পুলিশী সন্ত্রাসের স্বীকার সাধারণ মানুষ আজ অসহায়
লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৪:৪০:৩০ বিকাল
জানুয়ারীতে রাজধানী ঢাকার মতিযিলে জামাত-শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। পুলিশের আইজি ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার তাদের দেখতে সেখানে ছুটে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ সদস্যদের প্রতি উষ্মা প্রকাশ করে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমদ বলেন, তোমরা কি করেছিলে? জামাত-শিবির দেখামাত্র এখন থেকে গুলি চালাবে। দেশব্যাপী সমালোচিত হয়ে এক পর্যায়ে বেনজীর আহমদ মিডিয়ার গাঢ়ে দোষ চাপিয়ে গুলি চালানোর নির্দেশের কথা অস্বিকার করে।
কিন্তু পুলিশের উর্ধ্বতনদের পক্ষ থেকে এমন আদেশ পাওয়ার পর থেকে অতি উৎসাহি সদস্যদের ভারাবারি চরম আকার ধারন করে। করারই কথা! সেই সারদার ট্রেনিং একাডেমী হতে শুরু করে পুরো চাকরী জীবনের সারাটি ক্ষ কাঁদে এবং কোমড়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চলতে চলতে হয়রান, অথচ ব্যবহারের সুযোগ পায়নি কখনো। তাইতো সুযোগের সদ্বব্যবহার করেছে তারা।
ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখে কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম ও বগুড়ায় পুলিশ গুলি করে প্রায় ১০ জন মত মানরে বাচ্চাকে পাখির মত গুলি করে হত্যা করেছে। শুধু তাই নয়, চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার মহা প্রতাপশালী ওসি প্রদীপ কুমার (যার নেতৃত্বে পুলিশ জুতা পায়ে মসজিদে প্রবেশ করে!) আন্দোলনরত জামাত-শিবির কর্মীদের ধরে ধরে থানার ভেতর এনে গুলিয়ে চালিয়েছে। পেশাগত দায়িত্বপালনের কারনে চাক্ষুষ দেখার সুযোগ হয়েছে আমার সেদিন, একটি ছেলেকে ধরার পর প্রদীপ কুমার তাকে বলছে, এই তুই গুলি খেয়েছিস? এই বলে ছেলেটির ডান হাতের বাহুতে পরপর দুইটি গুলি করে।
৫ ফেব্রুয়ারীর পর থেকে দেশের যেখানেই আন্দোলন হচ্ছিল সেখানেই গুলি চালিয়েছে পুলিশ। তবে সবচেয়ে হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছিল ১৫ ফেব্রয়ারী কক্সবাজারে। সেখানে আন্দোলনরত মুসল্লীদের ওপর পুলিশ হামলা চালায়। এতে দেখেছি ১৭/১৮ বছরের একটি ছেলেকে (লাল শার্ট পরিহিত, এবং সম্পূর্ণ খালি হাতে) কয়েক জন পুলিশ মারতে মারতে একটি নির্মানাধিন ভবনের কাছে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে ছেলেটি পড়ে গেল এক পুলিশ সদস্য তার পিঠে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে! আমি জানি না, ঐ ছেলেটি কি বেঁচে আছে, নাকি মারা গেছে! তবে সেখানে সেদিন ৭ জনের মত মানুষ মারা গেছে।
ভিডিওটি দেখুন এই লিঙ্ক থেকে
এরপর এলো, ২৮ ফেব্রুয়ারী। এই দিনের গণহত্যার কথা আর নাইরা বল্লাম। কিন্তু মানিক গঞ্জের হত্যাকান্ডটি আমাকে এবং আমি মনে করি সমস্ত বিবেকবানকেই নির্বাক ও আহত করেছে। ব্লগে নাস্তিকতা নামে ইসলাম, আল্লাহ, রাসুল এবং কোরআনকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের প্রতিবাদে ধর্মীয় শ্রেণী হরতাল ডাকে। সেখানেও গুলি চালায় পুলিশ।
গ্রামে এক মহিলা রান্না করিছিল। হঠাৎ পুলিশের ছোঁড়া একটি গুলি এসে লাগে মহিলার গায়ে। মহিলা যখন মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল, তখন তার চাচা শশুড় তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য পুলিশের সহযোগীতা চায়।
পুলিশের টেম্পুতে করে মহিলাকে যখন হাসপাতালে নেয়া হচ্ছিল, তখন এক পুলিশ মহিলার চাচা শশুরের দিকে তাকিয়ে যখন দেখে তার মুখে দাড়ি আছে, তখন সে তাকে জামাত মনে করে তার মাথায় গুলি ঠেকিয়ে হত্যা করে!!! যে মহিলাকে বাঁচানোর জন্য ছুটে গিয়েছেন, গ্রামের ঐ সহজ সরল লোকটি, সে আজ মৃত, কিন্তু মহিলাটি বেঁচে আছেন এক বুক ভরা বেদনা আর নির্মমতার স্বাক্ষি হয়ে।
উফ্ কি মর্মান্তি। একি মানবতা? একি স্বাধীন সার্বভৌম কোন দেশের ছবি? এটি কে কোন সভ্য জাতির চরিত্র?
বাংলাদেশ যেন এখন এক যদ্ধ ক্ষেত্র। এখানো এখন আর সাধারণ মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। রক্ষক যখন বক্ষক সেজে বসে তখন মানুষের আর কিছুই করার থাকে না। চোর, ডাকাত, কিংবা সন্ত্রাসীর ধারা আক্রান্ত হলে সেটার একটা সমাধান পেতে পুলিশ, আইন আদালতে যায় মানুষ। কিন্তু নিরিহ পথচারিদের বাসা-বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে গুলি করে পুলিশ আজ মহা সন্ত্রাসীর খাতায় নাম লিখিয়েছে। এ পর্যন্ত কয়েকজনকে পক্ষুত্ব বরন করতে হয়েছে সম্পূর্ণ নির্দোশ হওয়ার পরও।
ইউটিউবে না দেখা গেলে এই লিঙ্ক থেকে ভিডিওটি দেখুন
ছবির লাশটি দেখুন, সম্ভবত বাজার করতে এসেছিলেন বগুড়ার এই ভদ্রলোকটি। কিন্তু পুলিশের তাজা বুলেট কবর দিয়েছে কত স্বপ্নকে...
এটি ৬মার্চ নয়া পল্টনে বিএনপি'র সমাবেশে পুলিশি সশস্ত্র সন্ত্রাসের খন্ড চিত্র।
গতকাল হরতাল চলাকালে এই ঘটনা ঘটে।
নীচের বামপশের ছবিটি কোন চিনেমার দৃশ্য নয়।
পুলিশের এই তান্ডবের সাথে সাথে তাদের অবৈধ বাণিজ্যও চলছে দেদারছে। যখন ইচ্ছে যাকে তাকে থানায় থরে এনে মোটা অংকের বিনিময়ে পরে ছেড়ে দিচ্ছে। এসব অভিযোগ ভিবিন্ন পত্রপত্রিকার পাতা জুড়ে অলংকিত করছে।
পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু। বাস্তবে সেটি হত যদি তারা আ.লীগ সরকারের গোলামী না করে গণতান্ত্রিক ভাবেই তাদের কাজ করে যেত। যাদেরকে তারা আজ গুলি করে হত্যা করছে, পঙ্গু কিংবা বিকলাঙ্গার করছে তারাতো এই দেশেরই মানুষ। আমাদের কারো না কারো ভাই, বাবা, আত্মীয়। তারা যে অপরাধই করুক না কেন, তার জন্য আইন আছে, আদালত আছে। আপনারা তাদের গ্রেফতার করে আইনের কাছে সোপর্দ করতে পারেন। কিন্তু আপনারা যা করছেন, তাতে ঐ পরিবার গুলোর যেমন পথে বসিয়ে দিচ্ছেন, তেমনি আমাদের এই ছোট্ট দেশটিকে বিশ্বের কাছে অপমানিত করে ছাড়ছেন। শুধু তাই নয়, জাতিসঙ্গের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের পুলিশকে আর নাও নেয়া হতে পারে।
তাই বলবো, কিছু অফিসারের নোংড়া রাজনীতিতে আপনারা না জড়িয়ে গনতান্ত্রিক এবং আইন অনুযায়ী কাজ করে যাবেন। আপনারা যেমন এই দেশের সন্তান, সাধারণ মানুষও এই দেশের সন্তান।
সময় এসেছে আজ পুলিশ নিয়ে ভাবার। জনগণের টাকায় লালিত পুলিশ জনগণের ক্ষতি করলে এই বাহিনীর কোন প্রয়োজন নাই।
বিষয়: বিবিধ
১৪২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন