আ.লীগ নিজের নাক কেটে জামাতকে লালন করছে

লিখেছেন লিখেছেন আজব মানুষ ০৫ জুন, ২০১৩, ০৫:১৬:১৮ বিকাল

২০০৫ সাল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডের কমিশনার (কাউন্সিলর) নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিল এক পরিচিত জন। একেতো বাড়ি লক্ষ্মীপুরের পাশাপাশি দুই ইউনিয়নে, তার ওপর তার পরিবারের সাথে আমার পরিবারের আত্মীক সম্পর্ক ছিল। তাই বারবার আমন্ত্রণের ফলে শেষ ৩/৪দিন তার জন্য ভোট চাইতে গিয়েছিলাম মানুষের ধারে।

ঐ নির্বাচনে সেই ওয়ার্ড থেকে আ.লীগ থেকে একজন, বিএনপি থেকে ২ জন আর আমার পরিচিত ব্যক্তিসহ মোট ৫ জন প্রতিধ্বন্দ্বিতা করে। আমি প্রথমে তার প্রতিদ্বন্দিতার বিরোধী থাকলেও যেহেতু বিএনপি’র কাউকে মানানো যায়নি সেহেতু অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার ক্যাম্পেইন করেছিলাম(ওখানে আমি তেমন ফ্যাক্টর ছিলাম না, অপরিচিত এলাকা)।

একদিন এক বস্তি এলাকায় গিয়েছিলাম, সাথে আরো কয়েকজন। সেখানের লোকদের কাছে তার জন্য ভোট চাইলে তারা জানতে চায় তিনি কি করেন? বলা হল ব্যবসা করেন।

আরে না, এই লোক কোন পার্টি করে?

উনি জামাত করে।

জামাত হেইডা আবার কি?

শিবির চেনেন? ইনি শিবির করে?

শিবির!!!(একজন আরেক জনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে, যেন তারা আকাশ থেকে পড়ল)

তখন এক ছোড়কা বলে উঠলো, আরে এইটা হুজুরদের দল। ইনি হুজুর, দেখেন মুখে দাড়ি আছে.....।

(মনে মনে হাসলাম, এমন এক দল করে, যেটাকে সাধারণ মানুষজন চেনেও না Big Grin)

ফিরে এসে তাকে বললাম, কি দরকার ছিল; এই নির্বাচন-টির্বাচন করার? তার চেয়ে বরং বিএনপির পার্থিকে সমর্থন দিয়ে আগামীবার আপনি দাঁড়াতেন [বিএনপি’র মূল প্রার্থী চেয়েছে, সে এবার বিএনপিকে ছেড়ে দিক, তাহলে আগামীবার (২০১০) তাকে বিএনপি ছেড়ে দিবে] বেচারা একটা হাসি দিয়ে চুপ মেরে থাকলো।

কিছুক্ষণ পর রাত ১২ টার দিকে যখন খেতে বসলাম, একজন কানে কানে কিছু বললে তিনি উঠে গিয়ে দেখলাম আরেকজন লোককে নিয়ে এসে খেতে বসিয়ে দিয়েছে। আমার সাথে যখন পরিচয় করিয়ে দেয় তখন রীতিমত আমি টাষ্কিত! এই লোক হচ্ছে আ.লীগের প্রার্থী!!!



খাওয়া-দাওয়া শেষে ঐ আ.লীগ নেতা বলে গেল ছোট ভাই, তুমি কিছুতেই মেনে নিওনা। কারন এইবার বিএনপি কমিশনার হলে আগামীবার তোমাকে তারা কিছুতেই ছাড় দিবে না। অথচ তুমি দেখ নিও, আগামীবারে আমি নিজে তোমার জন্য নির্বাচনে খাটবো এবং তোমাকে বিজয়ী করবো......

পরের দিন দেখলাম প্রথম আলোতে ওয়ার্ড পরিক্রমায়, ৩ প্রার্থীর সাক্ষাতকারে আ.লীগ বলছে মূল প্রতিদ্বন্দি জামাতের প্রার্থী, আর জামাতের প্রার্থীএ্ বলছে তার মূল প্রতিদ্বন্দি আ.লীগের প্রার্থী


নির্বাচনের ফল; আ.লীগ নেতা ১ম, বিএনপি ২য় এবং আমি যার জন্য কাজ করলাম সেই জামাত নেত ৩য়। ২য় এবং তৃতীয়’র মধ্যে প্রার্থক্য প্রায় দুই হাজার আর প্রথম ও ২য়’র মধ্যে ব্যবাধান ছিল মাত্র ৫ শয়ের মত।

>>>>>>>>>>>>>

আবার পাঁচ বছর পর। এইবার নিজে ইচ্ছে করে আগের সেই এলাকায় গেলাম। তার নাম বলে ভোট চাইতেই পর যা বল্ল তাতে রীতিমত অবাক!

আরে ভাই আপনারা কেন কষ্ট করে আসলেন? এইবার ভোট আমরা জামতরে দিমু। গতবার ভুল করেছি এইবার আর হেই ভুল কর্মু না............আমিতো পুরো ছানাবারা!!!!!

এইবারও প্রার্থী প্রায় একই, শুধু বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আ.লীগের ঐ নেতা মোটেও তার কথা রাখেনি। সে এইবারও নির্বাচনে দাড়িয়ে তৃতীয়বারের মত কাউন্সিলর হতে চাচ্ছে।

ফলাফল হল, জামাতের প্রার্থীর কাছে আ.লীগের সেই নেতা যে কিনা একসময় মহিউদ্দিনের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বও পালন করেছে, সে লজ্জাজনক ভাবে হেরেছে।

জামাতের এই নেতা ২৭ হাজার কাস্ট হওয়া ভোটের মধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছে।

যা বোঝা গেল, ২০০৫ সালের নির্বাচনে আ.লীগ নিজ প্রয়োজনে জামাতকে ব্যবহার করতে গিয়ে পাঁচ বছরের মাথায় সেই জামাতের বিষাক্ত ছোবলে তার পতন হয়েছে। বর্তমান অবস্থা দিষ্টে সেটাই মনে হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে যাত্রাপাল মঞ্চায়ন করে মূলত জামাদে বিষ দাঁতে শানই দেয়া হচ্ছে। তারা ভাবছে, জামাতকে চাপে রেখে বিএনপিকে একপাশে রেখে আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবে।এরমধ্যেই বিএনপি’র কফিনে শেষ পেরেক ঠোঁকা হয়ে যাবে......!

তাই আ.লীগের জন্য উপরের ঘটনাকে শিক্ষার জন্য তুলে দিলাম

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File