'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' প্রদেশ এবং পাকিস্তান আন্দোলন: ০৬
লিখেছেন লিখেছেন বিজয় ১৪ জুন, ২০১৩, ০৪:৫২:১৩ রাত
অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং নিরাপত্তা জনিত সমস্যার কারণে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্রের চিন্তা বাদ দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যোগদানের ফলে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে হায়দারাবাদের মত অবস্থা ঘটেনি. ১৯৪৭ সালে যখন ভারত থেকে মুসলমানরা আলাদা হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন করলো, তখন হায়দারাবাদের রাজা নিজাম পাকিস্তান বা ভারত কোনটার সাথেই যোগদান করলেন না, তিনি স্বাধীন থাকতে চাইলেন. ফলে ১৯৪৯ সালে ভারত হায়দারাবাদ দখল করে নিলেন. সুতরাং বলা যায় বেঙ্গলের মুসলিম নেতারা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন, তা না হলে আমাদের ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করা লাগত না, তার আগেই আমরা ভারতের গর্ভে গায়েব হয়ে যেতাম.
তবে সীমান্ত বন্টনের দরকষাকষিতে আমরা ভালো করতে পারিনি, এর পেছনে বিশ্লেষকরা যে বিষয় গুলিকে দায়ী মনে করেন তার মধ্যে রয়েছে পূর্ব থেকেই হিন্দুদের সাথে ইংরেজদের সখ্যতা--এক সাথে নাচ-গান, মদ খাওয়া, দ্বিতীয়ত ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবে আমাদের শেরে বাংলা দ্বিজাতি তত্ত্ব পাঠ করলেও পরবর্তিতে কিছু বিষয়ে জিন্নার সাথে শেরে বাংলার মত বিরোধ দেখা দেয়, অনেকে মনে করেন এই অনৈক্য না থাকলে আমরা দর কষাকষিতে আরো ভালো করতে পারতাম.
অন্যদিকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পূর্বেই দুই পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু করা হবে, এর পিছনে দুটি যুক্তি দেখানো হয়---১. পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও পশ্চিম পাকিস্তানের কেউ বাংলা বুজে না, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ৬৫% লোকের মাতৃভাষা পাঞ্জাবি হলেও পূর্ব পাকিস্তানের কেউ পাঞ্জাবি বুজে না, আবার দুই পাকিস্তানের মানুষই তত্কালীন সময়ে কম বেশি উর্দু বুজত. ২ দুই পাকিস্তানের মধ্যে ছিল ১০০০ কিলোমিটারের দুরত্ব, ধর্ম ছাড়া আর কোনো বিষয়ে মিল ছিল না, ফলে রাষ্ট্রের সংহতি বিধানের জন্য উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়.
একটা বিষয় এখানে বলে রাখা ভালো জিন্নার মাতৃভাষা গুজরাটি, তিনি ভালো উর্দু বলতে পারতেন না, সে কারণে তার অধিকাংশ বক্তব্যই ইংরেজিতে দেয়া . জিন্নাহ তার রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিকে হিন্দু মুসলিম মিলনে বিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু পরবর্তিতে হিন্দু মুসলিম ঐক্য সাধনের নিমিত্তে যে সব চুক্তি হয়েছিল হিন্দুরা যখন সেসব চুক্তি ভঙ্গ করতে থাকলো তখনি মূলত তিনি কবি আল্লামা ইকবালের স্বপ্ন অনুযায়ী মুসলিমদের জন্য আলাদা স্বাধীন ভূমির আন্দোলনে নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসলেন.
এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকালে জিন্নাহ যক্ষা রোগে ভুগতেছিলেন, কিন্তু সেটা তিনি কাউকে জানাননি, শুধু তার বোন এবং তার ডাক্তার এই দুজনেই জানতেন. তিনি মনে করতেন তার এই রোগের বিষয়ে জানাজানি হয়ে গেলে মুসলমানদের মধ্যে আন্দোলনে হতাশা নেমে আসবে. আন্দোলন চলাকালে তিনি বেশ কয়েকবার অসুস্থ হয়ে পরেন এবং পাকিস্তানের পাহাড়ি শহর মারি তে বিশ্রামের জন্য পাঠানো হয়. সীমানা বন্টন কারী লর্ড মাউন্টব্যাটেন তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন তিনি যদি জানতেন জিন্নাহ যক্ষা রোগে আক্রন্ত তাহলে তিনি মুসলমানদেরকে স্বাধীন ভূমি না দিয়ে আরো সময় ক্ষেপন করতেন. এই মহান নেতা জিন্নাহকে আমরা মূল্যায়ন করি না, গুলিস্তানের জিন্নাহ এভিনীয়কে আমরা বঙ্গবন্ধু এভেনীয় নাম দিয়েছি. অথচ এক সময় জিন্নাহর সাথে দেখা করার জন্য বঙ্গবন্ধু লাইনে দাড়িয়ে থাকতেন. এই পাকিস্তান আন্দোলন যদি সফল না হত তাহলে কোনদিন ৭১ হত না, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রেরও জন্ম হত না. এখনও আমরা ভারতীয় ব্রাহ্মনদের অত্যাচারে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হতাম. যদিও পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের কয়েক মাসের মাথায় জিন্নাহ মারা যান, কিন্তু এই পাকিস্তান আন্দোলন সফলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং পাকিস্তানে বসবাসরত মুসলমানরা, তাদের বংশধররা স্বাধীন রাষ্ট্রের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।(আগামী পর্বে সমাপ্ত হবে) —
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন