আব্দুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রাম বিএনপি'র সবচেয়ে অজনপ্রিয় নেতা
লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ১০ জুলাই, ২০১৩, ১০:১০:৫৩ রাত
যদিও বিএনপিকে বলা হয়, নোয়াখালি সমিতি। কিন্তু বিএনপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চট্টগ্রাম, এটাতে সন্দহের কোন সুযোগ নেই! আজ সূর্যোদয়ের মত এটি খাটি। সেইদিন 'আমার ফাঁসি চাই' বইতে পড়লাম আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কে ঘৃণা করেন কারণ এই বাহিনীর লোকজন তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হত্যা করেছে বলছিলাম বিএপির কথা! আমার ফাঁসি চাই বইয়ের কথা নিয়ে রাজনীতির সুযোগ নিচ্ছি না, বরং এটি অন্য কারো ক্ষেত্রে ঘটলে তিনি হয়তো এর চাইতে আরো বেশী কঠোর হত!
বিএনপি'র চট্টগ্রাম গুরুত্ব হলেও এই চট্টগ্রামেই কিন্তু এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিসংশ্ব ভাবে হত্যা করেছিল দুবৃত্তরা। কিন্তু তবুও দলটির কাছে এই নগরী অত্যাধিক জনপ্রিয়, কারন তারা এখান থেকেই প্রেরণা লাভ করে, আন্দোলন সংগ্রামে যে এই জেলার জুরি নেই এটা তারা বুঝতে পেরেছিল। তারা জানে
বিপ্লবী চট্টলা/বিদ্রোহী চট্টলা/কারো কাছে কোন দিন মাথা নত করে না এটি সম্ভবত কোন কবিতা,
এর প্রমাণ অবশ্য তারা রেখেছে, গত জোট সরকারের আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে ৮/৯ জন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন (যার মধ্যে মহানগরীর আছে ৩ জন- বাণিজ্য, পররাষ্ট্র, মৎস), যেখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ৩ জন(যার মধ্যে মহানগরীর আছে ১ জন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা)। বর্তমানে চট্টগ্রামের নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে রয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন- সালাউদ্দিন কাদের চৌ., আব্দুল্লাহ আল-নোমান, মীর নাসির, আমীর খসরুসহ অনেকেই। এসব নেতার চট্টগ্রামে এতটাই প্রভাবশালী যে এদের রয়েছে এক একটি বিশাল সমর্থক বাহিনী। যদিও এসব বাহিনী দলের উকারের চাইতে অপকারই বেশি করে থাকে। এদের আবার আলাদা আলাদা নামও আছে যেমন, সাকা গ্রুপ, নাসির গ্রুপ, খসরু গ্রুপ..............
বিএনপি'র এত নেতা এত গ্রুপের মধ্যে সবথেকে আলোচিত-সমালিচিত হয় যে নামটি সেটা হল বিএনপির কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক নগর সভাপতি আব্দল্লাহ আল নোমান। বাংলাদেশের যে কয়টি জেলায় বিএনপির অন্তকোন্দল লাগাম ছাড়িয়ে গেছে, তার মধ্যে চট্টগ্রামকে অবশ্যই সামনের কাতারে রাখতে হবে, আর এই কোন্দলের অন্যতম পরাশক্তি বা ভিলেন হচ্ছেন আব্দুল্লাহ আল নোমান।
২০০৯ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর চট্টগ্রামের নগর কমিটি গঠন সংক্রান্ত সভায় অনেক কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে হঠাৎ করে তার নেতেৃত্বের গ্রুপের সৃষ্ট মারামারিতে পণ্ড হয়ে যায় সে সভা। যদিও সেখানে উপস্থিত দলটির নেতা হান্নান শাহ তাৎক্ষিনিক এবং পরে মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার এর জন্য সরকারকে দায়ি করেছিলেন। কিন্তু এরপরও ঐ কমিটি নিয়ে একাধিক সংঘর্ষ হয়েছিল নোমানের সমর্থকদের সাথে নগর বিএনপি কর্মীদের। এই সংঘর্ষের মূল কারণ ছিল তার পছন্দের লোকজনকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা বিশেষ করে লএম নাজিম উদ্দিনের নামক একজনকে সহাসভাপতির প্রস্তাব করা হয় তার পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রামে নোমান-মীর নাছিরের অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা কারো অজানা নয়। এটি এখন নতুন করে নোমান-খসরুর অন্তর্দ্বন্দ্বে রুপে নিয়েছে । বর্তমানে এই দুইজনকে ঘিরে নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভক্ত। গতবছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী যুবদলের বিভাগীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দু’গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনাও ঘটে। একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটে রমজানে ইফতার মাহফিলে। এখনও দলীয় অনেক সভায় এর প্রকাশ্য রুপ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর সংঘর্ষে সাধারণ ঘটনা। বর্তমানে দুইজন নিজের মত করে দলীয় কর্মসূচি পালন করে।
গত তত্ত্ববধায়ক সরকারর সময় যখন নেতাদেরকে ধরে জেলে পুরা হচ্ছেছিল, তখন এই নেতা পালিয়ে চলে যান সিঙ্গাপুরে, সেখানে গিয়ে কিন্তু তিনি চুপ ছিলেন না। সেখানে থেকে তিনি সার্বক্ষনিক যোগাযো করতেন দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও তার মত সংস্কার পন্থিদের সাথে। এটি দলের চেয়ারপার্সনের কাছে অজানা ছিল না। তাই তার সংস্কার পন্থী মনভাব ও কমিটি গঠন সংক্রান্ত সভাসহ একাধিক সভায় দলীয় বিশৃংখলার কারনে খালেদা জিয়া প্রথমে তাকে কমিটিতে রাখেননি। শোনা যায় পরে নোমান লন্ডেনে চিকিৎসাধিন পার্টির ভবিষ্যত কান্ডারীর সাথে দেখা করে এলে পরে তাকে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ দেয়া হয়।
এত গেল দলের অভ্যন্তরিন বিষয়, এবার আসি বাহিরের রাজনীতিতে
চট্টগ্রামে বিএনপির যে কয়জন নেতা সন্ত্রাসের লালন-পালন করেন তার মধ্যে আব্দুল্লাহ আল নোমান সর্বাগ্রে।লালসালুর এই লেখাটি আপনাদের অনেক খোরাক জুটাবে, তাই একটু কষ্ট করে পড়ে নিন চট্টগ্রামের ছাত্রদলে অবস্থা। বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক ও পাহাড়তলী কলেজ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানেই রাজনীতি শুরু করার চেষ্টা করে ( এখন কোথাও ছাত্রদল নেই, ক্ষমতায় এলও এই তিনটি ছাড়া আর গুলোতে রাজনীতি করার মত কর্মী থাকে না।) আর তখনই শুরু হয় মারামারি-কাটাকাটি। এসব মারা-মারি কাটাকটির নেতৃত্ব ও ইন্ধন দেয় এই নেতা।
এই নেতা গত জাতীয় নির্বাচনে তার নিজ নির্বাচনী আসন চট্টগ্রাম-৮ (কোতোয়ালি-পাঁচলাইশ) আসনটি দুই কোটি টাকা (লোকে বলে পরিমাণ নাকি আরো বেশি!) দিয়ে শিল্পপতি ও সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা শামসুল আলমের কাছে বিক্রি করে ৯ আসনে প্রতিদ্ধন্ধিতা করে বর্তমান গণশিক্ষা মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিনের সাথে ১০ হাজার ভোটের মত ব্যবধানে হেরে যান। অথচ এই আসনটি সব সময়ই বিএনপি'র জন্য নির্ধারিত ছিল বলা ছলে।
তার এ আসনের হারার মূলকারণ গুযলোর একটি হচ্ছে, দীর্ঘদিন এই আসেনে (সীমানা পূননির্ধারনের আগ পর্যন্ত আসন ন! ৮) এমপি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি মোটামুটি (বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং মুক্ত, ক্লীন ইমেজের নেতা) সবাইকে নিয়েই কাজ করে বারবার আফসারুল আমিনকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ নোমান এখানে প্রতিধ্বন্দিতা করতে এসেই দলে শুরু করেছেন বিভাজন! খুলশী থানার ভূমি দস্যু হিসেবে পরিচিত একসময়কার ডাকাত স্বেচ্ছাসেবক দলের চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক তোতনকে সামনের সাড়িতে এনে বসান। খুলশী থানার বিএনপি নেতা স্বপন, সাত্তার প্রমুখ নেতাকে এসময় স্টেইজে পর্যন্ত উঠতে দেয়নি। মিটিং শেষে তোতন তাদেরকে একজন সাধারণ সমর্থকের মত জিলাপি পরটা খেতে দেয়! যা তাদের জন্য চরম অবমাননাকর ছিল। খুলশী থানা বিএনপি মূলত এদের নেতৃত্বেই চলে, তাই তাদের অপমানে প্রশে উঠে তৃণমীল নেতাকর্মীরা। আর তাতেই যা হওয়ার তাই হল, নোমান নির্বাচনে হেরে গেল।
আশাকরা যায়, নোমান আগামী নির্বাচনও একই আসন থেকে করবেন। কিন্তু যেভাবে চলছে, সেভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তাঁকে এমপি হওয়ার খায়েশ আজীবনের জন্য পরিত্যাগ করতে হবে। প্রায় লাক্ষাধিক ভোটার অবস্থান করে খুলশী থানাধীন এলাকায়। কিন্তু এই এলাকায় রেলওয়ের জায়গা দখল, ভূমি দস্যুতা (এমনও আছে এক জায়াগা একাধিকবার বিক্রয় পর্যন্ত করা হয়েছে), সন্ত্রসী তোতনকে তিনি যেভাবে লালন-পালন করে আসছেন তাতে এই এলাকার জনগণ ক্রমেই ক্ষেপে উঠছেন।
তাই তাকে যদি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হয় এবং এমপি নির্বাচিত হতে চান, তাহলে তাকে দলীয় আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে গ্রুপিং, দলবাজি, সন্ত্রাসী মদদ দান বন্ধ করে এবং দলীয় ঐক্য গঠনে এগিয়ে আসতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন