হায়েনার কবলে বাংলাদেশ

লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ২১ মার্চ, ২০১৩, ১০:১২:৫৪ রাত

বাংলাদেশের হাজারো থানাগুলোর মধ্যে একটি থানার চিত্রনাট্য এটি…



কয়েকজন এসআই (সাব ইন্সপেক্টর) বসে আছে, থানার উপপরিদর্শকের কামরায়। কেউ দামী সিগারেটে শুখটান দিয়ে ধুঁয়া উড়াচ্ছে, কেউ চেয়ারের ওপর পাগুলো উঠিয়ে নাড়ছে আর মনের শুখে গান আওড়াচ্ছে। ক্লান্ত দুপুরের পরিশ্রান্ত দেহে সবারই উদাস ভাব। কামড়ার একপ্রান্তে বসে বসে ঝিমাচ্ছিল আরেক এসআই প্রণব। হঠাৎ তারপ্রতি দৃষ্টি পরে এসআই শাকিলের। মুখে বাঁকা হাসি টেনে এসআই শাকিল প্রণবের দিকে তাকিয়ে বলে কিহে প্রণব দা, রাতে ঘুম হয়নি বুঝি? একেবারেই অফিসের চেয়ারে বসে বসে ঘুমাচ্ছেন?

তার কথা শুনে এসআই মুকুল বলে ওঠে, আরে রাতে ঘুম হবে কেন? ম্যাডাম কত দিন পরে এলেন হাহাহা।

এসআই শাকিল আবার বলে উঠলো হাহাহা কতদিন পরে ভাবি সাহেবা বাপের বাড়ি ছেড়ে প্রণবদা’র ঘরে ফিরে এলেন, তার সবকিছু এক রাতেই সুধে আসলে বুঝে নিয়েছেন তাহলে... হাহাহাহাহা এবার পুরো কামড়া জুড়েই হাসির রোল পড়েছে।

ওদিকে এসআই প্রণবের অবস্থা দেখার মত। সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় হন্ত দন্ত হয়ে রুমে প্রবেশ করল ইন্সপেক্টর ছ্যাঁচড়া মেহেদী। তার নামের আগে অবশ্য ছ্যাঁচড়া শব্দ নিয়ে বিস্তর গবেষণার বিষয় হলেও সহকর্মীরা তার কার্যকলাপেই নামের মোজেযা খুঁজে ফিরে।

ছ্যাঁচড়া মেহেদী রুমে ঢুকেই হুঙ্কার ছাড়ল কি নিয়ে এত হট্টগোল?

এসআই শাকিল টটস্থ হয়ে প্রণবের ব্যাপারটি খুলে বল্লে ইন্সপেক্টর মেহেদী একগাল হেসে উঠে প্রণবের দিকে তাকিয়ে বল্ল; হুম প্রণব মিয়া তাহলে এখন বউরে শখ পূরণ করতে পারছে না? হাহাহা আবারও হাসিতে ভরে উঠর রুমটি।

সবার হাসি না থামতেই হঠাৎ মেহেদী গম্ভীর হয়ে উঠে বলে উঠল শুন তোমরা, এই মাত্র ওসি স্যারের রুম থেকে আসলাম।

সবাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ছ্যাঁচড়া মেহেদীর দিকে তাকাল।

: স্যারের বউ নাকি স্যারের কাছে ডায়মন্ডের এক স্যাট নেকলেস চেয়েছে, ঐযে কালকে পার্টিতে আমার বউয়ের গলায় দেখেছে সে রকমের। এখন স্যার বলেছে আমাকেই মেনেজ করতে।

এসআই মুকুল বলে উঠল কিন্তু স্যার ওরকম এক সেট গয়েনার দামতো অনেক টাকা! তাছাড়া গত সপ্তাহেইতো শো-রুমের মালিক থেকে আপনি এরকম এক সেট আদায় করেছেন। এখন কি আবার...................

এসআই শাকিল: তাছাড়া হরতালসহ রাজনৈতিক কারনে ব্যবসায়ীদেরও মন্দা যাচ্ছে, তাদের থেকে মনে হয়না পাব বলে।

এইবার এসআই প্রণব কথা বলে উঠল, স্যার রিক্সাওয়ালা বেটাদের কিন্তু এখন জব্বর দিন যাচ্ছে হেহেহে

ইন্সপেক্টর: আসলে তুমি একটা গর্দভ। যাও তুমি গিয়ে রিক্সাওয়ালাদের থেকে খেদ মেরে বউয়ের সাধ মিটাওগে! তোমার বউতো শাড়ি কিনে না দেয়ায় বাপের বাড়ী চলে গিয়েছিল তাই না?

এসআই প্রদীপ আমতা আমতা করে বল্ল কি করবো স্যার, ও সেদিন মেলায় গিয়ে গোল্ড প্লেট চাইল সেটা কিনে দিলাম; একটা দামী এন্ড্রয়েড মোবাইলও কিনে দিলাম। তারপর ও বায়না ধরল জামদানি কিনে দিতে যেটার দাম ৩৫হাজার টাকা। কিন্তু তখন আমার কাছে অত টাকা ছিল না! তাই সে তার মামাত ভাইয়ের বাসায় চলে গিয়েছিল রাগ......

মেহেদী: হয়েছে, হয়েছে আর বলতে হবে না। এখন যা বলছি মনোযোগ দিয়ে শোন। সবাই কাছে গিয়ে বসল, কিন্তু কি কথা হল তারা ব্যতিত আর কেউই শুনতে পায়নি।



রাত ২টা।

ব্যবসায়ী মাহমুদ গভীর ঘুমে অচেতন। সারাদিনতো আর কম খাটাখাটনি হয় না। সেই সকাল বেলায় দোকানে চলে যান রাত ১২টার দিকে ঘরে ফিরেন। তারপর দুটো খেয়েই ঘুমের রাজ্যে চলে যান। এমনও সময় যায় ৫/৬ দিনেও সন্তানদের মুখ পর্যন্ত দেখা হয় না তার। ৪০ বছর বয়সী মাহমুদ করীমের স্থানীয় একটি মার্কেটে ২ টি বড় কাপড়ের দোকান রয়েছে। ৭ ও পাঁচ বছরের এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক সে। গৃহিনী স্ত্রীকে নিয়ে মোটামুটি সুখের সংসার ভালই চলে যাচ্ছে।

ঘুম ভেঙ্গে যায় কলিং বেলের আওয়াজে। লাইট জ্বেলে দেখেন স্ত্রী সামিয়া উঠে বসে আছে, চোখে মুখে আতংকের চাপ তার। কলিং বেলটি বিরামহীন ভাবে বেজেই যাচ্ছে। মাহমুদ তরিঘড়ি করে যাচ্ছিল দরজা খুলতে। দরজা কাছে গিয়ে কে? জিজ্ঞেস করতেই বাহির থেকে আওয়াজ আসে দরজা খুলুন, আমরা পুলিশ, থানা থেকে এসেছি।

মাহমুদের মুখে কিছুটা ভয় ফুটে উঠলেও সে দরজা খুলতে এগিয়ে যায়। স্ত্রী সামিয়া তার হাত চেপে ধরলে অভয় দেন যেন ভয় না পায়। মাহমুদ দরজা খুলতে হুরমুর করে পাঁচ ছয়জন পুলিশ ঢুকে পরে ঘরের ভেতর।

মাহমুদ: কি ব্যপার আপনারা

মেহেদী: আপনার নাম মাহমুদ করীম?

মাহমুদ: জ্বী

মেহেদী: আপনাকে আমার সাথে একটু থানায় যেতে হবে

মাহমুদ: ক্যা..ক্যা.. কেন?

মেহেদী: সে গেলেই বুঝবেন....চলুন। এই বলে তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বাসার বাহিরে নিয়ে গাড়িতে উঠে। স্ত্রীর মুখটি পর্যন্ত দেখতে পায়নি মাহমুদ। কিছু বোঝার আগেই উল্কার মত ঘটে গেছে ব্যাপারটি। সামিয়া ফ্যাল ফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাটিতে লুটিয়ে পরে।



মাহমুদকে এনে সরাসরি হাজত খানায় ঢুকিয়ে রেখে তালা লাগিয়ে চলে যায় পুলিশগুলো। অসহায়ের মত বসে থাকে মাহমুদ। বুক যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে তার। তার জানামতে জীবনে কারো এক চুল পরিমাণ ক্ষতি সে করেনি। ব্যবসা করেছে সামান্য লাভে, অতিরিক্ত মুনাফার কথা সে ভাবেওনি কখনো। এটিকে সে মহাপাপ আর ক্রেতাদের ওপর অত্যাচারই মনে করে। কিন্তু আজ সে থানার হাজত খানায় বন্দী। অথচ সে জানেনা কি তার অপরাধ। এসব ভাবতে ভাবতে তার বুক ভিজে যায় চোখের পানিতে। তার চিন্তা ভঙ্গ হয় হাজত খানার তালা খোলার শব্দে। দেখে আরো কয়েকজনকে ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে রেখে পুলিশরা চলে যায়।

তাকিয়ে দেখে আরো ৪ জন দাঁড়িয়ে আছে হাজতের মাঝখানে। হঠাৎ বিশ্বজিতের দিকে চোখ পড়তেই সে চেঁচিয়ে উঠে আরে মাহমুদ ভাই আপনি এখানে?

: হ্যাঁ, ওরা একটু আগে বাসা থেকে ধরে এনেছে। কিন্তু কি কারনে তা জানি না। তা তুমি এখানে কেন?

: আমিও জানি না দাদা, ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে। আর কিছুই জানি না। বিশ্বজিতও মাহমুদের মত একই মার্কেটে জুতার ব্যাবসা করে। আস্তে আস্তে ভেতরের সবার দিকে খেয়াল করে দেখে সবাই মোটামুটি ভদ্র সমাজের বাসিন্দা। কিন্তু কেউই জানে না কেন তাকে ধরে এনেছে।



ভোর ৬টায় মাহমুদের ডাক পড়ল চ্যাঁছড়া মেহেদীর টেবিলে। অনেক আতিউতি করে শেষ পর্যন্ত মেহেদী খুলে বলল তার আসল উদ্দেশ্য। বলা হল মাহমুদ স্থানীয় জামাত ক্যাডার। গতকালকের হরতালে সে একাধিক গাড়ি পুড়িয়েছে এবং ভেঙ্গেছে, পুলিশের কাছে তার প্রমাণ রয়েছে। মাহমুদ যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে কিছুতেই বোঝাতে পারল না, এসবের কোন কিছুতেই নেই সে। মেহেদীর একটাই কথা সে ছিল গাড়ি পোড়ানোতে।

শেষে আসল কথায় এল মেহেদী, ২০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দিবে। মাহমুদ অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়াবার মত ছেলে নয়। সে জানিয়ে দিল যা করতে পারেন করেন, একটি টাকাও আমি দেব না। ইন্সপেক্টর মেহেদী চেয়ার থেকে উঠে মাহমুদের মুখে একটা ঘুষি চালিয়ে প্রণবকে ডেকে বল্ল শালাকে নিয়ে যা...

মুখ থেকে গরিয়ে পড়ছে রক্ত, কিন্তু সে দিকে তার খেয়াল নেই। অন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখে সবারই একই দশা। যা বোঝার বুঝে গেল মাহমুদ।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মেহেদী হাজত খানায় ঢুকে পড়ল। সবার দিকে অগ্নী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে উঠল শালা চো.....পোলারা তোদের পাখনা মেলেছে না? দেখাচ্ছি তোদেরকে মজা.. এই বলে তারেক নামের যে ছেলেটিকে রাতে নিয়ে এসেছিল মেস থেকে, তার চুল ধরে টেনে দাড়া করিয়ে বল্ল এই চাষার পোলা টাকা দিতে পারবি পাঁচ হাজার?

:স্যার আমি কোথায় পাব এত টাকা! প্লীজ স্যার আমাকে ছেড়ে দিন, আমি অসহায় মানুষ। আমি কথা দিচ্ছি, আমি আর ওদের মেসে থাকবো না। বিশ্বাস করুন স্যার ওদের মেসে টাকা কম বিদায় আমি থাকি না হলে থাকতাম না। এই বলে ছেলেটি কান্না শুরু করল।

: এই কুত্তার বাচ্চা, টাকা নাইতো দুনিয়ায় থেকে কি করবি? তোরা সমাজের বোঝা.. এই বলে কোমড়ের খাঁজ থেকে রিভলবার বের করে ছেলেটির পায়ে ঠেকিয়ে একে এক ৩ রাউন্ড গুলি চালিয়ে দেয়। ছেলেটি চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পরে মেজেতে। তার পাঁজরে একটা লাথি চালিয়ে অন্যদের দিকে থাকিয়ে গালি মেরে বল্ল, দেখলি কুত্তার বাচ্চারা? তোদেরও এই অবস্থা করবো। ১০ মিনিট সময় দিলাম, ভেবে দেখ। এই বলে বের হয়ে যায় সে সেখান থেকে।

দৃশ্যপট শেষ হবে না। এটাই বাংলাদেশের থানাগুলোর এই সময়ের চিত্র। সারা বাংলার মানুষ আজ এভাবেই অসহাস দেশের রাজনীতি আর এক শ্রেণীর পুলিশ নামক হায়েনার কবলে পরে.................................................

বিষয়: বিবিধ

১৪৩৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File