'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' প্রদেশ এবং পাকিস্তান আন্দোলন: ০৩
লিখেছেন লিখেছেন বিজয় ০৭ জুন, ২০১৩, ১১:২৭:২৩ রাত
হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের বিভিন্ন তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে বিশিষ্ট কবি এবং দার্শনিক আল্লামা ইকবাল চিন্তা করলেন ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য আলাদা স্বাধীন ভূখন্ড না হলে মুসলমানদের কখনো মুক্তি মিলবেনা. ব্রাহ্মণ্য অত্যাচার মুসলমানদের উপর যুগ যুগ ধরে কন্টিনিউ হবে. আর সেই স্বাধীন ভূখন্ডের দাবি আদায় করে নিতে হবে ইংরেজদের এদেশ ছাড়ার আগেই. আল্লামা ইকবাল এই বিষয়টি জিন্নাহকে জানালেন, কিন্তু জিন্নাহ কনভিন্স হলেন না, জিন্নাহ অখন্ড ভারত নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন. কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে গোখলে ছিলেন উদার প্রকৃতির, তিনি মুসলমানদেরকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও অখন্ড ভারত নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন. সেজন্য কংগ্রেস নেত্রী সরোজিনী নাইডু জিন্নাহকে মুসলিম গোখলে বলতেন.
অন্যদিকে বাল গঙ্গাধর তিলকসহ কংগ্রেসের একটা বড় গ্রুপ মুসলমানদেরকে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না. কংগ্রেসের নেতৃত্ব যখন উদারপন্থী গোখলে, দাদা ভাই নওরোজী থেকে আসতে আসতে উগ্রপন্থীদের হাতে চলে যেতে থাকে তখন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের আশা ধীরে ধীরে কমতে থাকে. এদিকে মুসলমানদের অনুরোধে জিন্নাহ কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লিগে ও যোগদান করেন. হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বৈষম্য নিরসনে জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলমানরা হিন্দুদের সাথে কয়েকটি চুক্তি করে, সব কটি চুক্তিই হিন্দুরা কিছুদিন যেতে না যেতেই ভঙ্গ করা শুরু করে, মূলত হিন্দুরা মুসলমানদেরকে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিতে রাজি ছিল না. একদিকে কংগ্রেসের উগ্রপন্থী নেতৃত্ব অন্যদিকে মুসলিম লীগের ভিতর নানামুখী দন্দ্বের কারণে জিন্নাহ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন. জিন্নাহ সবকিছু ছেড়ে লন্ডন চলে আসেন এবং আইন ব্যবসা শুরু করেন.
কিন্তু মুসলিম লিগে জিন্নাহর মত নেতৃত্বের বড় অভাব ছিল, যদিও মুসলমানদের একটি অংশ জিন্নাহর নেতৃত্ব মানতে আগ্রহী ছিল না. তাদের যুক্তি ছিল জিন্নাহ একজন শিয়া মুসলমান এবং বাক্তিগতজীবনে জিন্নাহ ধর্ম কর্ম করতেন না. তখন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভী(র বলেন আমরা মামলা জিতার ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয় দেখিনা. আমরা দেখি কাকে দিয়ে মামলাতা জিতা যাবে. জিন্নাহ হচ্ছে সেরকম একজন যাকে দিয়ে মামলাটা জিতা যাবে, পাকিস্তান রাষ্ট্র বানানো যাবে. বহু দলে বিভক্ত মুসলিমদের এক করে ব্রিটিশদের কনভিন্স করে হিন্দুদের থেকে স্বাধীন মুসলিম ভূখন্ডের দাবি আদায় করা জিন্নার পক্ষে সম্ভব. ফলে মুসলমানরা জিন্নাহকে লন্ডন থেকে ফেরত আসতে বার বার অনুরোধ করতে থাকে, আল্লামা ইকবাল জিন্নাহকে একের পর এক চিঠি লিখতে থাকেন. লন্ডনে কিছু ভারতীয় মুসলিম স্টুডেন্ট ক্যাম্পেইন করতে থাকে ' Now or never ' তাদের কথা ছিল এখনি মুসলমানদের জন্য স্বাধীন ভূখন্ডের দাবি আদায় করে নিতে হবে, তা নাহলে এটা আর কখনো সম্ভব হবে না. অবশেষে জিন্নাহ দেশে ফিরে আসেন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে থাকেন.
যক্ষা রোগে আক্রান্ত জিন্নাহ ভারতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়াতে থাকলেন আর মুসলমানদের কে স্বাধীনতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করলেন. মুসলমানরা যখন স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর তখন কংগ্রেস নেত্রিবৃদ্ধ বলতে লাগলেন এটা সকল মুসলমানের দাবি নয়, এটা শুধু মুসলিম লীগের দাবি. ফলে ব্রিটিশ সরকার ভোটাভুটির আয়োজন করলো. পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশ গুলুতে ভোট পরেছে ৫০%-৫৫%, আর বাংলাদেশে ভোট পরেছে ৯৭% পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে. (চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২০৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন