বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমাঃ একটি সিচুয়েশন এনালাইসিস

লিখেছেন লিখেছেন অন্যনয়ন ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:২১:১৮ রাত

সিচুয়েশন এনালাইসিস। এক্ষেত্রে যেটা করা হয় তা হল, বেষ্ট কেস সিনারিও এবং ওর্স্ট কেস সিনারিও যাচাই করে ধারনা পাওয়ার চেষ্টা করা হয় যে আসলে কি হতে যাচ্ছে। কিন্তু আমি দুঃখিত এজন্য যে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ময়দানে চেতনা দণ্ডের যে প্রতাপ চলছে সেখানে কোনও বেষ্ট কেস সিনারিও নেই। আছে শুধু ওর্স্ট কেস সিনারিও। কাল ঘুম থেকে উঠে নিশ্চই দেখবেন না যে আওয়ামীলীগ বিরোধী দলের দাবী মেনে নিয়েছে আবার এটাও দেখবেন না যে বিরোধীদল সরকারের ফ্যাসিবাদী অবস্থানকে মেনে নিয়েছে। সুতরাং এখানে কোনও বেষ্ট কেস নাই।

তৃতীয় শক্তি ও মাইনাস টু ফর্মুলার কথা আপনারা ভুলে গেছেন। কিন্তু ঘটনা হল ফর্মুলা তৈরি হয়ে গেলে এর প্রয়োগও থেমে থাকে না। বীজগণিতের অংক সমাধান করতে গিয়ে যেমন সমীকরণকে আমরা সূত্রের সাথে খাপ খাওয়াতে ভাংতে ভাংতে একটা পর্যায়ে নিয়ে আসি তেমনি দেশে মাইনাস টু ফর্মুলা ও তৃতীয় শক্তির আনয়নের জন্য পরিস্থিতিকে ভেঙ্গে চুরে সূত্রের সাথে খাপ খাওয়ানোর পর্যায়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।

জামায়াত কে সমূলে নির্মূল না করে মাইনাস টু ফর্মুলার বাস্তবায়ন এ ফর্মুলার আবিষ্কারক ও চেতনা খোরদের জন্য অবশ্যই একটি চরম ভুল কাজ হবে। সুতরাং একথা আপনি ধরেই নিতে পারেন যে মাইনাস টু ফর্মুলার বাস্তবায়ন একটি সুদূর প্রসারী লক্ষ্যমাত্রা। এর কারণ হল, বি এন পি ও আওয়ামীলীগের চরিত্র যারা বুঝেন তারা অবশ্যই স্বীকার করবেন যে এই দুই মহিলা মরে গেলে দুটি দুলই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী শক্তিশালি দল জামায়াত চলে আসবে লাইম লাইটে। এক এগারোর সময়ে জামায়াতকে ওভাবে দমানর পরিকল্পনা না থাকলেও চরমোনাইর দলকে জামায়াতের সাবস্টিটিউট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে জামায়াতের মার্কেট খাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্তই, চরমোনাইর মাদ্রাসার গণ্ডি পেরিয়ে তার দল যে একেবারেই জনশূন্য সেটা সবাই জানে। সুতরাং সে পরিকল্পনা সেখানেই বাদ। সেক্ষেত্রে মাইনাস টু ফর্মুলার ক্ষেত্রে জামায়াত একটা বড় বাধা সুতরাং এ ফর্মুলাটা বাস্তবায়নের আগে জামায়াতের নির্মূল জরুরী। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি পলিটিকাল ক্লিনজিং শুরু হয়ে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় জামায়াত নেতাদেরকে সিলেক্টিভ কিলিং এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে সুতরাং অপারেশনটা শুরু হয়ে গেছে কিন্তু পুরোপুরি এখনও গতি সঞ্চারিত হয়নি। ৫ই জানুয়ারির ইলেকশনের পরে জরুরী অবস্থা জারির একটা প্রকট সম্ভাবনা বিদ্যমান বলে নির্বাচনের আগে শোনা যাচ্ছিলো। নির্বাচনের বেশ কয়েকদিন গত হলেও সেই সম্ভাবনা এখনও নাকচ করা যাচ্ছে না। সরকার তার কেবিনেট গঠনের জন্য একটু সময় নিচ্ছে, এই যা! ধারণা করা হচ্ছে জামায়াত নিধনে পলিটিকাল ক্লিনজিং অপারেশন সে সময়েই পিকে উঠবে। মিডিয়া এটা জানে, তারা জানে এজন্য যে তাদের এসব সিলেক্টিভ হত্যা খবরের আওতার বাইরে রাখার ব্যাপারে পরিপূর্ণ সমঝোতা হয়ে গেছে। সুতরাং জামায়াতের এটাই সম্ভবত শেষ সময়।

উপরের কথাগুলো আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে কিন্তু আমার তা মনে হচ্ছে না, বরং আমি জানি বাংলাদেশের এই নাজুক পরিস্থিতির পেছনে বাম-পন্থিদের পুর্নাঙ্গ অবদান রয়েছে। জামায়াত নিধনের পরে মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়ন হলে এদেশের রাজনৈতিক ময়দানে তৃতীয় শক্তি হিসেবে বাম দল গুলোরই কোনও একটি বা কয়েকটি মিলে একটি জোটের সম্ভাবনা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এক্ষেত্রে এরশাদের দল কিছুটা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখলেও বিগত একমাসে দলটি যে কয়বার ভেঙ্গেছে তাতে এটি এখন বাঘমারা ইউনিয়নের রামগঞ্জ গ্রামের ক্রিকেট টীমের চেয়েও নগণ্য দলে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এখন পর্যন্ত এদেশে আনটাচড এবং আদরের দুলালী দল গুলো ঐ বাম পন্থীগুলোই। হয়তো ভাবিত আছেন যে কিভাবে জামায়াতের মতো একটি বড় দলকে শুধু কিলিং করে শেষ করার সাহস রাখে এরা। আমি আপনাকে বলবো বামপন্থিদের ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, চেগুয়েভারা থেকে শুরু করে এই কপট আদর্শের যতো বিল্পবী আছে সবাই সমাজতন্ত্রের আদর্শের নামে ম্যাস কিলিং এর কাজে সিদ্ধহস্ত। সে ক্ষেত্রে ইনু, সেলিম ও মেননরা ইচ্ছে করলেই বিপ্লবের নেশায় জামাতিদের রক্তে গোসল করার সুযোগ নিতেই পারেন। কারণ জামাতিদের কিলিং করলে এদেশের অনেক মানুষই হাহুতাশ করবে হয়তো কিন্তু টুঁশব্দটি করবে না। কারণ জামাতিদের বিরুদ্ধে এই চল্লিশ বছরে একটা কুমুর্তি প্রতিষ্ঠার কাজ ভালোভাবেই হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে মুনতাসির মামুনের একটা কথা আপনার কল্পনাতীত ভাবনাকে একটু সহায়তা করতে পারে। এইলোক অলরেডি লিখেই ফেলেছেন যে "পাকিস্তানী ও তার দালালদের আর নয়। এর জন্য যদি আরও কয়েক লাখের মৃত্যু হয়, হবে। কিন্তু একেবারে এদের শেকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে। ১৯৭১ সালের ভুল আর করা যাবে না (জনকন্ঠ, ০১/০১/২০১৪)" সুতরাং আরও কয়েক লাখের মৃত্যুকে তারা ছেলে খেলাই মনে করে। এর জন্য তারা প্রস্তুতও বটে।

জামায়াত নিধনের পরে খালেদা ও হাসিনাকে হত্যার ব্যাপারটা পানির মতো সহজ ব্যাপার। এমনিতেই বাঙ্গালীর একটা সুখসমৃদ্ধ বাতিক আছে, যেকোনো কিছুর জন্য জামায়াতকে একবার দোষী করা গেলে সেটার জন্য আর তদন্ত ও বিচারের দরকার হয়না। ধরে এনে কয়েকটা জামাতিকে জবাই করে দিলেই এই জাতি সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাবে। সুতরাং জামায়াত নিধনের পরে খালেদা ও হাসিনাকে কতল করে জামায়াতের উপর দোষ চাপিয়ে দিলে বাঙ্গালী সরল মনে তা বিশ্বাস করে মেনে নিবে বলেই আমার বিশ্বাস। সুতরাং একটি সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে জামাতিদের মধ্যে যারা নিবেদিত প্রাণ তাদের জন্য সমবেদনা ও আগাম গুডবাই এবং যারা সুদূর প্রসারী চিন্তা করতে পারেন তাদের জন্য একটা ফ্রি পরামর্শ, সময় থাকতে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান। আবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বানাতে মেধা খরচ করেন। শত্তুর বছর পরে আপনারা যদি বাংলাদেশে ঘৃণা ও অনাস্থার অভিশাপ এড়িয়ে আজকের জামায়াতের যে শক্তি সেটা অর্জন করতে চান তাহলে কিভাবে শুরু করতে হবে, কি কি করতে হবে তা গবেষণা করে বের করেন। শুধু শুধু রাজপথে কষ্ট করে মরতে যাবেন কেন, মরার এত সখ থাকলে ঘরেই বসে থাকুন আরামে, যৌথবাহিনী আপনাকে ফ্রি সার্ভিসে ঘরে এসে মেরে যাবে।

বিষয়: বিবিধ

১২৮০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

161475
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো লাগলো
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:০০
115767
অন্যনয়ন লিখেছেন : আমারও ভালো লাগলো ধন্যবাদ
161503
১১ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৫২
শিলা লিখেছেন : জটিলস Yawn Yawn Yawn Thinking Thinking

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File