স্মৃতিতে ১৫ আগস্ট’ ১৯৭৫
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ লোকমান ১৫ আগস্ট, ২০১৩, ০৭:৩৪:৩৩ সন্ধ্যা
১৫ আগস্ট' ১৯৭৫, দিনটি ছিল শুক্রবার। শুধু শুক্রবারই আমাদের মর্ণিং স্কুল ছিল। বন্ধ থাকত রোববার। অন্যান্য দিন ১০ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত স্কুল চলত। বন্ধুদের মিস না করার জন্য কখনো স্কুল কামাই করতাম না আমি। ক্লাশ শুরু হওয়ার প্রায় ঘন্টা দেড় ঘন্টা আগেই স্কুলে চলে আসতাম যাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া যায়। সেদিন স্কুলে(সরকারী আই, আই, কলেজ, স্কুল শাখা) গিয়ে দেখি অবাক হওয়ার মতো কান্ড। ক্লাস এইটে শুধু মাত্র আমিই উপস্তিত। অন্যান্য ক্লাসে ও ২/৩ জন করে উপস্থিতি। সকাল ৮ টার দিকে দফতরি আব্দুর রহমান এসে বলল, ' প্রিন্সিপাল স্যার আপনাগোরে ডাকে'। প্রিন্সিপাল অধ্যাপক গোলাম রসূল একই সাথে স্কুলের ও প্রিন্সিপাল। বাসা আমাদের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং এর পাশে। আমরা ১৫/১৬ জন কাল বিলম্ব না করে স্যারের বাসায় গেলাম। স্যার আমাদেরকে বসতে বললেন। তার পর জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা দেশের কোন সংবাদ পেয়েছ? আমরা বললাম না স্যার। অতপর তিনি আমাদেরকে জানালেন যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হ্ত্যা করা হয়েছে। আমাদেরকে নিরাপদে বাসায় চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিদায় করলেন। আমরা যে যার মতো করে বাসার উদ্যেশ্যে রওনা দিলাম। নিচে নেমে দেখলাম আরেক অবিশ্বাস্য কান্ড। রাস্তায় রাস্তায় আনন্দের ঢেউ। খুশীতে মিস্টি বিতরণ চলছে, হোটেল রেস্টুরেন্টগুলি তাদের তৈরী সিঙ্গারা-সমুচা ফ্রি খাওয়াচ্ছে। এ ছিল চন্দন পুরা সিরাজউদদৌলা রোড এবং চকবাজারের চিত্র। সারা বাংলাদেশের ব্যাপারে আমার কোন ধারণা ছিলনা তখন। অথছ গতকাল পর্যন্ত এখানে 'এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ' শ্লোগানে মুখরিত ছিল। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন বাজতো প্রায় প্রতিটি টেপ রেকর্ডারে। আজ বঙ্গবন্ধুর বিদায়ের সাথে সাথে এমন এবাউট টার্ন আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল দারুন ভাবে। আমার প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুতে আনন্দ উপভোগ করার মতো জঘন্য কাজকে আমি সহ্য করতে পারছিলামনা, যদিও ১৯৭৪ সালের মারাত্নক দুর্ভিক্ষের সময় আমরাও খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। (আমাদের একটি ব্যবসায় প্রতিষ্টান ছিল, ঐ সময় যা বিক্রয় হতো তা দিয়ে কোন রকম মোটা চাল অথবা আটা কিনে লবন এবং মরিছ ভর্তা দিয়ে ক্ষুদা নিবারণ করতাম। এভাবে ব্যবসায়ের মূলধন পর্যন্ত খাওয়া হয়ে গিয়েছিল।) তখন বাকশাল বিরোধী মনোভাব আমার মধ্যেও দানা বেঁধেছিল নানা কারণে। তার পরও বঙ্গ বন্ধুকে নিয়ে এমনতরো উপহাস মোটেই সহ্য হচ্ছিল না। তাই এক রকম চোখ বন্ধ করেই বাসায় ফিরে যেতে যেতে অতীত স্মৃতির বাহনে চড়ে রোমন্থন করতে লাগলাম আমার শিশু মনের সেই আকুতির কথাগুলি, যখন আমি আল্লাহর নিকট কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতাম আমার প্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য, পরবর্তীতে পাকিস্তানের কারাগার থেকে তাঁর মুক্তির জন্য। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতাম, কায়মনোবাক্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করতাম।
পরে জেনেছি, দলের ভিতরের লোকেরাই বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত ছিল। বঙ্গ বীর কাদের সিদ্দিকির ভাষায় শেখ হাসিনা বঙ্গ বন্ধুর খুনীদের নিয়ে দল গঠন করেছেন, তাঁদেরকে মন্ত্রীত্ব দিয়েছেন। একটি চক্র বঙ্গ বন্ধুকে ‘এক নেতা এক দেশ’ এর স্বপ্ন দেখিয়ে মিস গাইড করে জনবিচ্ছিন্ন করার ফলে এমন নির্মম হত্যাকান্ডের পর জনগণ শোকের বদলে আনন্দ প্রকাশ করেছিল। আজকেও বামপন্থী-নাস্তিকেরা মাননীয় শেখ হাসিনাকে ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূলের মাধ্যমে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখিয়ে মিস্ গাইড করে চলেছেন। বন্ধুকের নল দিয়ে আর যাহাই হোক, ভালবাসা পাওয়া যায় না- এ কথাটি বুঝার জন্য ডক্টরেট ডিগ্রী নেওয়ার প্রয়োজন হয়না। ইতিহাস জানতে হয় ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৯৪৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://web.archive.org/web/20121102134248/http://sonarbangladesh.com/blog/abufaisal/85275" target="_blank" target="_blank" rel="nofollow">বাংলা বাজার, আবুধাবী (ছবি ব্লাগ)
মন্তব্য করতে লগইন করুন