ভাইয়ের এ সম্পর্কে যাতে ফাটল না ধরে সে জন্যে যে বিষয় গুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল কাদের হেলাল ০১ জানুয়ারি, ২০১৩, ০৫:১০:১৩ সকাল

ঈমান মুমিনদেরকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জুড়ে দেয়

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا

আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো৷ তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র ৷ তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো ৷(১০৩)

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ ‌ মু’মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই ৷ (হুজুরাত-১০)

এ আয়াতটি দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানকে এক বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে । দুনিয়ার অন্য কোন আদর্শ বা মত ও পথের অনুসারীদের মধ্যে এমন কোন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন পাওয়া যায় না যা মুসলমানদের মধ্যে পাওয়া যায় । এ থেকে প্রমানিত হয় যে, ইসলামী আন্দোলনে লোকদের সম্পর্ক হচ্ছে একটি আদর্শিক সম্পর্ক।এটা নছক কোন নিরস বা ঠুনকো সম্পর্ক নয়। বরং এতে যে স্থিতি,গভীরতা ও প্রগাঢ় ভালোবাসার সমন্বয় ঘটে,তাকে শুধু দুই ভাইয়ের সম্পর্কের দৃষ্টান্ত দ্বারাই প্রকাশ করা চলে।

ভাইয়ের এ সম্পর্কে যাতে ফাটল না ধরে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে

১। হক নষ্ট করাঃ

কুরআন ও হাদীসে মানুষের জন্য যে সীমারেখা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে তা মান্যকারীই সফল, আর তা লংঘন করে যদি কেউ কারো হক নষ্ট করে তার জন্যে অপমানজনক শাস্তি

﴿تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾

এগুলো আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা ৷ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করবে, তাকে আল্লাহ এমন বাগীচায় প্রবেশ করাবেন, যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৷ এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য ৷

.

﴿وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ﴾

আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানি করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করে যাবে, তাকে আল্লাহ আগুনে ফেলে দেবেন৷ সেখানে সে থাকবে চিরকাল, আর তার জন্য রয়েছে লাঞ্ছনা ও অপমানজনক শাস্তি৷(নিসা-১৩,১৪)

تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ﴾

এগুলো আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা, এগুলো অতিক্রম করো না ৷ মূলত যারাই আল্লাহ নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করবে তারাই জালেম ৷(বাকারা-২২৯)

রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ

من اقتطع حق امرء مسلم بيمينه فقد اوجب الله له النار وحرم عليه الجنة

যে ব্যক্তি কসম খেয়ে কোন মুসলমানের হোক নষ্ট করেছে, আল্লাহ্‌ নিঃসন্দেহে তার জন্যে জাহান্নামকে অনিবার্য এবং জান্নাতকে করে দিয়েছেন।

সাহাবীদের থেকে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা যদি কোন মামুলী জিনিস হয়? রাসূল(সাঃ) বললেন তা যদি পীলো গাছের একটি অকেজো ডালও হয় তবুও।

একবার আল্লাহ্‌র রাসূল(সাঃ) জিজ্ঞেস করেন তোমরা কি জানো দরিদ্র কে ? সাহাবাগন বললেন যে ব্যক্তির মাল মাত্তা নেই সেই দরিদ্র।

রাসূল(সাঃ) বল্লেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে আসল দরিদ্র হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামাজ,রোযা, ও যাকাতের ন্যায় আমল নিয়ে আসবে এবং সে সংগে গালি দেয়া, কারুর উপর অপবাদ দেয়া, কারুর মাল খাওয়া, কারুর রক্তপাত করা, এবং কাউকে মারধর করার আমলও নিয়ে আসবে। অতঃপর একজন মাজলুমকে তার নেকী দিয়ে দেয়া হবে। তারপর দেয়া হবে দ্বিত্বীয় মাজলুমকে তার নেকী। এভাবে চুড়ান্ত ফায়সালার আগে তার নেকী যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে হকদারের পাপ এনে তার ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে এবং তাকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।(মুসলিম)

২। দেহ ও প্রানের নিরাপত্তা :

প্রত্যেক মুসলমানের কাছে সবচেয়ে প্রিয় ও মূল্যবান হচ্ছে দেহ ও প্রাণ এ ব্যপারে যে ব্যক্তি অন্যায় আচরন করবে তাকে সে কখনো নিজের ভাই বলে মনে করতে পারে না ।

﴿وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا﴾

আর যে ব্যক্তি জেনে বুঝে মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম৷ সেখানে চিরকাল থাকবে৷ তার ওপর আল্লাহর গযব ও তাঁর লানত এবং আল্লাহ তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন৷ (নিসা-৯৩)

المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده

মুসলমান হচ্ছে সে ব্যক্তি, যার মুখ ও হাত থেকে সমস্ত মুসলমান নিরাপদ থাকে। (বুখারী ও মুসলিম)

রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ

سباب المسلم فسوق وقتاله كفر

মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী আর লড়াই করা হচ্ছে কুফুরী(বুখারী ও মুসলিম)

হাতের চাইতে মুখের অপব্যবহার ভাইয়ের সম্পর্ককে অত্যন্ত নাজুক ও জটিল করে তোলে।

৩। খারাপ নামে ডাকা ও গালাগাল :

وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ

পরস্পরকে খারাপ নামে ডেকো না ৷(হূজুরাত-১১)

এ নির্দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন ব্যক্তিকে এমন নামে ডাকা না হয় অথবা এমন উপাধি না দেয়া হয় যা তার অপছন্দ এবং যা দ্বারা তার অবমাননা ও অমর্যাদা হয় । যেমন কাউকে ফাসেক বা মুনাফিক বলা । কাউকে খোঁড়া , অন্ধ অথবা কানা বলা । কাউকে তার নিজের কিংবা মা -বাপের অথবা বংশের কোন দোষ বা ক্রুটির সাথে সম্পর্কিত করে উপাধি দেয়া । মুসলমান হওয়ার পর তার পূর্ব অনুসৃত ধর্মের কারণে ইহুদী ব খৃষ্টান বলা । কোন ব্যক্তি, বংশ, আত্মীয়তা অথবা গোষ্ঠির এমন নাম দেয়া যার মধ্যে তার নিন্দা ও অপমানের দিকটি বিদ্যমান । তবে যেসব উপাধি বাহ্যত খারাপ কিন্তু তা দ্বারা কারো নিন্দা করা উদ্দেশ্য নয়, রবং ঐ উপাধি দ্বারা যাদের সম্বোধন করা হয় তা তাদের পরিচয়ের সহায়ক এমন সব উপাধি এ নির্দেশের মধ্যে পড়ে না । এ কারণে মুহাদ্দিসগণ "আসমাউর রিজাল" ( বা হাদীসের রাবীদের পরিচয় মূলক) শাস্ত্রে সুলায়মান আল আ'মাশ ( ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন সুলায়মান) এবং ওয়াসেল আল আহদাব ( কুঁজো ওয়াসেল) এর মত নামের উল্লেখ রেখেছেন । যদি একই নামের কয়েকজন লোক থাকে এবং তাদের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে তার বিশেষ কোন উপাধি দ্বারাই কেবল চেনা যায় তাহলে ঐ উপাধি খারাপ হলেও তা বলা যেতে পারে । যেমন আবদুল্লাহ নামের যদি কয়েকজন লোক থাকে আর তাদের মধ্যে একজন অন্ধ হয় তাহলে তাকে চেনা সুবিধানর জন্য আপনি অন্ধ আবদুল্লাহ, বলতে পারেন । অনুরূপ এমন সব উপাধী বা উপনাম এ নির্দেশের মধ্যে পড়বে না যা দ্বারা বাহ্যত অমর্যাদা বুঝায় । কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ভালবাসা ও স্নেহবশতই রাখা হয় এবং যাদেরকে এ উপাধি বা উপনামে ডাকা হয় তারা নিজেরাও তা পছন্দ করে । যেমন, আবু হুরাইরা এবং আবু তুরাব ।

بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ

ঈমান গ্রহণের পর গোনাহর কাজে প্রসিদ্ধ লাভ করা অত্যন্ত জঘন্য ব্যাপার৷ (হূজুরাত-১১)

ঈমানদার হওয়া সত্ত্বেও সে কটুভাষী হবে এবং অসৎ ও অন্যায় কাজের জন্য বিখ্যাত হবে এটা একজন ঈমানদারের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ব্যাপার । কোন কাফের যদি মানুষদেরকে ঠাট্রা-বিদ্রুপ ও উপহাস করা কিংবা বেছে বেছে বিদ্রুপাত্মক নাম দেয়ার ব্যাপারে খুব খ্যাতি লাভ করে তাহলে তা মনুষ্যত্বের বিচারে যদিও সুখ্যাতি নয় তবুও অন্তত তার কুফরীর বিচারে তা মানায় । কিন্তু কেউ আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং আখেরাতে বিশ্বাস করা সত্ত্বেও যদি এরূপ হীন বিশেষণে ভূষিত হয় তাহলে তার জন্য পানিতে ডুবে মরার শামিল ।

রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ

ليس المؤمن بالطعان ولا بالعان ولا الفاحش ولا البذى

মুমিন না বিদ্রুপকারী হয়,না লানত দানকারী, না অশ্লীলভাষী আর না বাচাল হয়।(তিরমিযি)

রাসূল(সাঃ) আরো বলেছেনঃ

"যে ব্যক্তির কটু বাক্যের ভয়ে লোকজন তার সাথে উঠাবসা পরিত্যাগ করে কিয়ামতের দিন সে হবে আল্লাহ তা'আলর কাছে জঘন্যতম ব্যক্তি । " ( বুখারীও মুসলিম)

মোট কথা, মুমিন তার ভাইয়ের সামনে তার মান-ইজ্জতের উপর কোনরূপ হামলা করবে না ।

৪। গীবতঃ

وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

আর তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে৷ এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে, যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে ?(হুজুরাত-১২)

গীবতের সংজ্ঞা বর্ননা করতে গিয়ে রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ

ذكرك اخاك بما يكره فقيل ارايت ان كان فى اخى ما اقول؟ قال ان كان فيه ما تقول فقد اغتبته وان لم يكن فيه فقدبهته

"গীবত হচ্ছে, তুমি এমনভাবে তোমার ভাইয়ের কথা বললে যা তার কাছে অপছন্দীয় । প্রশ্ন করা হলো, আমি যা বলছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে সত্যিই থেকে থাকে তাহলে আপনার মত কি৷ তিনি বললেনঃ তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে থাকে তাহলেই তো তুমি তার গীবত করলে । আর তা যদি না থাকে তাহলে অপবাধ আরোপ করলে ।(মুস্লিম,আবু দাউদ)

এ কাজ স্পষ্ট বক্তব্যের মাধ্যমে করা হোক বা ইশারা ইংগিতের মাধ্যমে করা হোক সর্বাবস্থায় হারাম । অনুরূপভাবে এ কাজ ব্যক্তির জীবদ্দাশায় করা হোক বা মৃত্যুর পরে করা হোক উভয় অবস্থায়ই তা সমানভাবে হারাম ।

আবু দাউদের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, মায়েয ইবনে মালেক আসলামীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অপরাধে 'রজম' করার শাস্তি কার্যকর করার পর নবী ( সা) পথে চলতে চলতে শুনলেন এক ব্যক্তি তার সংগীকে বলছেঃ এ লোকটার ব্যাপারটাই দেখো, আল্লাহ তার অপরাধ আড়াল করে দিয়েছিলেন । কিন্তু যতক্ষণ না তাকে কুকুরের মত হত্যা করা হয়েছে ততক্ষণ তার প্রবৃত্তি তার পিছু ছাড়েনি । সামনে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে একটি গাধার গলিত মৃতদেহ দৃষ্টিগোচর হলো । নবী ( সা) সেখানে থেমে গেলেন এবং ঐ দু'ব্যক্তিকে ডেকে বললেনঃ "তোমরা দু'জন ওখানে গিয়ে গাধার ঐ মৃত দেহটা আহার করো । " তারা দুজনে বললোঃ হে আল্লাহর রসূল, কেউ কি তা খেতে পারে৷ নবী ( সা) বললেনঃ তোমরা এইমাত্র তোমাদের ভাইয়ের সম্মান ও মর্যাদার ওপর যেভাবে আক্রমণ চালাচ্ছিলে তা গাধার এ মৃতদেহ খাওয়ার চেয়ে অনেক বেশী নোংরা কাজ ।

৫।অপবাদঃ

জেনে শুনে নিজের ভাইকে অপরাধী ভাবা অথবা তার প্রতি কোন অকৃত গুনাহ আরোপ করাকে বলা হয় অপবাদ।

﴿وَمَن يَكْسِبْ خَطِيئَةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِ بَرِيئًا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا﴾

আর যে ব্যক্তি কোন অন্যায় বা গোনাহর কাজ করে কোন নিরপরাধ ব্যক্তির ওপর তার দোষ চাপিয়ে দেয়, সে তো বড় মারাত্মক মিথ্যা অপবাদ ও সুস্পষ্ট গোনাহের বোঝা নিজের মাথায় তুলে নেয়৷(নিসা-১১২)

﴿وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا﴾

আর যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরেক মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দিয়ে কষ্ট দেয় তারা একটি বড় অপবাদ ও সুষ্পষ্ট গোনাহের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে৷(আহযাব-৫৮)

এ কাজটি কেবলমাত্র একটি নৈতিক গোনাহই নয়, আখেরাতে যার শান্তি পাওয়া যাবে বরং এ আয়াতের দাবী হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্রের আইনেও মিথ্যা অপবাদ দান করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করতে হবে।

৬।চোগলখুরীঃ

গীবত ও অপবাদ যে আগুন জ্বালায় চোগলখুরী তাকে চতূর্দিকে ছড়িয়ে দেয়। স্বার্থবাদিতাই এর আসল কারণ। চোগলখোর ব্যক্তি দুজনেরই বন্ধু সাজে কিন্তু অমঙ্গল চায়। তাই সে মনোযোগ দিয়ে দুজনেরই কথা শুনে, কারুর প্রতিবাদ করে না । তারপর বন্ধুর নিকট এ খবর পৌছিয়ে দেয়। এভাবে যে আগুন এক জায়গায় লেগেছিল তাকে অন্য জায়গায় লাগাতেও সাহায্য করে । ইসলামী শরীয়ত এ কাজকে হারাম গণ্য করেছে ।

কুরআনে চোগলখুরীকে মানুষের জঘন্যতম দোষরূপে জানিয়ে দেয়া হয়েছে ।

هَمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيمٍ﴾

যে গীবত করে, চোগলখুরী করে বেড়ায়।(কালাম-১১)

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন :

لا يدخل الجنة نمام কোনো চোগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না ।

রাসূল(সাঃ) আরো বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে সবচাইতে খারাপ যার দুটি মুখ । সে একদলের নিকট একটি মুখ নিয়ে আসে আর একদলের নিকট অন্য মুখ নিয়ে আসে ।

রাসূল(সাঃ) আরো বলেছেনঃ

لا يبلغنى احد من اصحابى شيأ فانى احب ان اخرج اليكم وانا سليم الصدر

কোনো ব্যক্তি কারো সম্পর্কে কোনো খারাপ কথা আমার কাছে পৌছাবে না, কারণ আমি যখন তোমাদের কাছে আসি,তখন সবার প্রতিই আমার মন পরিষ্কার থাকুক, এটাই আমি পছন্দ করি।(আবু দাউদ)

৭। লজ্জা দেয়াঃ

মানুষের মনে ঘৃনা ও বিদ্ধেষ সৃষ্টিকারী রূপ হচ্ছে-আপন ভাইকে তার সাক্ষাতে বা অন্য লোকের সামনে তার দোষ-ত্রুটির জন্য লজ্জা দেয়া এ আচরণের ফলে তার হৃদয় বিদীর্ন হয়ে যায়।কারণ এমনি অবমাননা কোনো মানুষই সহ্য করতে পারে না।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ আপন ভাইয়ের প্রতি দোষারোপ করো না।(হুজুরাত-১১)

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ﴾ ধ্বংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে (সামনা সামনি) লোকদের ধিক্কার দেয় এবং (পেছনে ) নিন্দা করতে অভ্যস্ত । (হুমাযাহ-১)

রাসূলে কারীম(সাঃ) বলেছেনঃ

من غير اخاه بذنب لم يمت حتى يعمله যে ব্যক্তি তার ভাইকে কোনো গুনাহের জন্য লজ্জা দিলো তার দ্বারা সেই গুনাহের কাজ না হওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুবরণ করবে না।(তিরমিযি)

৮।দোষ খুঁজে বেড়ানোঃ

وَلَا تَجَسَّسُوا আর দোষ খুঁজে বেড়িয়ো না।(হুজুরাত-১২)

অর্থাৎ মানুষের গোপন বিষয় তালাশ করো না । একজন আরেকজনের দোষ খুঁজে বেড়িও না । অন্যদের অবস্থা ও ব্যাপার স্যাপার অনুসন্ধান করে বেড়াবে না । খারাপ ধারণা বশবর্তী হয়ে এ আচরণ করা হোক কিংবা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য করা হোক অথবা শুধু নিজের কৌতুহল ও ঔৎসুক্য নিবারণের জন্য করা হোক শরীয়াতের দৃষ্টিতে সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ । অন্যদের যেসব বিষয় লোকচক্ষুর অন্তরালে আছে তা খোঁজাখুঁজি করা এবং কার কি দোষ-ক্রটি আছে ও কার কি কি দুর্বলতা গোপন আছে পর্দার অন্তরালে উকি দিয়ে তা জানার চেষ্টা করা কোন মু'মিনের কাজ নয় । মানুষের ব্যক্তিগত চিঠিপত্র পড়া, দু'জনের কথোপকথন কান পেতে শোনা, প্রতিবেশীর ঘরে উঁকি দেয়া এবং বিভিন্ন পন্থায় অন্যদের পারিবারিক জীবন কিংব তাদের ব্যক্তিগত বিষয়াদি খোঁজ করে বেড়ানো একটি বড় অনৈতিক কাজ । এর দ্বারা নানা রকম ফিতনা -ফাসাদ সৃষ্টি হয় ।

এ কারণে একবার নবী ( সা) তার খোতবায় দোষ অন্বেষণকারীদের সম্পর্কে বলেছেনঃ"হে সেই সব লোকজন, যারা মুখে ঈমান এনেছো কিন্তু এখনো ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গোপনীয় বিষয় খুঁজে বেড়িও না । যে ব্যক্তি মুসলমানদের দোষ-ত্রুটি তালাশ করে বেড়াবে আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটির অন্বেষণে লেগে যাবেন । আর আল্লাহর যার ক্রুটি তালাশ করেন তাকে তার ঘরের মধ্যে লাঞ্ছিত করে ছাড়েন । " ( আবু দাউদ, )

হযরত মুয়াবিয়া ( রা) বলেন, আমি নিজে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ"তুমি যদি মানুষের গোপনীয় বিষয় জানার জন্য পেছনে লাগো । তাদের জন্য বিপর্যয় সৃষ্টি করবে কিংবা অন্তত বিপর্যয়ের দ্বার প্রান্তে পৌছে দেবে । " ( আবু দাউদ)

অপর এক হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মনে কারো সম্পর্কে সন্দেহ হলে, অন্বেষণ করো না । "( আহকামুল কুরআন-জাস্সাস) অপর একটি হাদীসে নবী ( সা) বলেছেনঃ"কেউ যদি কারো গোপন দোষ-ত্রুটি দেখে ফেলে এবং তা গোপন রাখে তাহলে সে যেন একজন জীবন্ত পূঁতে ফেলা মেয়ে সন্তানকে জীবন দান করলো । " ( আল জাস্সাস) ।

তবে কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খোঁজ-খবর নেয়া ও অনুসন্ধান করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তবে সেটা এ নির্দেশের আওতাভুক্ত নয় । যেমনঃ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচার-আচরণে বিদ্রোহের কিছুটা লক্ষণ সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে । ফলে তারা কোন অপরাধ সংঘটিত করতে যাচ্ছে বলে আশংকা সৃষ্টি হলে সরকার তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে পারে । অথবা কোন ব্যক্তিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয় বা তার সাথে ব্যবসায়িক লেনদেন করতে চায় তাহলে তার ব্যাপারে নিশ্চিত হবার জন্য সে তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে ও খোঁজ-খবর নিতে পারে ।

৯। কানাঘুষা করা

﴿إِنَّمَا النَّجْوَىٰ مِنَ الشَّيْطَانِ لِيَحْزُنَ الَّذِينَ آمَنُوا এই কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ; মুমিনদেরকে দুঃখ দেয়ার দেয়ার জন্যে একাজ করা হয় । (মুজাদালাহ-১০)

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَنَاجَيْتُمْ فَلَا تَتَنَاجَوْا بِالْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَمَعْصِيَتِ الرَّسُولِ وَتَنَاجَوْا بِالْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ﴾

হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখণ পরস্পরে গোপন আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হও তখন পাপ, জুলুম ও রসূলের অবাধ্যতার কথা বলাবলি করো না, বরং সততা ও আল্লাহভীতির কথাবার্তা বল ।(মুজাদালাহ-৯) এ আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, পরস্পর আলাপ-আলোচনা করা মূলত কোন নিষিদ্ধ কাজ নয়। যারা এধরনের আলাপ আলোচনা করে তারা কেমন চরিত্রের লোক, যে পরিবেশে ও পরিস্থিতেতে এরূপ আলোচনা করা হয় তা কি ধরনের পরিবেশ ও পরিস্থিতি এবং যে কথাবার্তা এভাবে গোপনে অনুষ্ঠিত হয় তা কি ধরনের কথাবার্তা, তার ওপরই এর বৈধতা বা অবৈধতা নির্ভরশীল। সমাজে যাদের সততা, ন্যায়নিষ্ঠতা ও নির্মল চরিত্রের সর্বব্যাপী -খ্যাতি ও পরিচিতি বিরাজমান, তারা কোথাও গোপন পরামর্শে লিপ্ত দেখলে কারো মনে এরূপ সন্দেহ জন্মে না যে, তারা কোন দুরভিসন্ধিতে বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে সমাজে যারা অনাচার ও অপকর্মের হোতা এবং দুশ্চরিত্র রূপে খ্যাত, তাদের গোপন সলাপরামর্শ যে কোন মানুষের মনে এরূপ খটকা ও শংকার জন্ম দেয় যে, একটা কিছু গোলযোগ পাকানোর প্রস্তুতি নিশ্চয়ই চলেছে। ঘটনাচক্রে কখনো দুচার ব্যক্তি কোন ব্যাপারে চুপিসারে কিছু আলোচনা সেরে নিলে সেটা কোন আপত্তিকর ব্যাপার হয় না। কিন্তু লোক যদি নিজেদের একটা আলাদা স্থায়ী দল বানিয়ে নেয় এবং সাধারণ মুসলামানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হরহামেশা গোপন সলাপরামর্শ চালাতে থাকে, তাহলে সেটা অবশ্যই একটা সুর্যোগের পূর্বলক্ষণ। আর না হোক, এ দ্বারা অন্তত একটুকু ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী যে এতে মুসলমানদের মধ্য দলাদলির ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে। সর্বোপরি, যে জিনিসের ওপর এসব গোপন সলাপরামর্শের বৈধ বা অবৈধ হওয়া নির্ভর করে । তা হচ্ছে এ গোপন সলাপরামর্শের উদ্দেশ্যে ও বিষয়বস্তু। দুই ব্যক্তি যদি কোন ঝগড়া বিবাদের মীমাংসা করিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কারো কোন ন্যায্য প্রাপ্য আদায় করিয়ে দেয়ার মানসে অথবা কোন ভালো কাজে অংশ গ্রহণের লক্ষে গোপন আলাপ আলোচনা করে, তবে তা কোন অন্যায় কাজ নয়, বরং তা সওয়াবের কাজ। পক্ষান্তরে একাধিক ব্যক্তির সলাপরামর্শের উদ্দেশ্য যদি হয় কোন গোলযোগ ও নাশকতা সংঘটিত করার চক্রান্ত করা, কারো অধিকর নষ্ট করা কিংবা কোন পাপকাজ সংঘটিত করার ফন্দি আঁটা -তাহলে এরূপ অসদুদ্দেশ্য পোষন করাটাই যে এক দুষ্কৃতি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই অসদুদ্দেশ নিয়ে গোপন সলাপরামর্শ করা দ্বিগুণ পাপ ও দুষ্কৃতি ।

এমন কি দুই ব্যক্তি যদি তৃতীয় ব্যক্তির উপাস্থিতিতেই সে বুঝতে পারে না এমন ভাষায় কথা বলে, তবে সেটাও এ অবৈধ গোপন সংলাপের আওতায় আসে। এরচেয়েও জঘন্য অবৈধ কাজ-হলো গোপন সংলাপের সময় কারো দিকে এমনভাবে তাকানো বা ইশারা করা, যাতে বুঝা যায় যে, তাকে নিয়েই তাদের কথাবার্তা চলেছে।

১০। রেগে যাওয়া :

عن أبي هريرة- رَضِيَ اللهُ عَنْهُ- أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيُّ- صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ: أوْصِنِيْ قَالَ : لَا تَغْضَبْ، فَرَدَّدَ مِرَارًا، قَالَ : لَا تَغْضَبْ. رواه البخاري (৫৬৫১)

আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে এসে বললেন, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। রাসূল বললেন, রাগ হয়ো না। সে ব্যক্তি বারংবার উপদেশ চাইলে রাসূল (একই উত্তর দিয়ে) তাকে বললেন,রাগ হয়ো না। বোখারি-৫৬৫১

রাগের পরিণাম খুবই অমঙ্গলজনক

(ক) রাগ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ফলে উত্তেজনার বশীভূত হয়ে অন্যায়ের নির্দেশ প্রদান করে। অত:পর যখন ক্রোধ থেমে যায়, তখন এর জন্য লজ্জিত হয়। যেমন কেউ রাগে অস্থির হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ফেলল। বা নিজ সন্তানকে অথবা আপনজনকে এমন প্রহার করল যে, সে রক্তাক্ত হয়ে গেল। এ রাগের কারণে নিশ্চয় পরবর্তীতে সে লজ্জিত হবে ।

(খ) ক্রোধান্ধ ব্যক্তি থেকে মানুষ পলায়ন করে, বর্জন করে তার আশপাশ । ফলে সে কখনো মানুষের শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা লাভ করতে পারে না, বঞ্চিত হয় মানুষের সু-দৃষ্টি হতে। বরং সব সময় মানুষের নিকট সে ঘৃণিত হয়ে থাকে।

(গ) রাগ হল মানুষের মাঝে শয়তানের প্রবেশদ্বার। এ পথে প্রবেশ করে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি নিয়ে সে খেলা করে।

(ঘ) রাগ পাপ কাজের দ্বার উন্মুক্তকারী।

(ঙ)রাগ সমাজে বিরাজমান পারস্পরিক আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যকে ভেঙে দিয়ে বিশৃঙ্খলা ও অমানবিকতা সৃষ্টি করে।

(চ) রাগ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কেননা অত্যধিক ক্রোধ মস্তিষ্ক—যা সম্পূর্ণ শরীরের নিয়ন্ত্রক এর উপর আঘাত হানে। ফলে তা বহু মূত্র, রক্তের বায়ুচাপ, ও হার্টের দুর্বলতাসহ অনেক রোগের কারণ হয়।

(জ) ক্রোধের পরিণামফল হল, নিজের সম্পদ ধ্বংস করা ও মানুষের রোষানলে পতিত হওয়া।

যারা রাগ দমন করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে ভালোবাসেন

وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ﴾

এবং যারা রাগ দমন করে ও অন্যের দোষ –ক্রটি মাফ করে দেয়৷ এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন৷(ইমরান-১৩৪)

১১। ঠাট্রা- বিদ্রূপ করাঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ

হে ঈমানদারগণ, পুরুষরা যেন অন্য পুরুষদের বিদ্রূপ না করে৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম৷ আর মহিলারাও যেন অন্য মহিলাদের বিদ্রূপ না করে৷ হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম।

বিদ্রূপ করার অর্থ কেবল কথার দ্বারা হাসি-তামাসা করাই নয় । বরং কারো কোন কাজের অভিনয় করা, তার প্রতি ইংগিত করা, তার কথা, কাজ, চেহারা বা পোশাক নিয়ে হাসাহাসি করা অথবা তার কোন ত্রুটি বা দোষের দিকে এমনভাবে দৃষ্টি আকর্ষন করা যাতে অন্যদের হাসি পায় । এ সবই হাসি -তামাসার অন্তুরভুক্ত । মূল নিষিদ্ধ বিষয় হলো কেউ যেন কোনভাবেই কাউকে উপহাস ও হাসি -তামাসার লক্ষ না বানায় । কারণ, এ ধরনে হাসি-তামাসা ও ঠাট্রা-বিদ্রূপের পেছনে নিশ্চিতভাবে নিজের বড়ত্ব প্রদর্শন এবং অপরের অপমানিত করা ও হেয় করে দেখানোর মনোবৃত্তি কার্যকর । যা নৈতিকভাবে অত্যন্ত দোষনীয় । এ কাজকে হারাম করে দেয়া হয়েছে ।

পুরুষ ও নারীদের কথা আলাদা করে উল্লেখ করার অর্থ এ নয় যে, পুরুষেদের নারীদেরকে বিদ্রূপের লক্ষ বানানো এবং নারীদের পুরুষদের হাসি-তামাসার লক্ষ বানানো জায়েয । মূলত যে কারণে নারী ও পুরুষের বিষয় আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছে তা হচ্ছে, ইসলাম এমন সমাজ আদৌ সমর্থন করে না । যেখানে নারী অবাধে মেলামেশা করতে পারে । অবাধ খোলামেলা মজলিসেই সাধারনত একজন আরেকজনকে হাসি তামাসার লক্ষ বানাতে পারে । মুহাররাম নয় এমন নারী পুরুষ কোন মজলিসে একত্র হয়ে পরস্পর হাসি -তামাসা করবে ইসলামে এমন অবকাশ আদৌ রাখা হয়নি । তাই একটি মুসলিম সমাজের একটি মজলিসে পুরুষ কোন নারীকে উপহাস ও বিদ্রূপ করবে কিংবা নারী কোন পুরুষকে বিদ্রূপ ও উপহাস করবে এমন বিষয় কল্পনার যোগ্যও মনে করা হয়নি ।

যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলমান ভাইকে ঠাট্রা-বিদ্রূপ করে, আখেরাতে তার ভয়ংকর পরিনতি সম্পর্কে রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ

লোকদের প্রতি বিদ্রূপ প্রদর্শনকারী ব্যক্তির জন্যে কিয়ামতের দিন জান্নাতের একটি দরজা খোলা হবে। এবং তাকে বলা হবে ভেতরে আসুন। সে কষ্ট করে সেদিকে আসবে এবং দরজা পর্যন্ত পৌছতেই তার সামনে দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। অতঃপর দ্বিতীয় দরজা খুলে বলা হবে ভেতরে আসুন।সে আবার কষ্ট করে আসবে যেই মাত্র সে কাছাকাছি পৌছাবে অমনি দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। এ ঘটনা পরম্পরা এমনিভাবেই অব্যাহত থাকবে।এমনকি এক সময় তার জন্যে জান্নাতের দরজা খুলে বলা হবে, আসুন। তখন সে নৈরাশ্যের কারণে সেদিকে যেতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে সাহসই পাবে না।

১২। তুচ্ছ জ্ঞান করাঃ

নিজেকে বড় মনে করা এবং অন্যকে তুচ্ছু জ্ঞান করার কারনেই এত সব মারাত্মক অপরাধে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। এদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেনঃ

عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ

হতে পারে তারাই এদের চেয়ে উত্তম৷ (হুজুরাত-১১)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনটি নাজাতদানকারী এবং তিনটি এবং ধ্বংসকারী বিষয় উল্লেখ করে বলেনঃ

واعجاب المرء بنفسه وهى اشد هن

একটি ধ্বংসকারী জিনিস হচ্ছে নিজেকে নিজে বুজর্গ ও শ্রেষ্ঠতম মনে করা আর এটা হচ্ছে নিকৃষ্টতম অভ্যাস।(বায়হাকী)

يحسب امرء من الشر ان يحقر اخاه المسلم এক ব্যক্তির গুনাহগার হবার জন্যে এতোটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করে । (মুসলিম)

১৩। নিকৃষ্ট অনুমানঃ

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ

হে ঈমানদাগণ, বেশী ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো কারণ কোন কোন ধারণা ও অনুমান গোনাহ ৷(হুজুরাত-১২)

বিনা কারণে কেউ অপরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা কিংবা অন্যদের ব্যাপারে মতস্থির করার বেলায় সবসময় খারাপ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই শুরু করা কিংবা এমন লোকেদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করা যাদের বাহ্যিক অবস্থা তাদের সৎ ও শিষ্ট হওয়ার প্রমাণ দেয় । অনুরূপভাবে কোন ব্যক্তি কোন কথা বা কাজে যদি ভাল ও মন্দের সমান সম্ভবনা থাকে কিন্তু খারাপ ধারণার বশবর্তী হয়ে আমরা যদি তা খারাপ হিসেবেই ধরে নেই তাহলে তা গোনাহের কাজ বলে গণ্য হবে । যেমনঃ কোন সৎ ও ভদ্র লোক কোন মাসজিদ থেকে উঠে যাওয়ার সময় নিজের জুতার পরিবর্তে অন্য কারো জুতা উঠিয়ে নেন আমরা যদি ধরে নেই যে, জুতা চুরি করার উদ্দেশ্যেই তিনি এ কাজ করেছেন । অথচ এ কাজটি ভুল করেও হতে পারে । কিন্তু ভাল সম্ভাবনার দিকটি বাদ দিয়ে খারাপ সম্ভাবনার দিকটি গ্রহণ করার কারণ খারাপ ধারণা ছাড়া আর কিছুই নয় ।

এর দ্বারা আপনা থেকেই বুঝা যায় যে, যখনই কোন ব্যক্তি ধারণার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কিংবা কোন পদক্ষেপ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তখন তার ভালভাবে যাচাই বাছাই করে দেখা দরকার, যে ধারণা সে পোষণ করেছে তা গোনাহের অন্তরভুক্ত নয় তো ৷ আসলেই কি এরূপ ধারণা পোষনের দরকার আছে ৷ এরূপ ধারণা পোষনের জন্য তার কাছে যুক্তিসংগত কারণ আছে কি ৷ সে ধারণার ভিত্তিতে সে যে কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করেছে তা কি বৈধ ৷ যেসব ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে এতটুকু সাবধানতা তারা অবশ্যই অবলম্বন করবে । লাগামহীন ধারণা পোষণ কেবল তাদেরই কাজ যারা আল্লাহর ভয় থেকে মুক্ত এবং আখেরাতের জবাবদিহি সম্পর্কে উদাসীন ।

اياكم والظن فان الظن اكذب الحديث তোমরা অনুমান পরিহার কর,কেননা অনুমান হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যা কথা। (বুখারী ও মুসলিম)

ভাইয়ের সম্পর্কে অনুমান বা সন্দেহ পোষন না করা যেমন প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য, তেমনি নিজের সম্পর্কে অপরকে সন্দেহ পোষণের সুযোগ না দেয়াও তার কর্তব্য । সন্দেহের সুযোগ দানকারী বিষয়কে যতদূর সম্ভব পরিহার করতে হবে । অপরকে কোন অবস্থায়ই ফেতনায় ফেলা উচিত নয় । এ সম্পর্কে স্বয়ং নাবী কারীম (সাঃ) দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন । একবার তিনি ইতেকাফে ছিলেন রাতে তাঁর জনৈকা স্ত্রী তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে এলেন । ফিরতি পথে তিনি তাঁকে এগিয়ে দিতে চললেন । ঘটনাক্রমে দুজন আনসারের সঙ্গে তাঁর দেখা হলো । তারা তাঁকে স্ত্রী লোকের সঙ্গে দেখে নিজেদের আগমনকে অসময় মনে করে ফিরে চললেন । অমনি তিনি তাদেরকে ডেকে বললেন শোনো, এ হচ্ছে আমার অমুক স্ত্রী । আনসারদ্বয় বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ ! কারো প্রতি যদি আমাদের সন্দেহ পোষণ করতেই হতো তবে কি আপনার প্রতি করতাম ? তিনি বললেন শয়তান মানুষের ভেতর রক্তের ন্যায় ছুটে থাকে ।

১৪। ক্ষতি সাধনঃ

কোনো মুসলমানের দ্বারা তার ভাইয়ের যাতে কোনো ক্ষতি সাধন না হয়, এদিকে লক্ষ রাখবে। এ ক্ষতি দৈহিকও হতে পারে, আর্থিকও হতে পারে, মানসিকও হতে পারে।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন :

لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ ۚ

আর মাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। এবং যার সন্তান তাকেও তার সন্তানের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন করা যাবে না। (বাকারা-২৩৩)

ক্ষতি সাধন করা গুনাহের কাজ :

وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ ۚ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। এমনটি করলে গোনাহের কাজ করবে । (বাকারা-২৮২)

এ সম্পর্কে রাসূলে কারীম(সাঃ) অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলেছেনঃ

ملعون من ضار مؤمنا او مكربه যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতি সাধন করে, অথবা কারো সঙ্গে ধোকাবাজি করে, সে হচ্ছে অভিশপ্ত।

১৫। মনে কষ্ট দেয়াঃ

কোন মুসলমান তার ভাইয়ের মনে কষ্ট দেয়া নিশ্চিতরূপে একটি অবাঞ্ছিত কাজ । এমন কাজকে কখনই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয় ।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন :

وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا﴾

আর যারা মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদেরেক কোন অপরাধ ছাড়াই কষ্ট দেয় তারা একটি বড় অপবাদ ও সুষ্পষ্ট গোনাহের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছে ৷ (আহযাব-৫৮)

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ হে ঈমানদারগণ!তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।(বাকারা-২৬৪)

রাসূল(সাঃ) বলেছেনঃ

যখন তিন ব্যক্তি একত্রিত হবে, তখন দু জনে কানালাপ করবে না। এই ভয়ে যে, সে দুশ্চিন্তায় পড়ে । (মুসলিম)

من اذى مسلما فقد اذى الله যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে কষ্ট দিলো,সে আল্লাহকেই কষ্ট দিলো।(তিরমিযি)

لا يحل للمسلم ان يروع مسلما

কোন মুসলিমকে হাসি-তামাসার মাধ্যমে উত্তক্ত করা মুসলমানের পক্ষে হালাল নয়।(আহমাদ,আবু দাউদ,তিরমিযি)

১৬। ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা করা বা বিশ্বাসঘাতকতা করা :

আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন :

﴿وَلَا تُجَادِلْ عَنِ الَّذِينَ يَخْتَانُونَ أَنفُسَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ خَوَّانًا أَثِيمًا﴾

যারা নিজেদের সাথে খেয়ানত ও প্রতারণা করে, তুমি তাদের সমর্থন করো না৷ আল্লাহ খেয়ানতকারী পাপীকে পছন্দ করেন না ৷(নিসা-১০৭)

যে ব্যক্তি অন্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে আসলে সবার আগে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজের সাথে। কারণ মন ও মস্তিষ্কের শক্তিগুলো তার কাছে আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখা হয়েছে। সে সেগুলোকে অযথা ব্যবহার করে তাদেরকে বিশ্বাসঘাতকতা করার ক্ষেত্রে তার সাথে সহযোগীতা করতে বাধ্য করে। আর যে বিবেবকে আল্লাহ তার নৈতিক চরিত্রের পাহারাদার বানিয়েছিলেন তাকে এমনভাবে দাবিয়ে দেয় যার ফলে এই বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষেত্রে সে তাকে কোন বাধা দিতে পারে না। মানুষ তার নিজের মধ্যে অত্যাচারমূলক পদক্ষেপকে যখন এভাবে পূর্ণতার পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দেয় তখনই বাইরে সে বিশ্বাসঘাতকতা ও পাপ কাজ করতে শুরু করে।

আল্লাহ্‌ তায়ালা আরো বলেন :

إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ নিশ্চয়ই আল্লাহ ধোকাবাজ, প্রতারককে পছন্দ করেন না।(আনফাল-৫৮)

إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍ كَفُورٍ

আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না। (সূরা-আল-হাজ্জ-৩৮)

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন :

قال كبرت خيانة ان تحدث اخاك حديثا هولك مصدق وانت به كاذب

সবচাইতে বড় বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে এই যে, তুমি তোমার ভাইকে কোন কথা বললে সে তোমাকে সত্যবাদী মনে করলো ; অথচ তুমি তাকে মিথ্যা কথা বললে । (তিরমিযি)

১৭। হিংসাঃ

হিংসা কাকে বলে


হিংসার সংজ্ঞা হলো, কোন মানুষের প্রতি আল্লাহ্‌ তায়ালার কোন নিয়ামত, যেমন ধন - দৌলত, জ্ঞান-বুদ্ধি বা সৌন্দর্য সূষমাকে পছন্দ না করা এবং তার থেকে এ নিয়ামতগুলো ছিনিয়ে নেয়া হোক, মনে প্রানে এটা কামনা করা । হিংসার ভেতর নিজের জন্যে নিয়ামতের আকাংখার চাইতে অন্যের থেকে ছিনিয়ে নেয়ার আকাংখাটাই প্রবল থাকে । হিংসার মূলে থাকে কখনো বিদ্বেষ ও শত্রুতা, কখনো ব্যক্তিগত অহমিকা ও অপরের সম্পর্কে হীনমন্যতাবোধ, কখনো অন্যকে অনুগত বানানোর প্রেরণা, কখনো কোন সম্মিলিত কাজে নিজের ব্যর্থতা ও অপরের সাফল্য লাভ, আবার কখনো শুধু মান-ইজ্জত লাভের আকাংখাই এর কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।

হিংসা সম্পর্কে নাবী কারীম (সাঃ) এ মর্মে সতর্কবানী উচ্চারণ করেছেন

: اياكم والحسد فان الحسد يأكل الحسنات كما تأكل النار الحطب

তোমরা হিংসা হতে বেঁচে থাকো । কেননা হিংসা নেকী বা পুণ্যকে খেয়ে ফেলে যেমন আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে । (আবু দাউদ)

হিংসুকের হিংসা থেকে বাঁচার উপায়

﴿وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ﴾

এবং হিংসুকের অনিষ্টকারিতা থেকে , যখন সে হিংসা করে ৷ (সূরা- নাস-৫) হিংসুকের অনিষ্টকারিতার হাত থেকে বাঁচার প্রধানতম কৌশল হিসেবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। এই সাথে হিংসুকের অনিষ্টকারিতার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আরো কয়েকটি জিনিসও সহায়ক হয়।

এক , মানুষ আল্লাহর ওপর ভরসা করবে এবং আল্লাহ চাইলে কেউ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না , একথায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করবে।

দুই , হিংসুকের কথা শুনে সবর করবে। বেসবর হয়ে এমন কোন কথা বলবে না বা কাজ করতে থাকবে না , যার ফলে সে নিজেও নৈতিকভাবে হিংসুকের সাথে একই সমতলে এসে দাঁড়িয়ে যাবে।

তিন , হিংসুক আল্লাহভীতি বিসর্জন দিয়ে বা চরম নির্লজ্জতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে যতই অন্যায় - অশালীন আচরন করতে থাকুক না কেন , যার প্রতি হিংসা করা হচ্ছে সে যেন সব সময় তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে ।

চার , তার চিন্তা যেন কোন প্রকারে মনে ঠাঁই না দেয় এবং তাকে এমনভাবে উপেক্ষা করবে যেন সে নেই । কারণ ,তার চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাওয়াই হিংসুকের হাতে পরাজয় বরণের পূর্ব লক্ষণ।

পাঁচ , হিংসুকের সাথে অসদ্ব্যবহার করা তো দূরের কথা , কখনো যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়ে যায় যে , যার প্রতি হিংসা করা হচ্ছে সে হিংসাকারীর সাথে সদ্ব্যবহার ও তার উপাকার করতে পারে , তাহলে তার অবশ্যি তা করা উচিত। হিংসুকের মনে যে জ্বালা পোড়া চলছে , প্রতিপক্ষের এ সদ্ব্যবহার তা কতটুকু প্রশমিত হচ্ছে সে তাওহীদের আকীদা সঠিকভাবে উপলব্ধি করে তার ওপর অবিচল থাকবে । কারণ , যে হৃদয়ে তাওহীদের আকীদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে আল্লাহর ভয়ের সাথে অপর কারো ভয় স্থান লাভ করতে পারে না।

হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা এক ঘৃন্য ব্যাধি । এ ব্যাধিটা যদি একবার মানুষের মনে ঠাঁই পায় তাহলে আন্তরিক সম্পর্কই শুধু ছিন্ন হয় না, ঈমানও বিপন্ন হয়ে পড়ে ।

বিষয়: বিবিধ

১৯৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File