কুর’আনে প্রযুক্তি ‘বিগ ব্যাং’ কতটুকু সঙ্গতিপূর্ন?

লিখেছেন লিখেছেন অপরাজিতা ০৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৪:৪৭:২১ বিকাল



বিজ্ঞানীগণ ধারনা করেন প্রায় ২০,০০০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ ব্যাপী আমাদের এ মহাবিশ্বটি মহাশূন্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে। তারাঁ শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে মহাবিশ্বে প্রায় ১০,০০০ কোটি গ্যালাক্সির অবস্থান নিরুপন করতে সমর্থ হয়েছেন। প্রায় প্রতিটি গ্যালাক্সিতে আবার ৪০,০০০ কোটি নক্ষত্রের আনাগোনা রয়েছে। এতেই শুধু শেষ নয় প্রতি নক্ষত্রের সাথে আছে তার গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ও ধূমকেতুসহ অগুনিত জানা-অজানা মহাজাগতিক বস্তু ও আলোর-বিকিরনের সমাহার যাকে আমরা নামকরন করেছি- “নক্ষত্রের নিজস্ব সৌর পরিবার”।বর্তমানে সবচাইতে আলোচিত আবিষ্কার এই তত্বটি সর্বমহলে আলোচিত ও সমালোচিত। বিশেষ করে আমেরিকানদের প্রযুক্তি আড্ডার কলেবরে এখনো তুমুল ঝড় উঠে পক্ষে-বিপক্ষে।

আমাদের এই সমস্ত মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদিতে একটা অতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র বিন্দু ছিল তারপর হয় ‘বিশাল বিস্ফোরন’ ইংরেজীতে যা ‘Big Bang’ তত্ব নামে অতি সুপরিচিত। এই প্রচন্ড বিস্ফোরনের পর চন্দ্র, সূর্য ,পৃথিবী এবং হাজার কোটি গ্যালাক্রী, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নিহারিকা ও অন্যান্য অনাবিষ্কৃত বস্তু ও বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ক্ষুদ্র গ্যালাক্রীর প্রায় ৪০ হাজার কোটি সে সে মধ্যে আমাদের এই সূর্যটি অতি ক্ষুদ্র সূর্য যার ১১-১৩টি গ্রহ ,উপগ্রহের পরিবার রয়েছে। তথ্যটি নিয়ে গবেষনা শুরু হয়েছে এই 20 শতকের প্রথম দিকে । কিন্তু কুরআনে এই ফর্মূলা প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ১৪০০ বছর আগে, কুরআন-কারীম সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বশেষ আল্লাহ্ তা‘আলার বার্তা,

আল্লাহ্তা‘আলা সন্দেহাতীতভাবে প্রয়োজনীয় প্রায় সর্ব বিষয়েরই র্নিভূল তথ্য এ কুরআনে উল্লেখ করেছেন। অনেকে ধারনা করেন “science”-এর প্রতিটি তথ্যের বিশ্লেষনধর্মী ব্যাখ্যা কুরআনে রয়েছে, আসলে Science or technological তত্বের বর্ননা নয় কুরআন মানবজাতির নিকট প্রতিটি প্রয়োজনীয় তত্বের ‘ signs’ বা সাংকেতিক’ অথবা “ টেলিগ্রাফিক বার্তা” বিভিন্ন আয়াতে প্রকাশিত রয়েছে (বেশিরভাগই অনাবিষ্কৃত)। চারদিকের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান মহাবিশ্ব ও তার সৃষ্টিতত্বের সর্বপ্রথম আগাম সুষ্পষ্ট তথ্য ও মহাগ্রন্থ কুরআন কারীমে উল্লেখ রয়েছে-

সুরা আম্বিয়া ২১নং সুরা , ৩০নং আয়াতে-

اَوَ لَمْ يَرَ الَّذِيْن كَفَرُوْآ اَنَّ السَّموتِ وَالاَرْضِ كَانَتَا رَتْفًا فَفَقْنهُمَا ط

“যারা অবিস্বাস পোষন করে তারা কি দেখেনা যে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী উভয়ে একাকার ছিল তারপর আমরা স্ববেগে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম...”(অনুবাদ:-ডাঃ জহুরুল হক, আসাম, ভারত)।



অর্থাৎ হাজার কোটি গ্যালাক্রী, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নিহারিকা ,গ্রহ,Black whole, White whole, Warm whole , উপগ্রহ, গ্রহাণু ও ধূমকেতুসহ অগুনতি জানা-অজানা মহাজাগতিক বস্তু ও আলোর-বিকিরন, আলো এমনকি সময় পর্যন্ত, অর্থাৎ এই সম্পূর্ন মহাবিশ্বের বস্তু, শক্তি ও সময় সমস্ত কিছুই বর্তমান অবয়ব ও নিজস্ব আকৃতি , গতি এবং কর্মপ্রকৃতি প্রকাশিত কারার পূর্বে একটি ‘বিশেষ পর্যায়ে’ সঙ্কুচিত অবস্থায় পরস্পর মিশ্রিত ছিলো যা এতই ক্ষুদ্র ছিল এককথায় Astor-physics বিজ্ঞানী কুকু বলেন “অচিন্তনীয় ক্ষুদ্র এক অস্তিত্ব”। এরপর আল্লাহ্ ঐ সঙ্কুচিত অতিক্ষুদ্র বিন্দুটিকে সর্বদিকে ছড়িয়ে দেন প্রচণ্ড এক বিস্ফোরণের মাধ্যমে । যার ফলে বস্তু, শক্তি ও সময় পৃথক হয়ে বর্তমান দৃশ্যযোগ্য রূপ ধারণ করতে থাকে { অর্থাৎ হাজার কোটি গ্যালাক্রী, নক্ষত্র, ছায়াপথ... } এবং সেই সাথে দ্রুত থেকে দ্রুততর সম্প্রসারিত হতে থাকে অর্থাৎ সর্বদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এইতো 2011 সালে দুজন মার্কিন মহাকাশ-পদার্থ বিজ্ঞানী প্রমান করেন এই মহাবিশ্বের সম্প্রসারন গতি দ্রুত হতে দ্রুততর হচ্ছে , এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তারাঁ যৌথভাবে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করেন।

এই তাত্বিক বিষয়ে বিজ্ঞান বিশ্ব অবিরত গবেষণা ,পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ও তথ্য-অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকে 20 শতক হতে অনেক বিজ্ঞানী মহাবিশ্বর ‘Big Bang’-এর বহু অগ্রহনযোগ্য চিত্র বিশ্লেষিত করেছেন কিন্তু বিজ্ঞান-সমাজ নড়ে-চড়ে বসতে বাধ্য হয় যখন ১৯৩৩ সালে বেলজিয়ামের পদার্থ বিজ্ঞানী জর্জ লি মেইতর সর্বপ্রথম বিশ্বের সামনে ‘ Big Bang’ এর গ্রহনযোগ্য ও সুচিন্তিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি প্রকাশ করেন মহাবিশ্বে যাবতীয় সময়,শক্তি ও বস্তুর যে আনাগোনা ও রুপ আমাদের আশেপাশে ও দুরদুরান্তে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিজিদের অস্তিত্বের প্রমান ব্যক্ত করছে, তার সমস্ত কিছুই একটি মহাসূক্ষ্ম বিন্দুতে আজ থেকে প্রায় ১৫০০ কোটি বছর পূর্বে অতিসংকোচন অবস্থায় আটকে ছিল। ফলে এক পর্যায়ে অতীব প্রচণ্ড চাপ ও তাপ বর্ধিত হয়ে সঙ্কুচিত শক্তির বিন্দুটি এক পর্যায়ে বিশাল বিস্ফোরন ঘটে এবং মহাবিশ্বের সূচনা হয় এক কথায় বলা যায়- মহাবিস্ফোরন ।



মেইতরের এই তত্বের ঘোর বিরোধীতা করেন যাঁর মধ্যে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল, ২০০১ সালে যিনি মত্যুবরন করেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি Big Bang তত্বের ব্যাখ্যা গ্রহন করেননি। যাই হোক ১৯৪৬ সালে প্রখ্যাত আমেরিকান বিজ্ঞানী ‘মিঃ গামো’ (গামা রশ্মির আবিষ্কারক) Big Bang ব্যাখ্যার সাথে একাত্নতা প্রকাশ করেন এবং Mathematical Calculation-এর গ্রহনযোগ্য বিশ্লেষনের মাধ্যমে দেখান যে ঐ মহাবিস্ফোরণে বস্তুর তাপমাত্রা , রেডিয়েশন , আলো, ভাইব্রেশন বা ফ্রিকোয়েন্সী এখনও মহাবিশ্বে বিরাজমান করছে। তিনি উল্লেখ করেন -সঠিকভাবে গবেষনা চালাতে সক্ষম হলে তা আবিষ্কৃত হওয়া খুব দুরে নয়।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File