"চোখের কাজল মুছে দিলো"
লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ১৭ জুলাই, ২০১৪, ০৮:১২:৪২ রাত
সেদিনের আকাশটাতে মেঘের আভা দেখা গেছে! অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীটা ছিলো! মাঝে মাঝে সূর্যটা উঁকি দিয়ে আবার হারিয়ে যায় মেঘের আড়ালে! মনে হচ্ছিলো যেন সূর্য ও মেঘের লুকোচুরি খেলা হচ্ছে পৃথিবীর আকাশে! মনটা ভাল নেই এইক্ষনে রাত্রির! পৃথিবীর মেঘের মত তার মনের মাঝেও যেন এভাবেই কষ্টের মেঘ জমেছে! সেই মেঘ যেন কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝরে পড়বে! সেই জমে থাকা মেঘের বৃষ্টি যেন কারো অপেক্ষা করছে! সে এলেই তবে চোখের এই বৃষ্টি দিয়ে তাকে স্নান করিয়ে দেবে! রাত্রির বিয়ে হয়েছে সবেমাত্র পনেরদিন! স্বামী লিটন সেই সকালে গেছে তাদের বাসায়! বলেছে বাসা থেকে ঘুরে আসি! কাছাকাছি বাসা বলে এই সমস্যা হয়েছে! নয়তো দুরে কোথাও হলে তো এমনটি করতে পারতো না লিটন! এখনই তা শশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে এমনটি কেউ করে? রাত্রির জানা নেই! তবে বারংবারই বান্ধবী আর প্রতিবেশী ভাবীদের প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে তারা জানতে চায় তোমার নববর কেন প্রতিদিন সকালে চলে যায়? আর রাতে আসে? সে নিশ্চুপ থাকে! তারা আরো বলতে থাকে এখনই নববরের এই অবস্থা? সারা জীবন তো এখনো পড়েই আছে! এই হলো তার বান্ধবীদের কথা! রাত্রি ও যেন সবার এসব কথা শুনে মনকে কিছুতেই বুঝ দিতে পারছেনা! তাই তো বিয়ে হলো মাত্র পনেরদিন আর দুই আড়াই মাস পরে লিটন চলে যাবে প্রবাসে! তখন তো চাইলেও কাছে পাবেনা! আর এখন সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাচ্ছেনা! স্বামী লিটনের জন্য মনটা খুব খারাপ! কেন সে এমন করছে? বিয়ের পর তিনদিন পর এবার বাবার বাসায় এসে তিনদিন কি চারদিন ছিল এরপর ওখানেই তো একমাস থেকে আসলো অথচ এবাসায় আসলে ও থাকতেই চায়না এসেছে একসপ্তাহের জন্য তারউপর রাতে এসে সকালে চলে যায়! রাত্রির ভাই বোনেরাও নতুন দুলাভাইকে নিয়ে কিছুটা সময় কাটাবে, আনন্দ করবে, আড্ডা দিবে সেটাও পারেনি! ভাই বোনদের মনেও কিছুটা কষ্ট এজন্য এমন একজন দুলাভাই পেয়েছে যে, নিজেকে শুধু সবার থেকে আড়াল করে রাখে! সাতদিনের ছুটি নিয়ে আসছে নতুন শাশুড়ীর থেকে! সাতদিনের পাঁচদিন চলে গিয়ে আজকে ছয়দিন কালকের পরের দিন তো চলেই যেতে হবে! এ'কয়দিন সবার প্রশ্ন শুনে শুনে মনের মাঝে অভিমানের মেঘ জমেছে! আর এটা তো ঠিক যে সে এবাড়ির মেয়ে হলেও এখন নতুন বউ হয়ে শশুর বাড়ি থেকে বেড়াতে আসছে! অথচ স্বামী বেচারা একেবারে নিরামিস! আনন্দ বলতে তার কাছে কিছুই নেই! গম্ভীর একজন মানুষ! আর এই লোকটার সাথেই কাটাতে হবে জীবনের বাকিটা সময়! ভাবতেই রাত্রির মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো! অথচ প্রথম বিয়ের পরে যখন এবাসায় এসেছিলো তখন সবাই তার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া নিয়ে প্রশংসা শুনে মনে হয়েছিল জীবনে সে উত্তম একজন মানুষকে জীবন সাথি রুপে পেয়েছে! কিন্তু এবারের ব্যবহার তাকে সেই বিশ্বাস থেকে অনেকটুকু দুরে সরিয়ে দিয়েছে! দিন যতই গড়াচ্ছে মানুষটাকে নতুনই লাগছে তার কাছে! রাত্রির মনে এখন হাজারো প্রশ্ন এসে জমা হয়েছে! এসংসার একদিন বা এক ঘন্টার পুতুল খেলা নয়! সারাজীবনের ব্যপার! তার যদি ভালই না লাগতো তবে কেন বিয়ে করলো? কেন নিজের মতকে প্রাধান্য না দিয়ে সবার মতে বিয়ে করলো? সে তো বলতে পারতো তার বাবা মাকে আমার মেয়ে পছন্দ হয়নি! কেন নতুন বিয়ে হয়েও সে আমাকে দুরে দুরে রাখছে! সারাদিন চলে যায় একবার ফোন ও করেনা! তাহলে কি সে আমাকে পছন্দ করেনি? কেন তবে বিয়ে নামক চির বন্ধনে আবদ্ধ করলো আমায়? এসব কি এখন বলা ঠিক হবে? রাত্রি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে? কিন্তু কোনই জবাব পায়না! কি করবে সে? আর শশুর বাড়িতে থাকলেও লিটন বেশীরভাগ সময় কম্পিউট নিয়ে বসে থাকে এমন কি রাতের একটা, দুইটা পর্যন্ত! রাত্রি বুঝতে পারেনা কিসে এই সমাধান সবেই তো নতুন জীবন শুরু! আজ পঞ্চমদিন বাবার বাড়িতে এসেছে কিন্তু তার স্বামী লিটন একটি দিনও সারাদিন থাকেনি! সন্ধ্যা রাতে বা রাতে এসেছে । আজ রাত্রির মনটা খুবই খারাপ! হাতে নিজের মোবাইল তো নেই যে কল করবে! মোবাইল আছে বাবার কাছে কিন্তু কি করা? সারাদিনই মনটা খারাপ ছিল, বিকেল থেকে মনটা আরো খারাপ হয়ে আছে! নানা প্রশের আনাগোনা মনের করিডোরে জবাব দেবে কে? সন্ধ্যা হয়ে এলো রাত্রি অযু করে এসেছে মাগরীবের নামাজ পড়বে বলে! হাত মুখ মুছতে মুছতে মাগরীবের আযান হলো! রাত্রি নামাজ পড়লো! এখনো এলোনা লিটন! ঘরের দরজা বন্ধ করে একাকি বসে বসে ভাবছে রাত্রি কি বলবে আসলে? রেগে থাকবে? নাকি কথা বলা বন্ধ করে রাখবে! ভেবে পায়না! এভাবে এশার সময় হয়ে এলো! দরজায় ক'ড়া নড়ে উঠলো চুপ করে বসে আছে রাত্রি! আবার নড়ে উঠলো ক'ড়া! এবার উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল রাত্রি! ঘরে প্রবেশ করল তার প্রানের প্রিয় স্বামী! সে চুপ করে দরজা বন্ধ করে একদিকে সরে গেলো! স্বামী সালাম দিলো! সে মনে মনে সালাম নিলো! তার স্বামী আবারও সালাম দিলো! এভাবে কয়েকবার সালাম দিলো আর রাত্রিও মনে মনে সালামের জবাব দিলো। কিন্তু এবার তার স্বামী বলল সালামের জবাব শুনিয়ে দিতে হয়! সে চুপচাপ অন্যদিকে মুখ করে দাড়িয়ে থাকলো! তার স্বামী এবার পিছনে এসে বললো আমি এখনো সালামের জবাব পাইনি! সে এবার শব্দ করে সালামের জবাব দিয়ে স্বামীর বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো! স্বামী বেচারা কি করবে বুঝে উঠার আগেই এই কান্না কত কথা আর কত কাব্য বলছে কিন্তু কান্না থামার নাম নেই! সে ওভাবেই কাঁদছে মুখ গুজে! লিটন বেচারা এবার স্যরি বলে মাথাটা জোর করেই উঠালো দেখলো রাত্রির মুখের উপর কাজলের পুরোটাই চোখের পানিতে লেপটে গেছে! বললো এভাবে কাঁদতে হয়? যেন চোখ দিয়ে বন্যা বইয়ে দিলে! রাত্রি বললো কি করবো তবে? সারাদিন কিভাবে ভুলে ছিলে? একবারও কি মনে পড়েনি আমাকে? লিটন বললো পড়েছে তো! কিন্তু কি করা এখানে থাকতে যে লজ্জা লাগে তাই তো বাসায় চলে যাই! আর সুন্দর চোখের কাজল গুলো মুছে দিলে! বলেই লিটন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বুক পকেটের নিচে কাজলের লেপন লেগেছে! অফঅয়েড রঙের শার্টে কাজল লেগে যেন রাত্রির কষ্ট লাঘব করেছে! রাত্রি এবার জোরে হেসে বলে বেশ হয়েছে আমাকে তো মনে পড়েনা এমনিতে এখন এই শার্টের দিকে তাকালে মনে পড়বে। আমার চোখের কাজল তোমাকে আমার কথা মনে করিয়ে দেবে! আর কাঁদাবে আমায়? সারাদিন কতটা কষ্টে ছিলাম সেটা তো দেখনি এখন চোখের বৃষ্টিতে কাজল মুছে গেছে বলছো! সারাদিনের কষ্টের জন্য কি বলবে? লিটন সামনে এসে চোখ মুছে দিতে দিতে বলে এ'কদিনে এত ভালবেসেছ আমায়? আমার জন্য এত চোখের পানি বিসর্জন? বাস্তবে ভালবাসা কাকে বলে আমি শিখছি তোমার কাছে! আর কাঁদাবোনা বলছি! আর এই শার্টটাও তুলে রেখে দেব স্মৃতি করে চোখের কাজল মুছে গেছে প্রিয়ার চোখের জলে! রাত্রি বললো সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধুইয়ে দিলে সব দাঁগ উঠে যাবে! লিটন বলল এ দাঁগ শার্টে পড়েনি এদাঁগ পড়েছে হৃদয়ে! তা কখনোই কোনকিছু দিয়ে উঠবেনা! এবার হাসো............ না হাসবোনা বলে দুজনেই হেসে দিলো! ভালবাসার মানুষের সাথে করা অভিমান গুলো কখনো বৃষ্টি হয়ে ঝরে দুচোখ থেকে আর এই অশ্রু কখনো কখনো ভালবাসা বাড়ায়! বাড়ায় দুটি মনে আরো অধিক আত্মবিশ্বাস! আর এই বিশ্বাস নিয়েই যুগে যুগে গত হয়েছে এমন অনেক অনেক জুটি! ভালাবাসার অনেক রুপ কখনো কঠিন কখনো তরল কখনো গরম কখনো শীতল কখনো আনন্দের ঢেউ জাগায় প্রানের মাঝে আর কখনো অশ্রু ঝরায় দু'চোখে! তবুও তার নাম ভালবাসা! ভালবাসা নামেই তাকে সবাই চেনে! ভালবাসার সাথে পরিচয় হয় ঘনিষ্ট হয় আর সম্পর্ক চলতে থাকে আগামি থেকে আগামির পানে। তবুও এই ভালবাসা শুধু ভালবাসার অনুপ্রেরনা জাগায় মনে।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৯৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুবই সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন ভালোবাসার!
পড়ে অতীতের স্মৃতিচারণ মনে পড়ে গেলো!
সবার জীবনেই কিছু সুন্দর অতীত থাকে যা ভালোবাসা বাড়াতে সহায়তা করে!
ধন্যবাদ লেখিকাকে সুন্দর লেখনীর জন্য!
খুব ভালো লাগ্লো...
মন্তব্য করতে লগইন করুন