বাবার স্মৃতি - ৩
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ০২ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:২২:৫৮ দুপুর
কাজে ফাঁকি দেয়া তিনি কোন অবস্থাতেই মেনে নিতেন না। বাবা দীর্ঘদিন যাবৎ আবুধাবীতে আল্ আদিদ নামক একটি বড়ো কোম্পানীর কার্পেন্টারী ওয়ার্কসপের ফোরম্যান হিসেব কর্মরত ছিলেন। কোম্পানীতে তার যোগদানের পর ফাঁকিবাজ কর্মচারীরা তাঁকে সহ্য করতে চাইতো না। তারা বাবাকে কোম্পনীর চামচা ইত্যাদি বলে তাঁর অগোচরে সমালোচনা শুরু করলো। বাবা হিসেব করে দেখলেন কর্মচারীরা যদি ফাঁকি না দেয় তাহলে প্রোডাকশন দ্বিগুন করা সম্ভব। একদিকে নিজের চাকুরী, অপর দিকে স্টাফদেরকে সন্তুষ্ট রাখা এবং কোম্পানীকে লাভবান করা এ ত্রিমাত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য বাবা কোম্পানীর এমডির সাথে বৈঠক করে তাঁকে জানালেন, তিনি যদি তাঁকে ফোরম্যন হিসেবে রেখে ভাল প্রোডাকশন পেতে চান তাহলে তার লোকদেরকে দৈনিক দুই ঘন্টার ওভারটাইম দিতে হবে, কাজ ছাড়া। কোম্পানী শর্তসাপেক্ষে রাজী হলে তিনি তার কর্মচারীদেরকে ডেকে ঘোষণা করলেন- এখন থেকে কোন প্রকার কাজে ফাঁকি না দিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজ করতে হবে। বিনিময়ে আট ঘন্টা কাজ করে দশ ঘন্টার টাকা দেয়া হবে। অর্থাৎ কাজ না করেও দৈনিক দুই ঘন্টার ওভার টাইমের টাকা পাবে। এ কাজটি করে তিনি নিজে কর্মচারীদের সমালোচনা থেকে রক্ষা পেলেন এবং কর্মচারী ও কোম্পানী উভয়কে লাভবান করলেন। প্রবাস জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ওই কোম্পানীতে স্বসম্মানে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আবুধাবীতে বাবার উক্ত কর্মস্থলটি আমার প্রতিষ্ঠানের দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। বাবার সে কর্মস্থল ঘিরে রয়েছ আমার অনেক স্মৃতি। আমি আবুধাবী আসার পর চাকুরী পাওয়ার আগ পর্যন্ত ওখানেই থাকতাম। আমার অন্যান্য ভাই, ভগ্নীপতি সহ প্রায় আত্মীয়স্বনের শুরু হতো ওখান থেকে। ৪০০০ স্কয়ার ফিটের এরিয়াতে প্রায় অর্ধেক স্থান জুড়ে ছিল মেশিনারিজ বাকী অংশে বাবার থাকার ঘর ও একটি ইবাদাত খানা বাদে প্রায় সবটুকু যায়াগাতে তিনি বিভিন্ন সব্জি ফলাতেন। অনেকগুলো দেশী মোরগ-মুরগীও পালন করতেন সেখানে। আমার ফ্যামিলি আবুধাবী আসার পর প্রায় প্রতি সপ্তাহে সেখানে বেড়াতে যেতাম আমরা। বাবা তাঁর নাতনীর জন্য বড় ঝুটি ওয়ালা মোরগ জাবাই করতেন। অনেকগুলো বিড়ালও পালন করেতেন তিনি। ওদের জন্য গোস্তের দোকান থেকে গোস্তের উচ্ছিষ্ট (যা আমাদের দেশে কিমা এবং সমুচার উপকরণ) এনে ফ্রিজে রেখে দিতেন। বিড়ালগুলো দেখে আমার হিংসে হতো, ওরা যেন আমার চেয়েও বেশী ভালোবাসতো বাবাকে। দেশে চলে আসার পর নিজের অজান্তেই মাঝে মধ্যে ওখানে গিয়ে ঘুরে আসতাম। এখনো যাই, যদিও ওখানে এখন বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে এবং সেই কোম্পানীর ওয়ার্কসপের কোন চিহ্নটিও নেই। কেন জানিনা বাবার স্মৃতিময় সে স্থানটি দেখলে মনের মধ্যে একধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। বাবার সহকর্মীদের কারো সাথে দেখা হলে তাদের সাথে বাবার স্মৃতিচারণ করে তৃপ্তি লাভ করে থাকি।
আমার বাবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব উঁচুমানের ছিল না। তিনি বৃটিশ পিরিয়ডে প্রাইমারী পাশ করেছিলেন মাত্র। তথাপিও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। বিশেষ করে নির্মাণ শিল্পে তাঁর দক্ষতার কারণে অনেক প্রকৌশলীকেও তাঁর নিকট থেকে পরামর্শ নিতে দেখতাম।
চলবে...
বিষয়: Contest_father
১৪৭৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সম্পাদক সা’ব কইসেন, ‘একজন ব্লগার এই বিষয়ে সর্বোচ্চ ৫টি লেখা দিতে পারবেন।’। হেইর লাগি একটিরে ৪/৫ টুকরা কইরা টেরাই মারতাসি।
.
অনেক ধন্যবাদ
সবাই যখন লিখছেন আমিও একবার টেরাই মারমু।
জ্বি লিখে ফেলুন। পুরস্কার পাওয়া না পাওয়া ব্যপার নয় লেখাটি একটি ইহিহাস হয়ে থাকবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন