সিবিএফ চট্টগ্রামের বর্ণাঢ্য ঈদ পূনর্মিলনী ও সাগর পাড়ে মানববন্ধন

লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ৩১ আগস্ট, ২০১৩, ০২:১৬:১৪ দুপুর



অংশগ্রহণকারি ব্লগারদের একাংশ।

সবকিছু ঠিকঠাক, এর মাঝে বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্লগার চাটগা থেকে বাহার ভাই কল করে জানালেন; তার চাচা মারা গেছেন। তাকে কিছুক্ষণের মধ্যে সাতকানিয়ায় গ্রামের বাড়ি যেতে হবে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এখন কি হবে? তীরে এসে কি তরী ডুববে? বললাম, ভাই যেভাবেই হোক আপনাকে আগামীকাল সকালে চলে আসতে হবে। উনি বললেন, চেষ্টা করবেন, তবে আমি না আসলেও আপনারা চালিয়ে নেবেন। তারপরও আপনি না থাকলেতো যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হবে না, অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে মাদের আয়োজন সম্পন্ন করতে।

রাত একটায় সব বন্ধ করে যখন শুয়েছি, তার কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মনে হলে, একজন ব্লগারকে টাইম, প্লেস কিছুই জানানো হয়নি! অথচ তিনি গত কয়েকদিন যাবত আমাদের সাথে যোগাযোগ করছেন, অংশগ্রহণের জন্য। উঠে গেলাম, ল্যাপটপ অন করে তার রেজিঃ ফরম থেকে নম্বরটি নিয়ে কল করলাম (মনে ভয় ছিল, না জানি ঘুমিয়ে গেছেন) প্রথমবার ব্যস্ত দেখাল, এরপর বন্ধ। কি করি! অনলাইনে গিয়ে দেখি না, উনি ফেসবুকে আছেন। সব জানানোর পর বললেন, শুক্রবার সারাদিন উনি ব্যস্ত থাকবেন, এটেনড করতে পারবেন না। মন খারাপ হলেও তৃপ্তি ছিল, আমাদের ব্যর্থতার কারনে অন্তত কেউ বঞ্চিত হলেন না।

যাত্রায় বৃষ্টি, অতপরঃ

সকালে প্রথমেই বাহার ভাইকে কল দিলে উনি জানালেন, তিন ফজর পড়েই রওয়ান হয়েছেন। কিছুক্ষণের ভেতর শহরে পৌঁছে যাবেন। আর কে ঠেকায়? একে একে সবাইকে কল দিয়ে ৯টার ভেতর বহদ্দার হাট আসতে বলে তাগাদা দিলাম। হঠাৎ বাহিরে তাকিয়ে দেখি মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। মনে দুশ্চিন্তার কাল মেঘ জমা হলেও কয়েকজন ফোন করলে যথা সময়ে চলে আসতে বললাম। এর মাঝে জানতে পারলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লগার প্রফেসর মোজাম্মেল হক স্যার, অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহেদ, প্রফেসর আমিনুল হক আসবেন না। হতাশ হয়েও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, আমরা করবোই আজকের অনুষ্ঠান।

যাত্রা হল শুরুঃ

ঢাকা থেকে আসা ব্লগার ওহিদুল ইসলাম ও ব্লগার নেহায়েৎ ভাইকে রিসিভ করে যখন বহদ্দারহাটে পৌঁছলাম, তখন জনা কয়েক মানুষের মনে সাজসাজ রব। উদ্বেল আনন্দের এক স্নিগ্ধ আভা সবার মুখে বয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা ব্যতিত এটি অন্য কারো অনুভব ক্ষমতা নেই।



একে একে এসে উপস্থিত হলেন, ব্লগার আমার স্বাধীনতা, ব্লগার ফারায়েজী মুনসী, ব্লগার লড়াকু সৈনিক, ব্লগার সাইফুল ইসলাম ইদগাঁ, ব্লগার মিষ্টি ভাই, ব্লগার নজরুল ইসলাম, ব্লগার ইজিপ্ট১২, ব্লাগর আক্তার হোসেন, ব্লাগর আহমদ মুসা, ব্লাগর সংগ্রামী আমিসহ আরো কয়েকজন। বাকি যারা আছেন, তাদের বিভিন্ন যায়গা থেকে আমাদের গাড়িতে উঠেয়ে নেব। কিছুক্ষণ পরে বাহার ভাই আসলে সবাই মিলে গাড়িতে উঠলাম। তবে যাই বলুন, গাড়ি ভাড়া, খাওয়ার দামসহ সব কিছু যেন আমরা ব্লগার তাই আমাদের বাজেটের ছেয়ে কিছু কমে পেয়ে যাচ্ছিলাম। এর মধ্যে বৃষ্টিও আমাদেরকে রৌদের হাতে সোপে দিয়ে চলে গেছে।

চলছে গাড়ি সী-বীচে...



ব্লগার আহমদ মুসা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের গাড়িকে।

সাড়ে ৯ টায় গাড়ি রওয়ানা দিল পতেঙ্গার উদ্দেশ্যে। শুরু হল এক আনন্দক্ষণ মূহুর্তের। গান কৌতুক, কবিতা, হাসি-আনন্দের মাঝে পথে পথে ব্লগারদের গাড়িতে উঠানোর মধ্যেই কেটে গেলে এক আনন্দ প্রহর। সবাই কিছু না কিছু ফারফর্ম করছেন। ব্লগার ইজিপ্ট১২ ও মামুনুর রশীদের গান, ব্লগার আহমদ মুসার আমি একটাই জানি যে, আমি কিছুই জানি না তত্ত্ব, ব্লগার সিকদারের অভিজ্ঞতার ঝুড়িসহ কৌতুক মনে প্রাণে সকলকে আলোড়িত করে তুলেছে। এর মাঝে কখন যে, আমরা পৌঁছে গেছি টেরই পেলাম না।



গাড়িতে ব্যস্ত সবাই হৈহুল্লর আর আনন্দে

মূল অনুষ্ঠানঃ

ব্লগার আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজের বাসা পতেঙ্গা এলাকায়। তার সহযোগীতায় সৈকত পাড়ে মনোরম পরিবেশে আমরা ঈদ পূনর্মিলনী অনুষ্ঠান করার চমৎকার একটি প্লেস পেয়ে গেছি।



এগিয়ে চলছে আমাদের ছোট্ট টীমটি

সেখানে গিয়ে সবাই প্রথমে হালকা নাস্তার পর মূল অনুষ্ঠান শুরু হল। সবাই পারস্পারিক পরিচয়, ঈদ স্মৃতি এসব করতেই জুমার নামাজের সময় হয়ে গেল, তাই ১ম পর্বের সূচী এখানেই শেষ হল।



চলছে ঈদ পূনর্মিলনীর প্রথম পর্ব

সবাই সামান্য ঘুরাফেরা করে নামাজ পড়তে সাগর পারের ছোট একটি মসজিদে এলাম। অযু করতে গিয়ে প্রথমে মুখে পানি দেয়ার পর সবারই একটা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সাগর পারে, তাই এটি স্বাভাবিক। কৌতুক করে বললাম, ভাই যাদের পেটে সমস্যা আছে, খেয়ে নিতে পারেন। এটি প্রাকৃতিক ওরস্যালাইন।

পেটে প্রচন্ড ক্ষুদা। এর মাঝে ইমাম সাহেবের ওয়াজ যেন কিছুতেই থামছে না! নিজ এলাকার মসজিদে যেখানে সোয়া একটাই নামাজ শুরু হয়, সেখানে এই ব্যাটা পৌনে দু’টায় শুরু করলেন, খুতবা!!! সম্ভবত হুজুর বাসা থেকে নামাজের আগেই খেয়ে এসেছেন। নামাজ শেষে ব্লগার নেহায়েত ভাই বের হয়ে বললেন, ভাই কি ওয়াজ করলো এসব? একজন হেসে বলল, ভাই এসব চট্টগ্রামের ওয়াজ, আপনি বুঝবেন না Big Grin

নামাজ শেষে সাগর পাড়ে খোলা যায়গায় চেয়ার টেবিলে বসে পড়লাম। ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জাড়ি থাকায় সাগরের উত্তাল ঢেউ প্রায় তীরে এসে আচরে পড়ছে। একপাশে উত্তাল সীন্ধু অন্য পাশে সবুজে ঘেড়া অরণ্য। গায়ে বাতাসের মায়াবী পরশ সবাইকে করেছে আত্ম ভোলা। এর মাঝে আবার সু-খাদ্য পরিবেশন। আহ! মনকে করেছে সম্পূর্ণই উতালা।

৬ দফা প্রস্তাবঃ



এক পাশে বঙ্গোপসাগর আর অন্যপাশে মনোরম সবুজ প্রকৃতি। কি অপূর্ব দৃশ্য

খাওয়ার পর ঈদ পূণর্মিলনীর মূল কার্যক্রম শুরু হয়। এতে সকল ব্লগারই ‘কমিউনিটি ব্লাগারস ফোরাম’ সিবিএফকে নিয়ে তার নিজস্ব চিন্তা ও স্বপ্নের বোনা জাল এখানে ব্যক্ত করেন। অনেকে ব্লগিং এর মজার স্মৃতিও শেয়ার করেন। ঈদ পূনর্মিলনীতে বারবার উঠে আসে বন্ধ হয়ে যাওয়া সোনার বাংলাদেশ ব্লগের কথা।



বাপকা ব্যাট, সিপাহী কা ঘোড়া। ব্লগার চাটিগাঁ থেকে বাহার ভাইয়ের ছেলে, একজন ভবিষ্যত ব্লগার। মিশরীয়দের রক্তপাতের বিরোধী শান্তিপ্রিয় আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে।।

সিবিএফ কোন রাজনৈতিক দল নয়। সিবিএফ বাংলাদেশের মানুষকে তার স্বাধীনতার প্রকৃত নির্যাস পেতে সহযোগীতা করছে। দেশপ্রেমে উজ্জিবীত সিবিএফ দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সবার আগে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ে এর পথচলা শুরু।



ঈদপূনর্মিলনীর শেষ দিকে চট্টগ্রাম বিভাগের আহ্বায়ক ব্লগার চাটিগা থেকে বাহার ভাই সিবিএফের ছয় দফা প্রস্তাব উত্থাপন করলে সকল ব্লগার তাতে সায় দেন।

১. চট্টগ্রাম বহদ্দার হাট ফ্লাইওভার অতিসত্তর উদ্বোধন করার ব্যবস্থা করা । সেই সাথে কদমতলী ফ্লাইওভার সহ অন্যন্য ফ্লাইওভার ও ফুটওভার ব্রীজ সমূহের কাজ ত্বরান্বীত করা ।

২. চট্টগ্রাম শহরের অসমাপ্ত অবহেলিত রাস্তা সমূহের মেরামত ও সংস্কার কাজ অতিসত্বর সমাপ্ত করা এবং মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া ।

৩. ঢাকা চট্টগ্রাম এশিয়ান হাইওয়ে রোডকে ৪ লাইন উন্নীত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া।

৪. এসবি ও আমার বর্ণমালা ব্লগসহ সকল বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া এবং গ্রেফতারকৃত আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান শুভ্র, এসবি মডারেটর মোহায়মেনসহ সকল মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে মুক্তি দেয়া।

৫. চট্টগ্রামের জন্য আল্লাহর দেয়া উপহার পতেঙ্গা সমূদ্র সৈকতকে আধুনিক মানে উন্নীত করে । দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বীচকে সন্ত্রাস ও মাদক মুক্ত করে ছেলেমেয়েসহ স্ব-পরিবারে ভ্রমন নিচ্চিত করা ।

৬. ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার স্বার্থে ইন্টারনেটের দাম কমানো এবং বিদ্যু-গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট থ্রী-জির দ্রুত সম্প্রসারণ করা ।



মিশরের অসহায় মানুষগুলোকে কিন্তু আমরা সমর্থন জানাই

সেখানে দিন শেষে পড়ন্ত বিকেলের মানব বন্ধনঃ



পেছনে বঙ্গোপসাগরের বুক জুড়ে অথৈ পানি। এতে নেই কোন দ্বন্ধ-সংঘাত-সংঘর্ষ। আছে বিশালতা। আছে গভীরতা। এযে আমার দেশের অর্থনৈতির অন্যতম মূল চালিকা শক্তি। কিন্ত তাই বলে কি তার হিংস্রতা আর নির্মমতা হারিয়ে গেছে? প্রয়োজনে সে অবশ্যই ছোবল মেরে ধ্বংস করে দেবে তার আশপাশের যত আগাছা।

হুম, বাংলার মানুষও এমন শান্ত,শিষ্ট আর ভদ্র। তাই বলে দাবী আদায়ে সে যে সাগরের মত সর্বগ্রাসী হতে পারে তার প্রমাণ আজ “কমিউনিটি ব্লগারস ফোরাম’” চট্টগ্রামের উদ্যোগে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র সেক্রেটারী আদিলুর রহমান খানের মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

ব্লগারদের মানব বন্ধনে অংশগ্রহণ করেছে, সাগর কুলে ঘুরতে আসা অসংখ্য মানুষ। ব্লগাররা জাতির বিবেক, তাইতো জাতির বিবেকের কর্মসূচীতে তারাও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।



এই তুফান ভারি দিতে হবে পাড়ি. হাকিয়াছে ভবিষ্যত। সিবিএফ অনেক দূঢ় এগিয়ে যাক..........

বিষয়: বিবিধ

৩৯১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File