পাল শাসনামল ও বাঙালি জাতির মুক্তি
লিখেছেন লিখেছেন বিজয় ০৭ জুন, ২০১৩, ০৫:৩২:২৩ সকাল
দীর্ঘদিনের আর্য-বার্হ্মন্য শাসনের অত্যাচার থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি মিলে পাল বংশের ক্ষমতা গ্রহনের মধ্য দিয়ে. পাল বংশের লোকেরা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী ছিল. তারা বাংলা-বিহার দীর্ঘ চারশত বছর শাসন করে. তাদের শাসনকাল ছিল ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত. সমসাময়িক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ শাসন করতেছিল আব্বাসীয় খেলাফতের শাসকরা. পাল বংশের শাসন বিভিন্ন কারণে আমাদের জন্য অত্যান্ত তাত্পর্যপূর্ণ ছিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন. পাল শাসনামল অত্যান্ত শান্তিপূর্ণ ছিল. তারা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী হলেও হিন্দুদেরকে কিংবা মুসলিমদেরকে ধর্ম পালনে কোনো বাধা দেয় নাই, কোনো ধরনের অত্যাচার করে নাই. সে কারণে এই সময়ে মুসলমানরা নির্বিঘ্নে ইসলাম প্রচার করতে থাকে. আরব দেশ থেকে বহু মুসলমান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কেউবা ব্যবসার উদ্ধেশ্যে এদেশে আসতে থাকে, ফলে অনেক মানুষ এ সময় ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে, ইসলামের একটা সামাজিক ভিত্তি তৈরী হয় যেটা ব্রাহ্মন শাসনামলে সম্ভব ছিল না. এই সামাজিক ভিত্তির কারণেই বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়ের পর ইসলাম দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করতে থাকে. পাহাড়পুরে প্রাপ্ত আব্বাসীয় বাদশাহ হারুন আল রশিদের (৭৮০-৮০৯ খ্রিস্টাব্দ) মুদ্রা থেকে বাংলাদেশের সাথে পাল আমলে আরব ব্যাবসায়ীদের বানিজ্যিক সম্পর্কের প্রমান পাওয়া যায়. আবার আব্বাসীয় খেলাফতের শেষের দিকে মুসলমানদের মধ্যে যখন বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ-সংঘাত তৈরী হয় তখন অনেক মুসলমান নিজেদেরকে এসব সংঘাত থেকে দুরে রাখার জন্য বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে. একদিকে পাল বংশের সহনশীলতা, অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে দ্বন্দ-সংঘাত বাংলাদেশে ইসলাম প্রসারে সুবিধা হয়.
বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন 'চর্যাপদ' এই পাল শাসনামলেই রচিত হয়. যদিও পাল শাসকরা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালি ভাষাকে পৃষ্ঠপোষকতা করত, কিন্তু বাংলা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ ছিল না. সে কারণেই বাংলায় চর্যাপদ রচিত হয়. কুমিল্লার ময়নামতি বিহার পাল শাসনামলের নিদর্শন, পাল রাজা মহিপালের নামে এখনও ফেনীতে মহিপাল নামে একটি এলাকা রয়েছে. বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পন্ডিত অতীশ দীপংকর এই সময় কালেরই পন্ডিত (মুন্সীগঞ্জ). এছাড়া পাল শাসকরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে. ১১৬২ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিন ভারত থেকে আগত সেন বংশের (হিন্দু-ক্ষত্রিয়) হাতে পাল রাজত্বের পতন ঘটে. সেন রাজাদের অত্যাচারে বৌদ্ধরা নেপাল, বার্মা, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করে, সে কারণে বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ নেপাল থেকে আবিষ্কৃত হয়. অনেকে আবার ভয়ে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে. এসময় কিছু কিছু এলাকায় মুসলমান এবং বৌদ্ধরা মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলে. সেন রা বৌদ্ধদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে. সেন রা বাংলা ভাষাকে নিচু জাতের মানুষের ভাষা মনে করত এবং শুধু সংস্কৃত ভাষাকেই পৃষ্ঠপোষকতা করত. সেন শাসনামলে বাংলা ভাষায় কোনো কিছুই রচিত হওয়ার প্রমান আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি. অবশেষে কালো বিড়াল সুরঞ্জিত সেনের পুর্বসরী সেন বংশের পতন ঘটে বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে মতান্তরে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে. দু:খজনক হলেও সত্যি, হিন্দুরা এবং বামপন্থীরা নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসের দায়ভার বখতিয়ার খিলজীর উপর চাপানোর চেষ্টা করে. যেই মানুষটি এদেশে আসলো ১২০৩/১২০৪ সালে সে মানুষটি কিভাবে ১১৯৩ সালের একটি ঘটনার জন্য দায়ী হয়????
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন