অন্য রকম মেরেজ ডে!!
লিখেছেন লিখেছেন সাদামেঘ ০৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:২০:৩৯ রাত
পূর্বাণেই বলে নেই, বউ শশুরকে নয়া বাবা আর শাশুড়ীকে নয়া আম্মা বলে ডাকে!
একদিন শাশুড়ীর সাথে বসে গল্প করতে করতে বড়বউ জেনেছে শাশুড়ীর মনেও অনেকটুকু কষ্ট লুকায়িত! কারন এযুগের মত আগের যুগের বিয়েতে এতো ধূমধাম হতোনা হতোনা এতো আলোকসজ্জা হতোনা এতো অঢেল খরচ! মেয়েকে হাজার টাকা দিয়ে পার্লারেও সাজানো হতোনা! মেয়ে বড় হলে তখনের নিয়ম ছিল কয়েকজন মুরুব্বী ডেকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার! খুব কম সংখ্যক পরিবার বিয়েতে বেশী খরচ করতো! মানুষের মনের মাঝে কত রকমের কষ্ট লুকানো তা কেউই জানেনা! আর মানুষের মনের মাঝেই এমন কিছু আকাংখা লুকানো থাকে যা কখনোই পূরন হয়না বরং মনের গভীরে তা লুকিয়ে থাকে অপূর্ণতার কষ্ট নিয়ে! শাশুড়ীর মনের অপূর্ণ একটি আকাংখার কথা জেনেই বড়বউয়ের ইচ্ছে হল তার শাশুড়ীর ইচ্ছাটা পূর্ণ করতে, এই সুযোগে বউ জেনে নিল শাশুড়ীর বিয়ে বার্ষিকি কোন মাসে? কত তারিখে! মনে মনে ভাবতে থাকে কিভাবে শাশুড়ীর মনের ইচ্ছাটা পূর্ণ করা যায়? ভাবতে ভাবতে পেয়ে গেল পথ! মনে মনে আলহামদুলিল্লাহ পড়রো আর ভাবলো নাজায়েজ হবে কেন? মানুষের মন খুশি হলে আল্লাহও খুশি হয়! হে আল্লাহ কাজটা সহজ করে দেন!
নভেম্বরের শেষ এসপ্তাহ চলছে, গোপনে চলছে প্রস্তুতি কারন নয়া বাবা মা জানলে সবকিছু ভুন্ডুল হবে! তাই বড় ভাবি ও ননদ রুবি সুফিয়ান ও খালাতো ননদেরা মোট ছয়জনের একটি টিম! তিন জনের মাঝে সরাসরি আলাপ হয়েছে আর বাকি তিনজনের সাথে গোপন বৈঠক হয়েছে ফোনে ফোনে। বড়বউ শাশুড়ী আম্মাজানের কাছে আগেই শুনেছে তাদের বিয়ের গল্প! শুনেই বড়বউ মনে মনে ঠিক করেছে এবার আমরা সবাই মিলে আব্বা আম্মার মেরেজ ডে পালন করবো! আর এইচিন্তাটা শেয়ার করলো প্রবাসী স্বামির সাথে, স্বামি বেচারা রাজি হচ্ছিলোনা এসব ঠিক না করা, গুনাহ হবে নানান কথা বলে, পরে অনেক বলে কয়ে রাজি করিয়েছে এভাবে যে, আমরা তো ঢাক-ঢোল বাজিয়ে কিছু করবোনা মুরুব্বীদেরকে আনন্দ দিতেই করব! যাক অনেক কথার পরে স্বামি সাহেব রাজি হয়েছেন! সামনে থাকলে হয়তো এত সময় লাগতো না একটা ইয়ে দিয়েই রাজি করানো যেত কিন্তু এখন অনেক কাঠ-খড়ি পোঁড়াতে হয়েছে! আলহামদুলিল্লাহ! চিন্তা মতই কাজ করার ইচ্ছা নিয়ে ননদ রুবির সাথে ও সুফিয়ানের সাথে আলাপ হয়েছে! বড়বউ নিজের একটি মাটির ব্যাংক ভেঙে সেই টাকা দিয়ে শশুর ও শাশুড়ীর জন্য কাপড় কিনতে সুফিয়ানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আম্মাকে সাথে নিয়ে আম্মার জন্য শাড়ি আনা ও আব্বার জন্য শার্ট ও প্যান্ট আনার জন্য (বলে রাখি নয়া বাবা কিন্তু ডাক্তার তাই প্যান্ট শার্ট কেনার সিদ্ধান্ত)! রুবিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তুমি বায়না ধরবা সাথে আমিও আম্মাকে সাজানোর জন্য বলবো আপনাকে সাজলে কেমন লাগে আমাদের দেখতে ইচ্ছে হয়! চিন্তা মতই কাজ শুরু হয়েছে বাড়ির তিনজনের মাঝে! আর বড়ভাবি নির্ধারিত দিনে শুধু পায়েস রান্না করবে! সকালে বাজারে যাওয়ার আগেই যখন নয়া বাবা বলবে আজকে কি খাবিরে বড়বউ? তখন বড়বউ বলবে আব্বা আজকে গরুর গোসত ভুনা করে খাবো, ভেবে রেখেছে আগে থেকেই! বাকি খালাতো ননদদের সাথে ফোনে আলাপ হয়েছে বড়ভাবির! দাওয়াত তোমাদের তবে শর্ত হল বাসায় আগে থেকে বলা যাবেনা তোমরা সব বোন আগামি মাসের দুই তারিখে আসবে আব্বা আম্মার মেরেজ ডে! সবাই অনুমতি দিয়েছে আসবে বলে! এবার বড়বউয়ে ফোন করে বলেছে তার আম্মাকে রবিবারে আসবা মা আব্বুকে নিয়ে! কি জন্য জানতে চাইলে বকুলকে ফোনটা দাও বলে এড়িয়ে গেছে! বকুল ফোন ধরলে বড়আপা বলল বকুল মাকে ও আব্বুকে আসতে বলেছি রবিবারে তুই এক কাজ করিস আসার আগে তুই কিছু ফুল কিনে দিস মার কাছে আর তুই আসিস মার সাথে বলেই কল কেটে দিল!
একসপ্তাহের মাঝে গোপনে গোপনে সব আয়োজন সম্পন্ন করলো! ডিসেম্বরের দুই তারিখ রবিবার ভোরে ফজর পড়েই আগের চিন্তামত কাজে আগাচ্ছে তিনজনের এই টিম! সকালের নাস্তার পরই নয়া বাবা ফার্সেমীতে যাওয়ার আগে ডাকলো বড়বউ আজকে কি খাবি? কি বাজার করবো? বড়বউ প্রথমে বলল আব্বা আপনি যা খাবেন আমিও তাই খাবো! নয়া বাবা বলল তাহলে জানতে চেয়ে লাভ কি হল? কি আনবো বল? বড়ভাবি বলল আব্বা আজকে গরুর গোসত ভুনা! নয়া বাবা বলল ঠিক আছে বলেই চলে গেলেন! গিয়েই পাঠিয়ে দিলেন বাজার! চলছে রান্নার আয়োজন! আয়োজনের সব কাজ শেষ! এবার শাশুড়ী আম্মাকে সাজানো নিয়ে ব্যস্ততা বড়ভাবি আর রুবির! কোন ভাবেই সাজাতে পারছেনা তারা! নয়া আম্মা বলছে আমি এখন বুড়ে হয়ে গেছি এসব করলে লোকে কি বলবে? আমরা অনেক বলে কয়ে শাড়ি পরিয়েছি, উনার গয়না পরিয়েছি, আব্বাকে নতুন পায়জামা পাঞ্জাবি পরতে দিয়েছি আর বলেছি নতুন গুলো পরে নামাজ পড়ে আসেন! এরমাঝে মেহমান এসেছে! খাওয়ার পর্ব শেষ! শশুর-শাশুড়ীকে একসাথে বসিয়ে কয়েকটা ছবি তুলে রাখলো! উভয়ে অনেকটা লজ্জা পেলেও আনন্দ পেয়েছে অনেক মনের মাঝে! শাশুড়ী পরে বড়বউকে অনেক দোয়া করেছে আল্লাহ তোকে সবসময় হাসি খুশি রাখুন! মানুষ চাইলে এভাবেই মানুষের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূর্ণ করতে পারে! শুধু প্রয়োজন আমাদের মানবতার আর মূল্যায়নে! যে সংসারে যত বেশী মানবতা আর মূল্যায়ন আছে পৃথিবীতে সেসব সংসারগুলো ততটাই বেশী সুখে হয়েছে হতে পেরেছে!
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক সুন্দর বিষয় , ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভাল লাগল। বাবামায়ের ছোট ছোট শখগুলো পূরণ করা তেমন কঠিন কিছু নয়, সদিচ্ছাটাই আসল
আপনাকে ধন্যবাদ গল্পটি শেয়ার করার জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন