আ'লীগ এমনভাবে লুটপাট করেছে তাতে এখন বঙ্গোপসাগরের পানি ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই
লিখেছেন লিখেছেন কুমারেষ ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৩২:০৫ রাত
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের মুখপাত্র তরিকুল ইসলাম বলেছেন, সরকার দলীয় নেতা-কর্মীরা এমনভাবে দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে তাতে এখন বঙ্গোপসাগরের পানি ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। একদিন সকালে উঠে দেখবো এরা সাগরের পানিও চুষে নিয়েছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, নিজেদের অধীনে নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখলে পরিণতি ভালো হবেনা। তিনি তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরের দিনই দেশব্যাপী হরতাল হবে বলেও ঘোষণা দেন। গতকাল সোমবার বিকেলে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক দল আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি ১৮ দলীয় জোটের মাসব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ কারাগারে আটক নেতাদের মুক্তি এবং দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
শ্রমিক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, জাফরুল হাসান, মিঞা মোঃ মিজানুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
তরিকুল ইসলাম বলেন, এ সরকারের পায়ের নীচে মাটি নেই। তাই তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তিনি বলেন, গ্রেফতার আতঙ্কে আমাদের নেতা-কর্মীরা ঘুমাতে পারেনা। যেখানে যাকে পাচ্ছে মামলা না থাকলেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে। টাকা নিয়ে কাউকে কাউকে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ আহত অবস্থায় আছে। আমরা আশা করবো নতুন বছরে স্বৈরাচার এ সরকারে পতন ঘটবে। তিনি বলেন, আগামী বছরেই নির্যাতন, নিপীড়ন আন্দোলনের স্রোতে ভেসে যাবে। তিনি বলেন, দেশের সংবিধান আজ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচার চাচ্ছে। মানবাধিকার আজ নিজেই শিকলে বাঁধা। কোথাও কারো নিরাপত্তা নেই। সর্বত্র সম্ভ্রম হানি হচ্ছে। নারীরা আজ অসহায়। পর্দানশীলরা পর্যন্ত সরকারের হামলা-মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঊর্ধ্বগতির কথা উল্লেখ করে তরিকুল বলেন, এ সরকার বুঝতে পারছে না এ দেশের গরিব কিংবা মধ্যবিত্ত কী কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। তারা কিছু জানে না, বুঝতেও চায় না। সরকার এখন অন্ধ। কিছুই দেখতে পায়না।
তিনি বলেন, দেশে আইন-কানুন কিছু আছে বলে মনে হয়না। শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ ছাড়া পায়। অথচ মির্জা ফখরুল জামিন পর্যন্ত পান না। এ এক অদ্ভুত দেশে আমরা বাস করছি। রিমান্ড এখন মুড়ি-মুরকির মতো হয়েছে। চাইলেই রিমান্ড মঞ্জুর করা হচ্ছে। রিমান্ড থেকে মেয়েরাও রেহাই পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তরিকুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রীরা বলেন, উন্নয়ন হয়েছে। হ্যাঁ, আসলে উন্নয়ন হয়েছে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মন্ত্রী, এমপি, প্রধানমন্ত্রী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের উন্নয়ন হয়েছে। তারা ব্যাংক-বীমা, টেন্ডার, সব কিছু খেয়ে ফেলছে। আগে যাদের একটা গাড়ি ছিল, তাদের এখন ৬টি গাড়ি হয়েছে। তারা এমনভাবে দেশটাকে লুটেপুটে নিয়েছে যেখানে এখন বঙ্গোপসাগরের পানি ছাড়া আর কিছুই বাকি নেই। সেটিও তারা চুষে নেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
তিনি বলেন, এ সরকার গণতন্ত্র বোঝে না। তারা বোঝে একদলীয় শাসন। তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করে এবং বিচারকে প্রভাবিত করেছে। তিনি বলেন, এজন্য কি আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি? তরিকুল ইসলাম এসময় শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, শীত যখন আপনাদের কাবু করতে পারেনি, তখন এ সরকারও আপনাদের কাবু করতে পারবে না।
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জনপ্রিয়তা থাকলে নির্বাচন দিয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। মানুষ ভোট দিলে আপনারা দেশ পরিচালনা করবেন। কিন্তু নিজেরা ক্ষমতায় থেকে আবারো নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসবেন এমন খায়েশ থাকলে ভুল করবেন। তিনি স্বৈরাচার আ'লীগের পতনে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহবান জানান। এসময় তিনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা যেদিন সরকার দেবে, তার পরদিনই হরতাল হবে বলে ঘোষণা দেন।
পরে তিনি মাসব্যাপী জোট ও দলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আগামী ৬ জানুয়ারি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিরোধী নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও জনদুর্ভোগ নিরসনের দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, এছাড়া ১১ জানুয়ারি কালো দিবস পালন করা হবে। ২০০৭ সালের এদিনে জরুরি অবস্থা জারি করে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ওইদিনে মহানগর ও জেলায় কালো পতাকা মিছিল করবে ১৮ দল। এদিন হাজার হাজার কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করবে জোট। ১৫ জানুয়রি গুম ও হত্যার প্রতিবাদে দেশব্যাপী মানবপ্রাচীর পালিত হবে। ১৮ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী পালন করবে দলটি। ২৩ জানুয়ারি দুর্নীতি, দুঃশাসন ও তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে বন্দর, নৌপথ, হাট-বাজারসহ সব জায়গায় প্রচারপত্র বিলি করা হবে এবং ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করবে ১৮ দলীয় জোট। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই দিনে মহানগর ও জেলায় সমাবেশ-মিছিল করবে ১৮ দল।
বিষয়: রাজনীতি
৯৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন