ব্লগিং এর পঞ্চম বর্ষ এবং ফেলে আসা দিনগুলি - ৯

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১০ মে, ২০১৪, ০৯:১০:৩২ সকাল

এবি এবং এসবি’র আনুষ্ঠানিক যাত্রার পূর্বেই রেজিষ্ট্রেশন করে নিয়ে পড়ে গেলাম শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায়। এটাকে আধিক্যের বিড়ম্বনা ও বলা যায়। আমার মতো ক্ষুদ্র মস্তিস্ক ব্লগারের পক্ষে একই সাথে সমমনা দু’টি ব্লগে সময় দেয়া সহজ নয়। আবার এড়িয়ে যাওয়া ও সম্ভব নয়। কারণ পরিচ্ছন্ন ব্লগ আন্দোলনের আমিও একজন সমর্থক। সমর্থকই যদি মিছিলে না থাকে তাহলে আন্দোলন জমবে কীভাবে? অন্য দিকে সামু, প্রথম প্রেম বলেই কথা। যার সাথে ব্লগিং এর হাতে কড়ি, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে একটি আসন তৈরী করে নিয়েছি যেখানে, সেখান থেকে হটাৎ বের হওয়াও সহজ ছিল না।

শেষ পর্যন্ত সামুতে প্রেমের তরী আর বেশী দিন বাইতে হয়নি। নিম্মোক্ত পোস্টটি (যা পরে এসবি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল) লেখার কারণে সরকার পন্থীদের চাপের মুখে আমাকে ব্যান করা হলো। ধাক্কাটি না খেলে হয়ত এবি এবং এসবিতে খুব একটা সক্রিয় হতে পারতাম না। আমার জীবনের অপ্রত্যাশিত কল্যাণগুলো সাধারণত এভাবেই এসে থাকে।

এই সেই আর্টিক্যাল, যার কারণে সামু থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।

রাজনীতির মেষ শাবক 'সাকা': "তোর বাপ পানিটা ঘোলা করে নাই, তুই করেছিস"

অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত ১৬ই ডিসেম্বর (২০১০) ভোর রাতে বনানীর একটি বাড়ি থেকে সালাহউদিন কাদের চৌধুরীকে গাড়ী পোড়ানোর মামলায় গ্রেফতার করা হয় এবং পরে ৭১-এর মানবতা বিরোধী অপরাধেও ট্রাইবুন্যাল থেকে গ্রেফতারীর আবেদনের পর তা বাস্তবায়ন করা হলো। নানা কারণে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব। মিডিয়া জুড়ে তাঁর পক্ষে বিপক্ষে নানা রকম সংবাদ, ফিচার-প্রবন্ধ লিখা হচ্ছে অনবরত। আমি মিডিয়া জগতের উল্লেখ যোগ্য কেউ নই, তবে ১৯৭১-এর একজন বাস্তব স্বাক্ষী। নানান কৌশলে ইতিহাস বিকৃত করে নতুন প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করার ফলে 'সাকা চৌধুরী' বিষয়টি সাত অন্ধের হাতী দেখার মত অবস্থায় রূপ নিয়েছে। তাছাড়া 'যুদ্ধপারাধী এবং ৭১ এর মানবতা বিরোধী' কথাগুলো সামনে আসলেই মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় এবং অতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ার কারণে সত্যের সাক্ষী দিতেও কেউ এগিয়ে আসবেন না। কথিত যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে সাক্ষী দিতে গিয়ে নিজেও আবার যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত হন কি না, এই ভয়ে অনেককেই দেখি 'চাচা আপন জান বাঁচা' নীতিতে চলছেন। তারই প্রেক্ষিতে আমার অবস্থান থেকে ১৯৭১-এ কাদের চৌধুরী পরিবার এবং জনাব সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তৎকালীন অবস্থা তুলে ধরার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন স্বাধীনতা পূর্ববর্তী পূর্ব পাকিস্তানের জাঁদরেল মুসলিম লীগ নেতা। উত্তর চট্রগ্রামের রাউজান থানা ছিল তাঁর নির্বাচনী এলাকা। তিনি এতটা প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় ছিলেন যে, উক্ত নির্বাচনী এলাকাটি হিন্দু অধ্যুষিত হওয়া সত্ত্বেও বার বার এখান থেকে নির্বাচিত হতেন। হিন্দুরা যদিও মুসলিম লীগ বিরোধী, তথাপি এখানে অনেক হিন্দু ফজলুল কাদের চৌধুরীর ব্যক্তি ইমেজ, কেউ কেউ সাহায্য পুষ্ট হয়ে আবার কিছু অংশ চাপের মুখে তাঁকে ভোট দিতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং ফটিক ছড়ি এলাকা থেকে সালাহউদ্দিন-গিয়াসউদ্দিনরা বার বার নির্বাচিত হওয়ার মুলে ছিল তাদের পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর জনপ্রিয়তা। অখন্ড পাকিস্তানের অন্যতম স্বপ্ন দ্রষ্টা মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান দ্বি-খন্ডিত হোক তা চাইতেন না। যে কারণে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলেন এবং ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পর দালাল আইনে বন্দী হয়ে দালাল, রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী, নর ঘাতক ইত্যাদি খেতাবে ভুষিত হয়েছিলেন। তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর চরম রাজাকারীর বিষয়টি মুহুর্মুহু প্রচার-প্রচারণা চলিয়ে জনগণকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার যথেষ্টায় কোন ত্রু টি করেননি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি চট্রগ্রাম বাকলিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম এবং যুদ্ধের নয় মাস আমরা সপরিবারে ফজলুল কাদের চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকার চিকদাইর ইউনিয়নে আত্মীয়ের বাড়ীতে আশ্রিত ছিলাম। তাছাড়া আমার দাদার বাড়ী ছিল পশ্চিম রাউজানের নোয়াজিস পুর ইউনিয়নে এবং রাউজানের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। আমার বাবার আমল থেকে আমরা পুরোপুরি শহুরে হয়ে গেলেও এই সুবাদে রাউজানের সাথে একটা যোগসূত্র ছিল এবং রাউজানের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের ঐ নয় মাসে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাউজান থানার সবচেয়ে বড় এবং উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় এবং কন্ডেশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের সত্ত্বাধিকারী শ্রী নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকান্ড। এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া অবস্থাপন্ন হিন্দুদের বাড়ী-ঘর লুট পাট। এসব লুট পাটে অংশ নিয়েছিল গরীব এবং লোভী লোকেরা। শ্রী সিংহ নিজ এলাকার জনগণের প্রতি এতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, পরিবারের সকল সদস্যকে ভারতে পাঠালেও নিজে থেকে গিয়েছিলেন তার প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে। তাঁর অত্যন্ত দূঃভাগ্য যে পাক বাহিনীর লোকেরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাছাড়া এই রাউজান থানায় উল্লেখ করার মত বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছিল তা স্বাধীনতা পরবর্তী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যত প্রাণহানী হয়েছে তার চেয়ে বেশী ছিল না। অথচ যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে তাতে প্রকৃত ইতিহাস না জানা যে কারো ভ্রম হতে পারে যে, বাংলাদেশের বড় বধ্যভূমিটা রাউজানে কি না।

বিজয় অর্জনের কয়েকদিন পর শহরে এসে দেখতে পেলাম ফজলুল কাদের চৌধুরীর গ্রেফতারের সংবাদে আনন্দ মিছিল চলছিল শহরের রাস্তাগুলিতে। বিজয়ের আনন্দের সাথে চট্রগ্রামের রাজাকার কিং ফজলুল কাদের চৌধুরীর গ্রেফতারের আনন্দ একাকার হয়ে ডিসেম্বর মাসের বাকী দিনগুলিতে প্রায় প্রতিদিনই মিছিল হতো। চকবাজার এলাকায় যে মিছিল হতো তাতে বড় ভাইদের সাথে আমারও যোগ দেয়ার সুযোগ হয়েছিল। মিছিলে যোগ দিতাম অত্যন্ত আগ্রহ উদ্দীপনা সহকারে। ঠেলাগাড়ীর উপর ফজলুল কাদের চৌধুরীর কুশপুত্তলিকা দাঁড় করে ঝাঁটা এবং জুতার মালা গলায় ঝুলিয়ে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিন করতো এবং 'ফ'কা নিপাত যাক' এই শ্লোগানে মুখরিত থাকতো মিছিলগুলি। এত কিছুর পরও ফজলুল কাদের চৌধুরীর জনপ্রিয়তায় কিন্তু ধ্বস নামানো যায়নি। তার বড় প্রমাণ ছিল, তাঁকে জেলের ভিতর (তাঁর পরিবারের দাবী অনুয়ায়ী) বিষ প্রয়োগে হত্যা করার পর চট্রগ্রাম পেরেড ময়দানে তাঁর নামাজে জানাযায় লাখো জনতার ঢল। তাও আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে! আমার নজরে আসা জানাযা অনুষ্ঠানে আগত প্রায় প্রতিটি লোকই শোকাহত এবং অশ্রু-সজল ছিলেন। জানিনা কোন যাদু বলে এই জঘন্য রাজাকারীর পরও চট্রগ্রামের মানুষের নিকট তিনি এত প্রিয় ছিলেন।

যে কারণে ঘটনাটি উল্লেখ করতে হলো: তখন শহর কিংবা গ্রামের কোথাও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কোন অপকর্মের কথা কারও মুখে শোন যায়নি। এমন কি আমরা ফ'কা চৌধুরীকে ধিক্কার জানিয়ে যে মিছিল করেছি সেখানেও কিন্তু সা'কা চৌধুরীর কোন নাম কেউ ভুলেও উচ্চারণ করেননি। তার অর্থ যা দাঁড়াল, তা হচ্ছে- তখন পর্যন্ত রাজাকার, শান্তি কমিটির মেম্বার, দালাল, স্বাধীনতা বিরোধী, নর ঘাতক এবং যুদ্ধাপরাধী সহ সকল অপকর্মের হোতা হিসাবে একমাত্র ফজলুল কাদের চৌধুরীকে মানা হতো, তাঁর ছেলে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নয়। তখন যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক ময়দানে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নাম মোটেই উচ্চারিত হয়নি, যেমনটি উচ্চারিত হয়নি শেখ কামাল, জামাল, হাসিনা (বর্তমান মাননীয় প্রাধান মন্ত্রী) এবং রেহানার নাম। এর প্রধান কারণ হচ্ছে উপ-মহাদেশের বড় রাজনীতিবিদদের একটি অঘোষিত ট্রেডিশন। সেই ট্রেডিশনটি হচ্ছে তাঁরা রাজনৈতিক হাঙ্গামার ময়দানে নিজের ছেলে মেয়েদেরকে সহজে আনেন না। মিছিলে গুলি খেয়ে মরলে মরুক পরের ছেলে, জেল-বন্দী হলে হোক পরের ছেলে তাতে কি আসে যায়? নিজের ছেলে মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয় লেখাপড়া করার জন্য। তাঁদের পিতার জীবদ্দশায় না সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী রাউজানের সীটের জন্য লড়াই করার স্বপ্ন দেখতেন না শেখ হাসিনা (মাননীয়) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।

সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে নিয়ে অপপ্রচার: আমি শুনেছি কোন কোন ইতিহাস লেখক নাকি দাবী করেছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী শ্রী নতুন চন্দ্র সিংহকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করেছেন। কয়েকটি কারণে এই দাবীটি আমার নিকট খুবই হাস্যকর মনে হয়েছে। প্রথম কথা হচ্ছে, নতুন চন্দ্র সিংহ কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। যদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতেন তাহলে কোন রকম এবং কিছু সময়ের জন্য হলেও বিশ্বাস করা যেত যে রাজনৈতিক শত্রু কে খতম করা হয়েছে। তাছাড়া মিঃ সিংহ কাদের চৌধুরী পরিবারের ব্যবসায়িক পার্টনার বা ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেন না। এমনটি হলেও ধরে নেয়া যেত যে, ব্যাবসায়িক পার্টনার বা প্রতিদ্বন্দ্বী খতম করা হয়েছে। কিউ সি পরিবার কোন ধর্মান্ধ পরিবারও নয় যে, শ্রী নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করে বেহেশতের টিকেট সংগ্রহ করেছেন। শ্রী নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করা যদি কিউ সি পরিবারের জন্য অনিবার্য হতো, তাহলেও নিজ হাতে গুলি করতে হবে কেন? আবার কেউ কেউ বলেন, পাক আর্মী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নির্দেশে শ্রী সিংহকে হত্যা করেছে। এখানেও তারা একটু নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ নির্দেশ যদি দিতেই হয় তাহলে দিতে পারেন ততকালীন রাজাকার চীফ ফজলুল কাদের চৌধুরী, সাকা চৌধুরী নয়। সুতরাং সঙ্গত কারণে এই দায় সাকা চৌধুরীর উপর বর্তায় না। আরো বলা হয় লুট পাট ও অগ্নী সংযোগ করেছেন সাকা চৌধুরী। লুটপাটের ঘটনাতো আগেই উল্লেখ করেছি, সাকা পরিবার লুট পাট করবে তা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। অগ্নী সংযোগের তো প্রশ্নই উঠে না। হিন্দুরা চলে যাওয়ার পর সাধারণ লোকেরা তাদের ঘরের টিন পর্যন্ত খুলে নিয়েছিল সুতরাং অগ্নী সংযোগ করা হবে কেন?

তাহলে পাক সেনারা শ্রী সিংহকে কেন হত্যা করল? এর জবাব জানার জন্য একটু পিছনে যেতে হচ্ছে। বৃটিশ লুটেরাগণ ২০০ বছরের শাসন ও শোষনের পর হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ট ভারত ও মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট পাকিস্তান নামের রাষ্ট্র দু’টি এমন ক্রিটিক্যাল ভাবে ভাগ করে স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছিল, যার ফলে রাষ্ট্র ‍ দু'টির জন্মই হয়েছিল শত্রু রাষ্ট্র হিসাবে। ১৯৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত বেশ ক’টি যুদ্ধ এবং যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব লেগেই ছিল রাষ্ট্র দুটির মধ্যে। এক দেশ আরেক দেশকে ঘায়েল করার নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করার কারণে এবং হিন্দুরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতের ফেভারে থাকায় পাকসেনারা হিন্দুদেরকে বিশ্বাস করতে পারেনি এবং ধরেনিত তারা ভারতের দালাল। এ কারণেই প্রভাবশালী হিন্দু হত্যার অংশ হিসাবে তারা শ্রী নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করে। হিন্দুরাও তা বুঝতে পেরে আগে ভাগেই ওপাড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন।

সম্মানীত পাঠক বন্ধুগণ, একটু নিরপেক্ষতার সাথে ভেবে দেখলে বিষয়টি আমাদের নিকট অত্যন্ত পরিস্কার হয় যে, একজন নিরঙ্কুশ রাজাকার কিং ফজলুল কাদের চৌধুরীর রাজাকারী সম্পর্কে কোন কথা বর্তমান মার্কেটে আসছে না কেন? এবং তাঁর বদলে তাঁর ছেলে সালাহউদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে এই টানা হেঁচড়া কেন? আমি আপাতত এর চারটি কারণ দেখতে পাই। একটি হচ্ছে- যেহেতু ফজলুল কাদের চৌধুরী বর্তমানে ইহ জগতে নাই, ট্রাইবুন্যালের বিচারে হাজার বার ফাঁসির রায় দিলেও কোন লাভ হবে না এবং তাঁর সময়ের জনগণের অন্তরে যে স্থান ছিল তাই থেকে যাবে। দ্বিতীয় এবং মূল কারণটি হচ্ছে- ডান এবং ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদদের খতম করে ময়দান পরিস্কার করা। তৃতীয় এবং রহস্যজনক কারণ হচ্ছে- কোন এক অজানা কারণে রাউজানের এই আসনটি রাজনৈতিক দলগুলোর নিকট খুবই প্রিয় এবং গুরত্বপূর্ণ। প্রমাণ হিসাবে বলা যায়, এক সময় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ব্যাম্বো খান ওরফে জহির উদ্দিন খানকে জেতানোর জন্য এবং প্রেসিডেন্ট এরশাদ জিয়াউদ্দিন বাবলুকে জেতানোর জন্য রাউজানকে কয়েক দিনের জন্য অঘোষিত রাজধানী বানিয়ে ছেড়েছিলেন। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ এর নির্বাচনে ঐ আসনটি না পেলেও পরবর্তী সময় দখলে আনার জন্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডিঙ্গিয়ে তাঁর চাচাতো ভাই ফজল করীম চৌধুরী (জুনু) কে দিয়ে এলাকায় বেশ উন্নয়ন করেছেন। এ প্রসঙ্গে নিন্দুকেরা বলেন, পুরা চট্রগ্রামের বাজেট রাউজানে ঢেলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। আরও একটি কারণ হচ্ছে, রাউজানে যথেষ্ট সন্ত্রাস সংগঠিত হয়েছিল। এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুগত সন্ত্রাসীদের সাথে টেক্কা দিয়ে আগে বাড়তে পারেনি আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। (উল্লেখ্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্ত্রাসের কমান্ডার ইন চীফ ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই, বর্তমান আওয়ামী দলীয় এমপি জনাব ফজল করীম চৌধুরী (জুনু), যিনি দল বদল করে ধোয়া তুলসী পাতা হয়েছেন।) যে কারণে তারা ধরে নিয়েছেন সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে এই ময়দান ছাড়া করতে না পারলে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা পানি ঘোলা করলেও এখন বলা হচ্ছে- "তোর বাপ পানিটা ঘোলা করে নাই, তুই করেছিস"।

(বি:দ্র: এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল(২০১০সালে) বিচার কার্য্য শুরু হবার আগেই। সুতরাং এটির সাথে আদালত অবমাননার কোন সম্পর্ক তৈরী হতে পারে না। তারপরও কতৃপক্ষ এটিকে বিপদ মনে করলে মুছে দেবার আগাম অনুমতি প্রদান করা হলো) লেখক।

বিষয়: বিবিধ

১২৪৪ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

219723
১০ মে ২০১৪ সকাল ১১:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এরকমএকটি অভিজ্ঞতা লব্ধ লিখা ব্লগের কি নিতিমালা ভঙ্গ করেছিল সেটাই বুঝতে পারিনা। আসলে সত্যকেই তারা ভয় পায়। ফজলুল কাদের চেীধুরি কে যখন গ্রেফতার করা হয় তখন মুক্তিযোদ্ধাদের স্থানিয় মানুষজন বলে যে যে রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হচ্ছে সেটাও তারই উদ্যোগে তৈরি। অন্য এলাকার অধিবাসি মুক্তিযোদ্ধারা তার সাথে অসদ্ব্যবহার করতে গেলে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে কঠোর বাধা দেন। এই ঘটনা আমি শুনেছি সে সময় উপস্থিত একজন এর মুখে। চট্টগ্রামের নামকরা আওয়ামি লিগ নেতা জানে আলম দোভাসের পৈতৃক সম্মতি ছিল রাঙ্গুনিয়াতে। যা এখনও দোভাস বাজার নামে পরিচিত। ফজলুল কাদের চৈীধুরি সেখানে আশ্রয়গ্রহন কারি এই পরিবারের সদস্যদেরকে পুরা নয় মাস রক্ষা করেন। সৈয়দ আলি আহসান লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই তিনি রামগড়ে আশ্রয় নেয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক দের সাথে যোগাযোগ করে বলেন যে তিনি বাংলাদেশের স্বাধিনতাকে সমর্থন করবেন কিন্তু আওয়ামি নেতৃত্বকে নয়। তিনি তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এটা ফাঁস হওয়ার পর তাকে কিছুদিন ক্যান্টনমেন্ট এ রাখা হয়। ফজলুল কাদের চেীধুরি কোনভাবেই ভারতের সাহাজ্য নিতে রাজি ছিলেন না। তার জানাজাতে চট্টগ্রাম শাহি জামে মসজিদের খতিব মরহুম সাইয়েদ আবদুল আহাদ আল মাদানি ইমামতি করেন এবং জানাজার আগে একটি কঠোর ভাষন দেন। যার জন্য তাকে তৎকালিন সরকারের বিরোধিতার সম্মুখিন হতে হয়েছিল।
১১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
167772
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : সত্যি কথা হলো- তারা সত্যকে সাংঘাতিক ভয় পায়।

৪৭ এবং তার পূর্বেকার অবস্থা দেখেছেন এমন সত্যিকার মুসলিমদের নিকট ভারত কখনো বন্ধু হতে পারে না।
219730
১০ মে ২০১৪ সকাল ১১:৩৫
লোকমান লিখেছেন : ভালো লাগলো আপনার স্মৃতি চারণ মূলক পোস্ট।
১১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
167773
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : আপনাকে পেয়ে বেশ ভালো লাগলো।
219762
১০ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৪
167774
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনার জন্যও।
219768
১০ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৪৮
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। অনেক সন্দেহ নিরসন হল । ধন্যবাদ।
১১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
167775
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ওয়া আলাইকুস্-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাক্বাতুহু।
সাথে থাকার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
219772
১০ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো পিলাচ । চলুক
১১ মে ২০১৪ সকাল ১০:৪৬
167776
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
239811
২৯ জুন ২০১৪ রাত ১২:৪৪
লোকমান লিখেছেন : দু:খিত ভাইজান আমার পোস্টে আপনার একটি মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আপনার মন্তব্যটি মুছে ফেলেছি। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলটি আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
242882
০৮ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
269599
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১০

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File