চট্টগ্রামে স্বপ্নের ভবন
লিখেছেন লিখেছেন কুমারেষ ০৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৭:৫৫:১৩ সন্ধ্যা
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে দেশের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামে। ছয় লাখ ৭৮ হাজার বর্গফুটের ২১ তলাবিশিষ্ট বিশাল এ ভবন নির্মাণ করতে নিউইয়র্কভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। নিশ্চিত করতে হয়েছে বিশ্বের অন্য সব ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে যা যা সুবিধা থাকে, তার সব অনুষঙ্গ রাখার বিষয়টিও। তাই ব্যাংক, শপ, ফুড কোর্ট, সুইমিংপুল, ট্রেড ইনস্টিটিউট, আইটি জোন, কনভেনশন হল, পাঁচতারা হোটেল, হ্যালিপ্যাডসহ বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধাই রাখা হয়েছে এই বাণিজ্যকেন্দ্রে। এমন সমন্বিত বাণিজ্য ভবন নির্মাণ করতে অর্থ লেগেছে ১৫০ কোটি টাকা আর সাধনা করতে হয়েছে প্রায় দুই দশক। উল্লেখ্য, ২৯৮ ফুট উচ্চতার এ ভবন চট্টগ্রামেরও সর্বোচ্চ ভবন! বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বিশ্বমানের বাণিজ্যকেন্দ্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহীম বলেন, 'বাংলাদেশ
রেলওয়েকে পাঁচ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার নামমাত্র শর্তে আমাদের এ ভবন নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদন করে সরকার। ভবন নির্মাণ করতে আমরা সদস্য হই নিউইয়র্কভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার্স অ্যাসোসিয়েশনেরও। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০০৬ সালে শুরু করা হয় ভবন নির্মাণের কাজ। ২০১২ সাল পর্যন্ত আমরা শেষ করতে পেরেছি প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ।'
২০০৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হলেও বিশ্বমানের এই বাণিজ্যকেন্দ্র গড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয় অনেক আগে। শতবর্ষের পুরনো প্রতিষ্ঠান চিটাগাং চেম্বার নব্বই দশকেই প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার গড়ার প্রস্তাবনা দেয় সরকারকে। এ জন্য নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয় চেম্বারকে। নির্মাণকাজ শুরুর পর বন্ধ রাখতে হয় কাজও। কিন্তু বন্দর-পতেঙ্গা আসনের বর্তমান এমপি এমএ লতিফ ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি থাকাকালে পুরোদমে চালিয়ে নেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মাণকাজ। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সাংসদ এমএ লতিফ বলেন, বন্দরের পর চট্টগ্রামে গর্ব করার মতো আরেকটি স্থাপনা হলো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী করার ১৬ দফা শর্তেও বিশ্বমানের এই বাণিজ্যকেন্দ্র করার কথা উল্লেখ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি বাস্তবায়ন করে রক্ষা করেছেন চট্টগ্রামবাসীকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও।
ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম নাসির উদ্দিন চৌধুরী জানান, এই ট্রেড সেন্টারের বেইজমেন্টে তিনতলা সমপরিমাণ জায়গায় আছে পার্কিং সুবিধার। নিচের তলায় আছে অস্থায়ী এক্সিবিশন হল। প্রথম তলায় থাকছে ঢাকা ও এক্সিম ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান অফিস। দ্বিতীয় তলায় থাকছে অফিস ও প্রার্থনা রুম। তৃতীয় তলায় থাকছে স্থায়ী এক্সিবিশন হল ও চিটাগাং চেম্বারের অফিস। চতুর্থ তলায় আছে আন্তর্জাতিক মিডিয়া সেন্টার ও ট্রেড ইনস্টিটিউট। পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় আছে শপিংমল, ফুড কোর্ট, আইটি জোন, হেলথ ক্লাব ও কনভেনশন হল। অষ্টম ও নবম তলায় থাকছে টেনিস কোর্ট, সুইমিংপুল ও বিলিয়ার্ড রুম। ১০ থেকে ২০ তলা পর্যন্ত থাকবে পাঁচতারা হোটেল। আর ২১ তলায় আছে হ্যালিপ্যাড সুবিধা। ২১ তলা এ ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন চলছে ডেকোরেশন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ।
বিশ্বমানের এ বাণিজ্যকেন্দ্রে নামকরা বিভিন্ন গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের করপোরেট অফিসও থাকবে বলে জানান চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, এস আলম গ্রুপ এরই মধ্যে পঞ্চম তলায় প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুটের ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে। একই তলায় ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে দেশের আরেক নামকরা প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপ। উত্তরা গ্রুপও ইতিমধ্যে এ ভবনে অফিস নির্মাণ করতে যাবতীয় প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে। ভবনের চতুর্থ তলায় ৩৪ হাজার বর্গফুটজুড়ে থাকবে কনভেনশন হল। এখানে মেলা, সেমিনার কিংবা প্রদর্শনীর আয়োজন করা যাবে। একই তলায় সাড়ে ছয় হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে হয়েছে চিটাগাং চেম্বারের অফিস!
বিষয়: বিবিধ
৮৯২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন