'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' প্রদেশ এবং পাকিস্তান আন্দোলন: ০৪

লিখেছেন লিখেছেন বিজয় ০৯ জুন, ২০১৩, ০১:২০:৫৭ রাত

যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে পাকিস্তান আন্দোলনের পক্ষে ভোট পরেছে ৫০%, ৫৫%, সেখানে বাঙালি মুসলমানরা ভোট দিয়েছে ৯৭%. বাঙালি মুসলমানদের এই ব্যাপক সাড়া পাকিস্তান আন্দোলনে সফলতা পেতে সুবিধা হয়, জিন্নাহ ব্রিটিশ সরকারকে বুজাতে সক্ষম হন মুসলমানরা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য মরিয়া, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ছোট ছোট দলগুলিও মুসলিম লীগের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করতে থাকেন.

বাঙালি মুসলমানদের ৯৭% ভোট ভারত থেকে আলাদা হতে চাওয়ার পিছনে দুটি কারণ থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন, ১. পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত, চীন ছাড়াও দুটি মুসলিম দেশ (ইরান এবং আফগানিস্তান) রয়েছে সে কারণে তারা ভারতের ভয়ে ততটা ভিত ছিল না, অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের সাথে কোনো প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র নাই, দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয় বাংলাদেশের মুসলমানরা হিন্দুদের দ্বারা যতটা নির্যাতিত হয়েছে পাকিস্তানের মুসলমানরা ততটা নির্যাতিত হয় নাই.

যাইহোক শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার মুসলমানদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি মেনে নেয়. শুরু হয় কিভাবে নতুন রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারিত হবে সেই নিয়ে নানা হিসাব -নিকাশ. জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্ব অনুযায়ী লাহোর প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম এলাকা নিয়ে একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রের কথা বলা হয়. একটি রাষ্ট্র হবে ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ অনুযায়ী 'পূর্ব বঙ্গ ও আসাম' অঞ্চল সাথে থাকবে কলকাতা-কারণ সমগ্র পূর্ববঙ্গ ও আসামে রাজধানী করার মত কোনো শহর ছিল না, যেখানে কলকাতা ছাড়াও ভারতের রাজধানী করার মত ছিল দিল্লি , পাকিস্তান অংশে ছিল মুঘলদের হাতে গড়া লাহোর, রাওয়াল পিন্ডি. দ্বিতীয় মুসলিম রাষ্ট্র হবে পশ্চিম পাকিস্তান. ইতিমধ্যে হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় চিন্তার বাইরে ভাষা কেন্দ্রিক বৃহত্তর বাংলা রাষ্ট্রের প্রস্তাব আসে. বাঙালি হিন্দুরা এই বিষয়ে পরামর্শের জন্য গান্ধীর কাছে যান এবং তিনি তাতে সায় দেন, কিন্তু আপত্তি তোলেন নেহেরু. নেহেরু বাঙালি হিন্দুদের বলেন ভাষা ভিত্তিক বাংলা রাষ্ট্র মূলত মুসলিম রাষ্ট্রই হবে কেননা দুই বাংলা মিলে তখন মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৫৪%, ফলে বাঙালি হিন্দুরা বৃহত্তর বাংলা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা থেকে ফিরে আসেন. অন্যদিকে বাঙালি মুসলমানরা পরামর্শের জন্য জিন্নাহর কাছে যান এবং জিন্নাহ তাতে সায় দেন, পাশাপাশি বাঙালি মুসলমানদেরকে ভারতের ব্যাপারে সাবধান থাকার পরামর্শ দেন. জিন্নাহর এই সাবধান বাণীতে মুসলমানরা কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে যায়. অবশেষে বাঙালি হিন্দুদের মুসলিম কর্তিত্তে থাকতে অনীহা আর বাঙালি মুসলমানদের দ্বিধা-দ্বন্দের কারণে ভাষা ভিত্তিক বাংলা রাষ্ট্রের পরিবর্তে আবার সবাই লাহোর প্রস্তাবে ফিরে আসে. (চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৯৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File