ওরা ফেলানী নয়, বাংলাদেশের সাথে তামাশা করেছে।

লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:০৩:১১ রাত



ক্ষমা করে দিও বোন আমার

২০১১ সালের জানুয়ারী মাসের কোন এক সময় চট্টগ্রামের কয়েকজন ব্লগার ও শোকার্ত তরুণদের পুলিশের লাঠির ভয়ে রাস্তা থেকে সড়ে দাঁড়াতে হয়েছিল। তারা গিয়েছিল সেদিন চট্টগ্রামের জাকির হোসেন রোডস্থ খুলশী এলাকায় অবস্থিত ব্লাডি সংস্থা বিএসএফ’র দেশ ভারতের হাইকমিশন অফিসের সামনে মানববন্ধন করতে। কিন্তু ভারত প্রিতম পুলিশ সেদিন দাঁড়াতে দেয়নি আমাদের। শোকে মুহ্যমান সকলের ছিল একটাই দাবী, ফেরানী হত্যিার বিচার চাই, বিচার চাই...

শুধু চট্গ্রাম নয়, গোটা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ৭ই জানুয়ারী২০১১ সালে বিএসএফের এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে অগ্নি শর্মা হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের শোকার্ত ও বিক্ষুব্দ মানুষের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিল গোটা পৃথিবীর মানুষেরা। বিশ্বমিডিয়ায় স্থান করে নিয়েছিল আমার বোন ফেলানী। এমন কি ভারতের অনেক বিবেকবান মানুষও এমন বর্বরতার বিরুদ্ধে ফুঁষে উঠেছিল। তারাও দোষি বিএসএফের সদস্যদের বিচারের দাবী তুলেছিলেন।

সীমান্তে প্রতিনিয়ত হত্যাকান্ড সংগঠিত হলেও ফেলানীর হত্যাকাণ্ডটি ছিল হৃদয়বিদারক। কণে সাজে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি আমাদের ফেলানী ভারত থেকে বাবার সাথে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে নিজেদের বসতে আসছিল।

কিন্তু ভারত থেকে আসার পথে অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা ঝুলে ছিলেন। পানি, পানি করতে করতে আমাদের এই বোনটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ঐ কাটাতারেই ঝুলন্ত অবস্থায়।



বর্বর এই হত্যাকাণ্ড এবং লাশ ঝুলে থাকার ছবি সম্বলিত সংবাদ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ হয়। হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি উঠে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে।

শেষমেষ ভারত ঘোষণা দেয়, তারা ফেলানী হত্যার বিচার করবে। সেনাবাহিনীর কোর্টমার্শালের সমতূল্য বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট গঠন করে সেখানে ফেলানী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে বিএসএফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল অমিয় ঘোষকে অভিযুক্ত করে আসামী করা হয়। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বিএসএফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল।

দীর্ঘ আড়াই বছর পর গত আগস্ট মাসের ১৩ তারিখে ফেলানী হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। বিএসএফের গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি কমিউনিকেশনস সি পি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে মোট পাঁচজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত কোর্টে এ বিচার কার্যক্রম চলতে থাকে। মামলার স্বক্ষ্য দিতে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মামা ২ দফা ভারত যান। ফেলানীর পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন

মাত্র ২৪ দিনের মাথায় গতকাল মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। তাতে অভিযুক্ত নিজে খুনের কথা স্বীকার করার পরও আসামী বিএসএফের সদস্য অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দিয়েছে বিএসএফ পরিচালিত আদালত। সবচেয়ে আশ্চার্যজনক বিষয় হল, রায় ঘোষণার পর পরই অমিয় ঘোষকে তার ১৮১ কোম্পানির হাওলায় ছেড়ে দেয়া হয়।



বিয়ের পোষাক নয়, কবরের পোষাক পরেছে আমাদের বোনটি

এমন হতবাক করা রায় শোনার পর ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা হচ্ছিল। সীমান্তের কাঁটাতারে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে দালালসহ ভারতীয় বিএসএফ। আমি এই রায় প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার চাইবো।’

মা জাহানারা বেগম বলেন, ‘এ ধরনের রায় হলে সেটা ঠিক রায় হয়নি। আমি ফাঁসির রায় চেয়েছিলাম। ভারত সরকার রায় নিয়া তামাশা করছে। আমার মেয়ে ন্যায়বিচার পায়নি।’

ফেলানীর মামলার শুনানিতে অংশ নেয়া কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘এই রায়ে ন্যায়বিচার ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। হত্যাকারীর বিচারের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের যে সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল তা তিরোহিত হলো।’



ফেলানীর বাবা-মায়ের এমন করুন চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিইবা করার আছে? তাদের চাওনিতেই ফুটে ওঠছে এই জাতির দুর্ভোগ..

ফেলানী শুধু একটি মেয়ে নয়, সে গোটা বাংলাদেশ। সে ঝুলেনি, বরং ঝুলেছে কাটাতারে বাংলাদেশ। ফেলানী ফোটা ফোটা রক্তে ঝরেনি ঝরেছে বাংলাদেশের মানচিত্রের রক্ত।

ফেলানী হত্যার বিচার আমরা চেয়েছি, যেন তার হত্যাকারির বিচারের মাধ্যমে পাখির চেয়ে করুণ ভাবে আমার দেশের মানুষগুলোকে ঐ জানোয়ারগুলো আর না মারতে পারে। যে খানে একটি পশুর মানবাধিকার রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ বলে কি তার কোন মানবাধিকার থাকতে পারবে না!

ভারতীয় বিএসএফ ফেলানী হত্যার বিচারের নামে তামাশা করেছে, ধোঁকা দিয়েছে। না তারা ফেলানী কিংবা তার বাবা-মায়ের সাথে নয়, বরং ওরা গোটা বাংলাদেশের সাথে এমন প্রতারণ ও তামাশা করেছে। আমরা বিক্ষুব্ধ, আমরা মানতে পারি না এমন ধোকাবাজি।

আমরা বাংলাদেশের মানুষ কখনোই মেনে নেব না, এমন প্রতারণা। ওদের শক্তি আর বুলেটের বিপরীতে আমাদের রয়েছে ১৮ কোটি জনগণের ৩৬ কোটি হাত। আবার আমরা হাতে হাত রাখবো, নামবো রাজপথে। আমাদের বোনটি এমন করুণ মৃত্যুর জন্য দায়ীদের যথাযোগ্য শাস্তির দাবীতে আমরা ঘর থেকে বের হব। ফিরবো না আমরা ন্যায় বিচার ছাড়া। সরকারকে অবশ্যই যেতে হবে জাতি সংঘে, চাইতে হবে বিচার।

চোরে চোরের বিচার কিভাবে করবে? তাই ন্যায় বিচার পেতে হলে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে যেতে হবে।

বিষয়: বিবিধ

২৬৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File