শুধুমাত্র ভাষা দুর্বলতার কারণেই পিছিয়ে পড়ছে আমাদের শিক্ষিতরা, কমে যাচ্ছে রেমিটেন্স

লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০১:৪৯:৪৭ দুপুর



মুনির বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত পরিবারের শান্তশিষ্ট সন্তান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কোন কলেজ থেকে সে ডিগ্রী ও মাষ্টার্স কমপ্লিট করে চাকরি পাওয়ার আশায় ক জোড়া জুতা ক্ষয় করে ফেলে। কিন্তু চাকরী যে দেশে সোনার হরিণ সে দেশে চাকরি পাওয়া কি এত সহজ! অগত্যা আর দশটি ছেলের মত সেও পাড়ি জমায় মধ্যপ্রাচ্যে

আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী যদিও প্রবাসী/বিদেশে থাকে এমন গুণবাচক নামে সে গুণান্বিত হতে সক্ষম হয়; তথাপি সে যে বাংলাদেশের একজন উচ্চ শিক্ষিত নাগরিক! তার কদর যখন সে দেশে পায়নি সেই কদর তখন সে বিদেশে পাবে কিভাবে? বাবা-মায়ের জমি বিক্রয় আর এনজিও গুলো থেকে চড়া সূদে ঋণ নেয়া টাকা পরিশোধের বাধ্য-বাধকতায় এবং সংসারের হাল ধরার জন্য সে চাকরী নেয় কোন একটি কম্পানীর পিয়ন হিসেবে। অবশ্য এর ভাল কিছুরও যে সে যোগ্য তা কিন্তু সে মোটেও নয়।

মনিরের মত শতশত শিক্ষিত যুবক জীবনের প্রয়োজনে পাড়ি দেয় বিদেশে। কিন্তু বিদেশে গিয়ে তাদের বেছে নিতে হচ্ছে গার্ড কিংবা পিয়নের মত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পেশাকে।

এর কারন কি? বিদেশিরা কি ইচ্ছে করেই এসব শিক্ষিতদের অবমূল্যয়ন করছে? না মোটে সে রকম কিছু নয়। কি অবাক হচ্ছেন? হ্যা অবাক হওয়ারই কথা। এসব যুবকরা শিক্ষিত হলেও একটা জায়গায় গিয়ে তারা ঠিকই ঠেকে যায়। আর ঠেকার কারণ ঐ একটাই।

সেই ১৯৪৮ সালে শুরু হওয়া আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ১৯৫২ সালে রফিক, সালাম আর জব্বারদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে সফল হয়েছিল। যে ভাষার জন্য আমরা লড়াই করে পুরো বিশ্বর চোখ আঙ্গুল দিয়ে আমাদের বীরত্ব দেখিয়ে দিয়েছিলাম। সেই বীরত্বকে আজ ম্লান করে দিচ্ছে সে রকমই আরেকটি ভাষা!

হ্যাঁ; ইংরেজি ভাষা। শরীরেতো মুসলমানের রক্ত! তাই পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরন করে আমরা কেন যেন ইংরেজি ভাষার প্রতি উদাসিন থেকেছি আজ অবদি। এক সময়কার আমাদের দেশের সাথে একিভূত বর্তমানে আমাদের প্রতিবেশি ইন্ডিয়া সেই ইংরেজ আমল থেকেই ইংরেজিকে প্রাধান্য দেয়ায় তারা আজ বিশ্বের মাঝে স্বগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছে। এর কারন হচ্ছে, তাদের জাতি সু শিক্ষায় শিক্ষিত। আজ গোটা ইন্ডিয়া জুড়ে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান পদ্ধতি হচ্ছে ইংরেজি ভাষায়।

আর আমাদের? আজো আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে শুরু করে প্রায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান পদ্ধতি হচ্ছে বাংলা মাধ্যমের। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ব প্রতিযোগীতায় গিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষিতরা আর দাঁড়াতে পারে না।

তাই সময় এসেছে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করার। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন না করে এখন আমাদের দেশে চলে শিক্ষা নিয়ে রাজনীতি! এই রাজনীতি বন্ধ করে প্রয়োজন অতিদ্রুত জনকল্যাণের শিক্ষা পদ্ধতি চালুর। যার মাধ্যমে জাতি নিজেদের মাতৃভাষার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিকেও ভালভাবে আয়ত্ম করে বিশ্ব দরবারে প্রতিযোগীতায় দাঁড়াতে সক্ষম হয়।

তবে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা অবশ্যই নয়, যার মাধ্যমে নিজ ভাষাকে ভুলে ইংরেজি ভাষা ভাষি হতে হয়। যেটি করছে আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। তাই সরকারকে এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, এই দুই শিক্ষা ব্যবস্থার গলদগুলো অপনোদন করে সুন্দর ও কার্যকরি ব্যবস্থার প্রচলন।

তার সাথে উচ্চ শিক্ষিতদের পাশাপাশি বাংলাদেশে রেমিটেন্সের সিংহ ভাগ আহরণকারি এসব প্রিবাসীদের মধ্যে স্বল্প ও অশিক্ষিতরাও এখন যাচ্ছে বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। যাদের বেশির ভাগই নিরক্ষর। আর তারা সেখানে গিয়ে নিজেদের নামটি পর্যন্ত বলতে পারছে না! বলবে কিভাবে? তারা কি ইংরেজি জানে? অগত্যা তাদের কাজ জুটে সবচেয়ে নীচু প্রকৃতির কাজ যেমন বিভিন্ন ক্লীনার কম্পানীতে জব কিংবা সিটিকর্পোরেশ, বিমান বন্দর কিংবা রাস্তার ক্লিনার। যাদেরকে সে দেশে ইয়োলো পোষাকধারী নামে পরিচিত করা হয়। যদি তাদের সামান্যতমও অক্ষর জ্ঞান থাকতো তবে হয়তো তাদের অন্য কাজ জুটতো।

তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন, বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর আগে নূন্যতম প্রাথমিক শিক্ষাটি নিশ্চিত করা। তবে দেশের যেমন মান বাড়বে তেমনি বাড়বে দেশের রেমিটেন্সও।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File