আমি সচেতন হয়ে লাভ কি?
লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ০৬ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৬:৪৫:৩৮ সন্ধ্যা
কয়েকদিন আগ জরুরী প্রয়োজনে সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। ফেরার বেলায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিন্তু কোনটিতেই ওঠার জো নেই। মেজাটাই গরম হয়ে যাচ্ছিল, রাস্তায় নামা যায় না গাড়ির জন্য। দশ মিনিটের রাস্তা পার হতে ক্ষণে ক্ষনে লাগে আধা ঘন্টা/ এক ঘন্টা! এত্ত গাড়ি অথচ কোন গাড়িতে আমাদের জায়গা পাচ্ছি না।
প্রায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ত্যাক্ত হয়ে গেছি। এর মধ্যে সাথে থাকা কলিগ কয়েকবার উঠতে চেয়েছেন। কিন্তু আমি নিরুৎসাহিত। কারন এসব ঝামেলা/ভীর আমার একেবারেই ভাল লাগে না। তার ওপর এরকম একবার বাসে উঠে আমার বহু শখের কেনা মোবাইলটি খুয়েছি, সে ভয়তো অবশ্রই রয়েছে। আর তা ছাড়া নিজেকে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে দেখার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।
বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কলিগে হাত ধরে হেটে হেঁটে লাল দীঘির পাড়ে(দক্ষিণ) চলে এলাম। কারণ এখানে থেকে ওঠার কিছু সুযোগ আছে। কিন্তু হায়! এখানেও কোন ফুসরৎ ফেলাম না। এখানেও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সাথের কলিগকে বল্লাম চলেন ভাই, উত্তর পাড়ে যাই, সেখান থেকেইতো বাস গুলো ছাড়ে। সেখানে দু'জনের পছন্দমত সামনের দ্বিতীয় সাড়িতে গিয়ে বসলাম। বাসটি তখনো মোটামুটি খালি, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসটি পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় বাস চলা শুরু করেছে।
কিছুদূঢ় যেতেই সীটে বসার খায়েশ হাড়ে হাড়ে টের ফেতে শুরু করেছি। বাসে এত লোক উঠেছে যে, আমার দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম! দাঁড়িয়ে থাকলে অন্তত আলো বাতাসের কিছুটা সংস্পর্শ ফেতাম। কিন্তু সীটে বসায় সে সুযোগও গেছে!
আশায় ছিলাম মার্কেট এসে হয়তো কিছুটা নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। কিন্তু বিধি বাম! মার্কেটে এসে যত লোক নামল, তার চাইতে ডবল লোক উঠলো। আমার অবস্থা যায় যায়। একটু নিরিবিলি, নিরাপদ আর আরামে আশার জন্য যেখানে ঘন্টা খানেক সময় নষ্ট করলাম, সেখানে তার ফল এই! এর মাঝে দেখি আমার সীটের পাশে দু'জন বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। নিজেকে খুব অসহায় মনে হল, তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। একবার ভেবেছি নীজে দাঁড়িয়ে তাদের জায়গা দেই। কিন্তু সে সুযোগ আমার কাছে নেই। তার ওপর আমার এক সীটের বিপরীতে তাঁরা দুইজন বৃদ্ধ।
পাশের সীটের কলিগকে বল্লাম, আমার দ্বারা এই বাসে করে আগ্রাবাদ পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব নয়। চলেন দেওয়ানহাট মোড়ে নেমে রিক্সা অথবা টেক্সী করে যাই।
অনেক কষ্টে দেওয়ানহাট মোড়ে নামলাম। নামতে গিয়ে আরেক ঝামেলা! ঐ দু' বৃদ্ধের ,মাঝে প্রতিযোগীতা শুরু হল সীটে বসতে। তাদের হুড়োহুড়িতে একজনতো আমাকে ধাক্কা দিয়ে প্রায় ফেলেই দিয়েছেন! ১০ সেকেন্ডের যায়গায় অন্তত ৩/৪ মিনিট সময় লেগেছে মাত্র। গেইটের কাছে এসে বুঝলাম আমার কাঁদে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগটি আমার পিঠে নাই। তারাতাড়ি ছেঁচিয়ে উঠলাম এ্যাই্ আমার ব্যাগ কোথায়.....? যাক কিছুক্ষণ পর পেলাম আমার ব্যাগ। আর হাঁফ ছেড়ে বাঁছলাম। মনে হচ্ছে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলাম।
বাসটি ছেড়ে চলে যেতেই একবার ভাবলাম, হায়রে জীবন! সামান্য কয়টি পয়সা বেশি কামানোর জন্য এই অসাধু মানুষগুলো বাসের ধারন ক্ষমতার চাইতেও অনেক বেশি লোক উঠিয়েছে এই বাসে। এখন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায় কার? ঐ বাসের চালক/হেল্পারের নাকি এর যাত্রীদের? নাকি আমাদের দেশের আইন প্রয়োগকারিদের?
একটি দুর্ঘটনা ঘটলে অনেক হাউকাউ করা হয়। উঠে আসে জন সচেতনতার কথা! কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমিওতো সচেতন হতে চেয়েছি। আমিওতো বিপদ এড়ানোর জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ সময় কিল করে নিরাপদে পৌঁছানোর জন্য পায়ে হেঁটে গিয়ে বাস স্টেন্ডে গিয় মোটামুটি খালি বাসে উঠেছি, কিন্তু কি লাভ হল? আমি কি নিরাপত্তার গেরান্টি পেয়েছি? কে আমাকে নিরাপত্তার গেরান্টি দেবে?
সচেতন হতে গিয়ে যদি আরো বেশি বিপদের ভয় থাকে, তবে সচেতন হয়ে লাভ কি???
বিষয়: বিবিধ
১২৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন