ব্লগিং এর পঞ্চম বর্ষ এবং ফেলে আসা দিনগুলি - ৮
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ০১ মে, ২০১৪, ০১:১৩:৫০ দুপুর
এসবি, এবি এবং বিডিটুডে’র মাধ্যমে যেসব বন্ধুদের ব্লগিং যাত্রা শুরু, তারা কল্পনাও করতে পারবেন না যে, কত কঠিন ছিল পূর্বোক্ত ব্লগে ব্লগিং করা। পান থেকে চুন খসলেই, মানে আপনার লেখায় সামান্য ইসলামী ভাবধারা পরিলক্ষিত হলেই আপনার বিরুদ্ধে লেগে যেতো একটি গ্রুপ। শেষ পর্যন্ত আপনাকে সাময়িক বা সম্পূর্ণ ব্যান করেই ছাড়তো কতৃপক্ষ।
সুস্থ ধারার লেখালেখির মাধ্যমে সুস্থ চিন্তা বিকাশের পেছনে এবি, এসবি আর বিডিটুডের অবদান অসামান্য। দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানকারী এমন কয়েকজন প্রতিভাবান ব্লগারকে আমি জানি, যারা এ ব্লগগুলো থেকে শুরু করে ভালো লেখক/লেখিকা হয়েছেন, ব্লগে প্রকাশিত লেখা দিয়ে বই প্রকাশ করেছেন।
একটি মজার ব্যাপর হলো- নাস্তিক এবং গালিবাজদের অনেকেই এসব ব্লগে ঢুকে পড়েছেন ঠিকই কিন্তু গালাগালি এবং অশ্লীলতার ব্যাপারে তারা খুবই সচেতন এবং কৌশলী। এক কথায় তারাও এখানে হিসেব করে কথা বলেন। আমাদের প্রত্যাশাও তাই। পক্ষান্তরে সামুতে যেসব ইসলামপন্থী এবং সুস্থ ধারার ব্লগার সম্মিলিতভাবে নাস্তিকতা আর অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়তেন এখানে তাদের অনেককে দেখি সুন্নাতের সামান্য হেরফের নিয়ে (ফাতিহার পর আমীন জোরে বলা বা আস্তে বলা, রাফেইয়াদাইন করা বা না করা, নামাজে হাত নাভির উপর বাঁধা বা সিনার উপর বাঁধা....) নিজেরাই লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়েন। তা খুবই দুঃখজনক।
মন্ত্রনালয় কতৃক এসবি ব্লগ বন্ধ করে দেয়ার কিছুদিন পূর্বে এসবি সম্পাদক এবং একজন খ্যাতিমান মহিলা ব্লগারের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন শান্তিপ্রিয় সচেতন ব্লগার বন্ধুগণ। এ কারণেই হয়ত ব্লগটি বন্ধ এবং সম্পাদককে আটক করার পর প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া খুব জোড়ালো ছিল না। বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরতা এক নেতার মেয়ে, উক্ত মহিলা ব্লগার ছিলেন সামুর বিপরীতে একটি পরিচ্ছন্ন ব্লগের অন্যতম স্বপ্ন দ্রষ্টা। সেই তিনি তথাকথিত গণজাগরন মঞ্চের ফাঁসি নর্তকী ‘লাকী আপু’র সমর্থনে পোস্ট লিখেন আর সে পোস্ট স্টিকি করেন এসবি সম্পাদক। শুধু তাই নয়, সস্পাদকের আরো লেখালেখি এবং কমেন্টস পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে জুলুমবাজ সরকারের পক্ষে যায়। সম্পাদক নিজেই মন্ত্রনালয়ের আইটি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে হয়ত ব্লগটি বন্ধ করার সরকারী পরিকল্পনা আঁচ করেই দালালীতে(!) লিপ্ত হয়েছিলেন। হয়ত ভেবেছিলেন এতে করে কিছুটা হলেও ছাড় পাওয়া যাবে। কিন্তু না, তারপরও ব্লগটিকে শেষ রক্ষা করতে পারেননি এবং তিনি নিজেও গ্রেফতার এড়াতে পারেননি। সম্পাদক নিজের নাম ধাম এবং পরিচয় গোপন রাখলে হয়ত গ্রেফতার হওয়া থেকে বেঁচে যেতেন। উল্লেখ্য, এই সম্পাদক কিন্তু ব্লগ শ্রষ্টা নন। সম্পাদকের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বনিবনা না হওয়ার কারণে আরো আগেই ব্লগশ্রষ্টা এসবি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বিডিটুডে ব্লগ এবং ম্যাগাজিন চালু করেন।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, কোন আদর্শবান মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে আদর্শের পরিপন্থী কোন কাজের মাধ্যমে সুবিধা আদায় করতে চাইলে তিনি অপদস্তই হয়ে থাকেন। আরো কয়েক বছর আগে আমার পরিচিত একজন ভালো মানের মুসলিম, ইউরোপ গিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার জন্য নিজেকে কাদিয়ানী মুসলিম দাবী করে বাংলাদেশের (সুন্নী) মুসলিম কতৃক অত্যাচারের গল্প ফেঁদে আশ্রয় কামনা করেন। শেষ পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি কয়েক বছর জেল খেটে দেশে ফেরৎ আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। অথচ ওনার চেয়ে আরো কম বুদ্ধিমান লোকও সেখানে আশ্রয় পেয়ে থাকেন অহরহ। তিনি বাংলাদেশের ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করে খুব দ্রুত নিজের স্বার্থ আদায় করতে যেয়ে লাঞ্চিত হয়েছেন, এখনো চিহ্নিত হয়ে আছেন।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৩ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যে পোষ্টটি ষ্টিকি করা নিয়ে এসবি ব্লগে সমস্যা হয়েছিল আমি তা সমর্থন করেছিলাম। যদিও সময় এর দাবি ছিল ভিন্ন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বাংলা ব্লগের ইতিহাসকে আমাদের জন্য উপস্থাপন করায়।
আগে ধারণা ছিল যে, গালাগালিতে বাংলাভাষা তত সমৃদ্ধ নয়। এই ভুল ধারণা কাটাতে সামুর অবদান অসামান্য। গালাগালি কত রকম হতে পারে - সামুতে না আসলে জানা হতোনা।
আপনি ঠিক বলেছেন, ঐ ব্লগটি দু’দিকেই প্রথম। যদিও শেষেরটি কলংকজনক।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরতা এক নেতার মেয়ে, উক্ত মহিলা ব্লগার ছিলেন সামুর বিপরীতে একটি পরিচ্ছন্ন ব্লগের অন্যতম স্বপ্ন দ্রষ্টা
--কার কথা বুঝাতে জানি না, তবে কোন নেতা, এসবি "গড়ার" ক্ষেত্রে কোন নেত্রীর ছেলে -মেয়ের অবদান ছিল বলে জানি না। স্বপ্ন দেখা বা ব্লগিং করা/লেখা আর কোন কিছু "গড়া" এক না।
সম্পাদক নিজেই মন্ত্রনালয়ের আইটি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে হয়ত ব্লগটি বন্ধ করার সরকারী পরিকল্পনা আঁচ করেই দালালীতে(!) লিপ্ত হয়েছিলেন।
--কোন কিছুতে কারো ভিন্ন চিন্তা ও কৌশল থাক্তেই পারে। সেটাকে দালালী বলা ঠিক না। ইসলামিষ্ট্রা এই কাজটা খুব সহজেই করে ও অন্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে।
এ কারণেই হয়ত ব্লগটি বন্ধ এবং সম্পাদককে আটক করার পর প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া খুব জোড়ালো ছিল না
--সম্পাদক গ্রেফতারের প্রতিবাদে উচিত ছিল এসবির ব্লগারদের জোরালো ভুমিকা নেয়া। নিতে পারেননি এটা আপনাদের বড় ব্যর্থতা। সেটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা অনুচিত ।
সম্পাদকের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে বনিবনা না হওয়ার কারণে আরো আগেই ব্লগশ্রষ্টা এসবি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বিডিটুডে ব্লগ এবং ম্যাগাজিন চালু করেন।
--নতুন নতুন প্লাট ফর্ম তৈরীই হয়তো অনেকের চিন্তা। এক্ষত্রে বনিবনা (ঢাকা ভাগাভাগির কিছু ছিল কি ?) না হওয়া আর নতুন কিছু গড়ার স্বপ্নে আলাদা কিছু করা এক না।
যাই হোক একজন ব্লগার হিসেবেই আমার জানা থেকেই এসব লিখলাম, জানার ভুলও হতে পারে।
---নতুন নতুন প্লাটফর্ম করার চিন্তা অনেকেরি মাথায় থাকে। টুডের উদ্দ্যোগতার তাই হয়তো ছিল
আশা করি আমার জবাবগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে ভুলবুঝবুঝি দূর হবে।
১. আমি লিখেছি একটি পরিচ্ছন্ন ব্লগের অন্যতম স্বপ্ন দ্রষ্ট।‘এসবির’ স্বপ্ন দ্রষ্টা লিখিনি। তারপরও আপনি জেনে খুশী হবেন, তিনি এসবিকে সমুখ পানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা সাধনা করেছেন।...
২. সাইন বুঝাও কিন্তু একজন লেখক ও পাঠকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি লক্ষ্য করবেন দালালী শব্দটির সাথে ব্রেকেটের মধ্যে আমি (!)চিহ্নটি ব্যবহার করেছি। এর মানেটার প্রতি একটু চোখ বুলালেই আপনি পেয়ে যাবেন আমার মূল বক্তব্য।
৩. ব্যক্তিগতভাবে উক্ত সম্পাদকের সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক ছিল না, এখনো নেই। অধিকন্তু তিনি এসবি ম্যাগাজিনে লেখার সুযোগ দিয়ে আমাকে একজন লেখক হিসেব পরিচিতি দান করেছেন, যদিও আমি ততটা নই। এসবি বন্ধ করা এবং সম্পাদককে গ্রেফতারের প্রতিবাদ আমি আমার সাধ্য মতো করেছি। এখানে আমি কিছু ব্লগারের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছি এবং ‘হয়ত’ শব্দটি ব্যবহার করেছি।
৪. ঢাকা ভাগাভাগি বলতে কি বুঝালেন তা পরিস্কার হতে পারলাম না। যদি ‘টাকা’ বুঝিয়ে থাকেন তহলে বলবো, তখনো এসবি লাভের মুখ দেখেনি। সুতরাং টাকা ভাগাভাগি করবে কোত্থেকে? বনিবনা হতে পারে চিন্তা, কর্ম পন্থা, কর্ম কৌশল ইত্যাদি নিয়ে। হ্যাঁ, এটিও নতুন প্লাট ফর্ম তৈরীর একটি উছিলা হয়ত। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া কিছুই করে না। প্রয়োজন তৈরী হয়েছে বলেই নতুন এরেকটি ব্লগবাড়ী তৈরী হয়েছে।
ধন্যবাদ আবারো।
টুডেব্লগও বাদ যায়নি, কৌশল করে টিকে রয়েছে এটি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন