ভালোবাসার বেচাঁ – কেনা
লিখেছেন লিখেছেন নীলকণ্ঠী ০৭ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:২৭:২২ বিকাল
যতই দিন যেতে লাগল রোমিওর মনে জুলিয়েটের প্রতি প্রেমের তীব্রতা বাড়তে লাগল। এ এক অদ্ভুত রকমের অনুভূতি। তবে রোমিওর এই আকুলতা আসলে প্রেম কিনা সেটা বোঝা মুশকিল । এর আগেও সে এমনি ভাবে বহু মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে ছিল। কিন্তু সেগুলো খুব বেশী দিন স্থায়ী হয় নাই। তবে এবারের ঘটনা একটু ভিন্ন । এবার শুধু আকুলতা নয় তার সাথে আছে কিছু শারীরিক অনুভূতি। বেশ কিছু দিন হল পাশের বাড়িতে নতুন এক ভাড়াটিয়া এসেছে। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই সেই ভাড়াটিয়া পরিবারটি এলাকার সবার বিরাট মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সন্ধ্যায় রোমিও রাস্তার মোড়ে বাবুল মামার চায়ের দোকানে বসে সিগারেট টানছে।
শুনছেন কিছু রোমিও মামা ?
কি?
ঐযে আলতাফ সাহেবের বাড়িতে এক নতুন ভাড়াটিয়া উঠছে সেই কাহিনী।
নতুন ভাড়াটিয়া উঠছে সেইটা আবার কাহিনী কেমনে হয় !
আরে মামা ভাড়াটিয়া বলতে খালি মা আর মাইয়া । বাপ নাই , বাপ বলে বিদেশ থাকে।
আরে মামা এইসব কি কও ! বাবা বিদেশ থাকতেই পারে এতে সমস্যা কোথায় ? তোমরা না মেয়ে মানুষ একা পেলেই সব উদ্ভট কাহিনী চিন্তা করতে থাক। তোমাদের মন মানসিকতা আসলে অনেক নীচে নেমে গেছে।
না মামা তাই যদি হয় রোজ রাতে একজন না একজন কইরা নতুন লোক আসে । আইসা উনাগর ঘরে রাইতে থাকে । কোন এইডা কি ভালো কথা হইল ?
আরে মামা ওরা হয়ত ওদের আত্মীয় হবে কেউ। একা একা মা – মেয়ে থাকে তাদের দেখা শুনা করতে আসে ।
যাই বাসায় যাই তোমার কাছে বসে থাকলে আমার মাথা তুমি উল্টা পাল্টা করে দিবা।
মামা মাইয়াটার নাম শুনছেন ? আপনার লগে খুব যায় কিন্তু।
মামা তোমার কিন্তু আমার সাথে ফাইজলামি করা মানায়না ।
মামা বেয়াদবি নিয়েন না মাইয়াটার নাম কিন্তু জুলিয়েট। কি বুঝলেন !
তুমি এক কাজ করনা তোমার খায়েস থাকলে তুমি ওই জুলিয়েটের সাথে প্রেম কর গিয়া যাও।
রাতে বাসায় ফিরে রোমিওর আর ঘুম আসলো না । কারন যখন জুলিয়েটরা প্রথম দিন ওই বাসায় উঠে সেদিন একবার মেয়েটিকে দেখেছিল সে। তখন থেকেই রোমিওর মনে এক ধরনের উথাল পাথাল আলোড়নের সৃষ্টি হয়। রোমিওর প্রেমিক মন আজ দোকানদার বাবুল মামার কথায় আরও কয়েক ডিগ্রি বেশী উথাল পাথাল শুরু করে দিয়েছে। সারা রাত বারান্দায় বসে কাটিয়ে দিল রোমিও । যদি ভুল ক্রমে একবার তার জুলিয়েটের দেখা পাওয়া যায় তাহলে এই রাতে বসে কম করে হলেও একশ প্রেমের কবিতা লিখে ফেলা যেত। কিন্তু সেই সৌভাগ্য বুঝি হলনা। জুলিয়েট কেন তার ছায়াটি পর্যন্ত রোমিওর চোখে পড়ল না। সারা রাত জেগে থেকে রোমিওর সিগারেটের তৃষ্ণা বেড়ে গেছে। যদিও সারা রাত অনেক সিগারেট তার টানা হয়ে গেছে। রোমিও দের বাড়িটি দোতালা । নীচ তালায় থাকে বাবা-মা আর দোতালায় এক পাশে থাকে রোমিও একা একটি ঘরে । কিছু দিন আগে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এখন সে বেকার বসে আছে। কিন্তু চাকরী খোঁজার প্রতি তার তেমন আগ্রহ নাই। ইচ্ছা বাবার সাথে ব্যাবসা করার। রোমিওর বাবা ইউসুফ সাহাবেরও তাতে তেমন আপত্তি নাই । কিন্তু রোমিও সে দিকেও এখনো তেমন গুরুত্ত না দিয়ে প্রেমের মিছে মরীচিকার পেছনে ছুটে ছুটে এত দিনে কয়েক বার পি এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করে ফেলেছে । বন্ধুরা তাকে বলেছে প্রেমে তাকে এইবার নোবেল দিতে হবে। সে যাই হোক রোমিও যখন গেট খুলে বাইরে এলো সিগারেট কিনবে বোলে তখন ঘড়িতে আনুমানিক ছয়টা বাজবে। এত সকালে তার সামনে এসে একটি সিএনজী থামল। সিএনজী থেকে নেমে এল জুলিয়েট । রোমিওর মনের মাঝে প্রচণ্ড রকম একটা ঝড় বয়ে গেল।
এই যে শুনছেন আপনার কাছে কি দুইশ টাকা হবে ? আমার কাছে পাঁচশ টাকার নোট সিএনজী ওয়ালা ভাই ভাংতি দিতে পারছেনা । আমি আপনার পাশের বাড়িতে থাকি । যদি থাকে তবে দিন । আমি একটু পরে আপনাকে দিয়ে দিব।
ভাগ্যিস রোমিওর কাছে তখন দুইশ টাকাই ছিল। যাই হোক সেটাই সে দিয়ে দিল।
থ্যাঙ্কস বোলে মেয়েটি চলে গেল।
রোমিও সেই চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যেন স্বর্গ থেকে কোন হুর পরী এই ভোর বেলা পৃথিবীতে নেমে এসে তার সামনে দিয়ে উচু হিলের জুতা পায়ে মডেলদের মত ক্যাট-ওয়াক করে হেটে চলে যেতে লাগল। সেই চলে যাওয়ার পথ থেকে রোমিওর দৃষ্টি যেন কিছুতেই ফিরছেনা । অগ্যতা টাকা না থাকায় সিগারেট না কিনেই ঘরে ফিরে এলো রোমিও। সারাদিন ঘরেই শুয়ে বসে সময় কাটিয়ে দিল। আর ভাবল এত সকালে মেয়েটি কোথা হতে এলো । কিন্তু কোন কিছুই ভেবে তার মাথায় এলনা।
আলতাফ সাহেবের স্ত্রী ভীষণ ক্ষেপে আছেন। পাড়ার কয়েকজন মুরুব্বী ধরনের মানুষ আর মসজিদের ইমাম সাহেব এসে তাদের এই ভাড়াটিয়ার ব্যাপারে নালিশ করে গেছেন যেন তারা তাদের এই ভাড়াটিয়াকে উঠিয়ে দেন। কিন্তু আলতাফ সাহেব সেটা মানতে রাজি হননি। তিনি ভাবলেন একা একা এই দুই মা – মেয়ে থাকে তাদের উঠিয়ে দিলে তাদের প্রতি জুলুম করা হবে। কিন্তু আলতাফ সাহেবের স্ত্রীর সাফ কথা
আমারত মনে হয় তুমি ওই মহিলার প্রেমে পরছ আর নাহয় তোমার সাথে কোন সম্পর্ক রয়েছে।
আলতাফ সাহেব এই সব কুরুচিকর কথায় পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ বসে আছেন। তার স্ত্রী অবশ্য কিছুক্ষন আগে বেশ শাসিয়ে এসেছেন জুলিয়েটের মাকে । দেখুন আপনি আগামী মাসের মধ্যে আমার বাড়ি ছেড়ে দিবেন।
কিন্তু তাতে কোন কাজ হয় নাই ।উল্টো তিনি বোলে দিয়েছেন দেখুন আমাদের যদি চলে যেতে বলেন তাহলে নতুন একটা বাসা খুঁজে পেতে আমাদের এই মা – মেয়ের পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে। তাই আগামী মাস না আমাদের আরও সময় লাগবে।
ব্যাস আর যায় কোথায় আলতাফ সাহেবের স্ত্রীর প্রেসার তাতে বেড়ে দিগুন হয়ে গেল।
রোমিও সন্ধ্যা বেলা বাবুলের চায়ের দোকানে বসে সিগারেট টানছে।
মামা কিছু শুনছেন ?
কি হইল আবার ?
আইজত ইমাম সাহেব আর এলাকার মাতবর প্রধানরা আলতাফ মিয়ার বাড়িতে গেছিল নালিশ নিয়া । মনে হয় অগর বাড়ি ছাইড়া দিতে কইছে নাইলে নাকি পুলিশ ডাকব।
এটা কি মগের মুল্লুক অযথা এমন অসহায় একটা পরিবার কে এভাবে হেস্তনেস্ত করতে পারেনা । মানুষের কি বিবেক বোধ সব উঠে গেছে নাকি !
বেশী কথা কইয়েন না মামা, আপনার আব্বায়ও গেছিলো হেগর লগে । আপনার আব্বায় না এলাকার একজন গন্যমান্য লোক হেইডা কি আপনে ভুইলা গেছেন।
এই কথা শোনার পর রোমিওর মনে কিঞ্চিৎ ভয় জন্মাল।
মামা জানেন কাইল না ওই মাইয়া আমার দোকানে আইছিল।
তাই নাকি কখন ?
রাতের বেলা, এই আপনি চইলা যাবার ঘণ্টা খানিক পরই।
তারপর !
আইসা এক প্যাকেট সিগারেট নিয়া গেছে।
বল কি !
আমি জিগাইছিলাম সিগারেট কার জন্য আপামনি?, উনি কিছু না বইলা শুধু একটা চোখ পাক্রানি দিয়া চইলা গেল।
বাবুলের দোকানের সামনেই একটা বাড়িতে পার্লার আছে রোজ পার্লার , সেখান থেকে পুরো বউ সাজ দিয়ে বেড়িয়ে এলেন জুলিয়েটের মা । পড়নে পাতলা সিল্কের একটি হলুদ শাড়ি। দেখেই রোমিওর আত্মা যেন বেড়িয়ে যাবার দশা হল বুকের ভেতর থেকে। বাবুল কোন কথা না বোলে শুধু হা করে এক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে রইল। মহিলা এদিকেই এগিয়ে আসছে। রোমিওর হাত – পা কাপাকাপি শুরু হয়ে গেল। মনে হয় গাঁয়ে জ্বর এসে পরেছে।
এই তোমার কাছে কি মারলবোরো লাইটস সিগারেট হবে ?
বাবুল প্রথমটা হকচকিয়ে গেলেও পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল না আপা তবে বেন্সন লাইটস আছে দেই ?
ওহ নো ! ঠিক আছে দাও ।
সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে মহিলা চলে গেলেন।
রোমিও এক দৃষ্টিতে মহিলার পেছন দিকে তাকিয়ে রইল যেন মাথার ভেতর জগতের সব কুচিন্তাগুলো এসে ভড় করেছে তার মাথায়। যেন দ্বিধায় পরে গেল মা বেশী সুন্দর নাকি মেয়ে।
মামা কি ভাবতাছেন ?
কিছুনা।
ঘটনা কিছু বুঝলেন ? এই রাতে মহিলা এত সাঁজ দিয়া সিগারেটের প্যাকেট নিয়া বাসায় না যাইয়া কোথায় যাইতাছে ?
আমার এত বোঝার দরকার নাই।আমি চললাম। তোমার টাকা এসে আমি পরে দিয়ে যাব।
গলিতে ঢোকার সময় উপরে তাকাতে জুলিয়েটের দিকে চোখ পড়ল রোমিওর। মেয়েটিকে এই রাতের আঁধারে ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন আলো মুখে পরাতে যেন মনে হতে লাগল মিশরের পুরানের কোন দেবী দাড়িয়ে আনমনে চুলগুলো এলোমেলো হাত দিয়ে বিলি করে যাচ্ছে আর গুন গুনিয়ে কিছু একটা গাইছে। রোমিওর মনে হল ঈশ ! আমি যদি জুলিয়েটের মাথার চুল হতে পারতাম তবে এখন আমাকেই সে এভাবেই আদর করতে থাকত। স্রষ্টা এত ঘন কালো লম্বা সুন্দর চুল হয়ত শুধু জুলিয়েটকেই দিয়েছে বোলে তার ধারনা হল। মেয়েটির রোমিওর দিকে চোখ পরতেই বোলে উঠল
এই যে মিস্টার শুনছেন ?
জী আমাকে কিছু বলছেন ?
হ্যাঁ আপনাকেই বলছি । আপনার কাছ থেকে দুইশ টাকা নিয়েছিলাম আপনি কি সেটা এখন নিবেন?
হ্যাঁ নিতে পারি ।
তাহলে দাঁড়ান আমি নীচে আসছি।
আপনার নীচে আসার দরকার নাই বরং আমি আসছি।
তাহলে আসুন।
রোমিও সিঁড়ি বেয়ে জুলিয়েটের বাসায় এলো।
বাসায় কি আপনি একা আর কেউ নাই ?
না মা আছেন তবে এখন নাই উনি একটু একটা পার্টিতে গেছেন।
কখন ফিরবেন ?
সেটা বলতে পারিনা । হয়ত আজ নাও ফিরতে পারেন।
সে কি তাহলে আপনি এভাবে একা থাকবেন !
আমার সমস্যা নাই । অভ্যাস হয়ে গেছে।
এই দেখেন আপনার নামটাই জানা হলনা ।আমি রোমিও আপনি ?
আমার নাম জুলিয়েট । বাহ বেশত রোমিও – জুলিয়েট তাহলেত মনে হয় আমাদের মাঝে প্রেম টেম আবার হয়ে যেতে পারে বলেই মেয়েটি হেসে উঠল। সেই হাসিতে রোমিও মুগ্ধ হয়ে রইল।
আপনি কি করছেন ?
আমি আসলে র্যা ম্প করি ।
ঠিক বুঝলাম না ।
র্যা ম্প মানে ফ্যাসন হাউসগুলোতে মডেল হিসাবে কাজ করি।
বাহ দারুনত।
এতে দারুনের কিছু নেই।
কেন বলছেন এভাবে?
দেখ রোমিও আমার এসব আপনি আপনি একদম ভালো লাগে না। আমি তোমাকে তুমি করে বলতে চাই তুমিও আমাকে তুমি করে বললে খুসি হব। আমার এসব প্রেজুডিস নেই।
ঠিক আছে তুমি করেই বলব।
দেখ আমরা যারা মডেলিং করি কিংবা যারাই সোবীজের সাথে জড়িত আছি তোমরা শুধু বাইরে থেকে আমাদের চাকচিক্যই দেখতে পাও। কিন্তু এর ভেতরে যে লুকিয়ে আছে কত প্রবঞ্চনা , কিছু শকুনের লালসা সেটা তোমরা দেখতে পাওনা । এই রূপালী জগতে বিশেষ করে আমরা যারা র্যা ম্প করি তাদের প্রায় সবাইকে কত কিছুর মুল্য যে দিতে হয় তা তোমাদের বাইরে থেকে বোঝান যাবেনা। এসব কথা বলতে বলতে কখন যে চোখের কোনে অশ্রু নেমে এল জুলিয়েট টের পায় নাই।
তুমি দেখি কাঁদছ।
ও কিছুনা। তুমি কিছু মনে করনা। এবার তোমার কথা বল শুনি।
আমার কথা বলার কিছু নাই। আমি বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে। কোন মতে টেনে টুনে বি বি এ , এম বি এ পাস করে এখন ভবঘুরে। আর যদি বেশী কিছু জানতে চাও তাহলে বলি বিশেষ একজনকে খুজছি যে আমাকে অনেক ভালবাসবে।
জান এখানে তোমার সাথে আমার খুব মিলে গেছে । আমিও এমন একজনকে খুজছি যে আমাকে তার হৃদয়ের সবটা দিয়ে আমাকে ভালবাসবে। আমাকে বোঝার চেষ্টা করবে। এমন কাউকে পেলে আমি এই পেশা ছেড়ে দিতাম।
এখনত ছেড়ে দিতে পার ?
না পারছিনা কিছু সমস্যা আছে । এখন ছেড়ে দিলে পেট চলবে কি করে ।
কেন তোমার বাবা নাকি বিদেশ থাকেন !
হ্যাঁ থাকেন কিন্তু উনি আমাদের কোন খোঁজ নেন না । আমার মায়ের সাথে উনার ডিভোর্স হয়ে যায় আমি তখন খুব ছোট। আমারত এখন তার কথাও মনে নাই। তারপর আমার মা যে কি কষ্ট করে একা একা আমাকে মানুষ করেছেন সেই কষ্ট শুধু আমিই বুঝতে পারি। আমি আমার মাকে খুব বেশী ভালোবাসি।
স্যরি তোমাকে না জেনে দুঃখ দেয়ার জন্য।
ইটস ওকে , তুমিত জানতেনা তাই তোমার দুঃখ পাবার কিছু নেই।
কথা বলতে বলতে দুজনের আর কোন কিছুই মনে রইল না কখন যে ভোর হয়ে গেল তা তাদের দুজনের কেউ টের পেলনা।
আজ তাহলে যাই জুলিয়েট আবার দেখা হবে।
বাড়িতে যখন ফিরল চুরি করে নিজের ঘরে ধুকে ঘুমিয়ে পড়ল যাতে করে বাবা – মা কিছু টের না পায় । টেবিলে খাবার দেয়া ছিল। সেটার দিকে নজর পরতেই তারাতারি উঠে খেয়ে নিল আর বুঝল যে মা কিছু টের পায়নাই।
তারপর শুরু হল রাত জেগে ফোনে কথা বলা আর বাইরে দেখা করতে যাওয়া । ধীরে ধীরে দুজনের মাঝে প্রেম হল । কিন্তু সব কিছু টের পেয়ে রোমিওর মা জুলিয়েটদের বাসায় গিয়ে তার মাকে শাসিয়ে এলো কিন্তু রোমিওকে কিছু বুঝতে দিলনা । সেই সাথে আলতাফ সাহেবকে বোলে আসল যেন তিনি তার এই ভাড়াটিয়াকে বিদায় করে দেন।
এক সন্ধ্যায় রোমিওর ফোনে ফোন দিল জুলিয়েট।
এই শোন তুমি আজ রাতে আমার বাসায় চলে আস । মা নেই উনি আজ রাতে বাসায় ফিরবেন না । দুজনে মিলে অনেক গল্প করা যাবে। রোমিও সেই কোথায় আনন্দের সাথে রাজি হয়ে যায়।
রোমিও জুলিয়েটের দরজায় দাড়িয়ে আছে । জুলিয়েট দরজা খুলতেই বুকের ভেতর আগুন জ্বলে উঠল তার। পাতলা সিল্কের গোলাপি রং এর একটা শাড়ি পরেছে মেয়েটি সাথে ম্যাচিং করে নেইল পলিস , লিপিষ্টিক,কপালের টিপ , গালের প্রসাধনী কোনটাই বাদ যায়নাই।
ভেতরে এসো। এত অবাক হয়ে কি দেখছ ?
তোমাকে দেখে , এভাবে সেজেছ কেন ? আমিত আর একটু পরে দম বন্ধ হয়ে মারা যাব।
মারা যেন যাও সেই জন্যইত সেজেছি।
মানে কি !
আজ তোমাকে আমার সব টুকু ভালোবাসা নিবেদন করতে চাই রোমিও।
রোমিওর কপাল বেয়ে ঘাম নেমে এলো।
তুমি বস আমি তোমার জন্য কফি নিয়ে আসি । আর টেবিলের উপর সিগারেট রাখা আছে । তোমার জন্য এনে রেখেছি।
জুলিয়েট কফি বানাতে গেল।
রোমিও পেছন থেকে এসে জুলিয়েট এর কোমর জড়িয়ে ধরল তার দুই বাহুর বন্ধনে। তারপর দুজনের ঠোঁটে ঠোঁট মিশে যেন সাগরের সমস্ত ঢেউগুলোকে উলট পালট করে দিল । সাগর আর তার বালুকা বেলা রাখবেনা বোলে ঠিক করল সব কিছু ধুয়ে মুছে একাকার করে দিল । সব বালি তলিয়ে গেল যেন সেই সাগরের নোনা পানির স্রোতে।
সকাল বেলা খবর এল জুলিয়েটের মাকে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে গেছে। ইয়াবার মক্ষীরানী খ্যাত মিসেস লুনাই যে জুলিয়েটের মা সেটা আর বুঝতে বাকি রইল না রোমিও সহ পুরো এলাকাবাসীর। পুরো এলাকায় ছি ছি পরে গেল। আলতাফ সাহেবের হার্ট এটাক হয়েছে । উনাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিছুক্ষন পর পুলিশ এসে জুলিয়েটকে ধরে নিয়ে গেল থানায় । রোমিওর বাবাই পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছেন।
যখন পুলিশ এসে জুলিয়েটকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল রোমিও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সেই চলে যাওয়ার পথে । দুচোখ দিয়ে অশ্রু নেমে এল তার। সত্যি কি সে ভালোবেসে ফেলেছে জুলিয়েটকে ? নাকি শুধুই শারীরিক চাহিদা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু তাহলে চোখে অশ্রু আসার কোন কারন থাকার কথাত নয়। বুকের ভেতর একধরনের ক্ষোভ মিশ্রিত ভালোবাসার দেয়া আঘাত বার বার কষ্ট দিতে লাগল রোমিও কে । অদ্ভুত এক দহন জ্বালা করে উঠল তার বুকের ভেতরে।
বিষয়: বিবিধ
২২১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন