দারসূল কুরআন-বিষয়ঃ দৌড়াও ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল কাদের হেলাল ২৮ মার্চ, ২০১৪, ০৫:০৮:০৫ সকাল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

দারসূল কুরআন

বিষয়ঃ দৌড়াও ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে

সূরা হাদীদঃ২০,২১

আবদুল কাদের হেলা

১।বিশুদ্ধ তেলাওয়াতঃ

﴿اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ﴾

﴿سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ﴾

২।অনুবাদঃ

২০) ভালভাবে জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো৷ তারপর সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়৷ পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান যেখানে রয়েছে কঠিন আযাব, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি৷ পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয়৷

২১) দৌড়াও এবং একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো । তোমার রবের মাগফিরাতের দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের মত ৷ তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সে লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে৷ এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ৷ যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন৷ আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল৷

৩।নামকরণঃ

সূরার ২৫ আয়াতের (وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ) বাক্যাংশ থেকে আল-হাদীদ নাম গৃহীত হয়েছে।

৪।নাযিল হওয়ার সময়-কালঃ সর্ব সম্মাত মতে এটি মদীনায় অবতীর্ণ সূরা। এ সূরার বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে মনে হয় সম্ভবত উহুদ যুদ্ধ ও হুদায়বিয়ার সন্ধির মধ্যবর্তী কোন এক সময় এ সূরা নাযিল হয়েছে। সূরার ১০ আয়াত এ অনুমানকে আরো জোরালো করছে। এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ঈমানদারদের দলকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যারা বিজয়ের পরে নিজেদের অর্থ সম্পদ খরচ করবে এবং আল্লাহর পথে লড়াই করবে তারা কখনো ঐ সব লোকদের সমমর্যাদা সম্পন্ন হতে পারবে না যারা বিজয় লাভেরপূর্বের জান ও মালের কুরবানী পেশ করবে। ইবনে মারদুইয়া কর্তৃক উদ্ধৃত হযরত আনাস (রা) বর্ণিত হাদীস একথাই সমর্থন করে। তিনি আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বলেনঃ কুরআন নাযিলের শুরু থেকে ১৭বছর পর ঈমানদারের আলোড়নকারী এ আয়াতটি নাযিল হয়। এ হিসেব অনুসারে এর নাযিল হওয়ার সময় ৪র্থ ও পঞ্চম হিজরী সনের মধ্যবর্তী সময়ই এ সূরার নাযিল হওয়র সময়-কাল বলে নির্ধারিত হয়।

৫।আলোচ্য বিষয়ঃ

এ দুটি আয়াতের আলোচ্য বিষয় হচ্ছেঃ

মানুষ এই দুনিয়ায় অস্থায়ী বাসিন্দা। দুনিয়ার মাত্র কয়েক দিনের চাকচিক্যময়, খেল-তামাসার আকর্ষণীয় জীবনে শ্রেষ্ঠত্ব,গর্ব ও অহংকার এবং এখাকার ধন সম্পদ ও ঐশ্বর্যের ব্যপারে একে অপরকে অতিক্রম করার চেষ্টা সাধনা সব কিছুই অস্থায়ী। এর উপমা দেয়া যায় সেই শস্য ক্ষেত্রের সাথে যা প্রথম পর্যায়ে সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। তারপর বিবর্ণ হয়ে তামাটে বর্ণ ধারণ করে এবং সর্বশেষ ভূষিতে পরিণত হয়। প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের জীবন হচ্ছে স্থায়ী জীবন যেখানে সব কাজের ফলাফল পাওয়া যাবে। তোমাদের যদি প্রতিযোগিতামূলকভাবে কিছু করতে হয় তাহলে জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হওয়ার জন্য চেষ্টা করো।

৬।ব্যাখ্যাঃ

২০নং আয়াত

﴿اعْلَمُوا أَنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَزِينَةٌ وَتَفَاخُرٌ بَيْنَكُمْ وَتَكَاثُرٌ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ ۖ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا ۖ وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ ۚ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ﴾

২০) ভালভাবে জেনে রাখো দুনিয়ার এ জীবন, একটা খেলা, হাসি তামাসা, বাহ্যিক চাকচিক্য, তোমাদের পারস্পরিক গৌরব ও অহংকার এবং সন্তান সন্তুতি ও অর্থ-সম্পদে পরস্পরকে অতিক্রম করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ এর উপমা হচ্ছে, বৃষ্টি হয়ে গেল এবং তার ফলে উৎপন্ন উদ্ভিদরাজি দেখে কৃষক আনন্দে উৎফূল্ল হয়ে উঠলো৷ তারপর সে ফসল পেকে যায় এবং তোমরা দেখতে পাও যে, তা হলদে বর্ণ ধারণ করে এবং পরে তা ভূষিতে পরিণত হয়৷ পক্ষান্তরে আখেরাত এমন স্থান যেখানে রয়েছে কঠিন আযাব, আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি৷ পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ ছাড়া আর কিছুই নয় ৷

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলছেন যে,দুনিয়ার সবকিছুই অতি তুচ্ছ ও নগন্য।এখানে দুনিয়াবাসীর জন্যে রয়েছে শুধুমাত্র ক্রীড়া-কৌতুক,শান-শওকত,পারস্পরিক গর্ব ও অহংকার এবং ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা।

সূরা আলে ইমরানের ১৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেছেনঃ

﴿زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ﴾

১৪) মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনারুপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে৷ কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের তুচ্ছ সামগ্রী মাত্র ৷ প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহর কাছে ৷

সূরা আনকাবুতের ৬৪নং আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

﴿وَمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَهْوٌ وَلَعِبٌ ۚ وَإِنَّ الدَّارَ الْآخِرَةَ لَهِيَ الْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ﴾

৬৪) আর এ দুনিয়ার জীবন একটি খেলা ও মন ভুলানোর সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয় ৷ আর আখেরাতের ঘর- সেটাই তো আসল জীবন। হায়! যদি তারা জানতো ৷

সূরা কাহাফের ৪৫,৪৬নাম্বার আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

﴿وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ فَأَصْبَحَ هَشِيمًا تَذْرُوهُ الرِّيَاحُ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقْتَدِرًا﴾

৪৫) আর হে নবী! দুনিয়ার জীবনের তাৎপর্য তাদেরকে এ উপমার মাধ্যমে বুঝিয়ে দাও যে, আজ আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করলাম, ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উদ্ভিদ খুব ঘন হয়ে গেলো আবার কাল ও উদ্ভিদগুলোই শুকনো ভূষিতে পরিণত হলো, যাকে বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যায় ৷ আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী ৷

﴿الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا﴾

৪৬) এ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র ৷ মূলত সৎকাজ গুলোই টিকে থাকবে তোমার রবের কাছে উত্তম ফলাফলের তালিকায় এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম ৷

মানুষের শারীরিক অবস্থার উদাহরন দিয়ে সূরা রুমের ৫৪ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

﴿اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً ৫৪) আল্লাহই দুর্বল অবস্থা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেন তাঁরপর এ দুর্বলতাঁর পরে তোমাদের শক্তি দান করেন, এ শক্তির পরে তোমাদেরকে আবার দুর্বল ও বৃদ্ধ করে দেন ।

দুনিয়ার মজা লুটার কাজে ব্যস্ত থাকা কাফেরদের চরিত্রঃ সূরা মুহাম্মাদের ১২নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَّهُمْ﴾

১২) আর কাফেররা দুনিয়ার ক’দিনের জীবনের মজা লুটছে, জন্তু-জানোয়ারের মত পানাহার করছে ৷ ওদের চূড়ান্ত ঠিকানা জাহান্নাম ৷

দুনিয়ার পেছনে ছুটা যে মরীচিকার পেছনে ছুটার মতো নিষ্ফল তা বুঝাতে গিয়ে সূরা আন-নূরের ৩৯নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

﴿وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِندَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ ۗ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ﴾

৩৯) কিন্তু যারা কুফরী করে তাদের কর্মের উপমা হলো পানিহীন মরুপ্রান্তরে মরীচিকা, তৃঞ্চাতুর পথিক তাকে পানি মনে করেছিল, কিন্তু যখন সে সেখানে পৌঁছুলো কিছুই পেলো না বরং সেখানে সে আল্লাহকে উপস্থিত পেলো, যিনি তার পূর্ণ হিসেব মিটিয়ে দিলেন এবং আল্লাহর হিসেব নিতে দেরী হয় না ।

দুনিয়ার জাকজমকপূর্ন জীবন ধারার পেছনে ছুটা তো দূরের কথা এদের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও নিষেধ করা হয়েছেঃ

﴿وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَىٰ مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ﴾

১৩১) আর চোখ তুলেও তাকাবে না দুনিয়াবী জীবনের শান-শওকতের দিকে, যা আমি এদের মধ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের লোকদেরকে দিয়ে রেখেছি৷ এসব তো আমি এদেরকে পরীক্ষার মুখোমুখি করার জন্য দিয়েছি এবং তোমার রবের দেয়া হালাল রিযিকই উত্তম ও অধিকতর স্থায়ী। ( তা-হা- ১৩১)

ধন-সম্পদ এবং সন্তান-সন্তুতি আল্লাহ্‌র পাকড়াও থেকে বাঁচাতে পারবে নাঃ

﴿لَّن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾

১৭) আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের অর্থ-সম্পদ যেমন কাজে আসবে না, তেমনি সন্তান-সন্তুতিও কোন কাজে আসবে না৷ তারা দোযখের উপযুক্ত, সেখানেই তারা চিরদিন থাকবে ৷(মুজাদালাহ-১৭)

এসব স্থানে মানুষের মনে যে বিষয়টি বদ্ধমুল করার চেষ্টা করা হয়েছে তা হচ্ছে এ পৃথিবীর জীবন প্রকৃত পক্ষে একটি ক্ষণস্থায়ী জীবন। এখানকার বসন্তকাল যেমন অস্থায়ী তেমনি শরতকালও অস্থায়ী। এখানে চিত্ত বিনোদনের বহু উপকরণ আছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা এত নিকৃষ্ট এবং এত নগণ্য যে, নিজেদের নির্বুদ্ধিতার কারণে মানুষ ঐগুলোকে বড় বড় জিনিস বলে মনে করে এবং প্রতারিত হয়ে মনে করে ঐগুলো লাভ করতে পারাই যেন চরম সফলতা অর্জন করা। অথচ যেসব বড় বড় স্বার্থ এবং আনন্দের উপকরণই এখানে লাভ করা সম্ভব তা নিতান্তই নগণ্য এবং কেবল কয়েক বছরের ধার করা জীবন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ । তার অবস্থাও আবার এমন যে, ভাগ্যের একটি বিপর্যয় ও বিড়ম্বনা এ পৃথিবীতেই ওগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। পক্ষান্তরে আখেরাতের জীবন এক বিশাল ও স্থায়ী জীবন। সেখানকার কল্যাণও বিশাল ও স্থায়ী এবং ক্ষতিও বিশাল এবং স্থায়ী। সেখানে কেউ যদি আল্লাহর মাগফিরাত ও সন্তুষ্টি পেয়ে যায় তাহলে সে চিরদিনের জন্য এমন নিয়ামত লাভ করলো যার সামনে গোটা পৃথিবীর ধন-সম্পদ এবং রাজত্বও অতিশয় নগণ্য ও হীন। আর সেখানে যে আল্লাহর আযাবে গ্রেফতার হলো, সে যদি দুনিয়াতে এমন কিছুও পেয়ে যায় যা সে নিজে বড় মনে করতো। তবুও সে বুঝতে পারবে যে, সে ভয়ানক ক্ষতিকর ব্যবসায় জীবন পার করেছে।

অর্থাৎ এর বাস্তবতা শুধুমাত্র এতটুকুই যেমন ছোট ছেলেরা কিছুক্ষণের জন্য নেচে গেয়ে আমোদ করে এবং তারপর যার যার ঘরে চলে যায়। এখানে যে রাজা হয়ে গেছে সে আসলে রাজা হয়ে যায়নি বরং শুধুমাত্র রাজার অভিনয় করছে। এক সময় তার এ খেলা শেষ হয়ে যায়। তখন সে ঠিক তেমনি দীনহীন অবস্থায় রাজ সিংহাসন থেকে বিদায় নেয় যেভাবে এ দুনিয়ার বুকে এসেছিল। অনুরূপভাবে জীবনের কোন একটি আকৃতিও এখানে স্থায়ী ও চিরন্তন নয়। যে যে অবস্থায়ই আছে সাময়িকভাবেএকটি সীমিত সময়কালের জন্যই আছে। মাত্র কয়েকদিনের জীবনের সাফল্যের জন্য যারা প্রাণপাত করে এবং এবং এরি জন্য বিবেক ও ঈমান বিকিয়ে দিয়ে সামান্য কিছু আয়েশ আরামের উপকরণ ও শক্তি- প্রতিপত্তির জৌলুস করায়ত্ত করে নেয়, তাদের এ সমস্ত কাজ মন ভুলানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব খেলনার সাহায্যে তারা যদি দশ, বিশ বা ষাট সত্তর বছর মন ভুলানোর কাজ করে থাকে এবং তারপর শূন্য হাতে মৃত্যুর দরোজা অতিক্রম করে ভ্রমন জগতে পৌঁছে যায় সেখানকার স্থায়ী ও চিরন্তন জীবনে তাদের এ খেলা এক প্রতিপত্তিহীন রোগে পরিণত হয়, তাহলে এ ছেলে ভুলানোর লাভ কি ৷

. অর্থাৎ যদি তারা একথা জানতো, এ দুনিয়ার জীবন একটি পরীক্ষার অবকাশ মাত্র এবং মানুষের জন্য আসল জীবন, যা চিরকাল স্থায়ী হবে, তা হচ্ছে আখেরাতের জীবন, তাহলে তারা এখানে পরীক্ষার সময়- কালকে খেলা তামাশায় নষ্ট না করে এর প্রতিটি মুহূর্ত এমনসব কাজে ব্যবহার করতো যা সেই চিরন্তন জীবনের জন্য উৎকৃষ্ট ফলদায়ক হতো।

. ২১নং আয়াত

দৌড়াও ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে

﴿سَابِقُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أُعِدَّتْ لِلَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ﴾

২১) দৌড়াও এবং একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো । তোমার রবের মাগফিরাতের দিকে এবং সে জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের মত ৷ তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সে লোকদের জন্য যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের প্রতি ঈমান এনেছে৷ এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ৷ যাকে ইচ্ছা তিনি তা দান করেন৷ আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল ৷

মুত্তাক্বীরাই রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দৌড়ায়

﴿وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ﴾

দৌড়ে চলো তোমাদের রবের ক্ষমার পথে এবং সেই পথে যা পৃথিবী ও আকাশের সমান প্রশস্ত জান্নাতের দিকে চলে গেছে, যা এমন সব আল্লাহভীরু লোকদের জন্য তৈরী।(ইমরান-১৩৩)তাই আমাদেরকে তাকওয়া ভিত্তিক জীবন যাপন করতে হবে। কারণ মুত্তাকীরাই আল্লাহ্‌র কাছে সম্মানিত।

দুনিয়া লাভের প্রতিযোগিতার চেয়ে ভালো জিনিস কি?

.

﴿قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍ مِّن ذَٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ﴾

১৫) বলো, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো, ওগুলোর চাইতে ভালো জিনিস কি? যারা তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে বাগান, তার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হয়৷ সেখানে তারা চিরন্তন জীবন লাভ করবে৷ পবিত্র স্ত্রীরা হবে তাদের সংগিনী এবং তারা লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ৷ আল্লাহ তার বান্দাদের কর্মনীতির ওপর গভীর ও প্রখর দৃষ্টি রাখেন ৷(ইমরান-১৫)

আল্লাহ্‌ তায়ালা ডাকছেন শান্তির ভুবনের দিকেঃ

﴿وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾

২৫) (তোমরা এ অস্থায়ী জীবনের প্রতারণা জালে আবদ্ধ হচ্ছো) আর আল্লাহ তোমাদের শান্তির ভুবনের দিকে আহবান জানাচ্ছেন৷ (হেদায়াত তার ইখতিয়ারভুক্ত) যাকে তিনি চান সোজা পথ দেখান ৷ (ইউনুস-২৫)

অর্থাৎ দুনিয়ায় জীবন যাপন করার এমন পদ্ধতির দিকে তোমাদের আহবান জানানো ,যা আখেরাতের জীবনে তোমাদের দারুস সালাম বা শান্তির ভবনের অধিকারী করে । দারুস সালাম বলতে জান্নাত বুঝানো হয়েছে এবং এর মানে হচ্ছে শান্তি ও নিরাপত্তার ভবন বা গৃহ। এমন জায়গাকে দারুস সালাম বলা হয়েছে যেখানে কোন বিপদ, ক্ষতি, দুঃখ ও কষ্ট নেই।

যারা রবের ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দৌড়ায় তাদের জন্যে রয়েছে কল্যাণ এবং আরো বেশী

﴿لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾

২৬) যারা কল্যাণের পথ অবলম্বন করেছে তাদের জন্য আছে কল্যাণ এবং আরো বেশী ৷ কলংক কালিমা বা লাঞ্ছনা তাদের চেহারাকে আবৃত করবে না ৷ তারা জান্নাতের হকদার, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল ৷(ইউনুস-২৬)

তারা কেবল তাদের নেকী অনুযায়ীই প্রতিদান পাবে না রবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে পুরস্কৃতও করবেন।

জান্নাতে মুত্তাকীদের জন্যে যে সব নেয়ামত প্রস্তুত রাখা হয়েছে তার বর্ণনা দিয়ে সূরা মুহাম্মাদ-এর ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

﴿مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ ۖ

১৫) মুত্তাকীদের জন্য যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তার অবস্থা এই যে, তার মধ্যে স্বচ্ছ ও নির্মল পানির নহর বইতে থাকবে৷ এমন সব দুধের নহর বইতে থাকবে যার স্বাদ কখনো নষ্ট হয় না। শরাবের নহর বইতে থাকবে যা পানকারীদের জন্যে হবে অতীব সুস্বাদু এবং বইতে থাকবে স্বচ্ছ ও নির্মল মধুর নহর ৷ এ ছাড়াও তাদের জন্য সেখানে থাকবে সব রকমের ফল এবং তাদের রবের পক্ষ থেকে থাকবে ক্ষমা ৷

সূরা আল- মুতাফফিফীনের ২২-২৬ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

(22) إِنَّ الْأَبْرَارَ لَفِي نَعِيمٍ(23) عَلَى الْأَرَائِكِ يَنظُرُونَ (24)تَعْرِفُ فِي وُجُوهِهِمْ نَضْرَةَ النَّعِيمِ (25) يُسْقَوْنَ مِن رَّحِيقٍ مَّخْتُومٍ (26)خِتَامُهُ مِسْكٌ ۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلْيَتَنَافَسِ الْمُتَنَافِسُونَ﴾

)২২) নিসন্দেহে নেক লোকেরা থাকবে বড়ই আনন্দে ৷ ) ২৩) উঁচু আসনে বসে দেখতে থাকবে৷ )২৪) তাদের চেহারায় তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবে।)২৫) তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধতম পানিয় পান করানো হবে৷ ২৬) তার ওপর মিশক-এর মোহর থাকবে ৷ যারা অন্যদের ওপর প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চায় তারা যেন এই জিনিসটি হাসিল করার জন্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হবার চেষ্টা করে ৷

সূরা আদ-দাহর-এর ১৩থেকে ২০নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

13.مُّتَّكِئِينَ فِيهَا عَلَى الْأَرَائِكِ ۖ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًا وَلَا زَمْهَرِيرً 14.وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَالُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًا 15.وَيُطَافُ عَلَيْهِم بِآنِيَةٍ مِّن فِضَّةٍ وَأَكْوَابٍ كَانَتْ قَوَارِيرَا 16.قَوَارِيرَ مِن فِضَّةٍ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًا 17.وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا 18.عَيْنًا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلْسَبِيلًا 19.وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًا مَّنثُورًا 20. وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًا وَمُلْكًا كَبِيرًا

১৩) তারা সেখানে উঁচু আসনের ওপরে হেলান দিয়ে বসবে৷ সেখানে রোদের উত্তাপ কিংবা শীতের তীব্রতা তাদের কষ্ট দেবে না ৷ (১৪) জান্নাতের বৃক্ষরাজির ছায়া তাদের ওপর ঝুঁকে পড়ে ছায়া দিতে থাকবে ৷আর তার ফলরাজি সবসময় তাদের নাগালের মধ্যে থাকবে (তারা যেভাবে ইচ্ছা চয়ন করতে পারবে।(১৫) তার সামনে রৌপ্য পাত্র ও সচ্ছ কাঁচের পাত্রসমূহ পরিবেশিত হতে থাকবে ৷কাঁচ পাত্রও হবে রৌপ্য জাতীয়। (১৬) রূপার পাত্রে (জান্নাতের ব্যবস্থাপকরা)সঠিক পরিমাণে পূর্ণ করে রাখবে ৷(১৭) সেখানে তাদের এমন পানীয় পান করানো হবে যাতে আদার নির্যাস মেশানো থাকবে ৷ (১৮) এটি জান্নাতের একটি ঝর্ণা যা সালসাবীল নামে অভিহিত ৷ (১৯) তাদের সেবার জন্য এমন সব কিশোর বালক সদা তৎপর থাকবে যারা চিরদিনই কিশোর থাকবে ৷ তুমি তাদের দেখলে মনে করবে যেন ছড়ানো ছিটানো মনি-মুক্তা ৷(২০) তুমি যে দিকেই তাকাবে সেদিকেই শুধু নিয়ামত আর ভোগের উপকরণের সমাহার দেখতে পাবে এবং বিশাল সাম্রাজ্য তোমাদের দৃষ্টিগোচর হবে ৷

একটি হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

اعْدَدْتُ لِعِبادىَ الصالحينَ مالاَ عَيْنٌ رَأَتْ وَلاَ اُذُنٌ سَمِعَت وَلاَ خَطَرَ عَلىَ قَلْبِ بَشَرٍ আমি আমার সালিহ বান্দাদের জন্যে এমন সব নি’য়ামত প্রস্তুত রেখেছি যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি,যার কথা কোনো কান কখনো শুনেনি,এবং যার ধারণা কোনো হৃদয়ে কখনো উদিত হয়নি।

বিষয়: বিবিধ

৩২০৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

259238
২৮ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৯
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : অতি সুন্দর একটা বিষয় শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই। আল্লাহ আপনাকে এর উত্তর প্রতিদান দান করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File