বাংলাদেশে মুসলিম শাসন এবং বাংলা সাহিত্য :১

লিখেছেন লিখেছেন বিজয় ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৫:২২:২১ সকাল

মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজীর ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে মুসলিম শাসনের সুচনা হয়. বখতিয়ার খলজীর জন্ম আফগানিস্তানে, তবে খলজী বংশের উত্পত্তি তুরস্কে সে কারণে বখতিয়ার খলজীকে অনেকে তুর্কি বীর বলে থাকে. এই ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত (মাজখানে ৫ বছর রাজা গনেশের শাসন ব্যতিত) পুরা সময়টাই মুসলমানরা শাসন করে. তবে মুসলিম শাসনের প্রথম দেড় শত বছর বাংলা সাহিত্যের কোনো চর্চা হয়নি. অনেকে বলে থাকেন আরব, আফগান, তার্কিশ, ইরানি মুসলমানরা প্রথমে নিজ নিজ ভাষা নিয়েই ছিলেন পাশাপাশি রাজ্য বিস্তারে মনোযোগী ছিলেন. পরবর্তিতে স্থানীয় বাঙালিরা ইসলাম গ্রহনের কারণে বাহির থেকে আগত মুসলমানরা বাংলা ভাষার সংস্পর্শে আসতে থাকে, তাছাড়া মুসলিম সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সদস্যই ছিল বয়সে তরুণ এবং অবিবাহিত. তারা এদেশে বিয়ে করেন এবং বাংলা ভাষার সংস্পর্শে আসেন. এছাড়াও মুসলমানরা চিন্তা করতে থাকেন যে এদেশ শাসন করতে হলে, মানুষের কাছাকাছি পৌছতে হলে, ইসলামের বাণী ছড়িয়ে দিতে হলে সেটা বাংলা ভাষাতেই করতে হবে. ফলে মুসলমানরা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে.

পাঠান মুসলমান সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত এবং বিভিন্ন নামে পরিচিত বাংলা ভাষাভাষী সমগ্র অঞ্চলকে একত্রিত করে সমগ্র অঞ্চলের নাম বাংলা রাখেন, সম্পূর্ণ দিল্লির প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে বাংলা পরিচালনা করেন.

মূলত সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ এর শাসনামল থেকেই বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে উত্সাহ দেয়া হতে থাকে. রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কারণে হিন্দুরা সংস্কৃত বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী হয়. শুধু তাই নয়, মুসলিম শাসকদের উত্সাহে হিন্দুরা তাদের রামায়ন বাংলায় অনুবাদ করে. সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের শাসনামল ছিল ১৩৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৩৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত. এই সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগের শুরু ধরা হয়. আর ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সুচনা ধরা হয়. তবে বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ / প্রাচীন যুগে পালদের দ্বারা চর্যাপদ ছাড়া বাংলা ভাষায় আর কিছুই রচিত হয়নি.

বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগের আরেকজন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ (১৩৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৪০৯ খ্রিস্টাব্দ ). তার শাসনামলেই রচিত হয় বাংলা সাহিত্যের প্রথম কাব্য গ্রন্থ বড়ু চন্ডিদাসের লেখা শ্রীকৃষ্ণকির্তন. বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি শাহ মুহাম্মদ সগীরের লেখা ইউসুফ-জুলেখা কাব্য গ্রন্থও এই সময়ে রচিত হয়.

সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের পুত্র ছিল সুলতান সিকান্দার শাহ, আর সুলতান সিকান্দার শাহের পুত্র ছিল সুলতান গিয়াসুদ্দিন আজম শাহ. এই গিয়াসুদ্দিন আজম শাহের কবর নারায়ণগঞ্জের সোনারগায়ে অবস্থিত. বাংলার আরেক শাসক আলাউদ্দিন হুসেন শাহও বাংলা ভাষার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন.

তবে কিছু কিছু বাঙালি হিন্দু কবি বাংলা সাহিত্য চর্চা পছন্দ করতেন না, তারা সংস্কৃতের মায়া ত্যাগ করতে পারেনি. তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কবি আব্দুল হাকিম একটি কবিতা লিখেন--

"যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি."

বর্তমানে একুশে ফেব্রুয়ারিতে এ কবিতাটি ব্যবহার করা হয়, যদিও এটি ৫২র প্রেক্ষাপটে নয়, বরং বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগের সংস্কৃত প্রেমীদের নিয়ে লেখা একটি কবিতা.

(চলবে )

বিষয়: বিবিধ

২৪৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File