Rose Rose সবাই মানুষ ভাবতে খারাপই লাগে! Rose Rose

লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:২১:৫০ রাত

পৃথিবীতে সবাই আমরা মানুষ! এরপরও সবার মাঝে নানা রকম ভেদাভেদ! কেউ বিলাসিতার উচ্চাসনে বসে আছে! আর কারো অবস্থান গাছতলাতে! কেউ হাজার টাকায় মার্কেট করে! আর কেউ ঈদের দিনেও পেট ভরে খেতে পারেনা! কত বৈষম্য আমাদের মানুষের মাঝে? কেন এমনটি হয়? কেন সবাই সবাইকে আরো একটু কাছে টেনে নেয়না? কেন আরেকটু আপন করেনা? কেন একজন আরেকজনের চোখের অশ্রু মুছে দিতে উদ্যত হয়না?

একটি বাস্তবতা বনাম আমরাঃ-

ঈদের দিন! সবাই নিজ নিজ ঘরে আপ্যায়িত হয়! আর আমাদের মাঝেই কেউ কেউ এই দিনেও সরনাপন্ন হোন আরেক জনের ঘরে! মেহমান হয়ে নয়! একজন কাজের লোক হয়ে! তাতেও তাদের আপত্তি থাকেনা! কারন কোন না কোন ভাবে সময় তো কাটবে! আর কাজের মাঝে থাকলে মনটাতে কষ্টের উপস্থিতিটাও কম হবে! আর এসব ভাবতে ভাবতেই মালিকের বাড়ির দিকে পা বাড়ান আমাদেরই এক বোন পরি! কোরবানির ঈদ বলে কথা! কত কাজ! বাড়ির কর্তী কত কাজ রেডি করে রেখেছে! বাসার কাছে গিয়ে বাহিরে থেকেই শুনতে পান আজকে যদি কাজে না আসে ঈদের পরেও আর কাজে রাখবেনা! বাদ করে দিবে! পরি এসব শুনেও দরজায় ঠক ঠক দেয়! গৃহকর্তী এসে দরজা খুলে বলে আরে পরি যে.. তোর কথাই বলছিলাম আমার ভাগনীর কাছে! আয় আয় বড্ড দেরি করে ফেলেছিস! এখন তাড়াতাড়ি কাজে হাত দে!

পরি রান্না ঘরের বেসিনে দেখে বেসনি ভর্তি থালা বাসন! সব ধুয়ে পরিষ্কার করে! এরপর অপেক্ষায় থাকে আজকে গৃহকর্তী হয়তো ভালো কিছু খেতে দেবে! কিন্তু কাজ করতে করতে সময় অনেক হয়ে যায় কিন্তু পেটে তখনো পরির কিছুই পড়েনা! কত খাবার সামনে হাত দিয়ে ধরে খেতেও পারেনা! পরি আয়োজিত সব খাবারের দিকে পলপল নেত্রে তাকাতে থাকে! আর ভাবতে থাকে গৃহকর্তী যদি বলতো তবে তো কিছু খেয়ে নিতো! কিন্তু সে বলেনা খাবারের কথা! সে শুধু কাজের হুকুম দিতে থাকে! এটার পর এটা! তারপর ওটা! এদিকে পরির পেটে খিদে গুলো সব একত্রিত হয়ে বিদ্রোহ করছে! কি করা? গৃহকর্তীর কথা মত কাজ না করলেও এখানে আর কাজ করতে পারবেনা! তাই চুপচাপ থাকে! কিন্তু বারংবার খাবারের দিকে চোখ দেখে গৃহকর্তী এক প্লেট সেমাই এনে দেয় পরির হাতে! পরি ভাবছে খালি পেটে সেমাই খাবে কিনা! কারন রাতেও খায়নি! আর সকাল থেকেও উপোস! এখন সেমাই খেলে কি ক্ষতি হয় কে জানে! এসব ভাবতে ভাবতে পরি সেমাই খায়! একেবারে না খেয়ে থাকার চেয়ে কিছু খেয়ে কাজ করার শক্তি পাবে! এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো! পরির পেটে সেমাই ছাড়া কোন দানাপানি পড়লোনা! পরি ভাবে আল্লাহ কেন সবাইকে সমান পরিমাণ করলোনা? তাহলে তো সবাই সম ভাবে আনন্দোপভোগ করতে পারতো! কিন্তু কপাল বলে কথা! ভাবতে ভাবতে পরির খাবারের টেবিলে চোখ যায় বার বার! আর মনে হয় একটু পুরোনো ভাতই না হয় আমাকে দিতো! তবে তো এত কষ্ট করে কাজ করতে হতোনা!

পরির চাহনী দেখে গৃহকর্তী বলে যা তো পরি রান্না ঘরে গিয়ে বস! এভাবে মেহমানদের সামনে দাড়িয়ে থাকলে তারা কি মনে করবে? আর শুন যাওয়ার সময় একটু গোসত নিয়ে যাস বাসায়! পরি মাথা নেড়ে চলে যায়! পরি কলের সাথে মুখ লাগিয়ে পেট ভরে পানি পান করে নেয় দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত করে! সকালে একবার ভারি খাবারের বদলে সেমাই খেয়ে অনেকক্ষন পেটে ব্যাথা করেছে! এখন পানি খেয়ে পেটকে শান্তনা দেয়! যাক রাতে হয়তো গৃহকর্তী কিছু খাবার দেবে যা নিয়ে বাড়িতে ছোট ভাইবোনকে সাথে নিয়ে একসাথে বসে খাবে! আরেকটু গোসত দিলে হয়তো সেগুলো নিয়েও একদিন সবাই ভালোভাবে খেতে পারবে! কিন্তু ভাবনা গুলো ভাবনাই থেকে যায়! সন্ধ্যা হয়ে আসে! প্রতিদিন পরি সন্ধ্যাতে বাসায় ফিরলেও আজকে গৃহকর্তী একটু দেরিতে যেতে বলেছে! কি করা! রাত হয়ে এলো মেহমান আসছে, খাচ্ছে, এরপর চলে যাচ্ছে! আবার আরেক দল আসছে! একটু পর পর টেবিল পরিষ্কার যেন আজকের জন্য শত হাজারবার করেছে! আর কত লোক যে বসে বসে খেয়েছে তার হিসাব নেই! কিন্তু এত লোকের মাঝেও পরির খাবার খোজ কেউ নেয়নি! কারন একটাই পরিরা এ তালিকাতে নেই! তাই পরিদের খোজ কেউই রাখেনা!

রাত প্রায় এশার পর হয়ে এলো পরি একে তো সারাদিনের ক্ষুধার্থ আরেকে সারাদিনের পরিশ্রম! সবমিলিয়ে মনে হচ্ছে এখনই বিছানাতে শরীরটাকে বিছিয়ে দিয়ে খানিকটা আরাম দিতে! কিন্তু গৃহকর্তীর মুখপানে চেয়ে আছে পরি! কখন বলবে যা আজকের কাজ শেষ! এরই মাঝে আরেক দল মেহমান আসলো! আর তারা হলেন গৃহকর্তীর খুব কাছের লোক! সে কারনেই গৃহকর্তী ভুলে গেলেন পরিকে কি দেবেন? কি করবেন সে কথা! মেহমানদের আপ্যায়ন হলো! তারা বসে বসে খোশ গল্পে বিভোর! কিন্তু এত আয়োজন এত আপ্যায়নের মাঝেও কেউ কেউ সারাদিনই না খেয়ে পরিশ্রম করে যায় তার খোজ কেউই রাখেনা! কারন তারা তো সমাজের মাথা উঁচু করা কোন পরিবার নয়! তারা নিম্ম শ্রেনীর! তাই তাদেরকে কেউই মনে রাখেনা! মনে রাখার প্রয়োজন পড়েনা! তাদেরকে শুধু প্রয়োজন হয় কর্ম সম্পাদনের জন্য! পরি হতাশ হয়ে যায় আর কত সময় থাকবে এখানে? বাড়িতে ছোট ভাই বোনেরা আছে কয়েক জন তারা কি করছে? কি খেয়েছে? আর মা তো অসুস্থ! পরি এবার অধৈর্য হয়ে গৃহকর্তীকে বলে আমি চলে যাচ্ছি! বাড়িতে আমার অসুস্থ মা আছেন! গৃহকর্তী বলে ওঠে আরেকটু পরে যা! পরি মাথা ঝুঁকিয়ে না বলে! গৃহকর্তী দৌড়ে রান্না ঘরে আসে পরিকে কিছু দেবে কিনা কে জানে? এসে পাতিলের ঢাকনা খুলে দেখে বলে পরি তুই মন খারাপ করিস না! রান্না করা গোসত তো শেষ শুধু ঝোল আছে! সাদা পোলাও আছে নিবি? তো নিয়ে যা আর গোসত না হয় আরেক দিন নিস! পরি আর ভাবতে পারেনা! কতজনে কত খাবার নষ্ট করেছে অথচ পরির জন্য কিছুই নেই! তবু মনে মনে আওড়াতে থাকে আমাদের মত পরিদের জন্য পাতিলে ও থাকেনা! তো আপনি দেবেন কোত্থেকে? গৃহকর্তী অনেকগুলো ঝোল আর কিছু সাদা পোলাও দিয়ে দিলো পরিকে! পরির উপায় নেই না নিয়ে! ঘরে কে কি অবস্থায় আছে সে জানেনা! তাই তাকে নিতেই হলো সেই খাবার!

সেই যে সকালে এসেছে মনে কত ভাবনা নিয়ে! ভেবেছিলো সারাদিন কাজ করে কিছু ভালো খাবার ভাই বোনদের মুখে দেবে! মাকে খাওয়াবে! কিছুই হলনা পরির! আর সে নিজেও এত পরিশ্রম করে সারাদিন কিছুই খেতে পারেনি! মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায় পরির! ছোট ভাই বোনেরা অপেক্ষাতে আছে সারাদিন তো শেষ এবার হয়তো পরি বোন অনেক খাবার নিয়ে আসবে সারাদিনের সব ক্ষুধার কষ্ট রাতের খাবার খেয়ে ভুলে যাবে! পরি নানা রকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে গৃহকর্তীর বাসা থেকে বের হতে চায় তখনই গৃহকর্তী জানতে চায় কালকে আসবিনা? পরি চুপ থাকে! চুপ থেকেই যেন বোবা সম্মতি জানায় কাজে যে আসতেই হবে! নয়তো পেট নামের এই গাড়িটা সচল থাকবে কিভাবে? সেটাকে সচল রাখতে সব কষ্টের কথা ভুলে যেতে হয়! পরি সব কষ্ট ভুলে নিজের বস্তির দিকে পা বাড়ায়! কিছু ক্ষুধার্থ মুখে সামান্য খাবার তুলে দিতে! কিন্তু পরির চলা যেন আজকে শেষই হয়না! মনের মাঝে অনেক ভাবনা এসে উঁকি মারে কেন যে পরিদের জন্ম হলো? এই শ্রেনীটা না থাকলেই বোধ হয় ভালো হতো! ধনীরা আরো আরামে আয়েশে কাটাতে পারতো! এ সমাজে পরিরা যেন ফসলের আগাছার মত! পেটের তাড়নায় মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত বাড়াতে হয়! নানা রকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে পরি পা বাড়ায় আপন ঘরের পানে............! কে জানে কতদিন এভাবে অসহায়ের মত থাকতে হবে............ এই জমিনে? এই ধনী লোকের ভীড়ে আর কতকাল হাত পেতে থাকতে হবে..............? আর কতদিন এভাবে ভুক্তভুগি হয়ে থাকতে হবে? কে দেবে এর জবাব.........?

কলরব শিল্পদের একটি গানের লিংক শেয়ার করলাম শুনে দেখুন যে কারোরই খারাপ লাগবে যদি সে সত্যিকারের মানবতা সম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকে!



বিষয়: সাহিত্য

১৩৪০ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

274503
১৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:২৯
মাহবুবা সুলতানা লায়লা লিখেছেন : লেখাটা পড়ে আসলেই কষ্ট লাগছে!
০৭ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৭
225548
সাদামেঘ লিখেছেন : কঠিন বাস্তবতা কষ্ট লাগারই কথা!
274512
১৫ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৫৯
কাহাফ লিখেছেন :
ভোগসর্বস্ব মেকি আধুনিকতা সমাজের নৈতিকতা-মানবিকতা কে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু দূরে।তাই 'পরি'দের এই অবস্হা।
'পরি'দের জন্য আন্তরিক শুভ কামনা!
অসাধারণ লেখনীর জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে.......... Rose
০৭ নভেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৯
225549
সাদামেঘ লিখেছেন : সমাজে পরি'দের অবস্থান বড়ই নাজুক অবস্থায় আছে! আর আমাদের মন মানষিকতার কোন পরিবর্তন নেই, কবে যে সকল মানুষ আবারো সাহাবীয়া আচরণের অনুসরন করবে?
274538
১৫ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : এমনই হয়৷ আর এমন গৃহকর্ত্রীরাই আবার মঞ্ছে উঠে মানবাধীকারের লম্বা লেকচার প্রসব করে৷ অথচ ইসলাম বলে, ার প্রতিবেশী অভুক্ত রাত কাটায় সে মুসলীম নয়৷
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০০
225551
সাদামেঘ লিখেছেন : সঠিক কথাই বলেছেন ভাই!
যারাই বেশী নারী অধিকার বলে বলে শ্লোগান দেয় তারাই এসব কর্মে অগ্রে চলে!
282034
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৮
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : খুব খারাপ লাগলো পরির কাহিনীটা পড়ে। পৃথিবীটা যে কেন আল্লাহ সৃষ্টি করলেন। আমাদের কষ্ট দেখে যে তিনি কেন এত আনন্দ পান! (নাউজুবিল্লাহ)
০৭ নভেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
225560
সাদামেঘ লিখেছেন : পৃথিবীটা আল্লাহ অর্নথক সৃষ্টি করেন নি! মানুষকে যাচাই বাছাই করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন! তিনি দেখতে চান কে নিজেকে মু'মিন করে গড়েছে আর কে নিজেকে পশুতে পরিণত করেছে! সে অনুযায়ীই ফায়সালা হবে হাশরের মাঠে! আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দিন!
আমিন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File