ধর্ষণ!! কাকে? একটি মেয়েকে, নাকি নিজের মনুষ্যত্বকে?
লিখেছেন লিখেছেন বলা সহজ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৩৪:৫৮ সন্ধ্যা
এখন প্রায় প্রতিদিনই পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে জ্বালা ধরায় একটি শব্দ, "ধর্ষণ"।
ধর্ষণ কাকে বলে এবং এর উৎপত্তি নিয়ে প্রচু-----র জ্ঞানগর্ভ কর্থাবার্তা, ইথারে, কাগজে, মগজে গিজগিজ করছে সবার। মনোবিজ্ঞানীরাও থেমে নেই, মনোবিশ্লেষণ করতে গিয়ে ধর্ষকদের মনকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়ে হয়তো বলেন.. মানসিক বিকৃতির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েই শেষ পর্যন্ত ধর্ষণ এর মতো জঘণ্য কর্মকান্ডে জড়িত হয়েছে।
আমরা যারা খুবই সাধারণ চিন্তা ভাবনা করি, তাদের কারো কারো মতে মেয়েদের ধর্মীয় অনুশাসন বহির্ভূত পোশাক পরিধান, আচার-আচরণ একজন পুরুষকে ধর্ষণে অনুপ্রাণিত করে। আবার কেউ কেউ ভাবেন, আকাশ সংস্কৃতির কুপ্রভাবের ফল এই ধর্ষণ।
সবাই নিজের মতামতে ঠিক আছে। আর আমি মনে করি আমরা নিজেরাই দায়ী এই সব অপকর্মের জন্য। যে ছেলে ধর্ষণ করছে তাদের চলাফেরা, মেলামেশা যদি আমরা (পরিবার, সমাজ, আইন) নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম তাহলে হয়তো আমাদের এসব কু-রুচিকর কর্মের সাথে অহরহ পরিচিত হতে হতোনা।
আমরা যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে নিজেরা তো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ছি সাথে সাথে আমাদের সন্তানদেরকে্ও নষ্ট হতে সাহায্য করছি। কিভাবে?
একটি সন্তান জন্মলাভের পর থেকে তার প্রাপ্য মায়া-মমতা থেকে আমরা বঞ্চিত করা শুরু করি। সময়ের অভাবের অজুহাতে পিতা হয়ে সন্তানকে যথেষ্ঠ সময় দিতে পারিনা, চাকুরীর কারণে অনেক মা-ই সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিতে পারেন না। যাও একটু আধটু সময় সন্তানেরা তাদের মা-বাবাকে কাছে পায় তখন হয়তো সন্তান ঘুমে থাকে নয়তো কার্টুন দেখায় ব্যস্ত থাকে। এরপর সন্তানরা যখন স্কুলে যাতায়াত শুরু করে তখন আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই কিভাবে গাদা গাদা বই মুখস্ত করে আমার সন্তান সবার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করবে। ভারী ভারী সাইনবোর্ড, ভারী ডোনেশন, ভারী মাসিক বেতন না থাকলে আমরা ওইসব স্কুলকে হিসাবেই রাখিনা। ওই সব স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করানোর যুদ্ধে নামি, কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালি কি জন্য? একবারও কি ভেবে দেখেছি? না, আমরা শুধু চাই, ভালো রেজাল্ট, ভালো চাকুরী, ভালো উপার্জন। আমরা আমাদের সন্তানদের কি বানাচ্ছি? এক একটা রোবট!! আমরা কি পিতা-মাতা হয়ে সারা বছরের মধ্যে মাত্র ১০ টা ঘন্টা ব্যয় করেছি আমাদের সন্তানকে ভালো কিছু নীতি বাক্য শিখাতে? আমরা কি কখনো আমাদের সন্তানদের স্কুলের পাঠ্য বই গুলো খুলে পড়ে দেখেছি, দেখেছি কি ওখানে কি পাঠ্য আছে যা তার মানবীয় বিকাশে সাহায্য করবে? আমাদের সন্তান যখন একটু বড় হয় আমরা তাদের সাথে কখনো পারিবারিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করেছি? আমরা তাদের কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পাঠিয়ে আর মাসে মাসে কতগুলো টাকা পকেট খরচ দিয়েই আমাদের দায়িত্ব শেষ করছি। আমরা কখনো জানতে চাইনা আমার সন্তান কি শিক্ষা পাচ্ছে, কেমন বন্ধুর সাথে মেলামেশা করছে, পকেট খরচের নামে নেয়া টাকা কিসে খরচ করছে। আমরা আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছি। এসব ধর্মীয় অনুশাসন, আদব কায়দা বড্ড সেকেলে। আমরা সন্তানকে পাশে নিয়ে পশ্চিমা কালচার দেখি দূরদর্শনে। আর আমাদের গৃহিনীরা পশ্চিম বাংলার ১০০০ পর্বের ধারাবাহিক গোগ্রাসে গিলে যার ৯৯৮ পর্ব পর্যন্ত শুধু দেখানো হয় সাংসারিক কুটচাল এবং ৯৯৯ তম পর্ব ফলাফল আর ১০০০ তম পর্ব অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিদায় নেয়া এবং নতুন ধারাবাহিকের আমন্ত্রণ। ৯৯৮ পর্ব পর্যন্ত দেখার যাদের ধর্য্য নেই তারা যে পর্বগুলো দেখে তা থেকে যে শিক্ষা পায় তা হলো অযাচিত সন্দেহ, কুটচালিতা। আর এসব প্রয়োগ করে নিজের আর আশেপাশের সংসারে। ফলাফল? আশা করি সবাই একটু চারপাশে তাকালেই দেখতে পাবেন। ওহ হো!! আমি তো নদীর গল্প লিখতে গিয়ে কুমিরের গল্প লিখছি? স্যরি, পাঠকগণ (যদি এই অখাদ্য কেউ গিলেন, আর কি)।
যা বলছিলাম। আমাদের চারপাশে এই যে ধর্ষণ তা অনাদীকাল হতে চলে আসছে। এখন আমরা একটু সচেতন, তাই পত্রিকার পাতায় দেখতে পাচ্ছি আর জানতে পারছি মানবতার সূচক কতটুকু নিচে নামলো। আসুন না, আমরা আমাদের মানবীয় গুণ গুলোকে একটু ঘষামাজা করে নেই। আমাদের সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি। আসুন না, আমরা মন থেকে ধিক্কার দেই সেইসব শিক্ষক কে যারা মানুষ গড়ার শপথ নিয়ে নিজেরা অপ-রাজনীতির ঘোলাজলে স্বার্থসিদ্ধির আশায় থাকে আর ছাত্র-ছাত্রীদের বিপথগামী হওয়ার ষোলকলা পূর্ণ করতে শিখায়, টেনে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় নিজেদের মতাদর্শীয় পতাকাতলে। কোমলমতি ছাত্ররা ভুল রাজনীতির পাঠ নিয়ে বলি হয়ে অন্যের উপরে ওঠার সিঁড়ি হয়। আসুন না ঘৃণা করি সেইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামধারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আসুন না ঘৃণাকরি সেই সব বাবা-মাকে যাদের সন্তান বিপথগামী কিন্তু তারা জেনেও বাঁধা দেয়না। আসুন আমরা শুধু অন্ততঃ একবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে. . . .
বিষয়: বিবিধ
২০১২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন