মাইনাস টু এবং তৃতীয় শক্তির উত্থানের পথেই কি হাঁটছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন লিখেছেন অন্যনয়ন ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:১৮:১৯ সকাল



আগেই বলে রাখি এগুলো আমার একান্ত ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ। মতামতের ভিন্নতা, আপনার বিশ্বাস অবিশ্বাস সবই সসম্মানে সাধুবাদ জানাই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন এক অবস্থার অবতারণা হয়েছে যে, কেউই বলতে পারছেন না, আসলে কি হতে যাচ্ছে। প্রথম সারির নেতা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতা, কেউই বলতে পারছেন না, দু দিন পরে কি হবে। আবার একটার পর একটা ঘটনা কিন্তু ঠিকই ঘটে যাচ্ছে। ঘটে যাওয়ার পর আমরা কিন্তু সহজেই বুঝে ফেলছি যে "এমনটাই হওয়ার কথা ছিল"| এরকম অবস্থার একটাই যথার্থ ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা হতে পারে, সেটা হল, অবশ্যই পরিস্থিতির ঘটনা পরিক্রমা একটি সুনির্দিষ্ট প্ল্যানের আওতায় এগুচ্ছে। এবং দেশ ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে সেটা কারই ধারণায় না থাকার সবচেয়ে যথার্থ ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, বাংলাদেশের কোনও এজেন্সিই টোটাল প্ল্যানটা সম্পর্কে অবগত নয়। যে এজেন্সির যতটুকু দায়িত্ব সে ততটুকুই জানতে পারছে। সে ভাবেই প্রতিটি এজেন্সি কাজ করে যাচ্ছে। পলিটিকাল এজেন্সি গুলো তাদের ছকের ঠিক ঠিক কাজ গুলোই করছেন, তারা চার পাশে কি কি প্রভাব পড়ছে তার তোয়াক্কাই করছেন না। সামরিক ও আধা সামরিক এজেন্সি গুলো একইভাবে তাদের ছকের কাজ গুলো একটার পর একটা করেই যাচ্ছে। বিদেশি এজেন্সিগুলোও একই ধাঁচে এগুচ্ছে। কিন্তু কেউই ঠিক বলতে পারছেনা, এর শেষ কোথায়, কিসে মুক্তি, কোথায় গিয়ে থামবে প্রিয় বাংলাদেশ। আমরাও বলতে পারছিনা আসলে আমাদের কি পরিণতি হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি ইন্ডিভিজুয়াল এজেন্সির এক্সিকিউটেড টাস্ক যদি আপনি একত্রে দেখেন তাহলে দেখবেন ঘটনার গতি-প্রকৃতি একটা দিকেই ধাবিত হচ্ছে। এরকম একটা অবস্থায় আমি যদি ধরে নেই, যে প্ল্যানটা ধরেই পর পর ঘটনা গুলো ঘটছে সেই প্ল্যানটা দেশিয় এজেন্সির বাইরে অন্যকোনও পক্ষের তৈরি করা তাহলে কি আমার ভাবনাটা খুব একটা অযৌক্তিক হবে?

এবার বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক ফ্যাক্ট ধরে নেয়া যাক। দেশের শক্তিশালী তিন রাজনৈতিক দলের মধ্যে নিঃসন্দেহে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জামায়াত থাকবে। এর মধ্যে জামায়াত অবধারিত ভাবে তৃতীয় হলেও প্রথম ও ২য় স্থান নিয়ে হালকা বিতর্ক হতেই পারে। দল হিসেবে আওয়ামীলীগে মোটা দাগে সবাই সেকুলার হলেও আরেকটা হাইলাইটেড অংশ হল বাম আদর্শে বিশ্বাসী উচ্চপদস্থ নেতারা। বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। তাদের নেতৃত্বের মধ্যেও বাম পন্থিদের বেশ শক্ত অবস্থান আছে। আর জামায়াতের নেতৃত্বকে যদি আপনি দু ভাগে দেখতে চান তাইলে পাবেন প্রো-ইসলামিষ্ট ও লিবারেল ইসলামিষ্ট।

এবার আসুন মাইনাস টু ও তৃতীয় শক্তির কিছু দিক মগজে নেয়া যাক। এ দুটি ধারণাই মূলত এক এগারোর সামরিক সমর্থিত সরকারের সময়ে জন্ম নিয়েছে। সুতরাং এর সাথে সেনাবাহিনীর একটা নিবিড় সম্পর্ক পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তৃতীয় শক্তির দুইটা ইন্টারফেসই হতে পারে, একটা সামরিক আরেকটা রাজনৈতিক। এবং আমার বিশ্বাস দিন শেষে চূড়ান্ত ভাবে রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তিই আমাদের সামনে চমক হয়ে আসবে। সেই সাথে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঠিক পেছনে আওয়ামীলীগের হাত আছে বলে মনে করা হলেও সে ঘটনার আরেকটু পেছনে গেলে হয়ত দেখবেন তৃতীয় শক্তির উত্থানে ব্যাপারে যারা দ্বিমত পোষণ করেছিলো তাদেরকে হত্যা করতেই বিডিআর নাটক সাজানো হয়েছিলো। এখানে শেখ হাসিনার ক্ষোভ ও তৃতীয় শক্তির প্রবক্তাদের প্লট মিলে মিশে একাকার বলেই আমার কাছে মনে হয়।

অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন যে মাইনাস টু ফর্মুলা যেহেতু ফখরুল-মইন গঙের আমলে বাস্তবায়ন হয়নি সেহেতু সে প্ল্যান বাতিল হয়ে গেছে এবং আরেকটি সেনা-সমর্থিত সরকার না এলে মাইনাস টু এর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু আমি হলপ করে বলতে পারি যে মাইনাস টু ফর্মুলা সে সময়ে আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল এবং এই ফর্মুলা সে সময়ে বাস্তবায়নের কোন ইচ্ছাই তাদের ছিল না। কেন ছিলনা তা পরে বলছি তার আগে কেন এই ধারনাটা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো তা আগে দেখা যাক। আমি মনে করি এই ফর্মুলাটা ছড়িয়ে দিয়ে কিছু সেন্সিটিভিটি এনালাইসিস করা হয়েছিল। দুই নেত্রীর অপসারণে জনগণ, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়া, সম্ভাব্য পরিণতি আঁচ করা ও এই ফর্মুলার Pros & Cons যাচাই করে দেখার জন্য এটা জরুরি ছিল।

সে সময়ে কোন যুক্তিতেই মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের সঠিক সময় ছিল না। কারণ মাইনাস টু বাস্তবায়নের আগে জামায়াত একটা বিরাট মাথাব্যথা। চিন্তা করে দেখুন, হাসিনা ও খালেদা কে যেকোনো উপায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে অপসারণ বিএনপি ও আওয়ামীলীগে ব্যাপক ভাঙ্গন সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা রাখে। সে ক্ষেত্রে তৃতীয় প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জামায়াত সামনের সারিতে অবধারিত ভাবেই চলে আসে। এটা আরও নিশ্চিত পরিণতি হয়ে যায় যখন আপনাকে রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে, এ ব্যাপারটা একটু পরের দিকে আলোচনা করবো। সুতরাং বুঝা গেল মাইনাস টু ফর্মুলা কিছুতেই সাত বছর আগের জন্য তৈরি হয়নি বরং এটা তৈরি হয়েছে সে সময় থেকে অন্তত দশ থেকে পনের বছর পরের জন্য।

সুতরাং মাইনাস টু এর আগে জামায়াত নিধন অপরিহার্য, তা না হলে রাজনৈতিক তৃতীয় শক্তির উত্থান সুনিশ্চিত হচ্ছে না। আমি মনে করি এখন এ কাজটিই প্রায় শেষের পর্যায়ে রয়েছে। আর ছয় মাস নাগাদ ব্যক্তি জামাত-শিবির দেখতে পেলেও সংগঠন হিসেবে জামায়াত-শিবির খুঁজে পাবেন বলে মনে হয় না। এর পর মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নে আর বাধা থাকে না। মাইনাস টু বাস্তবায়ন হলে আঁচ করা যায় যে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ বিভক্ত হবে। দুটি দলেরই ডান পন্থি নেতারা বিক্ষিপ্ত হয়ে এদিক সেদিক চলে গেলেও দুই দলের বাম পন্থি ও দুই জোটের সাথে থাকা বাম পন্থিদের সমন্বয়ে একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হতে পারে। এক্সিষ্টিং বিএনপি ও আওয়ামীলীগের বাম পন্থি নেতারা পর্যাপ্ত প্রভাবশালী আছেন, তাদের সাথে অন্যান্য বাম দল যোগ দিলে সেটি একটি প্রভাবশালী শক্তি হয়ে উঠবে বলেই বিশ্বাস করি। তাছাড়া প্রশাসনের পদে পদে বাম ঘরানার লোকদের অবস্থান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকায় এরকম একটি রাজনৈতিক শক্তির দেশ চালাতে অসুবিধা না হওয়ারই কথা।

প্রধানমন্ত্রীকে কি বলতে হবে তা ইনু ঠিক করে দিচ্ছেন, যা ইনুদের প্রভাব ও সরকারে তাদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে। জাসদ নিয়ে চরম অবমাননাকর মন্তব্য স্বত্বেও বিন্দুমাত্র মাইন্ড না করে জাসদ নেতা প্রাণ খুলে ক্রুর হাসি হাসছেন যা ইনুদের ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনাকেই নির্দেশ করে। প্রধানমন্ত্রী বড় বড় কম্যুনিস্টদেরকে নিজের পকেটে নিয়ে নেয়ার কথা বলছেন। ইনু নতুন সরকারের প্রধান কাজ হিসেবে জঙ্গি দমনের কথা বলেছেন, আর জঙ্গি বলতে তারা আল-কায়েদাকে যতটুকু না ইঙ্গিত করেন তার চেয়ে বেশি ইঙ্গিত করেন জামায়াতের দিকে। সুতরাং এটা বলা অত্যুক্তি করা হবে না যে মাইনাস টু এবং তৃতীয় শক্তির উত্থানের পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ।

বিষয়: বিবিধ

২০১৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

161614
১২ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩০
বুড়া মিয়া লিখেছেন : পোষ্টটা ডাবল-এন্ট্রি হয়ে গেছে; ভাইয়া কি একাউন্টিং/ফিনান্স এর?

যাক ভালো লাগলো
১২ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪২
115881
অন্যনয়ন লিখেছেন : ঠিক করে দিয়েছি Happy ধন্যবাদ

কিন্তু এইটা কি বললেন বুঝলাম না
পোষ্টটা ডাবল-এন্ট্রি হয়ে গেছে; ভাইয়া কি একাউন্টিং/ফিনান্স এর?
161630
১২ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
বুড়া মিয়া লিখেছেন : আপনি কি একাউন্টিং/ফিনান্সের ছাত্র ছিলেন?
আর ডাবল-এন্ট্রি মানে পোষ্টটা দুইবার হয়ে গেছিল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File