মাছের মাথা
লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ১০:১৫:৫১ রাত
আমারা চাচাতো-জেঠাতো ভাই-বোন মিলে ১১ জন। সবাই ঢাকা অথবা চট্টগ্রামে বসবাস করছে। গ্রামে কেউ নাই। সময়, সুযোগ মতে সবাই মাঝে মাঝে প্লান করে গ্রামের বাড়িতে যাই। মাঝে মাঝে ২ চার ১০ বছর পরও দেখা হয়।
একবার আমরা প্রায় মাস খানেকের জন্য সবাই গ্রামে ছিলাম। প্রতিদিন খাওয়ার ম্যানুতে ছোট মাছের পাশাপাশি কোন না কোন বড় মাছ থাকবেই। তবে সবার কাছে সবছেয়ে প্রিয় রুই, কাতাল আর ইলিশ।
সব ঠিকঠাক। খেতে গেলে লাগে ভাই বোনদের চুলোচুলি। আমাদের বংশে এতিহ্যগত ভাবে এমনিতেই মেয়ে সন্তান কম। ৮ ভাই আর বোন মাত্র ৩টা। তাই বাপ-চাচাদের সবার কাছে আমাদের ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই বেশি প্রধান্য পায়। অবশ্য মাযেদের কাছে আমাদের ৮ জনের দাম ছিল তোলায় তোলায়।
চার ভাইয়ের বোন যে বোনটি বড়, তার অত্যচারে আমরা সর্বদাই বিরক্ত থাকতাম। অত্যাচার বলতে ঐ খাওয়ার সময়ই। কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে খেলতাম, পড়তাম, বেড়াতম; কিন্তু খেতে গেলে সে সবার আগে তার প্লেটে মাছের মাথাটা নিয়ে নেবে। আর যদি সেদিন ইলিশ মাছ থাকে, তবেতো কথাই নাই! সে সেদিন মাথা এবং আরো একটুকরো পেটের মাছ খাবে। আমরা যতেই কান্না-কাটি করতাম কোন লাভ হত না। এ ক্ষেত্রে মায়েরা অসহায়। কারন বাপ-চাচাদের কড়ো নির্দেশ ছিল, মাছের মাথা ওই পাবে।
আমার মাত্র ৯ দিনের বড় একটা বোন ছিল, একদিন পড়তে বসে তারে গিয়ে বললাম এই আপুযে প্রত্যেকদিন মাছের মাথা খায়, তোর খারাপ লাগে না? তোর কি ইচ্ছে হয় না, মাছের মাথা খেতে?
এই বোনটি অসহায় ভাবে বললো, চাইলেই কি খেতে পারবো? মাছের মাথা আপুর জন্য নির্ধারিত।
আরে ধ্যাত, আপুও মেয়ে, তুইও মেয়ে। সে যা পাবে, তুইওতো তাই পাবি নাকি? দেখলাম অন্যান্য ভাইয়েরা আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছে। তারা বলছেন, তুই শুধু স্ট্রং থাকবি; আমরা তোকে সাপোর্ট দিব। উল্লেখ্য, সেদিন আপু পড়তে আসেনি, পায়ে ব্যাথার চল করে। এটা তার পড়া ফাঁকি দেয়ার অন্যতম বাহন। আর আমরা পড়তাম, ঘর থেকে অনেক দূরে কাঁচারি ঘরে। সো তার এসব জানার কোন সুযোগ নাই।
মনে হচ্ছে, টোপ গিলেছে। পরের বেলায় খেতে গিয়ে দেখলাম, সেও মাছের মাথা দাবী করে বসেছে। আর যায় কোথায়? দু বোনের কান্নকাটি শুরু হয়ে গেল আর আমরাও ছোটটাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিনতো বড় আপুই খায়, একদিন/২ দিন একে দিলে কি হয়। বাপ চাচারাও ভালই গ্যারাকলে পড়লো। ভাগ করে দিতে চাইলে কেউ মানলো না। অবশেষে বলা হল, ছোটটারে দিতে বাধ্য হল। কিন্তু হায়, সে বেলায় বড় আপু আর ভাত খায়নি
এরপর সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে এক বেলা মাছের মাথা বড় জনে আর অন্য বেলায় খাবে ছোট জনে। আমরাও ধারন খুশি। কারন ছোটটা খাওয়া-দাওয়ায় অত এক্সপার্ট না। তাই সে তার মাছের মাথাটি একেক সময় আমাদের একেক ভাইকে দেয় আর আমরা সাবার করি।
বড় বোন কিন্তু তলে তলে ঠিকই বুঝতে ফেরেছে আমাদের ষড়যন্ত্র। সে তার সব শোধ ছোট বোনের উপর কড়ায় গন্ডায় উঠিয়ে নিতে থাকে। যে দিন সে মাথা পেত না, সেদিন সে ছোটটাকে অংক নিয়ে পড়াতে বসতো। সে এমনিতেই অংকে মারাত্মক দুর্বল। তাই মাছের মাথার শোক অংক মোধ্যমে ছোট বোনের চোখের পানি হয়ে বের হত। অবশ্য এরপর থেকে যেদিন তার মাছের মাথা খাওয়ার পালা আসতো, সেদিন আগে ভাগেই অংক গুলো তাকে শিখিয়ে দিতাম। এভাবেই একটা মাস কেটে গেল।
আমাদের বোনগুলোর সংসার এখন খুব সুখের। সেদিন বড় বোনের মেয়েটার সাথে ফোনে কথা বলছিলাম, এক পর্যায়ে ভাগ্নিটা বলল, মামা তোমাদের বোনটা যে কি! একটা দিনও সে আমাদেরকে মাছের মাথা দেয় না বললাম, মামা মেয়েরা শুশুর বাড়িতে গেলে মাছের মাথা খেতে হয়। তুমিও একদিন এভাবে মাছের মাথা খাবে। তাই এখন আপাতত না খাও। এছাড়া আর কিইবা বলার ছিল....?
বিষয়: বিবিধ
৩১১৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন