ফেসবুক নেশার খেশারত
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৮:৩০:১৩ রাত
ছেলে ষষ্ট শ্রেনীর বার্ষীক পরিক্ষায় ফেল করেছে, মেয়েটি কোন রকমে ত্রি থেকে ক্লাস ফোরে প্রমোশন পেয়েছে। সংবাদটি শুনে দুবাই প্রবাসী আশরাফের মাথায় যেন বাজ পড়লো। তার ছেলে মেয়েরাতো লেখা পড়ায় এমন খারাপ ছিল না! ছেলে প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বেশ ভালো পাশ করে স্থানীয় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে। মেয়েটিরও স্কুলে বেশ সুনাম ছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন ছন্দ পতন কেন? কোন কিছু ভেবে কূল কিনারা করতে পারে না আশরাফ। ফোনের উপর ফোন করেও স্ত্রীর নিকট থেকে কোন সদুত্তর পায়না সে।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ আশরাফের স্ত্রী সায়মা, গ্রামের প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করতো। তাদের ছেলে মেয়ে স্কুলে দেওয়ার বয়সে পৌঁছলে পারিবারিক সিদ্ধান্তে চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিজের সন্তানদের লেখা পড়ার প্রতি নজর দেয়া শুরু করে এবং তাদেরকে ভালো স্কুলে পড়ানেোর জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে শহরে চলে আসে।
আর কেউ বুঝতে পারুক আর না পারুক সায়মা নিজেই বুঝতে পারে বাচ্চাদের এমন ছন্দ পতনের মূল নায়ক ফেসবুক। ওর নিজের অতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তিই বাচ্চাদের শিক্ষা জীবনে এমন পরিনতি ডেকে এনেছে। ওর ফেসবুক আসক্তি শুরু হয়েছিল বছরের শুরু থেকে। মেয়েকে স্কুলে আনা নেয়া করতে গিয়ে মেয়ের বান্দবীর মা রূপা ভাবীর সাথে পরিচয় ও ঘনিষ্টতা বাড়ে সায়মার।
রূপা ভাবী বে-নামে ফেসবুক আইডি খুলে তার প্রবাসী স্বামীর সাথে ইনবক্স প্রেমাভিনয় করে স্বামীর চরিত্র পরীক্ষা করেছিলেন। (ওনার ভাষায়) হাতে নাতে ধরা পরার পর থেকে এখন সে বেগানা মেয়েদের দিকে চোখ তুলেও তাকায় না। স্বামীকে শিক্ষা দেয়ার জন্য তার কৌশলটি বেশ কাজ দিয়েছে।
রুপা ভাবীর নিকট থেকে এমন গল্পটি শোনার পর সায়মার মাথায়ও ঢুকেছে আসরাফকে পরীক্ষা করে দেখার বিষয়টি। যদিও সায়মা জানে আশরাফ বেশ সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্টের অধিকারী। তারপরও বলা যায় না, পুরুষ মানুষ বলে কথা। চাকুরীর সুবাদে এমনিতেই সে কেম্পিউটার আর নেট নিয়ে বসে থাকে সর্বক্ষণ।
আর দেরী নয়, আশরাফের পাঠানো এন্ড্রয়েড ফোনটিতে নেট সংযোগ করে নেমে পড়লো অভিযানে। একটা আকর্ষণীয় মেয়েলি নামে ফেসবুক একাউন্টে নজর কাড়া প্রোপাইল পিক। দুরু দুরু বুকে প্রথম ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠায় আশরাফের নিকট। আকর্ষণীয় নাম এবং নজর কাড়া প্রোপাইল পিক দেখে যে কেউ সাথে সাথে একসেপ্ট করবে, আশরাফ কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সে অপরিচিত মেয়ে ফেবুয়ান দূরে থাক, পুরুষদের রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করার অগেও অনেকে যাচাই বাছাই করে নেয়। ফলে মার খেয়ে যায় সায়মার অভিযান। আর সেও আস্বস্ত হয়, তার স্বামী রূপা ভাবীর স্বামীর মতো আবাল নয়।
আশরাফ পরীক্ষায় পাশ করলেও পরিক্ষক সায়মা ফেল করে বসে চরম ভাবে। ইতোমধ্যেই সায়মা ফেসবুকে টুকটাক স্ট্যটাস দিয়ে বেশ সাড়া পেয়েছে। তার নিকট যথেস্ট ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে থাকে, সেও পাঠায় ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। এভাবে সে ফেসবুকে যথেস্ট পরিচিত হয়ে ওঠে। স্ট্যটাস দেওয়ার সাথে সাথে লাইক আর কেমন্ট আসতে থাকে জোয়ারের মতো। এতে সায়মা যথেষ্ট উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত হয়ে ফেসবুকের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নেয় নিজের অজান্তেই।
এন্ড্রয়েড ফোনটি সবসময় হাতের কাছেই থাকে। ফেজবুক নোটিফিকেশনের রিমি ঝিমি শব্দ দারুন আকর্ষণ করে সায়মাকে। সাথে সাথেই পেজ ওপেন করে স্ট্যাটাস পড়ে লাইক বা কমেন্ট করে বেশ মজা পায়। নোটিফিকেশন না আসলে নিজেই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে হোমের ওয়ালগুলো। এভাবে অনেক সময় নির্ঘুম রাত কাটিয়ে রাতের শেষ প্রহরে ঘুমিয়ে পড়ার কারণে প্রতি মাসেই কয়েক দফা বাচ্চাদের স্কুল মিস হয়। তাদেরকে পড়াতে গিয়ে ফেসবুকের কারণে যথাযত নজর দেয়া হয় না। ফলে বাচ্চারাও লাই পেয়ে খেলা ধুলায় বেশী সময় দিতে থাকে। এভাবে বাচ্চারা ধীরে ধীরে লেখা পড়ায় পিছিয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, রান্না বান্না এবং ঘরদোর গোছানোর কাজেও এলো মেলো হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে আশরাফ জরুরী ছুটি নিয়ে দেশে আসে। উপায়ান্তর না দেখে সায়মা সব ঘটনা খুলে বলে স্বামীকে। ঘটনার বিহ্বলতায় আশরাফ মার্মাহত হলেও রোগ ধরা পড়ার কারণে স্বস্থি বোধ করে। যেহেতু রোগ ধরা পড়েছে, সুতরাং কিকিৎসায় সফলত পাওয়া সম্ভব, এই ভেবে নিজেকে সামলে নেয় আশরাফ। রোগ আরো বড় এবং জটিলও হতে পারতো। একজন নেট পোকা হিসেবে আশরাফের নিকট যথেষ্ট তথ্য রয়েছে ফেজবুকের কারণে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ, অসম এবং অনাকাঙ্খিত প্রেম ও পরকীয়ার কারণে বিভিন্ন পরিবারে ভাঙ্গন এবং অশান্তির ইতিহাসও কম নয়। এসব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপন করে সে।
তাদের আগামীর করণীয় ঠিক করার জন্য আশরাফ আর সায়মা নিজেদের মধ্যে বৈঠকের আয়োজন করে। নিজের অতিরিক্ত ফেসবুক আসক্তির কারণে সংগঠিত ক্ষতির জন্য সায়মা দুঃখ প্রকাশ করে এবং আগামীতে এমন ভুল না করার অঙ্গীকার করে। আশরাফ বলে, ‘ফেসবুক-ব্লগ এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। তবে এসবের পেছনে নেশাগ্রস্তের মতো লেগে থাকা ঠিক নয়। আমি অফিসের কাজে অবহেলা করে এসবে বেশী সময় দিলে আমার চাকুরী চলে যেতো।’ ক্ষতি পুষিয়ে আগামীতে সুন্দর সংসার জীবন যাপনের জন্য আল্লাহ তাওফিক কামনা করে দোয়া করে তারা দু’জন।
বিষয়: বিবিধ
২৭৪০ বার পঠিত, ৮৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রথম মন্তব্যটি করার জন্য “দুষ্টু পোলা” ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
০ মেয়েদের মন সবসময়ই পুলিশ পুলিশ আর তারা সবসময়ই কৈয়ের তেলে কৈ ভেজে খায় ।
প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যক্তি বিশেষে ভ্যারি করে । আশরাফও করতো আর সায়মাও করতো । একজন নেট পোকা হয়েও নিজেকে ধরে রাখতে পেরেছে আরেকজন নতুন নতুন ব্যবহার করে সঙ্গীর প্রেরনায় জাসুসি করে নিজের ফ্যামিলিটার ক্ষতি করা শুরু করেছিলো ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বোঝার ও চলার তৌফিক দান করুন - আমিন।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন...
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন!
ধন্যবাদ ভাই।
দারুণ লিখেছেন... ধন্যবাদ লেখককে..
পরিশেষে সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
এত্তবড় সর্বনাশটা করারপরও আমি সায়মা ম্যাডামকে ক্ষমা করে দিয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছি কারন উনি যে নিজের করা মহা ভুলটা বুঝতে পেরে সঠিক পথে ফিরে এসে স্বামীকে সবকিছু খুলে বলেছেন, এ জন্য। না হলে আরো কি কি ঘটতো আল্লাহু আ'লম।
আশরাফ সাহেবকেও অবশ্যই ধন্যবাদ দেবো উনিওযে হাবিজাবি সিদ্ধান্ত না নিয়ে, মাথা ঠান্ডা রেখে স্ত্রীর ভুলটাকে ক্ষমা করে দিয়ে ভবিষ্যতটা সুন্দর করার জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
অনেক বড় শিক্ষা আছে এই ঘটনা থেকে।
ধৈর্যের মাধ্যেমে সুন্দর সামাধানের পথ বের করা উচিৎ।
বাস্তব সত্য হলো ব্লগিং এর মাধ্যমে একজন ব্লগার একটা সময় লেখক হয়ে যেতে পারেন খুব সহজেই কিন্তু ফেসবুকে তার সম্ভাবনা খুবই কম। ফেসবুকে অশ্লীলতার খুব বেশি ছড়াছড়ি আর ব্লগে অশ্লীলতার স্থান নাই বললেই চলে। তাই আমাদের উচিত ফেসবুকের তুলনায় ব্লগে বেশি সময় দেয়া।
তবে নিজ নিজ কাজের অবস্থানুযায়ী ভারসাম্য বাজায় রাখাও উচিৎ।
ইনশাআল্লাহ চোখ রাখছি।
তবে ফেসবুকে এমন অনেক তথ্য পাওয়া যায় যা মাঝে মাঝে সত্যি দূর্লভ ।
আমরা ভালোটা গ্রহণ এবং মন্দটা বর্জন করবো।
ধন্যবাদ ভাইজান।
আমিও ব্যাবাহার ছেড়েদিবো ইনশাআল্লাহ। ব্লগ+ফেবু
কোথায় করেছেন জানালে ভালো লাগতো।
অসংখ্য আশরাফের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এমনকি স্বয়ং আশরাফরাও ধ্বংসের মু্খো মুখি প্রায়। এ থেকে ফিরে না আসলে চরম বিপদ সামনে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে বোঝার ও চলার তৌফিক দান করুন - আমিন।
অনেক ধন্যবাদ
চরম বাস্তবিক একটা লেখা তুলে ধরার জন্য আপনাকে মোবারকবাদ !আপনাকে না জানালেই নয় এই ফেসবুকের কারনে আমার মেধায় পরিপূর্ণ ভাতিজি এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় A(-) পেয়েছে যেখানে কিনা আমরা ভেবেছি ও গোল্ডেন এ প্লাস পাবে !
এতই ভাল ছাত্রী ছিল সে যে ক্লাশ নাইনে যখন পড়ত তখন ওর প্রতিটা সাবজেক্টে গড়ে ৮৫ নম্বর আসত ,সে ক্লাশ টেনে উঠেই একটা ফেসবুক আইডি খুলে এবং তার লেখাপড়ার পতন ঘটতে থাকে !
আমি গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে সহমত পোষন করছি ।
একটা সরকারী আইন হওয়া উচিত্ যে ২২বছরের নিচে যাদের বয়স তারা ফেসবুক ইউজ করতে পারবেনা !
সতর্কতা মুলক একটি পোষ্ট উপহার দেওয়ার জন্য।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আবু ফারিহা ভাই।
বাহিরের কথা কি বলবে আমার ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া সন্তান সেও ফেসবুক ইউজ করতে আগ্রহী, যদিও তা থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন।
আর যেখানেই হোক না কেন, ফেইক কোনো কিছুই ভালো না। আমরা যারা মুসলমান, তাঁরা কেন ছদ্মাবরনে নিজেদেরকে ঢেকে রাখবো?
খুব সুন্দর পোষ্টটির জন্য আপনাকে আরো একবার ধন্যবাদ জানাই।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ব্যাবহার করুন নিজের কাজকে ফাকি দিয়ে নয়, পরিমিত ব্যাবহারের মাধ্যমে সর্বোপরি নিজের আমিত্বকে বিসর্জন দিয়ে নয়।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
অনেকেই লেখার বিশয়বস্তু হিসেবে বেছে নেয় এমন বিষয় যা অযথা বিতর্ক বাড়ায়, সম্পর্ক নষ্ট করে, এই লেখাটি সেরকম নয়; বরং উপকৃত হবার মত। তাই ফেইসবুকে শেয়ার করেছি। জাযাকাল্লাহ খাইর।
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=834132859939130&set=a.103199703032453.6609.100000272714767&type=1&theater;
গল্পটা চমৎকার।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন