রাসুল (সা এর সিরাত বা জীবনির তিনটি সব্তন্ত্র উত্স
লিখেছেন লিখেছেন বিজয় ০৯ জানুয়ারি, ২০১৩, ১২:২০:৩৮ রাত
রাসুল (সা এর সিরাত বা জীবনী আমরা তিনটি সব্তন্ত্র উত্স থেকে জানতে পারি
১. কোরআন
২. হাদিস
৩. সিরাত সাহিত্য
কোর'আনে রাসুল (সা এর জীবনের বিভিন্ন দিক বিভিন্ন ঘটনা এসেছে, কোনটা প্রতক্ষভাবে আবার কোনটা পরোক্ষভাবে. বস্তুত কোরআনের প্রত্যেক বিষয় অথবা বিষয়ের অংশ নাজিল হয়েছে রাসুল (সা এর জীবনের সুনির্দিষ্ট উপলক্ষ ও ঘটনার উপর. রাসুল (সা কোরআন নাজিলের সাথে সাথে সেটা মুখস্ত করে ফেলতেন. তিনি তার জীবনের শেষ রমজানে সমগ্র কোরআন দুইবার আবৃত্তি করে জীবরাইল (আ কে শুনান. অনেক সাহাবী ও সমগ্র কোরআন মুখস্ত করেন. এছাড়া কোরআন নাজিলের সাথে সাথে সেগুলু গাছের পাতা, পাথর, কাগজ, চামড়া এগুলুতে লিখে রাখা হত. রাসুল (সা এর মৃত্যুর পর রিদ্দার যুদ্ধে অনেক হাফেজ সাহাদাত বরণ করেন. তখন হজরত ওমরের (রা এর পরামর্শে খলিফা হজরত আবু বকর (রা জীবিত হাফেজ এবং লিখিত documenter সাহায্যে কোরআনের একটি পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেন. এই পান্ডুলিপি থেকেই হজরত ওসমান (রা তার শাসনামলে অনেকগুলু প্রতি লিপি তৈরী করে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন. তবে কোরআনে রাসুল (সা জীবনের বিভিন্ন দিক আসলেও এগুলু কোনো সময়ানুক্রমিক বর্ণনা নয়.
রাসুল (সা এর জীবনী জানার দিব্তীয় উতস হচ্ছে হাদিস. তবে হাদিসও কোনো সময়ানুক্রমিক বর্ণনা নয়. হাদিস বলতে বুজায় রাসুল(সা এর বাণী ও কর্মের বিবরণ, তাহার অভ্যাস ও অন্য যে কোনো বাক্তির কথা কাজের প্রতক্ষ বা পরোক্ষ অনুমোদন. এটা রাসুল(সা এর সাহাবী ও তাহাদের নিকটতম পরবর্তীদের বর্ণনা, কর্ম ও অনুমোদন সংক্রান্ত বিবরণের প্রতিও প্রযোজ্য. ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষী ও অংশগ্রহনকারীদের দ্বারা প্রদত্ত বিধায় হাদিস ঐতাহাসিক গুরুত্ব বহন করে. কোনো কোনো সাহাবী রাসুল(সা এর জীবদ্দশাতেই রাসুল (সা বিভিন্ন বাণী লিখে রাখতেন. কিন্তু রাসুল (সা এরূপ করতে নিষেধ করলেন. কেননা এতে হাদিস এবং কোরআন মিশ্রিত হয়ে পরার সম্ভাবনা ছিল. রাসুল(সা এর ইন্তেকালের পর হিজরী প্রথম শতকের মধ্যভাগ থেকে বেশ কিছু সংখক সাহাবী ও তাবেই পদ্দতিগতভাবে হাদিস সংগ্রহ ও লিহিবদ্ধ করার কাজ শুরু করেন. তবে হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজের(র শাসনামল থেকে (৯৯-১০১হিজরী ) রাষ্ট্রীয়ভাবে এ কাজ শুরু হয়.
রাসুল (সা এর জীবনী জানার তৃতীয় উত্স হচ্ছে সিরাত বা মাগাজি সাহিত্য. হাদিস এবং সিরাত সাহিত্য উপাদানের দিক থেকে সাদৃস্যপূর্ণ হলে ও হাদিসগুলি মূলত উপদেশমূলক, বিচার সংক্রান্ত অথবা আইন সংক্রান্ত বিষয় হিসাবে সন্নিবেশিত হয়েছে , অন্যদিকে সিরাত রাসুল(সা এর জীবনীর ধারাবাহিক বর্ণনা, সময়ানুক্রমিক বর্ণনা. হাদিসের ক্ষেত্রে বর্ণনাকারীদের সুত্র পরস্পরার প্রতি এবং অনন্য প্রশ্ন ও নীতির প্রতি অধিকতর মনোযোগ দেয়া হয়েছে, কিন্তু সিরাত সাহিত্যের ক্ষেত্রে এসব নীতি সব সময় পালন করা হয় নাই. তবে হাদিস সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সিরাত সাহিত্য লেখার কাজ একই সময় শুরু হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে একই সাহাবী দুটি কাজই একই সাথে করেছেন. সিরাত সাহিত্য এমন কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে যেটা হাদিসে নাই. এক্ষেত্রে নীতিমালা হচ্ছে কোরআন বা সহিহ হাদিসকেই প্রাধান্য দিতে হবে. যেখানে কোরআন বা সহিহ হাদিস কোনো বিষয়ে তথ্য প্রদান করেনা সেখানে সিরাত সাহিত্য থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করা যাবে.
ইসলাম বিরুধীরা বলার চেষ্টা করেন যে যেহেতু কোরআনে কোনো তারিখ উল্লেখ নাই আর হাদিস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজ অনেক পরে শুরু হয়েছে সুতরাং রাসুল (সা এর কোনো জীবনীই অথেন্টিক না. কিন্তু হাদিস সংগ্রহ ও সংকলনের কাজ এবং সিরাত সাহিত্য লেখার কাজ হিজরী প্রথম শতকের মিডল থেকে শুরু হয়েছে. এদের মধ্যে আবান ইবনে উছমান ইবনে আফ্ফান, উরওয়া ইবনে জুবাইর, আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাজম, ইবনে শিহাব আজ-জুহরীর নাম উল্লেখযোগ্য. তবে হাদিসশাস্র নিয়ে গবেষনার কাজ অনেক পরে শুরু হয়েছে এবং সেখান থেকে মিথ্যা ও দুর্বল হাদিসগুলিকে আলাদা করা হয়েছে. এছাড়াও ঐতহাসিকভাবে এটা প্রমানিত যে আরবদের মধ্যে মুখস্ত করার একটা প্রবণতা আছে. ইসলাম পূর্ববর্তী যুগে আরবরা বিভিন্ন কবিতা, সাহিত্য, বংশ তালিকা মুখস্ত করে রাখত; ইসলাম পরবর্তী যুগে আরবরা কোরআন এবং রাসুল(সা এর বাণী, কর্ম, অভ্যাস এসব বিষয় মুখস্ত করে রাখে এবং বংশ পরস্পরা সেগুলি কন্টিনিউ করে.
(ড. মোহর আলীর sirat al Nabi and the orientalist বই অবলম্বনে)
বিষয়: বিবিধ
১৯৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন