রটনা এবং ঘটনা!!

লিখেছেন লিখেছেন বলা সহজ ০৮ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৯:১০:৩২ সকাল

রটনার কারণে কত যে অঘটন ঘটেছে তার প্রমাণ ইতিহাসে পাতায় পাতায় ভর্তি। আমরা এতো বেশি অস্থির থাকি কোনটা রটনা আর কোনটা ঘটনা তা বিচারের সময় আমাদের থাকেনা, তাই কেউ যদি বলে চিলে কান নিয়েছে অমনি চিলের পিছনে ছুটি, শুধুমাত্র নিজ হাত দু'খানি তুলে কান যথাস্থানে আছে কিনা তা দেখার মতো সময় আর বিবেক আমাদের থাকেনা। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে আমরা রিমোর্ট এর বাটন টিপলেই বিভিন্ন চ্যানেল-এ দেখি গরমের মধ্যেও স্যুটেড-বুটেড হয়ে কিছু রিমোট কন্ট্রোল্ড পুতুল খবর পড়ে যাচ্ছে। যাদের অভিব্যক্তি দেখে বুঝার উপায় নেই তারা খবর পড়ছেন না পোশাকের এর বিজ্ঞাপন এ অভিনয় করছেন। আবার আমাদের কিছু সংবাদ দাতা এককাঠি উপরে। একই ঘটনা প্রত্যেকে নিজ নিজ দৃষ্টিকোন থেকে বর্ণনা করতে গিয়ে আসল ঘটনাই আড়াল করে ফেলছেন। সেদিন মহাখালীতে আগুন লাগলো। একই ঘটনা তিনটি চ্যানেল এ তিনভাবে প্রচার শুরু করলো। মানে তড়িঘড়ি সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে একটা চ্যানেল দেখালো কাঁচা বাজারে আগুন লেগেছে, একটা বললো, গ্যারেজে আগুন লেগেছে, অন্যটা বললো কাঁচা বাজারের পেছনে আবাসিক হোটেলে আগুন লেগেছে। আমরা যারা এসব খবর গিলতে থাকি, আমাদের অবস্থা কি হয় ভেবে দেখুন।

আমরা এতো বেশি বলি, আমাদের আসল কথাই বলা হয়না। আমরা বলা শুরু করলেই আর থামতে পারি না। এই যে আমি শুরু করলাম, থামতে পারছি না!

যেহেতু আমাদের স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি লোপ পেয়েছে, তাই আমাদের তথাকথিত নেতা-নেত্রীরা যা বলে তা'ই আমরা বেদবাক্য বলে মনে করি। হোঁদল রাজা-বুদ্ধুরাজা যখন একসাথে সাগরপাড়ে বালি দিয়ে ঘর বানিয়ে খেলছে, আর (আমরা) তাদের সৈনিকেরা পরস্পর যুদ্ধ করছি। যাদের জন্য যুদ্ধ করছি তারা কিন্তু উভয়েই মহাসুখে আমাদের মরণপণ যুদ্ধকে খেলার অনুসঙ্গ হিসেবে দেখছে আর মনে মনে হাসছে। তাদের তো কোন সমস্যা নেই, কারণ তাদের গায়ে তো আঁচড়টিও লাগছে না। আমরা যখন ব্যাগভর্তি টাকা নিয়ে বাজারে যাচ্ছি আর পকেটভর্তি করে বাজার করে বাসায় ফিরে লজ্জায় সন্তান-পরিবারের দিকে তাকাতে পারছি না, তখন আমাদের নেতা-নেত্রীরা বড় বড় বুলি আউরে উপঢৌকনের পোলাও গোগ্রাসে গিলছেন আর জনগনের রক্তকে পানি ভেবে পান করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন। তারা স্বপ্ন দেখছেন আর তাদের স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনে আমরা মুগ্ধ হচ্ছি এবং আমরাও স্বপ্নাতুর হয়ে যাচ্ছি। পৃথিবীর সবাই যখন নিজ অস্থিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শামিল আমরা তখন নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করায় চিন্তায় অস্থির।

আসুন আমরাও স্বপ্ন দেখতে শুরু করি একটু অন্যভাবে। আমাদের দেশে কিছু আইন হবে এবং আইন গুলোর বাস্তব প্রয়োগ হবে। যেমন,

কথার আইনঃ অহেতুক কথা কেউ বলতে পারবে না। যদি কোন কথা বলে তার স্বপক্ষে সাথে সাথে প্রমাণ দিতে হবে। না হলে উপস্থিত যারা থাকবেন তারা সাথে সাথে প্রতিবাদ করবেন এবং ঐ বক্তাকে সামাজিক ভাবে বয়কট করবেন। যার যখন ইচ্ছা তখনই সমাবেশ করতে পারবেন। তবে সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট মাঠ সারা বছর উন্মুক্ত রাখা হবে যার চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া থাকবে যেন বক্তার কোন কথায় দর্শক উত্তেজিত হয়ে পিটানো শুরু করলে বক্তা পালাতে না পারে। এবং বক্তাকে নিজ বক্তৃতার জন্য সময় হিসেবে কর দিতে হবে প্রশাসনকে। রাজপথে কোন পোষ্টার ব্যানার লাগানো যাবে না। কারো কোন প্রচার প্রয়োজন হলে টিভি চ্যানেল অথবা ছোট বড় লিফলেট আকারে বাসায় বাসায় পৌছে দিয়ে আসবেন। রাস্তা ঘাটে কোথাও এইসব প্রচারপত্র পরে থাকলে ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট অংকের জরিমানা প্রশাসনকে দিতে হবে। শব্দদুষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত থাকবে। অমান্যকারীকে প্রশাসন এর হাতে দেয়ার আগে জনগনের হাতে ধোলাই এর ব্যবস্থা থাকবে। তাহলে অচিরেই অকথা থেকে দেশবাসী মুক্তি পাবে আশা করি।

আর যেসব নেতা-নেত্রীরা মনগড়া কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করে তাদের চিহ্নিত করে গলায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া উচিত যাতে জনগন তাদের প্রকাশ্যে দেখতে পেলেই থু থু নিক্ষেপ করতে পারে।

নিয়মগুলো একটু বেরসিক শুনালেও আমার মনে হয় কিছুদিন প্র্যাকটিস করলে আমাদের সমাজের কিছুটা হলেও পরিবর্তন হবে। না- কি বলেন!!

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File