিল এবং ঘনিষ্ট হয়ে সেলফি তুলেছে।
২.এই মেয়েটির (তোমার বেষ্ট ফ্রেন্ড!) যখন বিয়ের প্রশ্ন আসবে তখন যদি কেউ তার হবু জামাইকে তোমাদের সেলফিটি দেখায় তাহলে সে এই মেয়েকে অতীতে তোমার সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কের কারণে বিয়ে নাও করতে পারে। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি জানতে পরলেও সমস্যা হতে পারে।
৩. তুমি যেভাবে মেয়েটির সাথে ছবি তুলে ফেবুতে দিয়েছ অন্য কোন ছেলে তোমার বিবাহ উপযু্ক্ত বোনের সাথে এভাবে ছবি তুলে ফেবু/নেটে ছাড়লে তোমার ভালো লাগবে? তা তুমি আনন্দিত চিত্বে মেনে নেবে? আমিতো মনে করি তা তুমি কখনো মেনে নেবে না।
যদি তোমার বোনের ব্যাপারে এরকম কিছু মেনে না নাও তাহলে আরেকজনের বোনের সাথে তোমার এমন বিষয়টি কে মেনে নেবে? আশা করি বুঝার চেষ্টা করবে। ধন্যবাদ।
আমার লেখাটি পড়ে ভাগীনা নিজেকে শোধরে নিয়েছে নাকি অভিমান করেছে তা এখনো জানতে পারিনি, তবে ফেবু থেকে তার পোষ্টটি সরিয়ে নিয়েছে। বন্ধুগণ! এটি তার নিকট কোন ব্যাপরই না টাইপের বিষয় হওয়াতে সরাসরি ফেবুতে শেয়ার করেছে। গোপন বিষয়গুলো আরো কত বিশ্রী হতে পারে একটু ভেবে দেখুন।
তাই আসুন আমাদের আগামী প্রজন্মকে নির্লজ্জতার হাত থেকে রক্ষার জন্য আমরা সকলেই এগিয়ে আসি। সন্তান কার সেটা বড় বথা নয়, সবচেয়ে বড় কথা হলো এরা আমাদের সম্পদ। এদেরকে সঠিকভাবে গড়ে তোলা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ‘আমার সন্তানেরা ঠিক আছে, কি দরকার পরের সন্তান নিয়ে মাথা ঘামানেো’ এমন চিন্তা ভাবনা থেকে আমাদেরকে অবশ্যই ফিরে আসতে হবে। না হলে অনৈতিকতার মহামারীতে আমরাও আক্রান্ত হবো- কোন সন্ধেহ নেই।
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খারাপ দিক গুলো যে শুধু টিন এজরাই গ্রহন করছে তা নয় বড়দের মাঝে এর প্রভাব পড়ছে ভীষন ভাবে ।
আমাদের সবারই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া অত্যান্ত জরুরী হয়ে পড়ছে নিজে ও আগামী প্রজন্মকে এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ।
অনেক ধন্যবাদ সচেতনতা মূলক পোষ্টের জন্য ।
আগে ল্যাপটপ ডেক্সটপের ব্যবহার ছিল, তা ঘরের মধ্যে রেখে একটা নির্ধারিত সময়ে চালু করতো এবং মোটামোটি ঘরের অন্যান্য সদস্যদের সম্মুখেই থাকতো। এখন স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে এটি বহন যোগ্য হওয়াতেই বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন