রমজানে আলোচনার অংশ : সূরা লূকমান- ১২ থেকে ১৯ আয়াত
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১০ জুলাই, ২০১৪, ০১:৪৯:০২ দুপুর
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ ছুবহানা ওয়া তায়ালার জন্য, যিনি আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুখাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব, মানব জতির মধ্যে শামিল করেছেন। অসংখ্য দরুদ ও সালাম বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক , আখেরী নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের প্রতি- (আল্লাহুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদ.....)
কুরআন নাজিলের মাস মাহে রমাদ্বান। বছরের অন্যান্য মাসের চেয়ে এই মাসেই বেশী বেশী কুরআন চর্চা করা উচিৎ। আমরা কিন্তু কুরআন নিয়ে বিভ্রান্তির অংশ হিসেবে এ মাসে খতমে তারাবিহ এর নামে তাড়াতাড়ি কুরআন খতমের নামাজে শামিল হতে পারলেই ‘কুরআন চর্চা’ হয়ে গেছে ভেবে তৃপ্তীর ঢেকুর তুলে ক্ষ্যান্ত হচ্ছি। কুরআন চর্চা হলো- কুরআন তেলাওয়াত করা, অর্থ বুঝার চেষ্টা করা, কুরআনের বাণী সমূহ নিজে আমল করা, নিজ পরিবার এবং সমাজে কুরআনের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা।
এরই অংশ হিসেব ব্লগার ভিশু ভাই পবিত্র মাহে রমাদ্বানের পূর্বেই ব্লগার বন্ধুদের জন্য একটি ‘রমাজান আলোচনার সিডিউল’ তৈরী করেছেন এবং আমার নামের সাথে মিল রেখেই আমাকে ‘সূরা লুকমান’ এর ১২ থেকে ১৯ আয়াতের উপর আলোচনা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আমার আযোগ্যতা সত্বেও শিখার নিয়্যতে আলোচনায় অংশ নেব বলে কথা দিয়েছিলাম। ওয়ামা তাওফীকই ইল্লা বিল্লাহ্!
এমন সুন্দর উদ্দ্যাগটি নেয়ার জন্য ভিশু ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং দোয়া রইলো- আল্লাহ তাকে দুনিয়া এবং আখেরাতে উত্তম নে’য়ামত দান করুন। সাথে সাথে টুডে ব্লগ কতৃপক্ষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এমন একটি সুন্দর প্রোগ্রামে সহযোগীতা করার জন্য।
প্রিয় সম্মানীত বন্ধুগণ!
আমি ক্রমান্বয়ে এই সূরার পরিচিতি ও নামকরণ, নাযিলের সময়কাল এবং বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য আলোচনা পূর্বক ১২ হইতে ১৯ আয়াতের তরজমা এবং সবশেষে আয়াত থেকে আমি যা বুঝতে পেরেছি তা আপনাদের খেদমতে পেশ করার চেষ্টা করবো- ইনশা আল্লাহ্। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ, কুরআন নিয়ে নাড়চাড়া করতে গেলে ভূলচুক হয়েই যেতে পারে। তাই বিজ্ঞ বন্ধুগণের প্রতি আন্তরিক অনুরোধ থাকবে, আমার কোন ভুল-ভ্রান্তি নজরে আসলে তা সংশোধন পূর্বক আমাকে উপকৃত করে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করবেন।
পরিচিতি ও নামকরণ :
এটি মহাগ্রন্থ আল্ কুরআনের ৩১ নম্বর সূরা। এই সূরার দ্বিতীয় রুকুতে লুকমান হাকীম নিজের পুত্রকে যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা উদ্ধৃত করা হয়েছে। এই সুবাদে এ সূরার ‘লুকমান’ নামকরণ করা হয়েছে।
নাযিলের সময়কাল :
ইসলামের অগ্রগতি এবং দাওয়াতের পথরোধ করার জন্য জুলুম-নিপীড়নের সূচনালগ্নে এই সূরাটি নাযিল হয়। তখন ইসলাম ঘরোয়া প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছিল। সূরার ১৪ ও ১৫ আয়াত থেকে এর আভাস পাওয়া যায়। সেখানে নতুন ইসলাম গ্রহণকারী যুবকদের বলা হয়েছে, পিতা-মাতার অধিকার যথার্থই আল্লাহর পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু তারা যদি তোমাদের ইসলাম গ্রহণ করার পথে বাধা দেয় এবং শিরকের দিকে ফিরে যেতে বাধ্য করে তাহলে তাদের কথা কখনোই মেনে নেবে না।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :
এ সূরার মধ্যে শিরকের অসারতা ও অযৌক্তিকতা এবং তাওহীদের সত্যতা ও যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। বাপ-দাদার অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণ ত্যাগ করে মুহাম্মদ (সা) সম্পর্কে উম্মুক্ত হৃদয়ে চিন্তা-ভাবনা করে এবং উম্মুক্ত দৃষ্টিতে বিশ্ব-জগত এবং নিজের মানবিক সত্তার মধ্যে নিহিত সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ প্রত্যক্ষ করে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে শিরক ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে।
মহাজ্ঞানী লুকমানের উদাহরণ টেনে বুঝানো হয়েছে মুহাম্মদ (স) শিরকের বিরুদ্ধে এবং তাওহীদের পক্ষে যেসব কথা বলছেন তা নতুন কিছু নয়। মহাজ্ঞানী লুকমানের জ্ঞানগরিমার কাহিনী বহুযুগ আগে থেকেই প্রচলিত এবং আরবরা নিজেদের মধ্যে এসব কথাবার্তা তখনো চর্চা করতো।
আয়াত সমূহের তরজমা :
وَلَقَدْ آتَيْنَا لُقْمَانَ الْحِكْمَةَ أَنِ اشْكُرْ لِلَّهِ ۚ وَمَن يَشْكُرْ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
১২) আমি লুকমানকে দান করেছিলাম সূক্ষ্ণজ্ঞান৷ যাতে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় ৷ যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তার কৃতজ্ঞতা হবে তার নিজেরই জন্য লাভজনক৷ আর যে ব্যক্তি কুফরী করবে, সে ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ অমুখাপেক্ষী এবং নিজে নিজেই প্রশংসিত ৷
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ-
১৩) স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল , সে বললো, “ হে পুত্র ! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না৷ যথার্থই শিরক অনেক বড় জুলুম৷
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ
১৪) আর প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি৷ তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে ৷ (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে৷
وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَىٰ أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
১৫) কিন্তু যদি তারা তোমার প্রতি আমার সাথে এমন কাউকে শরীক করার জন্য চাপ দেয় যাকে তুমি জানো না, তাহলে তুমি তাদের কথা কখনোই মেনে নিয়ো না৷ দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচার করতে থাকো কিন্তু মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে৷ তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে৷ সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তা আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো৷
يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُن فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ
১৬) (আর লুকমান বলেছিল ) “ হে পুত্র! কোন জিনিস যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা লুকিয়ে থাকে পাথরের মধ্যে , আকাশে বা পৃথিবীতে কোথাও , তাহলে আল্লাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন৷ তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন৷
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
১৭) হে পুত্র! নামায কায়েম করো, সৎকাজের হুকুম দাও, খারাপ কাজে নিষেধ করো এবং যা কিছু বিপদই আসুক সে জন্য সবর করো৷ একথাগুলোর জন্য বড়ই তাকিদ করা হয়েছে৷
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
১৮) আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে৷
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ ۚ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
১৯) নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো৷ সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ৷
আয়াত সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :
আমি এখন উল্লিখিত আয়াত সমূহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পেশ করার চেষ্টা করছি-
১২) আমি লুকমানকে দান করেছিলাম সূক্ষ্ণজ্ঞান৷ যাতে সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় ৷ যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে তার কৃতজ্ঞতা হবে তার নিজেরই জন্য লাভজনক৷ আর যে ব্যক্তি কুফরী করবে, সে ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ অমুখাপেক্ষী এবং নিজে নিজেই প্রশংসিত ৷
- লুকমান এর পরিচিতি নিয়ে কিছুটা বিতর্ক রয়েছে। প্রকৃত পক্ষে লুকমানের পরিচয় উদ্ধার করা এ আয়াতের মূখ্য উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লাহর এ নেক বান্দাটি আল্লাহর নিকট থেকে সুক্ষ্ণজ্ঞান অর্জন করে তাঁর প্রতি যে কৃতজ্ঞ হয়েছেন এটিই মূল বিষয়। আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি-জ্ঞান দান করেছেন এবং পরীক্ষা নেয়ার জন্য ইচ্ছার স্বাধীনতাও দিয়েছেন। ইচ্ছার স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ আল্লাহর সাথে কুফরী করলে তাতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হয় না। কারণ তিনি কারো মুখাপেক্ষি নন। (সূরা ইখলাসের মধ্যেও তা স্পষ্ট করা হয়েছে।)
১৩) স্মরণ করো যখন লুকমান নিজের ছেলেকে উপদেশ দিচ্ছিল , সে বললো, “ হে পুত্র ! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না৷ যথার্থই শিরক অনেক বড় জুলুম৷
আরবরা যখন তাদের সন্তানদেরকে ইসলাম গ্রহণে বাধা প্রদান করতেছিল তখনই একজন জ্ঞানী পিতা তার পুত্রকে কি উপদেশ দিয়েছিলেন তা তাদেরকে শুনিয়ে দিয়ে তাদের মানসিক চিন্তার পরিবর্তন করতে চেয়েছেনন। বর্তমানে আমাদের দেশেও কিছু হতভাগা পিতা আছেন যারা তাদের সন্তানদেরকে নানা ভাবে আল্লাহদ্রোহী এবং অ-নৈতিক কাজে উৎসাহ যোগিয়ে থাকেন নগদ লাভের আশায়।
- আমরা শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরন মঞ্চের বদৌলতে মুসলিম নামধারী যেসব নাস্তিক দেখেছিলাম তারাও তাদের পিতা-মাতা কতৃক কোন না কোন ভাবে উৎসাহীত হয়েই নাস্তিকতায় পোক্ত হয়েছিল। তাদের বাবারা ওসব নাস্তিককে পথে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সম্পর্ক ছেদ করলেও ধরে নেয়া হতো তারা সহযোগীতা করেন নি।
- আমার পরিচিতের মধ্যেও এমন কয়েকজন পিতা আছেন যারা সন্তানের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য গর্ব করে বুক ফুলিয়ে চলা ফেরা করেন এবং নোংরা আয় দিয়ে আয়েশি জীবন যাপন করেন। নারায়ন গঞ্জের ‘নীলা’র বাবা মাও তাদের অন্যতম।
- কুয়েত প্রবাসী চট্টগ্রামের এক পিতা তার কন্যা গানে প্রথম হয়ে যে মোটা অংকের দান পেয়েছিল তা ভোগ করার জন্য প্রবাসের চাকুরী ছেড়ে চলে আসার সংবাদও পেয়েছিলাম।
১৪) আর প্রকৃতপক্ষে আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার হক চিনে নেবার জন্য নিজেই তাকিদ করেছি৷ তার মা দুর্বলতা সহ্য করে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে এবং দু’বছর লাগে তার দুধ ছাড়তে ৷ (এ জন্য আমি তাকে উপদেশ দিয়েছি) আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং নিজের পিতা-মাতার প্রতিও, আমার দিকেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে৷
সন্তান পেটে ধারণ করা থেকে শুরু করে লালন পালন করে বড় করে তোলা পর্যন্ত মাতা-পিতাকে কত অসহনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয় তা সাধারণত নিজেরা মাতা-পিতা হওয়ার আগে না বুঝলেও পরে খুব ভালো করেই বুঝি। বুঝার পরও অনেক সন্তান মাতা-পিতার প্রতি নাফরমানী করে তাদেরকে বৃদ্ধাবস্থায় ওল্ড এজ হোমের বাসিন্দা করে নিজেরা আমাদ ফুর্তিতে দিন কাটায়। কোন কোন সন্তান স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য মা-বাবাকে অবহেলা করে। নিঃসন্দেহে এটি পশুর আচরণ। পশুরাই কেবল স্বাবলম্বী হওয়ার পর মা-বাবা চিনে না।
উপকারীর উপকার স্বীকার করা এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া খুবই জরুরী। আল্লাহ আমাদেরকে সুন্দর আবয়বে সৃষ্টি করে অসংখ্য নি’য়ামতে ধন্য করেছেন, এজন্য আমরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হবো এবং মাতা-পিতা অত্যন্ত কষ্ট করে লালন পালন করেছেন সেজন্য তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ হবো এবং হক আদায় করার চেষ্টা করবো।
১৫) কিন্তু যদি তারা তোমার প্রতি আমার সাথে এমন কাউকে শরীক করার জন্য চাপ দেয় যাকে তুমি জানো না, তাহলে তুমি তাদের কথা কখনোই মেনে নিয়ো না৷ দুনিয়ায় তাদের সাথে সদাচার করতে থাকো কিন্তু মেনে চলো সে ব্যক্তির পথ যে আমার দিকে ফিরে এসেছে৷ তারপর তোমাদের সবাইকে ফিরে আসতে হবে আমারই দিকে৷ সে সময় তোমরা কেমন কাজ করছিলে তা আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো৷
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা গেলো কোন অবস্থাতেই মাতা-পিতার নির্দেশে আল্লাহর প্রতি শিরক করা যাবে না। তবে তারা নিজেরা কুফরির মধ্যে লিপ্ত থাকলেও তাদেরকে কষ্ট না দিয়ে সদাচরণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগীতা চালু রাখতে হবে।
১৬) (আর লুকমান বলেছিল ) “ হে পুত্র! কোন জিনিস যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা লুকিয়ে থাকে পাথরের মধ্যে , আকাশে বা পৃথিবীতে কোথাও , তাহলে আল্লাহ তা বের করে নিয়ে আসবেন৷ তিনি সূক্ষ্মদর্শী এবং সবকিছু জানেন৷
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের সূক্ষ্মাতি সূক্ষ্ম কর্মেরও প্রতিদান দেবেন ইয়াউমুল হাশরে। সূরা জিলজাল এর ৭ও৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে -
﴿فَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ﴾﴿وَمَن يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ﴾
তারপর যে অতি অল্প পরিমাণ ভালো কাজ করবে সে তা দেখে নেবে এবং যে অতি অল্প পরিমাণ খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে৷
১৭) হে পুত্র! নামায কায়েম করো, সৎকাজের হুকুম দাও, খারাপ কাজে নিষেধ করো এবং যা কিছু বিপদই আসুক সে জন্য সবর করো৷ একথাগুলোর জন্য বড়ই তাকিদ করা হয়েছে৷
- কাফের ও মুসলমান চিহ্নিত করার বড় মাধ্যম হচ্ছে নামায বা সালাত। তাছাড়া একই ভৌগলিক এলাকার কাফের ও মুসলিমের শারিরীক গঠন থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ে কোন অমিল থাকার কথা নয়।
- নিশ্চিতভাবেই নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে৷ (আনকাবুত- ৪৫)
- হাদীস শরীফে বলা হয়েছে ; নামাজ মু’মিনের মেহরাজ স্বরূপ, নামাজ দ্বীনের স্তম্ভ
আল্লাহর হুকুম হচ্ছে- সৎকাজের নির্দেশ আর অসত কাজে নিষেধ বা বাধা দেয়া।
আমাদের ভালো মানুষদের মধ্যে সৎকাজের হুকুম দাতা বা আহ্বানকারী যত আছে অসৎ কাজে বাধা দানকারী তেমন চোখে পড়ে না। কারণ এটি করতে গেলে লড়তে হতে পারে। আর তারা মনে করেন লড়াই ঝগড়ায় গিয়ে কী লাভ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন ভালো মানুষি কতটুকু গ্রহণ করবেন তা একটু চিন্তা করলেই বোধগম্য হওয়া সম্ভব।
বিপদে হতাশ হওয়া মু’মিনের লক্ষণ নয়। সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ঈমান অটুট রেখে এবং সঠিক রাস্তায় চলার পর বাকী দিকগুলো আল্লাহর কুদরতের হাতে সোপর্দ করে ‘খাইরিহি ওয়াশশারহি মিনাল্লাহে তা’য়ালা’ মেনে নেয়ার মানসিকতা তৈরী করতে হবে। মনে রাখতে হবে আল্লাহর হুকুম ছাড় আমার শরীরের একটি লোমও কেই তুলে নিতে পারবে না।
১৮) আর মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলো না, পৃথিবীর বুকে চলো না উদ্ধত ভঙ্গিতে, আল্লাহ পছন্দ করেন না আত্মম্ভরী ও অহংকারীকে৷
-মানুষের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে কথা বলা অহংকারী মানুষের অন্যতম বদ খাসলত। অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ যেমন পছন্দ করেন না, তেমনি অহংকারী ব্যক্তি সকলের নিকট র্ঘনার পাত্র হয়ে থাকে। যদিও ভয় বা অন্য কোন কারণে উপরে উপরে সম্মান দেখায়।
- একজন স্কলার অত্যন্ত সুন্দর বলেছেন- তিনি বলেন, যার সকাল শুরু হয় ময়লা পরিস্কার করে (মেথরের কাজ করে)! তার আবার কিসের অহংকার?
১৯) নিজের চলনে ভারসাম্য আনো এবং নিজের আওয়াজ নীচু করো৷ সব আওয়াজের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে গাধার আওয়াজ৷
মানুষের চলন বলন প্রভৃতির মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিৎ। শরীরে শক্তি আছে বলেই গুরু মহিষের মতো চলাফেরা করতে হবে অথবা সামান্য অপছন্দনীয় কথাতেই চিল্লা-চিল্লি করে সব একাকার করে ফেলা ভদ্রতার পরিচায়ক নয়।
সম্মানীত বন্ধুগণ!
তাফহীমুল কুরআন থেকে অধ্যয়নের পর আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি সে আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি। বিষয়ের উপর লিখতে গিয়ে কোন ভুলভ্রান্তি হলে তা যেন আল্লাহ আমাদের মন থেকে ভুলিয়ে দেন আর কুরআনের প্রকৃত শিক্ষা দিয়ে যেন আমাদের হৃদয় আলোকিত করে দেন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৮৯ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাযাকাল্লাহু খাইর।
আসলে অনেক সময় মানুষ নাম দ্বার প্রভাবিতও হয়ে থাকে। নিজের ভালো নাম এবং তা কোন উল্লেখ যোগ্য ব্যক্তির সাথে মিল থাকলে তাতে একটু আলাদা আমেজ থাকে। ধন্যবাদ আপনাকে।
লোকমান@অসংখ্য ধন্যবাদ গুরুত্বপুর্ণ পোষ্টের জন্য আসলে মা বাবা হচ্ছে প্রথম শিক্ষক
লোকমান@অসংখ্য ধন্যবাদ গুরুত্বপুর্ণ পোষ্টের জন্য আসলে মা বাবা হচ্ছে প্রথম শিক্ষক
লোকমান@অসংখ্য ধন্যবাদ গুরুত্বপুর্ণ পোষ্টের জন্য আসলে মা বাবা হচ্ছে প্রথম শিক্ষক
ভিশু ভাইকে ধন্যবাদ এমন একটি উদ্যোগের জন্য এবং আপনাক্রে ধন্যবাদ সময় মত কথাটি পালন করার জন্য ।
আমি ও ঠিক একথা গুলো ই বলতে চিয়েছি ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
অ.ট. ‘বাজলবী’ অর্থটা জানতে আগ্রহী, জানাবেন প্লিজ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন